somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাঁদার গন্ধওয়ালা লাশ...

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যতবারই চিটাগাং মেডিকেলে আসি, ততবারই লাশখানায় যাওয়ার চেষ্টা করি।
ছোটবেলা থেকেই এই লাশখানার প্রতি একটা বিশেষ আগ্রহ কাজ করতো...
সেখানে কীভাবে কী হয়, জানার খুব ইচ্ছে ছিলো...
বড়বেলায় এসে সেই ইচ্ছেটা নিজেই পূরণ করলাম, ফারুক ভাইয়ের সাথে বন্ধুত্ব করে...
ফারুক ভাইয়ের বন্ধুত্ব করার কাহিনী অনেক লম্বা বিধায়, সেই গল্পে যাচ্ছি না। সেই গল্প অন্য আরেকদিন...

লাশখানার ভেতর একেকটা লাশের একেক গল্প। কোন কোন লাশের বিষ খাওয়ার গল্প। কোন কোন লাশের ফাঁস নেওয়ার গল্প। আবার কোন কোন লাশের নাম-পরিচয়হীন অজানা গল্প...
লাশ রাখারও তিনটা ক্যাটাগরি আছে...
যেগুলো সুসাইডের, সেগুলো অন্য সারিতে...
আবার যেগুলোর নাম-পরিচয় নাই, সেগুলো অন্য সারিতে...
যেগুলো এক্সিডেন্টের সেগুলো আরেক সাড়িতে...
সুসাইড করা লাশের বেশিরভাগ আত্মীয় স্বজনরা নাকি তাদের পরিচিত লাশকে নিয়ে যেতে চান না।
বেওয়ারিশ হিসেবেই নাকি দাফন করে দিতে বলেন...
টাকা-পয়সা দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব, এই কাজ সেড়ে নিতে বলেন...
আমি অবশ্য বেওয়ারিশ লাশগুলোর চেহারা দেখার চেষ্টা করি...
দেখলে দেখলাম, না দেখলে নাই...
লাভও নাই, আবার ক্ষতিও নাই...

কয়েকবছর আগেও মানুষ পঁচার গন্ধ সহ্য করতে পারতাম না...
পরে নিয়মিত যাওয়া-আসাতে অভ্যাস হয়ে গেলো...
টানা ৩/৪ মাসে এই গন্ধ নাকের আয়ত্বে আসলো...
নাহলে তো, প্রথম প্রথম মৃত মানুষের গন্ধ একবার নাকে আটকে গেলেই দেড় মাসেও যেতো না...
না কিছু খেতে পারতাম, না শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম...
অনেককিছুই করে এই গন্ধ থেকে রেহাই পেতে হতো...
এখন বলতে গেলে মোটামুটি কন্ট্রোলে এই গন্ধ...
বেশিরভাগ লাশের মধ্যে মেডিসিনের গন্ধ অনুভব করি, তবে আজকের গন্ধটা ভালো লাগছে...
একদম পলি মাটির গন্ধ।
আহা, কতবছর যে গ্রামে যায় না!
মনে হচ্ছে গ্রামের মাটির গন্ধ পাচ্ছি...
আমি আর আমার কাজিন সাইকেলে করে কত মাঠঘাট যে ঘুরে বেড়াতাম...
আহা শৈশব, আহা কৈশোর...
জিজ্ঞেস করলাম ডোমকে, ভাই এই লাশের এমন গন্ধ কেন?
ডোম বলে, এক সপ্তাহের মত তাকে হত্যা করে কর্দমাযুক্ত কাঁদার নিচে পুঁতে রেখেছে। সারা শরীরে কাঁদা। মুখের ভেতরে কাঁদা। কানে কাঁদা। সারা দেহ পরিষ্কার করার পরও কাঁদার গন্ধটা যায়নি...
প্রায় ২০ মিনিটের মত ডোমসহ সেখানে বসে আড্ডা দিলাম...
ডোমের নাম ফারুক মিয়া। কিন্তু উনি নিষেধ করে দিয়েছেন, ওই নামে না ডাকতে...
নাম ধরে ডাকলে নাকি উনার অপমান লাগে...
তাই উনার আবদার, উনার প্রফেশন নিয়ে যাতে উনাকে ডাকা হয়...
এই প্রফেশনে নাকি অনেক সম্মান করেন...

