প্রতিটা ভোর তার কাটে আশা আর নিরাশার মাঝ দিয়ে। আশারা কুন্দুলি পাকিয়ে জমা হয় আবার নিরাশার মুষ্টি এক আঘাতে ভেঙ্গে দেয়। এমন করেই চলছে জীবন। ৭০ ঊর্ধ্ব তিনি, লড়ছেন কান্সারের সাথে। ডাক্তার বলেছে আর কোনও আশা নাই বাসায় নিয়ে যান পরিবারের সাথে কাটাক বাকি দিন গুলো। ছেলে মেয়েরা সবসময় বাবার চারপাশে ঘিরে থাকে, চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। এই বুঝি হারিয়ে গেলো তাদের বাবা। এমন দুশ্চিন্তা তারও হয়। সবাই কে ছেড়ে যাবার ভয়। সব চেয়ে বেশি হয় বেনুর জন্য। ৫০ ঊর্ধ্ব হয়ে গেছে সে কিন্তু আজও তার কাছে সেই কিশোরী বেনু। সেই বিয়ের দিন থেকে আগলে রেখেছে সে। প্রথম যখন কান্সার ধরা পড়লো, খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলো বেনু, ঠাট্টা করে সে বলেছিল “ভয় পেও না এতো সহজে ছেড়ে যাচ্ছি না।“ বেনু সেদিন রাগতে পারেনি কেদে ফেলেছিল।
আজ ছয় মাস ডাক্তারের সেই অশনি সঙ্কেত মাথায় নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। প্রতিটা রাতে মনে হয় এটাই বুঝি শেষ। ভোর বুঝি আর দেখা হবে না। আজও তেমনি একটা রাত। ঘুমিয়েছিলেন অল্প, তারপর থেকে ঘুম নেই। ঘড়িতে ৪ টা বাজে। পাশ ফিরলেন, বেনু ঘুমাচ্ছে অঘোরে। ও এমনই সকালে পর্যন্ত ঘুমাবে নিশ্চিন্তে। জানালার পাশে আম গাছ থেকে দোয়েল টা ডেকে উঠল শীষ দিয়ে, বাতাশে আযানের ধ্বনি “ আসসালাতু খাইরুম মিনান নাওম” আর তো শুয়ে থাকা যায় না। নামাজে দাঁড়ালেন। আজ অনেক দিন পর দাড়িয়ে নামাজ পরতে পারছেন। ধীরে ধীরে শরীরের উন্নতির সাথে সাথে বেঁচে থাকার আশা যেন বাড়ছে, বাড়ছে আত্তবিশ্বাস। কি যে বলে সব শিক্ষিত পাগল ডাক্তারেরা ! আল্লাহ হায়াত রাখলে কার সাধ্য তাকে নিয়ে যাবার? আরও অনেক দিন বাঁচবেন তিনি, বেনুর জন্য ছেলে মেয়েদের জন্য। নামাজ শেসে জানালার পাশে বালিশে হেলান দিয়ে বসলেন। অবিরাম শিষ দিয়ে চলছে দোয়েলটা। মনটা খুব হালকা লাগছে, ফুরফুরে। আজ বেনু কে বলবে পরটা দিতে উইথ ডাবল ডিম পোঁচ। আর খাবার শেষে কড়া মিষ্টি দুধের চা। ছাই! অসুখে পরার পর থেকে মন খুলে খেতেও পারছে না। তারপর তো আছে বেনুর খবরদারি...উফফ...। বড় নাতী ঠিকই বলে “ দাদু মেয়েদের কথা এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দিবে, নেভার লিসেন।“ হি ইজ রাইট। কোনও কিতাবে লেখা নাই যে বউরা সব সময় সঠিক বলে। আজ দুপুরে বেনুর ডুব তেলে ভাজা মাছ ভাজি দিতেই হবে। গাছের ডালে ডালে দোয়েলটি নেচে বেড়াচ্ছে, সেদিক তাকিয়ে এমন সাত পাচ ভাবছিলেন। দেখতে দেখতে কত বেলা হয়ে গেছে কেউ জানে না। নিথর হয়ে গেছে তার দৃষ্টি। দোয়েলটি উড়ে গেছে খাবারের সন্ধানে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:০৮