কেমন আছো বাংলাদেশ ? মনের খুব কাছের তাই তুমি করেই বললাম, কিছু মনে করো না। আমি জানি তুমি খুব ভাল নেই ।
দেশে রাজনৈতিক অস্হিরতা চলছে, আর যা বিপন্ন করছে দেশের স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে । শেয়ার বাজারের বেড়াসেড়া অবস্হা অনেক দিন থেকেই, লক্ষাধিক বিনিয়োগকারী যখন আশা করছিল হয়ত ভাল কিছু হতে পারে, তখন উপুর্যপরি রাজনৈতিক গোলযোগ কোন্দল এমন জায়গায় নিয়ে গিয়েছে, যে আশা করা তো দূরের কথা , কি সামনে হবে তা নিয়ে ভাবতেই শন্কা জাগে ।
তুমি এখন ভাল নেই, সেটা থেকেও যা আমাকে বেশী ভাবায়, তা হল সামনে ভাল থাকবে সে আশাটাও করতে পারছি না । এ জাতীয় আশা নিয়েই তো মানুষ বাচে, কি বল ? সরকার - বিরোধী দল, কেউই তো কিছু মানছে না । ফলাফল কি হবে ? আরো সংঘাত ? আরোও রক্ত ?
শাহবাগ আন্দোলন শুরু হওয়ার পর বেশী কিছু বুঝতে চাইনি, খুব সাদামাটা ভাবেই আশা করছিলাম এখন যুদ্ধাপরাধীদের উচিত সাজা হবে। বেটারা আর পার পাবে না । তারপর ধীরে ধীরে কেমন করে জানি কি একটা হয়ে গেল । শাহাবাগ আর মানুষের আবেগকে আগের মত টানছে না ! কেন ? কি হল ? শাহাবগের গা থেকে কেমন যেনো লীগ লীগ গন্ধ আসতে থাকল । দামী পারফিউমের গন্ধ যেমন অনেক সময় সাধারণ মানুষের ধাচে সয় না, একই ভাবে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী এই দলটির অতি সক্রিয়তাও অনেক সাধারণ মানুষের ধাচে সয় নি।
বিভিন্ন মত ও বিশ্বাসের লোক শাহাবাগে আকুন্ঠ সমর্থন জানিয়েছিল গত ৪০ উপেক্ষিত একটি মহৎ বিশ্বাস আর আশা নিয়ে । যুদ্ধাপরাধীদের ফাসী চাই, রাজাকারের বিচার চাই । এটা এদেশের গণমানুষের প্রাণের দাবী । এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ এত সহিংষতা অস্হিরতার মাঝেও কোথাও কেউ রাজাকারের বিচার চাই না এ কথা বলার সাহষ পাচ্ছেনা!
অথচ কি অবাক করা কথা ৭১ এর পরাজিত শক্তি পর দিন রাজপথে তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে, কিভাব? এত পুশিল ওরা হত্যা করল এ কয় দিনে, যা স্বাধীনতার পর ৪০ বছরেও বোধ হয় হয় নি ! আমাদের পুলিশ বাহিনী কি এতটাই অসহায় ?
বিএনপি এমপি এ্যানীতো সরাসরি সরকারকেই অভিযুক্ত করল এক টক শোতে । এ্যানী বলল বিএনপি কে মিছিল মিটিং করতে দেওয়া হচ্ছে না, আর জামাত রাজপথে মিছিল করতে পারছে নির্বিঘ্ন তত্বাবধায়ক সরকার ইসুতে বিএনপি নির্বাচনে না গেলে জামাতকে নিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার পায়তারা করছে সরকার !
হতেও পারে, কারণ জামাত নিষিদ্ধের ব্যাপক দাবী সরকারের ভিতর বাইরে থাকার পরও সরকার এবিষয় -এ খুবই অনড়, খুবই কঠোর, " জামাত নিষিদ্ধ করা যাবে না" ! এমনকি মন্ত্রীদেরও এবিষয়ে মুখ খোলা নিষেধ ! ময়লার গাড়িতে ঢিল মারার অভিযুগে ৩৭ মামলা খেলেন বিএনপি মহাসচিব, ৫৬ দিন আটকে থাকলেন জামিন ছাড়া, আর সে তুলনায় জামাত তো গোল দিচ্ছে ফাকা মাঠে !
কিন্তু সমস্যার চুরান্ত হল যখন রাজীব নামের একজন নোংরা মানষিকতার ব্যাক্তিকে এখন থেকে বিশেষ সন্মানে ভুষিত করা হল । তাকে সন্মান দেখানো বা ঘৃণা জানানো মানুষের একান্ত ব্যাক্তিগত বিষয় । কিন্তু শাহাবাগ তো ব্যক্তিগত কোন মন্চ ছিল না। এখানে বিতর্কিত কিছু ঘটানো কি খুব দরকার ছিল ? এতে কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তরান্বিত হল ? কথা তো ছিল বাংলার দিন বাংলা পরীক্ষা , যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীর পরীক্ষাটা আগে দিয়ে নেই, এ পরীক্ষায় আগে পাশ করি, পরে অন্য পরীক্ষা ।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী নিয়ে গড়ে উঠা আন্দোলনে একটু কৌশলী হয়ে, খুব সহজেই বিতর্কিত ব্লাগার ও তাদের লেখাকে পাশ কাটানো যেতো । " ধর্ম বিদ্বেষী লেখা ও তার লেখকদের সাথে শাহাবাগ আন্দোলনের কোন সম্পর্ক নেই, আমার সকল ধর্মের প্রতি উষ্কানীমুলক লেখার প্ড়তি নিন্দা জানাই " । এ জাতীয় কিছু কথা বলা কি খুবই অনৈতিক হত ?
