মাঝারি সাইজের গাট্টা – গোট্টা একটা গরুর দামাদামি চলছে । ব্যাপারী যে দাম বলল শুনে আক্কেল গুড়ুম !
- ঐ মিয়া গরু কি বেচতে আনছো? নাকি ভাড়া দিয়া আবার সিরাজগঞ্জে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে ?
- হে হে হে ...... বেচতে আনছি ভাই । নইলে তো এতো ছোট করে দাম কইতাম না । ( হালায় কয় কি ???!!! )
- ইন্ডিয়ান গরু এতো দাম হয় নাকি?
- ইন্ডিয়ান হইব কেন? এক বছর দেশে থাকলে গরু আবার ইন্ডিয়ান থাকে নাকি ?
অকাট্য যুক্তি । ইন্ডিয়া থেকে গরু এনে দেশে এক বছর পেলে – পুষে বড় করলে তার বাংলাদেশী পাসপোর্ট পেয়ে যাওয়া বোধকরি অসম্ভব কিছু না । এমন কথা শুনার পর আর কথা বাড়ানোর রাস্তা খুঁজে পাওয়া গেলো না ।
বাপ – চাচা, ফুপা, বড় ভাইয়ের সাথে পরিবারের জুনিয়র সদস্য হিসেবে হাটে গেছি । দলে দুধ-ভাত হিসেবে নিষ্ক্রিয় সদস্য ক্লাস থ্রি পড়ুয়া দুই ছোট ভাইও আছে । আগের দুই ঈদে কায়দা করে পিছলে গেলেও এবার ছোট কাকু আগে থেকে হাতে ছাই মাখিয়ে টাকি মাছ ধরার মতো করে ধরে ফেলায় আর ফাঁকি দেওয়া গেলো না । দেশে বর্ডার ক্রস করে এবার বৈধ ভাবেই গরু এসেছে ১৯ লক্ষ, অবৈধ ভাবেই এর থেকে কম আসার কথা না । আর আমাদের দেশী গরু তো আছেই । সব মিলিয়ে চাহিদার চেয়ে গরুর যোগান অবশ্যই বেশী । কাজেই দাম কম থাকার কথা । কিন্তু সমস্যা হল গরুর হাটে অ্যাডাম স্মিথ বাবাজীর অর্থনীতির থিওরি খাটে না । অন্তত আমরা যেদিন কিনতে যাই সেদিন কখনোই খাটে নি । এপর্যন্ত যতবার হাটে গিয়েছি প্রতিবার শুনেছি আমরা আসার ঠিক আগের দিনই নাকি দাম কম গেছে, একেবারে পানির দাম । এবারও তাই শুনলাম
কিছু কিছু সময়ে মনে হয় মেয়ে হয়ে জন্মানোই বোধহয় ভালো ছিল, জীবনে কিছু ক্ষেত্রে অন্তত কষ্ট কম করতে হতো . গরুর হাটে ঘোরার সময়টা এমনই একটা সময় । দুপুরের প্রচণ্ডতম রোদ, আকাশে - বাতাসে উত্কট দুর্গন্ধ, যে কোন সময় যে কোন দিক থেকে শিংয়ের গুঁতা খাওয়ার সম্ভবনা । মাঝেমাঝে আবার গরু ছুটে যায়, তখন দেয়া লাগে দৌড় । এসবে অত্যাচারের মধ্যে কয়েক ঘণ্টা হাঁটার পর আমাদের আট সদস্যের বিশাল কমান্ডো বাহিনী ক্লান্ত । বাসা কাছেই হওয়ায় দুই পিচ্ছি আস্তে করে মাইনাস হয়ে গেলো । আমরা যারা ভুল করে বড় হয়ে গেছি তাদের তো আর সে সুযোগ নেই, আমরা হাঁটতেই থাকলাম আর দামাদামি করতেই থাকলাম, করতেই থাকলাম । একটা করে গরু পছন্দ হয়, দাম জিজ্ঞাসা করি আর দাম শুনে চোখ কপালে উঠে যায় । সর্বোচ্চ ৫০ হাজার দাম হতে পারে এমন এক গরুর দাম কম বয়সী ছোকরা টাইপ ব্যাপারী চাইলো ৯২ হাজার । আমরা সবাই চোখ সরু বুঝার চেষ্টা করছি ব্যাপারী কী দুষ্টামি করার চেষ্টা করছে নাকি । দাম বলা শেষে উদাসভাবে গরুর লেজের চুল হাত দিয়ে ঠিক করে দেওয়ার ফাঁকে আবার আরেকটু যোগ করে দেয় দামের সাথে ,
- একদাম ।
- একদাম বিরানব্বই হাজার ?
- জে ।
আর তো সহ্য করা যায় না । বাপ-কাকাকে সুযোগ না দিয়ে এবার আমিই লাফ দিয়ে উঠে দাম বললাম ,
- তেত্রিশ হাজার তিনশো তেত্রিশ টাকায় দিবা ?
এবার ব্যাপারীর চোখ সরু হয়ে যায় আমি রসিকতা করছি কিনা বুঝার জন্য । আমি চেহারায় একটা ভালো মানুষী ভাব ফুটিয়ে তুলে হাসিহাসি মুখে দাড়িয়ে থাকি । ব্যাপারি Shockzz , আই RockzzZ
অবশেষে আমার আর বড় ভাইয়ের ক্লান্ত, বিধ্বস্ত চেহারা আর একটু পরপর গরুর জন্য বাধা বাঁশের উপর হাত-পা ছড়িয়ে বসে পড়া দেখে তেমন দামাদামি ছাড়াই একটা গরু কেনা হল । বাসায় হাঁটিয়ে আনার সময় মনে হচ্ছিলো এখনো বাচ্চা মানুষ থাকলে ঘোড়া মনে করে গরুর পিঠে চরে ঘুমাতে ঘুমাতে বাসায় ফেরা যেতো ।
এই উপভোগ্য কষ্টটাই আসলে ছেলেদের কোরবানির ঈদের আনন্দ । মেয়েদেরটা কী তারাই ভালো বলতে পারবে ।
দুরের - কাছের, বন্ধু - শত্রু, পরিচিত – অপরিচিত, প্রিয় - অপ্রিয়, বিশেষ প্রিয় সবাইকে আন্তরিক ঈদ মোবারক