আফসোস করে ডোমকে বললাম, আহা ভাই এই মানুষগুলোর কত শত পরিচিত জন আছে, অথচ একটা নাম-ঠিকানার অভাবে বেওয়ারিশ হিসেবে পড়ে আছে...
ডোম হেসে বললো, সমস্যা নাই, ওই যে লাল পাহাড় দেখতাছেন না? ওই লাল পাহাড়ে ওদের দাফন করা হবে, যদি না কারও পরিচিতি পাওয়া না যায়...
এই কাঁদার গন্ধওয়ালা লাশটাকে আজ রাতে সেখানে দাফন করা হবে...

মনে মনে নিজেকে নিজে বললাম, বাহ, একটা লাশের নাম অন্তত দেয়া হলো, কাঁদার গন্ধওয়ালা লাশ...
কাছে গিয়ে কানে কানে লাশটাকে বললাম, ও লাশ ভাই, আপনার নাম শুনেছেন তো?
কাঁদার গন্ধওয়ালা লাশ...
খুব সুন্দর নাম...
মনে থাকবে তো? এখানে আপনি ছাড়া আর কারও নাম দেয়া হয়নি কিন্তু...
কাউকে বলিয়েন না আবার, মনে রাখিয়েন লাশেরও কিন্তু কান আছে...

নয়ন বড়ুয়া
আগস্ট, ২০২১
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:৫৮
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

উহুদের যুদ্ধে ওমর এবং আবু বক্কর কেন পালিয়ে ছিলেন?

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:০৫



আসসালামু আলাইকুম।
ওমর এবং আবু বক্করের পালিয়ে যাওয়ার কারণ হলো, তারা একটা ভুল সংবাদ পেয়েছিলেন, যে নবীজি যুদ্ধে শাহাদাৎ বরন করেছেন। এটা শুনে তাদের মনোবল ভেঙে গিয়েছিল। এজন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিনে স্বদেশি ভাষা মিটে কি আশা

লিখেছেন রবিন.হুড, ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:০৭


মধ্যযুগে এবং পরাধীন ইংরেজ আমলে মাতৃভাষা বাংলার গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে কবি ও মনীষীগণ এমন সিদ্ধান্ত লিখিত ভাষ্যে জানিয়েছেন যে, স্বদেশী ভাষা ছাড়া মনে আশা পূর্ণ হয় না। কবি রামনিধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধইঞ্চার ফুলও যে খাওয়া যায় সেটা আজ প্রথম খেয়ে জানলাম।

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:৩০








আমাদের দেশে অনেক ফুল খাওয়া হয়, খাওয়া যায়। কিন্তু ধইঞ্চার ফুলও যে খাওয়া যায় বা সেটার একটা রেসিপি তৈরী করা যায় সেটা আজ জানলাম।

আমাদের অফিসের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসিনার ডান হাত তিন খলনায়ক; ব্যাংক খাত ধ্বংসের কারিগর।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:৪৩


হাসিনার শাসনামলে গত সাড়ে ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে সীমাহীন লুটপাট হয়েছে। লুটপাটের মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছে এ খাত। এ খাত ধ্বংসের কারিগর ছিল [link|https://www.dailyamardesh.com/business/amdibpnebv21m|সাবেক তিন গভর্নর- আতিউর রহমান, ফজলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

উপেক্ষা করা

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:০৪

উপেক্ষা করা
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

উপেক্ষা করা একটুও পছন্দ না
তবুও ঘটে এমন নিত্য ঘটনা।
আমি তোমাকে প্রস্তাব দিয়েছি পেতে
দু’জনে থাকতে পারি একসাথে যাতে।
কিন্তু উপেক্ষিত হয়েছি তোমায় চেয়ে
এত উচ্চতা নেই, শূন্য হৃদয়ে।
আমি আগ্রহ দেখাই,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×