বারূদের গুদামে আগুন লাগিয়েছে আমার দেশ । কেন ? যুদ্ধাপরাধীদের বাচানোর লক্ষ নিয়ে দেশে একটা সংঘাত সৃষ্টি করতে । মানলাম । কিন্তু কথা হচ্ছে যেভাবেই হোক, একথা গুলো যখন আমার সামনে এসে গেল, আমার পক্ষে চুপ থাকা সম্বভ হয় নি । যেটা সম্ভব হয় নি দেশের লক্ষ- কোটি ধর্ম প্রাণ মানুষের জন্য ।
আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সরকার যেকোন সময়ই করতে পারে । দ্রুত বিচার তো সরকার সবসময়ই করতে পারে । আমার এরশাদ শিকদারের বিচার দেখেছি, জেএমবি - বাংলা ভাই এর ফাসী দেখেছি, খুব একটা সময় লাগে নি! সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এগুলো কোন কঠিন কিছু না ।
আর নবীকে কটুক্তির বিচার ও শাস্তি দাবী করার সাথে যুদ্ধাপরাধের বিচারের কি সম্পর্ক ? সম্পর্কটা তো তখনই তৈরী হয় যখন সরকার হার্ড লাইনে গিয়ে সংঘাতের পথে আন্দোলনকারীদের ঠেলে দেয় । কিন্তু হার্ড লাইনে গিয়ে সরকারী হরতাল ডাকা আর গড়ী বন্ধের দরকারটা কি ? আর যদি মেনে নেওয়া হয় সরকারের কাছে দরকার ছিল, তখন প্রশ্ন জাগে এর প্রয়োগ কি করা গেছে ? হরতাল আর গাড়ী বন্ধ কি লং মার্চ বন্ধ করতে পেরেছে ?
সোজা কথায় এই লোকগুলো কোনভাবে জেনেছে তাদের প্রাণপ্রিয় নবীকে অশ্লীল ভাবে কটুক্তি করা হয়েছে, চরম বেয়াদবী করা হয়েছে । এরা তার প্রতিকার চায়, প্রতিবাদ চায়, প্রতিরোধ চায় । কিন্তু এতগুলো মানুষে এই অনুভুতি, এই আবেগ আর মানবিক মুল্যবোধকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে সামুতে, মিডিয়াতে আর এরকম আরো বেশ কিছু স্হানে।
যেখানে কাটা বিধেছে, সেটা না সরিয়ে মলম পট্টি দিয়ে কাজ হবে না । রসুলের অবমাননায় মানুষ কষ্ট পেয়েছে, এগুলো সর্ব মহলে প্রকাশ হওয়ার পরও পরিস্হিতি সামাল দেওয়া যেতো । সরকার কিছু ধর্ম বিদ্বেষী ব্লগারকে প্রচলিত আইন লংঘনের দায়ে গ্রেফতার করতে পারত। ( ছেলে ভুলানো হলেও ) " কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে" - এ জাতীয় আশ্বাস দিতে পারত । সরকারের নেতা মন্ত্রীর দল ( লোক দেখানো হলেও ) ধর্ম বিদ্বেষী ব্লগারদের কিছু " রাগ - ক্ষোভ " দেখাতে পারত । পাবলিক ( খানিকটা হলেও) খুশী হয়ে যেতো ।
একই কাহিনী ব্লগ ও ব্লগ কতৃপক্ষের জন্যও । নবী অবমাননার প্রতি কঠিন ভাষায় নিন্দা জানিয়ে ( লোক দেখানো হলেও ) একটা পোষ্ট ষ্টিকি করতে পারত । এটা কি সামুর নীতিমালা পরিপন্হী হত ?
নিজেদের কিছু ভুল ত্রুটির জন্য আন্তরিক ভাবে ( শুধু মুখের কথা হিসেবেই ) দু:খ প্রকাশ করতে পারত । সেটাকি খুবই অসন্মানজনক হত ?
তারা কিছু ব্যান খাওয়া নিক গুলোর প্রতি ( মন ভুলান হলেও ) সহানুভুতি দেখাতে পারত (যারা দাড়িপাল্লা -আসিফ এদের প্রতিবাদে গুম খুন হয়েছে) , বোতলবন্দী নিক গুলো ছেড়ে দিতে পারত !
ফলাফল কি হত ? আর কিছু না হলেও ( বেশ কিছু ) ঝামেলা দূর হত । আমি খুবই বিশ্বাস করি বেশীরভাগ মানুষই শান্তি প্রিয়, আর ঝামেলা না করাকেই পছন্দ করে ।
জানি আমার কথা অনেকেরই পছন্দ হবে না, অনেকেই বলতে শুরু করবেন, আমি মাদ্রাসায় পড়া হেফাজতি ব্লগার । আপনাদের চিন্তা আর পথ কি সমস্যা সমাধানের দিকে এগুচ্ছেনা সমস্যাকে বাড়াচ্ছে ?
এখন যদি এতগুলো মানুষের এই অনুভুতিটাকে আপনি পাশ কাটিয়ে সবাইকে যদি জামাত -ছাগু ট্যাগ লাগান, সবাইকে বলে দেন এরা সব যুদ্ধাপরাধীদের বাচাতে চাচ্ছে, সেটা কি আদৌ সমাধানের পথ দেখাবে ?
মজা করে লোকে বলে বাংলাদেশকে আল্লাহ চালায় ! এখন সেটাই শেষ ভরসা । তুমি ভাল থেকো বাংলাদেশ ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫৯