তুরস্ক সফরের সময় ও পরে নির্ধারিত হয় ইলিয়াস আলী’র ভাগ্য! সিলেট আওয়ামী লীগের এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন তুরস্ক সফরের সঙ্গী। সেখানে এক বৈঠকে তিনি বলেন ইলিয়াস আলীর জন্য তারা সিলেটে টিকতে পারছেন না। যা তা’ সব জঘণ্য ভাষায় সে বক্তৃতা দেয়! যার তার সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ব্যবহার করে! বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য অনুরোধ করা হয়। এরপর তুরস্ক থেকে ফেরার পর সেই নেতা সহ আরও কয়েকজন সিলেটি নেতা তাদের নেতার সঙ্গে দেখা-বৈঠক করেন। সেখানেও একই অনুরোধ-কান গরম করে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার আর্জি জানানো হয়। ওয়াকিফহাল সূত্রগুলোর মতে মূলত ওই দুই বৈঠকেই সিলেট বিএনপির এককালীন সন্ত্রাসী ক্যাডার, হালের জনপ্রিয় নেতা, সাবেক এমপি ইলিয়াস আলীর ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়! একটি সংস্থাকে বিষয়গুলো দেখতে বলে দেয়া হয়। এমন কর্তৃপক্ষের বলার ভাষা সাধারনত যা হয় এ ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ছিলোনা। কিন্তু যারা দেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়, তারা এক-দু’ কাঠি বেশি সরেস হয়! ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালক আনসারকেও তারা তেমন করে ফেলেছে!
এখন শোনা যাক ঘটনাটা কিভাবে ঘটানো হয়েছে। নানা সংস্থা আর মিডিয়া রিপোর্টের মাধ্যমে আমরা জানি অপহরণকারী তথা ইলিয়াস আলীকে যারা তুলে নিয়ে যায় তারা তার গাড়ির পিছন থেকে ধাক্কা দেয়। কিন্তু ওয়াকিফহাল সূত্রগুলো বলেছে সেই অপারেশনে সামনে-পিছনে দুটি দল ছিল। সব মিলিয়ে অভিযানে অংশ নিয়েছে ১২ জন। এর একটি দল পিছন থেকে গাড়িতে ধাক্কা দিলে ড্রাইভার আনসার গাড়ি থেকে নেমে পিছনের গাড়ির লোকজনের সঙ্গে রাগারাগি করেন। ওই সময় ওপর গাড়িটি ইলিয়াস আলীর গাড়িকে ব্যারিকেড দিয়ে দাঁড়িয়ে যায় সামনে। প্রথমে মারধর করে পিছনের গাড়িতে তুলে নেয়া হয় গাড়িচালক আনসারকে। সামনের গাড়িতে ইলিয়াস আলীকে তোলা হয় দ্রুত। এরপর ঝড়ের বেগে দুটি গাড়ি রওয়ানা হয়ে যায় দু’দিকে।
আমাকে বলা হয়েছে আসলে ইলিয়াস আলীকে মারার কোন প্ল্যান তাদের ছিলোনা। কিছু ‘উত্তম-মধ্যম’ দিয়ে ছেড়ে দেবার প্ল্যান ছিল। যাতে সবকিছু মনে থাকে। সিলেটের বিশ্বনাথ থানায় মামলার বিষয়টিও সে উদ্দেশে করানো হয়েছিল। কিন্তু এসব ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যা হয়, তা এক্ষেত্রেও ঘটেছে! ঘটনাক্রম আর তাদের নিয়ন্ত্রনে ছিলোনা। প্রথম ঘটনা হলো, এর যে এমন বিশাল বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটবে তা সংশ্লিষ্টদের ধারনায় ছিল না। মিডিয়া যে ঘটনাটিকে এত সিরিয়াসলি নেবে তাও তারা ভাবতে পারেননি। আর ইলিয়াস আলীর মতো একজন যাকে সন্ত্রাস-গুন্ডামির জন্য খোদ খালেদা জিয়া প্রায় তিন বছর জেলে পুরে রেখেছিলেন, সাইফুর রহমন যার জন্য দল ছাড়তে চেয়েছিলেন, তার নিখোঁজের বিষয়টি বিএনপি যে এভাবে এত সিরিয়াসলি নেবে তা ভাবতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।
১৭ এপ্রিল মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে (ঘড়িতে তখন ১৮ এপ্রিল) ইলিয়াস আলীকে তুলে নেয়া হয়। সূত্রগুলোর মতে ২১ এপ্রিল বেগম ইলিয়াস তথা তাহসিনা রুশদি লুনাকে সঙ্গে নিয়ে উদ্ধারের নামে যা কিছু হয়েছে, এর সবই ছিল সাজানো নাটক। কারন এর আগেই শেষ হয়ে গেছে সবকিছু! মিসেস ইলিয়াস আলী ততক্ষণে বিধবা! তার জীবনের এ সত্যটি তিনি এখনও জানেন না। ওই সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্তরা ক্যামোফ্লেক্স করতে তাকে ফোন করে, পূবাইলের একটি দোতলা বাড়ির ম্যাপ পাঠিয়ে তাকে সঙ্গে নিয়ে যায়! আশা দেখাতে তারা ইলিয়াসের মুক্তির কিছু বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা মনে করেছিলেন এসব মিডিয়ায় আসলে পরিস্থিতি পাল্টাবে! মিডিয়ায় এসেছে সেখানে স্বামীর মুক্তির স্বার্থে বেগম ইলিয়াস তাদের শর্তগুলোও মেনে নেন। এরপর বলা হয়, সবকিছু ঠিকমতো আগাচ্ছিল, কিন্তু বেগম জিয়ার সঙ্গে বেগম ইলিয়াসের সাক্ষাতের পর সবকিছু প্যাঁচ খায়! খালেদা জিয়া কোন শর্ত মানতে অস্বীকৃতি জানান। উল্টো র্যাবের সঙ্গে অভিযানে যাবার বিষয়ে তার অপছন্দের বিষয়টি মুখের ওপর জানিয়ে দেন মিসেস ইলিয়াসকে। এ অবস্থায় স্বামী না ম্যাডাম এ বিষয়টায় দোটানায় পড়েন মিসেস ইলিয়াস। গুলশানের অফিস থেকে বেরিয়ে র্যাবের সঙ্গে যাবার বিষয়টি অস্বীকার করে বসেন! তখন বলা হয়, ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেবার বিষয়টি নাকি সেখানেই থেমে যায়! খালেদা জিয়ার ইস্যু না সরকারের ফেস সেভিংস, ইজ্জত, এই দু’য়ের দ্বন্দ্বে বলি হয়ে যান ইলিয়াস আলী, ইত্যাদি!
সূত্রগুলোর মতে আসল ঘটনাক্রম নেপথ্যে ঘটেছে অন্যভাবে। ইলিয়াস আলী মূলত তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া বাহিনীর হাতে ছিলেন ৩ দিন। ঘটনা ঘটানোর পর ঢাকা থেকে সংক্ষিপ্ত একটি বার্তা আসে, “খরচ হয়ে গেছে”! সূত্রগুলোর মতে ‘খরচের’ পর গভীর রাতে একটি গাড়ি গোয়ালন্দের নিঝুম একটি এলাকায় গিয়ে থামে। তাজা দুটি লাশ নামিয়ে দেয়া হয় পদ্মা নদীতে! বিন লাদেনের কবর পাছে যদি আবার তীর্থস্থান হয়ে যায় সে ভয়ে মার্কিনিরা তার মৃতদেহের সাগর সমাধি ঘটিয়েছে। ইলিয়াস আলী ফিরলে উল্টো উৎকট পরিস্থিতির আশংকায় তাকে বা ঘটনার সাক্ষী গাড়ি চালককেও তাই আর মৃত অবস্থাতেও ভূমিতে রাখা হয়নি! এভাবে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও তার ভাইপো গাড়ি চালকের সমাধি হয় পদ্মা বক্ষে! আমি যতটা জানি এই ঘটনাক্রম সমূহ দেশের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ লোকজন জানেন। বোধগম্য কারনে আমি এখানে সূত্র উল্লেখ করতে পারিনি। সূত্র উল্লেখ ছাড়া কোন রিপোর্ট-তথ্য বিশ্বাসযোগ্য হিসাবে দাবি করা কঠিন। কেউ যদি দাবি করেন, আমার লেখার তথ্যগুলো অসত্য, ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালক জীবিত ফিরে আসবেনই, তাদেরকেও স্বাগতম! আমার লেখাকে অসত্য প্রমাণের সাফল্যে(!), দুটি জীবন যদি ফিরে আসে, তাদের স্বজনদের কাছে এরচেয়ে বেশি আনন্দের কিছু হতে পারেনা। তবে আমার লেখার তথ্য সমূহ অসত্য প্রতিষ্ঠিত করতে সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই ইলিয়াস আলী ও তার গাড়ি চালক আনসারকে জীবিত হাজির করতে হবে। আমাকে বলা হয়েছে, ইলিয়াস আলীর জীবন নাটকের শেষ অংকের ঘটনাগুলো এরমাঝে খালেদা জিয়াও জানেন। এ নিয়ে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার দায়িত্বও তিনি এড়াতে পারেন না। কারন তার প্রতিষ্ঠিত ফ্রাঙ্কেনস্টাইন সর্বশেষ তার দলেরই আরও দুটি জীবন গিলে খেয়েছে! এ দু’জন ইলিয়াস আলী ও তার নিরীহ ভাইপো গাড়ি চালক আনসার। কিন্তু এরসব বিস্তারিত জেনেও সরকারের মতো তিনি খালেদাও অভিনয় করে যাচ্ছেন! এই একটি ইস্যুতে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আন্দোলনে চাঙ্গা করার-রাখার যে মোক্ষম সুযোগ তিনি পেয়েছেন, তা হাতছাড়া করতে চাইছেন না। সে কারনে দিয়েই যাচ্ছেন হরতালের পর হরতাল! আর নাটকের পর নাটক চালিয়ে যাচ্ছে সরকারি সংস্থাগুলো!
লিঙ্কঃ ফজলুল বারী
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ৯:০৬