মোদী নির্বাচনে জিতার পর থেকেই আমরা আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের ব্যাপক দৌড় ঝাপ দেখতে পাচ্ছি। পাশাপাশি সামুতেও অনেকেই বিভিন্ন বিশ্লষন দিচ্ছেন। আমি অনেকদিন ধরেই ফেসবুকে দূরের যাত্রীর বিভিন্ন বিশ্লষন ফলো করছিলাম। আমার কাছে এই বিশ্লষন গুলো অনেক বেশি নিরপেক্ষ এবং বাস্তবিক মনে হওয়ায় সামুতে শেয়ার কারছি।
এই পোষ্টের কোন লেখাই আমার না। মূল লেখক বিভিন্ন সময় পর্ব আকারে এই লেখা গুলো লিখেছেন আমি তাই প্রতিটি লেখার হেডিং এর পর এর প্রকাশকাল উল্লেখ করে দিচ্ছি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ: বাংলাদেশের আগামী রাজনীতিতে ভারতের পরবর্তী নির্বাচনের প্রভাব - ১
প্রকাশকাল: March 7, 2014 at 2:46am
পূর্বাভাস
ভারতে পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের তফসিল গত বুধবার ঘোষিত হয়েছে। আগামী ৭ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত ৯টি তারিখে ভারতের ১৬শ লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে। ১৬ মে-তে ফলাফল ঘোষিত হওয়ার কথা। ৩১ মে পর্যন্ত বর্তমান ১৫শ লোকসভার মেয়াদ আছে।
ভারতের এই নির্বাচনের প্রভাব বাংলাদেশের রাজনীতিতে এতই প্রবল যে গতকাল প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠার প্রথম কলামের টপেই নিউজ করা হয়েছে: বিএনপির দৃষ্টি এখন ভারতের নির্বাচনের দিকে
http://tinyurl.com/oz34lac
প্রথম আলো লিখেছে: বিএনপির নীতিনির্ধারকদের অনেকে মনে করেন, ভারতের একচেটিয়া সমর্থন না থাকলে আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন করতে হয়তো সক্ষম হতো না। এ নির্বাচনে ভারতের ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলে দেশটির বাংলাদেশ নীতিতে হয়তো কিছু পরিবর্তন আসতে পারে এবং নতুন সরকার বিএনপির ব্যাপারে এতটা নেতিবাচক না-ও হতে পারে বলে বিএনপির নেতারা আশা করছেন। এমনকি ভারতে ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলে খালেদা জিয়া সে দেশে সফরে যাওয়ারও উদ্যোগ নিতে পারেন।
বিবেচ্য বিষয়াদি
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রভাব বুঝতে হলে নিচের চারটি ইস্যু বুঝতে হবে -
১. রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা
২. ভারতের রাজনীতিতে মার্কিন ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্রভাব
৩. বাংলাদেশের রাজনীতিতে মার্কিন ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্রভাব
৪. বাংলাদেশ ও ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর বৈদেশিক অনুগত্যের বলয়
ইস্যু ১ : রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা
রাষ্ট্র হিসেবে ভারত নিজেকে আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে অতি তত্পর। আঞ্চলিক পরাশক্তি হওয়ার এই লক্ষ্যেই ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারিত ও পরিচালিত হয়। কূটনীতিক দেবযানী ইস্যুতে ভারত যে তীব্র প্রতিক্রিয়া আমেরিকাকে দেখিয়েছে, সেটা ভারতের পররাষ্ট্রনীতির সাবালকত্বেরই প্রমাণ।
ভারত কেবল সীমান্তবর্তী দেশগুলোতেই প্রভাব বিস্তার করতে চায়, তা নয়। ভারতের চোখ এখন আফগানিস্তান ছাড়িয়ে মধ্য এশিয়ার তেল-গ্যাসের ওপরও পড়েছে। ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতি বুঝতে হলে নিচের ফ্যাক্টরগুলো মনোযোগের সাথে লক্ষ করতে হবে -
১. পৃথিবীর মাত্র সাতটি দেশের নিজ দেশের বাইরে সামরিক ঘাঁটি আছে। ভারত সেই সাতটি দেশের একটি। মধ্য এশিয়ার তাজিকিস্তানের আফগান সীমান্তবর্তী ফারখোর শহরে ভারতের প্রথম ও একমাত্র বৈদেশিক বিমানঘাঁটি অবস্থিত।
২. ভারত হলো ইসরাইলের সর্ববৃহৎ সমরাস্ত্রের বাজার। রাশিয়ার পর ইসরাইলই হলো ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক অংশীদার। শুধু সামরিক ক্ষেত্রেই নয়, কৃষি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, জ্বালানি, বাণিজ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রেও দেশ দুটির সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর।
ভারত ১৯৫০ সালেই ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। ইসরাইলের সাথে ভারতের অফিসিয়ালি কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা ১৯৯১ সালে হলেও গোপন সামরিক ও গোয়েন্দা সম্পর্ক সেই ১৯৬০-এর দশক থেকেই ছিল। একাত্তরের যুদ্ধেও ইসরাইল সরাসরি ভারতকে সহায়তা করেছিল।
