এটা খুবই বিরক্তি কর যখন খুব অপছন্দের কোনও মানুষ ফোন বা এসএমএস পাঠায়। এই বিরক্তি টা এমন যে সব ভাল অনুভূতি গুলকেও খারাপ করে দেয়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কায়েসের কত গুলো ফোন আর এসএমএস এসেছে সেটা সে নিজেও বলতে পারবে না। একটাই কথা বিন্দুর সাথে সাথে কথা বলতে চায়। কত পারে একটা মানুষ!! না হয় ছিল বিন্দুর ভুল, তাই বলে সেটা এখন টেনে বেরাতে হবে!!! ক্লাস নাইনে পড়া একটা মেয়ে উজবুকের মত প্রেমে পরতেই পারে!! প্রেম তখন তার কাছে রবিন্দ্র নাথের শেষের কবিতা। কায়েস একি পাড়ার ঘুরে বেড়ানো ছেলে যে কিনা স্কুল গণ্ডি পেড়িয়ে কলেজে পা রাখেনি। দেখতে সুদর্শন, অল্প বয়সী কোনও মেয়ের প্রেমে পরার মত। সারাদিন মোটর সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াত, পাড়ার চা এর দোকানে আড্ডা দিত। বিন্দুর স্কুলে যাবার পথ ছিল ওটা। প্রতি দিন দেখা হতে হতে কখন যে তাদের প্রেম হয়ে গেলো!!! বিন্দুর স্বপ্নের রাজ কুমার কায়েস আর কায়েসের ভবিষ্যৎ বিন্দু। আড্ডা বাজি ছেড়ে সে মন দিল কাজে কর্মে, স্বপ্ন একটাই বিন্দু কে নিয়ে ঘর বাধবে।
পুরো পাঁচটি বছর লোকচক্কুর আড়ালে ছিল তাদের এই সপ্নরাজ্জে বিচরণ। বেপারটা সবার সামনে আসতে লাগলো যখন বিন্দুরা নতুন এলাকায় চলে এলো। আগের মত আর কায়েসের সাথে কথা হয় না। আসলে বিন্দুই এখন কেন যেন সে রাজকুমার কে কায়েসের মাঝে পায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া বিন্দু এখন বোঝে প্রেম মানে শেষের কবিতা না। তবু কায়েস এসে দাড়িয়ে থাকত ওর বাড়ির সামনে। প্রথম চোখে পড়লো বিন্দুর মায়ের। অনেক প্রশ্নের পরও বিন্দু যখন মুখ খুললও না তখন সরসরি আটক কায়েস কে। বিন্দু জানে না কেন কায়েস কিছুই স্বীকার করলো না। এটা কায়েসের ভালোবাসা না মহানুভবতা সেটা বিন্দু জানে না কিন্তু সে বেচে গেলো।
কায়েস আর যায় না ওদের পাড়ায়। বিন্দু যেন কেমন হয়ে গেছে আজ কাল ফোন ধরে না এসএমএস এর উত্তর দেয় না। ওনেক কষ্টে যদি ফোন টা ধরেও খুব বিরক্তি নিয়ে বলে “ ব্যস্ত” সে আর সেই বিন্দু কে খুজে পায় না যে কলেজের ওর সাথে ঘুরে বাড়ি ফিরে মা কে শতেক মিথ্যা অজুহাত দিত। শুনেছে ওর নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে, ছেলে বাইরে থাকে। কিন্তু বিন্দু কিছুই বলেনি ওকে। এরিয়ে গেছে। ও সব ভুলে গেছে...বদলে গেছে অনেক।
ক্রিং ক্রিং
“বিন্দু খবর শুনেছিস? “
“কি?” বিন্দু বিরক্তির সাথে বলল।
“ কায়েস ভাই যেন কেমন হয়ে যাছে দিন দিন, চেহারার কি হাল, তর সাথে নাকি কথা হয় না, কিছু হয়েছে নাকি?
বিন্দু চরম বিরক্ত। এই জন্যই লতা ফোন দিয়েছে। কিছু কিছু বন্ধু আছে যারা মায়া মায়া মুখ করে সব শুনে মশলা মেখে সবাই কে বলে বেড়ায়। বিন্দুর খুব বলতে ইচ্ছা করছিল স্কুলের মোহ কি এখন বয়ে বেরাব? কায়েস কি আমার যোগ্য ছেলে? তোর এতো দরদ হলে তুই বিয়ে কর। কিন্তু ও এসব কিছুই বলল না। শুধু বলল “ লতা পড়ে কথা বলবো”
কাল বিন্দুর বিয়ে। কায়েস যেন পাগল হয়ে গেছে। বিয়ের বেপারটা ওকে বিন্দু বলেনি। কিন্তু এটা বুঝিয়ে দিয়েছে কায়েসের কোনও প্রয়োজন আর নেই। তবু ও যে কি চাচ্ছে!!! অল্প বয়সে সিনেমার মত প্রেম করে যে কি ভুল করে ফেলেছে!! ও চায় না এই হিরো ওর ভবিষ্যতে এসে দাঁড়াক। ধ্যাত!! ফোন টা অফ করে দিল ও।
পার্লার থেকে ফিরতে দেরি হয়ে গেছে রাত ৯ টা বেজে গেছে। তবে আজ মা কিছু বলবে না। বাড়ির মোড়ে ঢুকতেই মেজাজ আবার খারাপ হয়ে গেলো, কায়েস দাড়িয়ে আছে!! আচ্ছা বেহায়া লোক তো!!! মোবালই অফ পেয়ে চলে এসেছে। নাহ আজ এর একটা বিহিত করতেই হবে।
“তুমি কি সেই ছোটবেলার মোহ ধরে আজও বসে আছো? “ বিন্দুর কণ্ঠে ঝাঁজ।
“ না, তোমাকে শেষবারের মত দেখতে এসেছি, আর তো দেখা হবে না।”
একটু মায়া হল বিন্দুর। তাকালও কায়েসের দিকে। লতা বলল উনার চেহারা ভেঙ্গে গেছে...কই সে তো আগের মতই আছে।
“ ভাল থেকো বিন্দু”
“কায়েস” বিন্দুর চেহারায় হটাত একটা দুশ্চিন্তার ছাপ..।।
“ আমি সব পুরিয়ে ফেলেছি, আমরা ছাড়া কেউ জানত না জানবেও না” কায়েস থেকে একটু কাপা গলায় আবার বলল “ সব।“
“আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসবে” কথা টা বলে বিন্দু নিজেই অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। অনেক চেনা একটা কথা অচেনা সুরে বের হল আজ।
কায়েস হেসে দিল, আগে যখন বিন্দু এই কথাটা বলত এর মানে হল আরও কিছুক্ষণ থাকার আবেদন। সময় বদলে গেছে। বিন্দু এখন আর ক্লাস নাইনে পড়ে না ও এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। “ বাসায় যাও রাত হয়ে গেছে” কায়েস মিলেয়ে গেলো অন্ধকারে। বিন্দু বাড়ি ফিরল এক ঘোরের মাঝে।
ফোন খুলতেই আবার লতার ফোন। উফফ!! এই মেয়েটা পারেও। নিশ্চয় কোনও ভাবে জেনে গেছে কায়েস এসেছিল। “ হ্যালো” “ বিন্দু কই ছিলি? ফোন অফ কেন? জানিস কি ঘটে গেছে? সন্ধে বেলায় কায়েস ভাই এর লাশ গেছে, রেল লাইনের অপর, চেনা যাচ্ছিল না এমন ভাবে ট্রেনে কাটা পরেছে......”
বিন্দু ধীরে পায়ে জানালায় এসে দাঁড়ালো, তাকালও অন্ধকার গলিটার দিকে ঐ পথেই কায়েস চলে গিয়েছিলো।
অতঃপর
২ বছর চলে গেছে । বিন্দু এখন বরের সাথে বিদেশ বিভুয়ে। হয়ত তাদের ফুটফুটে বাচ্ছাও হয়ে গেছে এতো দিনে। আর কায়েস? সে বেচে আছে
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৬ রাত ১:৪১