ভারতের সাথে ইসরাইলের এই সুদৃঢ় সম্পর্ক ভারতকে আমেরিকার সাথে দরকষাকষির ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে এনে দেয়।
৩. আফগানিস্তান ও ইরানের সাথে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক অত্যন্ত উষ্ণ। আফগানিস্তান থেকে তালিবানদের হটিয়ে উত্তরাঞ্চলীয় জোটকে ক্ষমতায় আনার ক্ষেত্রে আমেরিকা ও ইরানের সাথে ভারতও ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছিল।
৪. চীনের সাথে ভারতের সম্পর্ককে চিহ্নিত করা হয় "hot economics & cold politics" বা ‘cooptetion’ শব্দগুলো দিয়ে - যেটার মানে হলো অর্থনৈতিক cooperation ও রাজনৈতিক competition. অর্থাৎ দেশ দুটো রাজনৈতিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগী। ফলে চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত ইস্যুতে উত্তেজনা থাকলেও সেটা কোনো বিরাট সংঘর্ষ বা কূটনৈতিক বৈরিতার লক্ষণ নয়।
৫. ভারত সরকারের মালিকানাধীন ONGC গ্যাস কোম্পানি বর্তমানে প্রায় সারা বিশ্বে গ্যাস উত্তোলনের ব্যবসা করছে। ল্যাটিন আমেরিকা থেকে শুরু করে আফ্রিকা, মধ্য প্রাচ্য, মধ্য এশিয়া হয়ে দূর প্রাচ্য পর্যন্ত ONGC-এর বাণিজ্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশেও সম্প্রতি ONGC-কে বঙ্গোপসাগরে গ্যাস ব্লক ইজারা দেয়া হয়েছে।
এসব ফ্যাক্টরের কারণে বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রী লঙ্কা, পাকিস্তানের মতো ভারতীয় সীমান্তবর্তী দেশগুলোর ক্ষমতার রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব এখন আমেরিকার পক্ষেও অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয়। ভারতকে বশে রেখেই এসব দেশে মার্কিন নীতি বাস্তবায়ন করতে হয়। অর্থাৎ আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে ভারত নিজেকে প্রায় প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে এবং আমেরিকাও প্রকারান্তরে তা মেনে নিচ্ছে।
দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকার হিসেবে কংগ্রেস বা বিজেপি যারাই আসুক না কেন, আঞ্চলিক পরাশক্তি হওয়ার পলিসিগুলো থেকে তারা সরে আসবে না। এসব নীতি মূলত RAW-এর তত্ত্বাবধানে ভারতীয় শীর্ষ আমলাবর্গ, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, মিডিয়া কর্ণধারদের দ্বারা পরিকল্পিত, পরিচালিত ও বাস্তবায়িত হয়। রাজনৈতিক সরকারের ভেতরে এরাই থাকে মিনি সরকার।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ: বাংলাদেশের আগামী রাজনীতিতে ভারতের পরবর্তী নির্বাচনের প্রভাব - ২
প্রকাশকাল: March 8, 2014 at 8:05am
ইস্যু ২ : ভারতের রাজনীতিতে মার্কিন ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্রভাব
ভারতবর্ষে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের সূচনা তো ১৭৫৭ সালে। তবে সরাসরি ব্রিটিশ রানীর শাসনের সূচনা অর্থাৎ অফিসিয়ালি ব্রিটেনের উপনিবেশ হিসেবে ভারতের যাত্রা শুরু ১৮৫৭ সাল থেকে।
ঔপনিবেশিক যুগে ব্রিটিশরা কোনো একটি দেশ দখল করলে সেদেশের শিক্ষাব্যবস্থা, আইন ও বিচারব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে ব্রিটিশদের আদলে করে নিত। এতে করে প্রথম প্রথম ওইসব উপনিবেশে বিদ্রোহ ব্যাপকভাবে থাকলেও পরে ৫০ বছরের মধ্যে এমন প্রজন্ম তৈরি হতো যারা জন্মগতভাবে নেটিভ হলেও চিন্তাগতভাবে ব্রিটিশই হতো। অর্থাৎ ব্রিটিশরা শিক্ষা, আইন, বিচার, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, আধুনিকতা ইত্যাদির নামে শাসিত নেটিভদের চিন্তা-মননকে তাদের উপনিবেশ বানিয়ে নিত। ফলে ওইসব প্রজন্মের নেটিভ নেতারা ব্রিটিশ শিক্ষাদীক্ষায় বড় হয়ে ব্রিটিশদের আদর্শিক দৃষ্টিকোণ থেকেই ব্রিটিশদের বিরোধিতা করতো। যেমন, ভারতীয় উপমহাদেশের দুই "মহান" ব্রিটিশবিরোধী নেতা ব্যারিস্টার মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ও ব্যারিস্টার মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ। এদের ব্রিটিশবিরোধিতা কখনো তিতুমীর বা ভগৎ সিংয়ের ব্রিটিশবিরোধিতার মতো ছিল না।
কংগ্রেসনেতা গান্ধী-নেহরুর ব্রিটিশবিরোধিতা এতই খাঁটি ও প্রবল ছিল যে, তাঁদের অনুরোধে "স্বাধীন" ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল হন ব্রিটিশ রাজের শেষ গভর্নর জেনারেল মাউন্টব্যাটেন! [জেনারেল ইয়াহিয়াকে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে কল্পনা করা যায় কি!!!]
কিন্তু গান্ধী-নেহরু বা জিন্নাহর এই ব্রিটিশপ্রেম আসলে আশ্চর্যজনক কিছু নয়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের দূরদর্শী নীতির ফলাফলই ছিল এমন নেতৃত্ব। ১৮৮৫ সালে ইন্ডিয়ান কংগ্রেস পার্টি তো প্রতিষ্ঠাই করেছিলেন ব্রিটিশ আমলা Allan Octavian Hume, William Wedderburn ও তাঁদের সাথে কিছু ব্রিটিশ মগজের নেটিভ। ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ব্রিটিশ সরকারের অনুগত জমিদার ও ধনিক শ্রেণির হাতে।
ভারতের তথাকথিত স্বাধীনতার পরও কংগ্রেসের সেই ব্রিটেনঘেঁষা নীতিই অব্যাহত থাকে। ফলে কংগ্রেসনেতৃত্ব কখনো ব্রিটিশদের কাছ থেকে দুই শতাব্দীর ঔপনিবেশিক শোষণের ক্ষতিপূরণ দাবি তো দূরে থাক, তারা ভারতের জন্য ব্রিটিশ কমনওয়েলথের সদস্যপদ নেয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ব্রিটিশদের কৌশলী লাইনেই আগায়।
ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে গত ৬৭ বছরে ৫৪ বছরই কংগ্রেস পার্টি ভারতের শাসনক্ষমতায় থেকেছে। ফলে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত পতন পর্যন্ত পুরো সময়টায় ভারত আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সোভিয়েত ও ব্রিটেনের ঘনিষ্ঠ থাকলেও মার্কিনঘনিষ্ঠ কখনোই হয়নি।
এর স্বাভাবিক পরিণতিতে ওই ১৯৯০ দশক পর্যন্ত উপমহাদেশে মার্কিন মিত্র ছিল পাকিস্তান। সোভিয়েত পতনের পরও ভারতের কংগ্রেসনেতৃত্ব মার্কিনমুখী হওয়ার কথা ভাবেননি। বরং কংগ্রেসনেতৃত্ব আরো ব্রিটেনপন্থী হওয়ার পথেই হাঁটে। এমনকি ব্রিটিশদের সাথে সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধির উদ্যোগও নেন কংগ্রেসনেতৃত্ব। ১৯৯৫ সালে তত্কালীন কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওয়ের আমলে ব্রিটেনের সাথে Defence Consultative Group (DCG) নামে সামরিক সহযোগিতা ফোরাম গড়ে তোলা হয়। DCG-এর আওতায় ব্রিটেন-ভারতের যৌথ সামরিক মহড়াসহ সামরিক গবেষণা, প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম আদান-প্রদান হয়।
কিন্তু ২০০১ সালের টুইন টাওয়ার হামলা ও তৎ-পরবর্তী মার্কিন নেতৃত্বাধীন আফগান যুদ্ধ এই উপমহাদেশের আন্তর্জাতিক রাজনীতির বলয়কে একেবারেই পাল্টে দেয়।
আফগানিস্তানে যুদ্ধ করতে এসে সিআইএ স্পষ্ট বুঝতে পারে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে RAW-এর অনুপ্রবেশ খুবই গভীর এবং RAW-এর সাহায্য ছাড়া তালিবানদের হটানো ও পাকিস্তানের জিহাদিস্ট গ্রুপগুলোকে নিয়ন্ত্রণে নেয়া অত্যন্ত কঠিন। ২০০৯ সালে U.S.-India Business Council-এর ৩৪তম বর্ষপূর্তিতে হিলারি ক্লিনটনের মন্তব্যে ভারত প্রশ্নে নাইন-ইলেভেন-পরবর্তী মার্কিন নীতি সুস্পষ্ট হয়:
"As part of that strategy, we should expand our broader security relationship and increase cooperation on counterterrorism and intelligence sharing. As you know, America faced an extraordinary challenge ourselves after 9/11 – how to organize as a government and a people to better prevent and prepare for future attacks. India faces that same terrible challenge. And the President and I are committed to working with India in whatever way is appropriate to enhance India’s ability to protect itself."
Click This Link
ফলে ২০০২ সাল থেকে আমেরিকা তাদের ৫০ বছরের মিত্র পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে চাপে রাখতে শুরু করে ও ভারতের সাথে বৈরিতা কমানো, বিশেষত কাশ্মিরি বিদ্রোহী গ্রুপগুলোকে মদদ না-দেয়ার জন্য চাপ দেয়। নাইন-ইলেভেন-পরবর্তী বিশ্বে পাকিস্তানের তখন তালিবান ও কাশ্মির প্রশ্নে পিছু হটা ছাড়া উপায় ছিল না। পাকিস্তানের মার্কিনপন্থী প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ ওই সময়ে আইএসআই ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ইসলামপন্থী ও ভারতবিরোধী অফিসারদের হত্যা/বরখাস্ত/বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাতে থাকেন।
এতে স্বাভাবিকভাবেই ভারতের সাথে মার্কিনের সম্পর্ক উন্নত হয়। তালিবানবিরোধী যুদ্ধে ভারত ব্যাপকভাবে আমেরিকান মদদপুষ্ট উত্তরাঞ্চলীয় জোটকে সহায়তা করে। মার্কিন-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নের জোয়ারে ঐতিহাসিকভাবে ব্রিটেনপন্থী কংগ্রেস পার্টি ২০০৪ সালে মার্কিনঘনিষ্ঠ অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিং-কে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বানায়। [এই মনমোহনই গত সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনার পক্ষে ওবামার কাছে তদবির করে বাংলাদেশের হিসাবনিকাশ উল্টে দিয়েছিলেন। হ্যাঁ, বিএনপির জানা উচিত, ড. ইউনূসই উপমহাদেশের একমাত্র মার্কিন বরপুত্র নন! উপমহাদেশের আরো অনেকেই ওয়াশিংটনে তদবির করতে জানেন!]
বিশ্ব ব্যাঙ্কের সাবেক চাকুরে মনমোহনের আমলে মার্কিন-ভারত সম্পর্ক এতই বৃদ্ধি পায় যে, ২০০৫ সালে মার্কিন-ভারত পরমাণু প্রযুক্তি সহায়তা ফ্রেমওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর পরিণতিতে ২০০৮ সালে সফলভাবে মার্কিন-ভারত Civil Nuclear Agreement স্বাক্ষরিত হয়। ২০০৯ সালে ওবামা প্রশাসন ২.১ বিলিয়ন ডলার মূল্যে ভারতের কাছে ৮টি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান Boeing P-8 Poseidon বিক্রির অনুমোদন দেয়। আর ভারত মহাসাগরে চলতে থাকে মার্কিন-ভারতের বহু যৌথ মহড়া। উভয় দেশের বাণিজ্যিক লেনদেনও ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে গত ১ যুগে।
মোট কথা, ২০০২-২০১৪ যুগটি হলো উপমহাদেশে মার্কিন-ভারত প্রেমের যুগ। [দেবযানীকে নিয়ে সামান্য ভালগার আসলে বলিউড মুভির এমরান হাশমি সিনের মতোই সুড়সুড়ি ছাড়া মৌলিক কোনো বাঁক নয়।]
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ: বাংলাদেশের আগামী রাজনীতিতে ভারতের পরবর্তী নির্বাচনের প্রভাব – ৩
প্রকাশকাল: March 12, 2014 at 5:13pm
আগেই বলা হয়েছে, ব্রিটিশরা কোনো দেশে আধিপত্য টিকিয়ে রাখে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাগুলোর মাধ্যমে। অর্থাৎ শিক্ষাব্যবস্থা, আইন ও বিচারব্যবস্থাকে ব্রিটিশ মডেলে রাখার মাধ্যমে কোনো জাতির মগজকে শাসন করা হলো ব্রিটিশ স্টাইল। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণের স্টাইলটি আরো ডাইরেক্ট ও আগ্রাসী। মার্কিনীরা কোনো দেশকে নিয়ন্ত্রণ করে ওই দেশের সেনাবাহিনী, অনুগত রাজনৈতিক দল ও বুদ্ধিজীবী, জাতিসঙ্ঘ ও বিশ্ব ব্যাঙ্ক-এর খবরদারির মাধ্যমে।
ভারতীয় কংগ্রেস ও পাকিস্তানি মুসলিম লীগের মতো করে শেখ মুজিবুর রহমানও স্বাধীন বাংলাদেশে ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থা, আইন ও বিচারব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রাখেন। স্বাধীনতার পর থেকে শেখ মুজিব ভারতীয় কংগ্রেসী লাইনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি গড়ে তোলেন। স্বাধীন বাংলাদেশ হয়ে ওঠে ভারত-সোভিয়েত ব্লকের দেশ। ব্রিটেনের সাথে সুসম্পর্কও এই পররাষ্ট্রনীতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
কিন্তু স্বাধীনতার আগে পূর্ব পাকিস্তান/পুরো পাকিস্তান ছিল মার্কিন ব্লকে। মুজিবহত্যায় মদদ দিয়ে সিআইএ বাংলাদেশে মার্কিন আধিপত্য বিস্তারে সক্রিয় হয়।
১৯৭৫-এর পটপরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি মৌলিকভাবে বদলে দেন। জিয়া সম্পর্ক গড়ে তোলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর সাথে। ভারত-সোভিয়েত ব্লক থেকে বেরিয়ে মার্কিন ব্লকে প্রবেশ করে জিয়ার বাংলাদেশ। পাকিস্তানেও ১৯৭৭ সালে ভুট্টোকে হটিয়ে মার্কিনপন্থী জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় আসেন। এভাবে সাবেক পুরো পাকিস্তান আবারও মার্কিন বলয়ে আসে।
জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে এরশাদ আবারও বাংলাদেশকে ভারতপন্থী বানান। তবে ধূর্ত এরশাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকেও খুশি রাখেন।
http://tinyurl.com/oukpxg9
http://tinyurl.com/oemmx28
বিশেষত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ১৯৮৮ সালে ইরাক ও নামিবিয়ার জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী মিশনে পাঠানোর সূচনা করে এরশাদ এদেশের সেনাবাহিনীর ওপর মার্কিন নিয়ন্ত্রণের আয়োজনটি পাকাপোক্ত করে দেন। এই কথিত শান্তিরক্ষী মিশনই এখন সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন হাতিয়ার।
এরশাদ-পতনের পর ১৯৯১ সালে বিএনপি-জামায়াতের কোয়ালিশন সরকার ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ আবারও পূর্ণ মার্কিন বলয়ে প্রবেশ করে।
বিএনপি সরকার ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধ-পরবর্তী কুয়েত ও সৌদি আরবের জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী মিশনে দুই হাজারেরও অধিক বাংলাদেশি সৈন্য পাঠায় - যদিও তত্কালে বাংলাদেশসহ পুরো মুসলিম বিশ্বে ইরাকি নেতা সাদ্দামের পক্ষেই জনমত ফুঁসছিল।
তবে বাংলাদেশে মার্কিনীরা তত্কালে সবচেয়ে বড় লিডটি নেয় ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের সুযোগে। তত্কালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিনিয়র বুশের নির্দেশে উপসাগরীয় যুদ্ধফেরত ১৫টি যুদ্ধজাহাজ ও ৭ হাজারের বেশি মার্কিন স্থলসেনা, নৌসেনা, নাবিক ও বিমানসেনা ১৯৯১ সালের ১০ মে থেকে ত্রাণ কার্যক্রমের নামে বাংলাদেশে আসে। ওই অপারেশনের নাম দেয়া হয় "অপারেশন সি এঞ্জেল"।
বাংলাদেশিদের প্রতি মার্কিনীদের আবেগ উথলে ওঠার কারণ সম্বন্ধে অপারেশন সি এঞ্জেল-এর প্রধান Lt. General Henry Stackpole-এর বক্তব্যটি এখন কৌতুকপ্রদ পরিহাসের মতো শোনাতে পারে: "We went to Kuwait in the name of liberty, and we’ve come to Bangladesh in the name of humanity."
http://tinyurl.com/occ4tfs
আহা, "স্বাধীনতা" আর "মানবতা" শব্দ দুটো আমেরিকান সেনাদের মুখে কতই না মোলায়েম ও মাখনময়!
ত্রাণকার্যক্রমের আড়ালে [বিএনপি-জামায়াত সরকারের জ্ঞাতসারে] মার্কিনীরা কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামে খনিজ সম্পদের, বিশেষত ইউরেনিয়ামের, উপস্থিতি নিয়ে ব্যাপক জরিপকাজ চালায়। তখন থেকেই সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ঘাঁটি করার বিষয়েও মার্কিনীরা উত্সাহিত বোধ করছে।
ওদিকে, বিশ্ব ব্যাঙ্কের সাবেক চাকুরে ও মার্কিনঘনিষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সাইফুর রহমানের কার্যকর আর্থিক ব্যবস্থাপনার [অবশ্যই বিশ্ব ব্যাঙ্কের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী] কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি ১৯৯২-৯৩ সালে বেশ গতি পায়। ভারতীয় রুপি ও বাংলাদেশের টাকার মান তখন প্রায় সমান হয়ে গিয়েছিল। সেই পরিস্থিতিতে নরসিমা রাওয়ের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় কংগ্রেস সরকার বাংলাদেশের আকস্মিক অগ্রগতিকে ব্যাহত করতে RAW-এর মাধ্যমে দুটো আন্দোলনে মদদ দেয়:
১. জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাদানিকের সৃষ্ট গণআদালত ও গোলাম আযমের নাগরিকত্ববিরোধী আন্দোলন
২. শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন
এই সময়ে দল হিসেবে বিএনপি ও জামায়াত উভয়েই দুটি ঐতিহাসিক ভুল পদক্ষেপ নেয় - যেগুলোর দায় দল দুটোকে এখনো টানতে হচ্ছে:
১. পাকিস্তানের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পরামর্শে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়কের দাবি মেনে নিতে অস্বীকার করেন। তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে আওয়ামী লীগের আন্দোলন শুরুর আগেই নওয়াজ স্পষ্টভাবে খালেদাকে জানিয়েছিলেন, ভারতের মদদপুষ্ট ওই আন্দোলন আসন্ন এবং ওই দাবি মেনে নিলে বিএনপি পরবর্তী নির্বাচনে হেরে যাবে। [এই তথ্যটি খালেদা জিয়ার অন্যতম রাজনৈতিক উপদেষ্টা নূরুল ইসলাম ভূঁইয়া ছোটন ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর যায়যায়দিনে লিখেছিলেন।]
২. জামায়াত তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের সহযাত্রী হয়।
[এই দুই ভুলের দায় হিসেবে বিএনপিকে এখন তত্ত্বাবধায়কের জন্য হন্যে হয়ে মরতে হচ্ছে। আর জামায়াতের সেই ভুলের দায়েই ১৯৯৬ সালে বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হয় ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে না-পারলে দলটির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যেত - নিদেনপক্ষে শেখ হাসিনাকে নেতৃত্ব ছাড়তে হত। ১৯৯৫-৯৬ সালে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যকার অতি অপ্রয়োজনীয় দ্বন্দ্বের কারণে এই ঐতিহাসিক সুযোগটি হাতছাড়া হয়ে যায়। ২০১৪ সালে এসে আবারও বিএনপি ও জামায়াত সে-ধরনেরই একটি অতি অপ্রয়োজনীয় দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছে!
১৯৯৫-৯৬ সালে বিএনপির উচিত ছিল তত্ত্বাবধায়কের দাবিটি আরো দ্রুত মেনে নেয়া এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে দীর্ঘ সংলাপের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের আন্দোলনটিকে ডুবিয়ে মারা।
আর জামায়াতের উচিত ছিল, বিএনপির সাথে থেকেই বিএনপিকে তত্ত্বাবধায়কের বিষয়ে ধীরে ধীরে নরম করা, এমনকি বিএনপি রাজি না-হলেও আওয়ামী লীগ যেন কোনোমতেই সেই সুযোগে ক্ষমতায় আসতে না-পারে, সেটি নিশ্চিত করা। জামায়াতের যেসব শীর্ষনেতা তখন আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতৃত্বের সাথে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে বিএনপিকে হটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আজ তারা সবাই সেই ভারতের কারসাজিতেই মৃত্যুর মুখোমুখি। কথিত আছে, ওই সময়ে আওয়ামী লীগ-জামায়াতের গোপন বৈঠকে কোনো এক বর্ষীয়ান নেতাকে কোনো এক নেত্রী পা ছুঁয়ে সালাম করেছিলেন!]
বিএনপি-জামায়াতের পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝি ও মার্কিন-পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের ভ্রান্ত পদক্ষেপের সুযোগে ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে ভারতপন্থী আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টির কোয়ালিশন সরকার ক্ষমতায় বসে। ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সেই কংগ্রেসী পররাষ্ট্রনীতিই ধরে। ভারত-অনুগত আবদুস সামাদ আজাদকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বানান শেখ হাসিনা। ১৯৭২ সালে শেখ মুজিব বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেও সামাদ আজাদকেই বেছে নিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে অবশ্য কংগ্রেসী-ব্রিটিশ ঘরানার সামাদ আজাদের সাথে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ব্যালান্স করার জন্য মার্কিনঘনিষ্ঠ আবুল হাসান চৌধুরী কায়সার [পদ্মা সেতু দুর্নীতির দ্বিতীয় আবুল]-কে নিয়োগ দেন।
তবে হাসিনার সরকারটি কংগ্রেসী ব্রিটিশ পথেই হাঁটে। বাংলাদেশে ১৯৯৮ সালের আগ পর্যন্ত গ্যাস উৎপাদন পুরোটাই পেট্রোবাংলার অধীনে জাতীয় গ্যাস কোম্পানিগুলো কর্তৃক পরিচালিত হত। ১৯৯৮ সালে হাসিনা সরকার ব্রিটেনের কেয়ার্ন এনার্জি কোম্পানিকে বঙ্গোপসাগরের সাংগু গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন শুরুর কন্ট্রাক্ট দেয়। সেটিই ছিল বাংলাদেশে কোনো বিদেশি গ্যাস কোম্পানির প্রথম গ্যাস উত্তোলন।
২০০০ সালে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন ঢাকায় এসে শেখ হাসিনাকে মার্কিন কোম্পানির মাধ্যমে গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব দেন। কিন্তু কংগ্রেসী ব্রিটিশ মানসিকতার হাসিনা সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।
মার্কিনীরা হাসিনার ওপর ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়। বাংলাদেশে ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় ভারতেও কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল না, মার্কিনেরও কোনো আস্থা শেখ হাসিনার ওপর ছিল না। নির্বাচনের প্রাক্কালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ঢাকায় এসে আবারও দুই নেত্রীর কাছে গ্যাস বিক্রির প্রস্তাবটি দেন বলে কথিত আছে। পরে শেখ হাসিনা একাধিকবার প্রকাশ্য মিটিংয়ে বলেছেন, ওই সময়ে তিনি মার্কিনের গ্যাস বিক্রির প্রস্তাবে সাড়া দেননি বলে ২০০১ সালের নির্বাচনে জিততে পারেননি।
মার্কিন [ও পাকিস্তানের] সমর্থনে ২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় বসে। কিন্তু তার একমাস আগে, ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বরে, নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলার মাধ্যমে বিশ্বরাজনীতিতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। উপমহাদেশের রাজনৈতিক সমীকরণও উল্টে যায়। ভারতকে কাছে টেনে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে চাপে রাখতে থাকে আমেরিকা। [এই সিরিজের দ্বিতীয় কিস্তিতে বিস্তারিত আলোচিত]
বিশ্বরাজনীতির এই নতুন সমীকরণের সঠিক তাত্পর্য বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নীতিনির্ধারকরা বুঝতে ব্যর্থ হয়। ফলে বিএনপি জোট তাদের ট্রাডিশনাল ভারতবিরোধী পথে হাঁটতে থাকে। মার্কিন-ভারতের নতুন প্রেমের উষ্ণতা টের না-পাওয়ার পরিণতি শীঘ্রই ঘিরে ধরে বিএনপিকে:
১. ২০০৪ সালে উলফার জন্য পাঠানো ১০ ট্রাক অস্ত্র চট্টগ্রামে অনেকটা দৈবচক্রেই ধরা পড়ার পর ভারতের সাথে বিএনপির সম্পর্ক একেবারে শত্রুতায় রূপান্তরিত হয়। মার্কিনের কোনো অনুকম্পা ওই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই বিএনপি তখন পায়নি।
২. ২০০৫ সালে দেশব্যাপী জেএমবির উত্থানে নাইন-ইলেভেন-পরবর্তী মার্কিন প্রশাসনও বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ হয়। মার্কিনসহ পশ্চিমা দেশগুলোর অজানা ছিল না যে, বিএনপি জোটের একটি অপরিণামদর্শী অংশের কারণেই দেশে জেএমবির বিস্তার ঘটেছিল। জেএমবির মাঠ পর্যায়ের নেতৃত্বকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েও বিএনপি আর পশ্চিমাদের মন পায়নি।
২০০৫ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী খালেদা তাঁর জীবনের অন্যতম নিকৃষ্ট সিদ্ধান্তটি নেন - যেটার দায় তাঁকে ও তাঁর দলকে এখনো দিতে হচ্ছে। খালেদা ওই সময়ে সেনাপ্রধান হিসেবে রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীর মতো পরীক্ষিত সেনাকর্মকর্তাকে বাদ নিয়ে খালেদার ছোটভাই সাইদ ইস্কান্দারের তদবিরে মইন ইউ আহমেদকে নিয়োগ দেন!
মইন ছিলেন একজন ছুপা আওয়ামী লীগার। ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের মেয়াদ শেষে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে নাইন-ইলেভেন-পরবর্তী মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারত-ব্রিটেনের পছন্দকে প্রাধান্য দেয়। ফলে ২০০৭ সালে বাংলাদেশে সৃষ্ট জরুরি অবস্থার সরকারে মার্কিন অনুগত ব্যক্তিরা উচ্চপদে থাকলেও ভারতের পরিকল্পনাকেই মার্কিনীরা মেনে নেয়। মার্কিন অনুগত মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনের কাঁধে চড়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার সাথে মার্কিনীদের মধ্যস্থতা করে দেন সিআইএ-র এজেন্ট গওহর রিজভি।
কিন্তু ভারতের হাতে বাংলাদেশকে ছেড়ে দেয়ার ফলাফলটি ছিল ভয়াবহ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই বাংলাদেশে মার্কিনের পাওয়ারহাউস হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রচণ্ড আঘাত করে ভারত। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বিএনপি-জামায়াতপন্থী ও ভারতবিরোধী সেনাকর্মকর্তাদেরকে বিডিআরে পোস্টিং দিয়ে পিলখানায় হত্যা করা হয়।
পিলখানা হত্যাযজ্ঞের পর ভারতবিরোধী ও ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচিত অনেক সেনাকর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর ও বরখাস্ত করা হয়। কেবলমাত্র গোলাম আযমের ছেলে হওয়ার "অপরাধে" ২০০৯ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমীর মতো মেধাবী ও চৌকস অফিসারকে বরখাস্ত করা হয়!
২০১১ সালে র্যাব-৭-এর সাবেক কমান্ডিং অফিসার লেফট্যানেন্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীর-এর সাথে সংশ্লিষ্টতার কারণে গ্রেফতার হলে মার্কিন ও ভারত উভয়েই নড়েচড়ে বসে।
http://tinyurl.com/paag8ad
http://tinyurl.com/o38kt53
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ইসলামী উগ্রবাদের বিস্তার মার্কিন ও ভারত উভয়পক্ষেরই স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। হাসিনুর রহমানকে টানা ৪৩ দিন চোখ বেঁধে হ্যান্ডকাপ লাগানো অবস্থায় মাটিতে ফেলে রাখা ও দেয়ালের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হলেও তিনি অন্য কারো নাম বলেননি।
http://tinyurl.com/nrvl9qj
তবে গোয়েন্দারা ধারণা করেন, সেনাবাহিনীর মধ্যম সারির অফিসারদের মধ্যে হিযবুত তাহরীর-এর বিস্তার ঘটেছে। ফলে তাহরীর খোঁজার নামে কোন কোন অফিসার জামায়াতে নামাজ পড়েন, কোন কোন অফিসারের স্ত্রী হিজাব পরেন - এসবের তালিকা তৈরি হচ্ছিল বলে খবর রটে।
এসবের মধ্যেই সরকার ২০১২ সালের জানুয়ারিতে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের অভ্যুত্থান চেষ্টা প্রতিহতের খবরটি জানায়। জনৈক মেজর জিয়াউল হক সেনাবাহিনী থেকে ফেরার হন এবং তাঁর ওপর RAW-এর নির্যাতনের অভিযোগ সোশাল মিডিয়ায় আনেন।
মোটের ওপর, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হঠাৎ করেই অস্থির পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। এই সময়ে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ, গ্রামীণ ব্যাংক, যুদ্ধাপরাধের বিচার, রূপপুরে রাশিয়ান অর্থায়নে পারমাণবিক প্রকল্প, তেল-গ্যাসক্ষেত্রের ইজারা ইত্যাদি ইস্যুতে মার্কিনের সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। অবস্থা এতই খারাপ হয় যে, মার্কিন এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি রবার্ট ব্লেক বাংলাদেশে এলে শেখ হাসিনা তাঁর সাথে সাক্ষাতই করেননি! প্রধানমন্ত্রীসহ প্রভাবশালী মন্ত্রীরা প্রকাশ্যেই মার্কিনবিরোধী বক্তব্য দিতে থাকেন।
আওয়ামী লীগ ও মার্কিনের এই বিরোধ বিএনপি যথাযথভাবে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়।
ভারতও বাংলাদেশ ইস্যুতে মার্কিনের ভূমিকায় প্রকাশ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায়। বিএনপির আন্দোলন আন্দোলন খেলার ফাঁকে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন হোয়াইট হাউসে গিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে তদবির করেন।
http://tinyurl.com/ot8ltuf
মার্কিন কর্মকর্তারা নয়াদিল্লীকে জানিয়েছিল, তারা বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির সঙ্গেই "বেশি স্বস্তিবোধ" করে। কিন্তু ওবামা মার্কিন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন ভারতের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে - অর্থাৎ বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের অবস্থানকে মেনে নিতে।
ফলে যা হওয়ার তাই হয়। ৫ জানুয়ারি ২০১৪-এর একতরফা নির্বাচনকে বিএনপি ঠেকাতে পারেনি, কাদের মোল্লার ফাঁসিও জামায়াত ঠেকাতে পারেনি।
এবং ভারতের প্রকাশ্য মদদে আর মার্কিনের মৌনতায় বাংলার মসনদে বহাল তবিয়তে বসে আছেন বিনা ভোটে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া পৃথিবীর একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ: বাংলাদেশের আগামী রাজনীতিতে ভারতের পরবর্তী নির্বাচনের প্রভাব – ৪
প্রকাশকাল: March 21, 2014 at 6:43am
ইস্যু ৪: বাংলাদেশ ও ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর বৈদেশিক অনুগত্যের বলয়
বাংলাদেশ -
আওয়ামী লীগ: ভারতপন্থী [কংগ্রেসের সাথে ঐতিহাসিক রাজনৈতিক সম্পর্ক], ব্রিটেন অনুগত। তবে দলের কিছু শীর্ষনেতা মার্কিনের অনুগত, যেমন - গওহর রিজভী, আবুল মাল আবদুল মুহিত।
বিএনপি: মার্কিনপন্থী; তবে দলে কিছু ভারতের অনুগত ব্যক্তি আছেন।
জামায়াত: মার্কিন মদদপুষ্ট; সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের রাজতন্ত্রগুলোর সাথে ঐতিহাসিক রাজনৈতিক সম্পর্ক।
জাতীয় পার্টি: ভারতপন্থী; তবে এরশাদ সবসময়ই আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অন্যান্য শক্তির মন যুগিয়ে চলেছেন এবং আনুগত্যের ক্ষেত্রে সুবিধাবাদী ভারসাম্য রক্ষা করেন।
ভারত -
কংগ্রেস: ব্রিটেনপন্থী; বর্তমানে চীনের সাথে সদ্ভাব রাখার নীতিতে বিশ্বাসী।
বিজেপি: মার্কিনপন্থী; চীনের ব্যাপারে অপেক্ষাকৃত কঠোর।
আম আদমি পার্টি: মার্কিনপন্থী।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রভাব
উপরিউক্ত চারটি ইস্যু বিস্তারিত আলোচনার পর এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, ভারতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অপেক্ষাকৃত পছন্দের সরকার হলো বিজেপি সরকার - যদিও কংগ্রেসেও মার্কিনপন্থী ব্যক্তি [মনমোহন] আছেন, যাদের মাধ্যমে ভারতে মার্কিন স্বার্থ ভালোভাবেই সংরক্ষিত হচ্ছে। তবে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে কংগ্রেস সরকার মার্কিন স্বার্থ রক্ষা করলেও বৈদেশিক নীতির প্রশ্নে তারা অভ্যন্তরীণ স্বার্থের বিনিময়ে মার্কিনের সাথে দরকষাকষি করে। যেমন: বাংলাদেশের সরকার ও নির্বাচন প্রশ্নে কংগ্রেস সরকার মার্কিনকে বাধ্য করেছে আওয়ামী লীগের অবস্থান মেনে নিতে। চীনকে কন্টেইন করার প্রশ্নেও কংগ্রেস সরকার মার্কিনের পথে হাঁটছে না - তারা চীনের সাথে [ভারতের স্বার্থ রক্ষা করেই] সদ্ভাব বজায় রাখছে।
একই কথা প্রযোজ্য বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও। বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অপেক্ষাকৃত পছন্দের সরকার হলো বিএনপি সরকার - যদিও আওয়ামী লীগেও মার্কিনপন্থী ব্যক্তি [গওহর রিজভী, আবুল মাল মুহিত] আছেন, যাদের মাধ্যমে বাংলাদেশে মার্কিন স্বার্থ [টিকফা, "ইসলামী সন্ত্রাসবাদ" দমন] ভালোভাবেই সংরক্ষিত হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগ সরকার কিছু বিষয়ে মার্কিন স্বার্থ রক্ষা করলেও ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রশ্নে মার্কিনের সাথে দরকষাকষি করে। চীনকে কন্টেইন করার প্রশ্নেও আওয়ামী সরকার মার্কিনের পথে হাঁটছে না - তারা চীনের সাথে বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক বাড়িয়েই যাচ্ছে। রাশিয়ার সাথেও আওয়ামী লীগের দহরম মহরম মার্কিনের অপছন্দ।
তবে সামগ্রিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন স্বার্থের Balance of Convenience & Inconvenience বিবেচনায় ভারতের কাছ থেকে মার্কিনের প্রাপ্ত সুবিধা পুরো বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার অসুবিধার তুলনায় অনেক বেশি। তাই ভারতের সাথে মার্কিনের সম্পর্ক যত বেড়েছে, বাংলাদেশ প্রশ্নে মার্কিনকে ভারতের কাছে ততই নরম হতে হয়েছে। ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে, ওয়ান-ইলেভেনের পর বাংলাদেশে পরবর্তী সরকার প্রশ্নে মার্কিন প্রশাসন পুরোপুরি ভারতের অবস্থান [অর্থাৎ আওয়ামী সরকার]-কে সমর্থন করেছিল। কারণ বাংলাদেশের পরবর্তী সরকারের চেয়ে ভারতের সাথে মার্কিনের পরমাণু চুক্তি ও ভারত মহাসাগরে মার্কিন উপস্থিতির গুরুত্ব মার্কিন প্রশাসনের কাছে অনেক বেশি। তার ওপর পাকিস্তান ও তালিবান ইস্যুতেও ভারতের সমর্থন মার্কিনের জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ।
এসব কারণে আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে ভারতের "মিনি সরকার" [এই সিরিজের ১ম কিস্তি দ্রষ্টব্য] প্রণীত বৈদেশিক নীতিগুলোতে মার্কিন প্রশাসন কোনো হস্তক্ষেপ করছে না। ফলে দেখা যাচ্ছে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, উলফা, বঙ্গোপসাগরের তেল-গ্যাস ইত্যাদি ইস্যুতে মার্কিন প্রশাসন ভারতকে অনেকটাই ছেড়ে দিয়েছে। বিএনপি জোটও তাই এখন আর "বুকের রক্ত দিয়ে হলেও ট্রানজিট প্রতিহত করার" রণহুঙ্কার দেয় না - খোদ মার্কিনই যে এখন আর ওই ট্রানজিটের বিরোধী নয়!
অর্থাৎ সংক্ষেপে বলতে গেলে, দিল্লিতে ক্ষমতার পালাবদল হলেও আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে ভারতের "মিনি সরকার" প্রণীত বৈদেশিক নীতিগুলোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না।
বরং বাংলাদেশে কোনো দল ক্ষমতার পটপরিবর্তন চাইলে তাকে ভারতের ওইসব বৈদেশিক নীতিকে সমর্থন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েই আসতে হবে। যেমন: বিজেপি যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলেও বিএনপিকে নিচের বিষয়গুলো মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে:
১. ট্রানজিট/করিডোর প্রদান
২. ইসলামী "উগ্রবাদ" [হিযবুত তাহরীর] ও "জঙ্গিবাদ" [হরকাতুল জিহাদ, আল কায়েদা আউটফিট] দমন
৩. যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়া - অর্থাৎ জামায়াতকে চাপে রেখে জামায়াতের তথাকথিত "সংস্কার" করা, ভারত প্রশ্নে নরম করা। জামায়াত এসবে রাজি না-হলে জামায়াতকে জোট থেকে সরিয়ে দেয়া
৪. রামপাল ও বঙ্গোপসাগরে ভারতীয় বাণিজ্যিক স্বার্থরক্ষা
৫. উলফাসহ অন্যান্য বিদ্রোহী গ্রুপকে আশ্রয় না-দেয়া
৬. তিস্তাসহ অন্যান্য নদীর পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে নরম অবস্থান নেয়া
২০১২ সালের নভেম্বরে খালেদা জিয়ার আলোচিত দিল্লি সফরে উল্লেখিত ১, ২ ও ৫ প্রশ্নে খালেদা স্পষ্টই কংগ্রেস সরকারকে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছিলেন, কিন্তু আওয়ামীঘনিষ্ঠ প্রণব মুখার্জির প্রভাবে কংগ্রেসের সাথে বিএনপির ডিলটি আগায়নি:
[ http://tinyurl.com/oszfhvn ]
মোট কথা, ভারতের মার্কিনপন্থী বিজেপি বাংলাদেশের মার্কিনপন্থী বিএনপিকে কোনো ব্ল্যাঙ্ক চেক দেবে না - বরং আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে ভারতের জন্য প্রয়োজনীয় সব স্বার্থই বিএনপিকে রক্ষা করতে হবে।
তাই আগামী মে মাসে বিজেপি দিল্লিতে ক্ষমতায় বসলেই ঢাকায় শেখ হাসিনার তখত উল্টে যাবে না। বরং বিএনপিকে সময় নিয়ে কূটনৈতিক তত্পরতা চালিয়ে আওয়ামী লীগের ওপর থেকে ভারতীয় আশীর্বাদ থেকে সরাতে হবে।
বিএনপির ওই প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রও তখন স্বস্তির সাথে সহায়তা করতে পারবে, কেননা দিল্লিতে বিজেপি থাকলে মার্কিন প্রশাসন ভারতের মিনি সরকারকে বিএনপি প্রশ্নে নমনীয় করতে পারে - যেমনটা পেরেছিল ২০০১ সালে বাংলাদেশের নির্বাচনের সময়ের বিজেপি সরকারকে।
তাই আগামী মে থেকে মার্কিন-বিএনপি যদি সফলভাবে মার্কিন-বিজেপির আশীর্বাদ নিতে পারে, তাহলে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ বাংলাদেশে কোনো পরিবর্তন ঘটে যেতে পারে।
আল্লাহ সর্বজ্ঞ।
[সমাপ্ত]
.... .... ....
[বি.দ্র: লেখকের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতাদর্শ বা ভাবাবেগ দ্বারা রাজনৈতিক বিশ্লেষণ প্রভাবিত নয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ হলো রাজনৈতিক কাঠামো, ব্যবস্থা, দল ও অন্যান্য ফ্যাক্টরগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে একটি সম্ভাব্য আগাম ভাষ্য।
Click This Link
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ কোনো জ্যোতিষশাস্ত্রের অবৈজ্ঞানিক ভেলকি নয় কিংবা এর প্রেডিকশনগুলো রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলাফলের মতো অভ্রান্তও নয়।
আল্লাহই ভবিষ্যতের একমাত্র নিয়ন্ত্রণকারী।]