কেওক্রাডং বাংলাদেশের সবচেয়ে উচু পাহাড় না! তবে উঁচু পাহাড় কোনটি? এটা কি তাজিংডং? না সেটিও না, তাজিংডং বাংলাদেশের উঁচু দশটি পাহাড়ের মাঝেও নেই ! তবে বাংলাদেশের উচু পাহাড় কোনটি ? উচু পাহাড়টা মাপার উপায় কি ? আচ্ছা মানলাম এটা উচু পাহাড়, কিন্তু এর চেয়ে যে উচু পাহাড় নেই তার প্রমাণ কি?
বাংলাদেশের সবচেয়ে উচু পাহাড় বান্দরবন জেলার দক্ষিনে মায়ানমার সীমান্তে। প্রাচীন ম্যাপগুলোতে এর নাম মদলত্ল্যাং (Modol tuang): আর বর্তমানে ট্র্যাকারদের কাছে সাকাহাফং নামে বেশ পরিচিতি পেয়েছে।
পাহাড়ের উচ্চতা মাপার বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। আধুনিক কালে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে এর উচ্চতা মাপা হয়। এগুলো অনেক বেশী সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য দেয়। আর স্যাটেলাইটের প্রযুক্তিতে এগিয়ে আছে আমেরিকা-রাশিয়া। আমেরিকার নাসা থেকে প্রকাশিত ভৌগলিক তথ্যে দেখা যায় বাংলাদেশের সবচেয়ে উচু স্হান কেওকাড়াডং না, বরবগ এর থেকে দক্ষিন-পুবে মায়ানমার সীমান্তে । একই ভাবে রাশিয়ান স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ডেটাও বলে একই কথা ।
২০০০ -২০০৫/৬ এর দিকে বাংলাদেশের উচু পাহাড় কোনটা – এটা নিয়ে বেশ কথা হত, মতামত আসত। তখন এটা নি্যে উইকিতে বেশ আলোচনাও হত । এই সব আলোচনায় রেফারেন্স হিসেবে দেওয়া হত আমেরিকা- রাশিয়ার স্যাটেলাইট ও SRTM ডেটার কথা । SRTM ডেটাতে দেখা যেতো “কেও” বাংলার উচু চুড়া না, বরং মায়ানমার সীমান্তের একটি বিশেষ স্হানই উচু। ভৌগলিক অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশে জায়গাটা নির্দিষ্ট ছিল, কিন্ত এর নাম পরিচয় বিস্তারিত মানুষের জানা ছিল না।
অবশ্য স্যাটেলাইট ডেটার সাথে খুবই অল্প লোক পরিচিত ছিল, আর এই ডেটা কিভাবে পাঠোদ্ধার করতে হয় তাও বেশীর ভাগ মানুষের কাছে অজানা ছিল। তাই স্যাটেলাইট ডেটায় “কেওক্রাডং” উচু না, এটা লোকের বলাবলি করত, কিন্তু এথেকে খুব স্পষ্টভাবে কিছু প্রমাণ করে দেবার সামর্থ তখন আমাদের ছিল না। পাশাপাশি সময় গুগুল আর্থ জনপ্রিয় হতে থাকে, আর লোক-জনও বাংলাদেশের উচু পাহাড়টার খোজ করতে থাকে! আর যার ফলে বাংলাদেশের “সবচেয়ে উচু” জায়গাটা তখন চিহ্নিত হয়ে যায়, আর কেউ তা দেখতে চাইলে তা গুগুল আর্থে দেখানও সম্ভব হয়।
এসব ছিল স্যটেলাইট ডেটার হিসাব নিকাশ। হাতে কলমে কোন সরাসরি মাপ নেওয়ার তথ্য তখনও আমাদের কাছে ছিল না! এ বিষয়ে প্রথম যিনি তিনি হচ্ছেন ব্রিটিশ অভিযাত্রী Ginge Fullen http://www.gingefullen.com/gingefullen.html ফুলেন সাহেব মিশন নিয়েছেন বিশ্বের তাবৎ দেশের সবচেয়ে উচু চুড়াগুলোতে উঠবেন! বিশাল কষ্টসাধ্য প্রায় অসম্ভব একটা মিশন। আর সেই মিশনের ধারাবাহিকতায় তিনি হাজির হন বাংলাদেশ!
SRTM ডেটা ওপর ভিত্তি করে, GPS হাতে করে তিনি স্বশরিরে খুজে বের করেন আমাদের দেশের সবচেয়ে উচু চুড়াটা! তার সাথে গাইড ছিলেন পাহাড়ি বোম সম্প্রদায়ের মাষ্টার ” লাল ময়”। এর আগেই তিনি প্রায় শতাধিক দেশের সর্বোচ্চ চুড়া ছুয়ে ফেলেছেন, তার সাথে তার মুকুটে যোগ হল আরেকটি পালক! ফুলেন সহেব বলেন “My successful attempt to achieve a World Record to climb the highest peak in all 47 countries in Europe – a record”
ফুলেনের অভিযান পত্র-পত্রিকায় এলে এই পাহাড় নিয়ে ব্যাপক সারা পড়ে, আর আগ থেকেই সচেষ্ট বিভিন্ন এডভেন্চার ক্লাবও পেয়ে যায় সেখানে যাবার খুব স্পষট দিক নির্দেশনা! যাই হোক বাংলাদেশের ট্রেকিং দল গুলোর মধ্যে ” ইয়াহিয়া খান ” সাহেব একদল তরুণ ট্রেকার নিয়ে এই পাহাড় চড়েন সম্ভবত ২০০৮ -এ, ফুলেনের পরের বছর। আর তার দুদিন বাদে এটাতে উঠতে সক্ষম হন নেচার-এডভেন্চার দলের সদস্যরা । আর এরপর প্রতিবছরই সেখানে যাবার ধারাবাহিকতা চলতে থাকে এডভেন্চার প্রেমিকদের মাঝে।
ফুলেনের অভিযানসহ আরও বহু অভিযাণের প্রাপ্ত GPS ডেটায় দেখা গেল এটি কেওকাড়াডং থেকে অনেক উঁচু (প্রায় ২০০ ফুট), আর এর উচ্চতা ৩৪০০ ফুটের চেয়েও বেশী!
উপরের ছবিটি Lyngve Skrede এর অভিযানে তোলা। তিনি জানুয়ারী ২০১১ তে সেখানে সফর করেন: আর একটা মজার বিষয় হচ্ছে Lyngve Skrede আর Ginge Fullen এটাকে মদক মুয়াল নামেই চিনেন!
Click This Link
নীচের ছবিটি ইয়াহিয়া খান সাহেবের অভিযানের সময়ের, ছবিটি সজল খালেদ প্রকাশ করেছেন বিডিনিউজ - এ
উপরের ছবিটি Lyngve Skrede এর অভিযানে তোলা। তিনি জানুয়ারী ২০১১ তে সেখানে সফর করেন: আর একটা মজার বিষয় হচ্ছে Lyngve Skrede আর Ginge Fullen এটাকে মদক মুয়াল নামেই চিনেন!
Click This Link
এরপর বিভিন্ন দল সেখানে গিয়ে এর উচ্চতা মেপেছে,( নেচার এডভেন্চার, ডি-ওয়ে : http://www.facebook.com/dway.expeditors , বাংলাট্রেক, আরো অনেক ), আর সেই সাথে মাপা হয় “কেও” এর উচ্চতাও । আর এভাবেই প্রমান হয় কেওকড়াডং বাংলাদেশের সবচেয়ে উচু পাহাড় নয় এটা হচ্ছে মদক মুয়াল/ ত্লাং বা সাকাহাফং ।
আর “কেওক্রাডং ” এর উপরের ফলকেও লেখা আছে এটা ৩১৭২ ফুট ।
আর এই উচ্চতা গুলো আর্মির সার্ভে যন্ত্রপাতির সাহায্যে মাপা এবং খুবই সঠিক মাপ দেয়।
অন্যদিকে 1:250,000 US Army Topographic (Series U502, U.S. Army Map Service, 1955) and 1:200,000 Soviet Military Topographic map. – এতে দেখা যায় মদকের চুড়াটি ৩৪৫৪ ফিট এটাও GPS ডেটার সাথে খুবই মিলে ।
পাহাড়ের খোজ খবর নিতে বেশ আগ্রহী হয়ে ২০০৬ এ google earth – এ জায়গাটা চিহ্নিত করে একটা পাবলিক মার্ক -ও বসিয়েছিলাম । পরবর্তীতে এই জায়গাটায় google earth – আরো অনেকগুলো মার্ক পড়ে । আর এ থেকেও আপনি নিশ্চত হতে পারবেন যে হাজার হাজার google earth ইউজারদের কাছে, এই স্হানটি -ই সবচেয়ে উচু।
For the US and Rashan Maps please visit : http://www.banglatrek.org/?page_id=64
এত কিছুর পরও তর্কের খাতিরে কেউ বলতে পারে, বুঝলাম জায়গাটা ৩৪০০ ফুটের বেশী উচু, আর মানলামও এটি কেওক্রাডং থেকে উচু, কিন্তু এর থেকে উচু চুড়াও তো বাংলাদেশে থাকতে পারে ! কিভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন এটাই বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে উচু ?
এর বেশ কয়েকটি জবাব আছে । প্রথমে আসবে টপোগ্রফিক ম্যাপ। বিশ্ব ব্যাপী এটি ব্যবহার হয় পাহাড় পর্বত আর উচা নিচা জায়গার মাপ বের করার জন্য । আর বাংলাদেশের টপোগ্রফিক ম্যাপ পাবেন আপনি maps.googe.com – এ।
বাংলাদেশের টপোগ্রাফিক মাপ দেখলেও আপনার কাছে খুব সহজেই পরিষ্কার হবে যে মায়ানমার সীমান্ত – এবং বিশেষ করে মদকের ঐ চূড়াটাই দেশের সবচেয়ে উচু স্হান। সারা দেশে আর কোন ষ্হানই এরূপ উচু না!
আর একটি জবার হচ্ছে বড় বড় চূড়াগুলো বিক্ষিপ্ত ভাবে যেখানে সেখানে থাকে না । এগুলো সারিবদ্ধ ভাবে থাকে এক একটি মাউন্টেন রেন্জ – এ। আর বাংলাদেশের ৩০০০ ফুটের চেয়ে উচু রেন্জের সংখাও নির্দিষ্ট । আর এই কয়টা রেন্জ ধরে আপনি গুগুল আর্থ দেখলেই পেয়ে যাবেন উচু চুড়া গুলো!
উপরের পদ্ধতি দুটো হচ্ছে আপনি নিজের চোখে যখন খুজতে যাবেন। আর তা না করে আপনি স্যাটেলাইট ডেটা ডাউনলোড করেই পেয়ে যেতে পারেন পাহাড়ের চৌদ্দ গুষ্টির খবর ।
মদক টং/টুয়াং বা সাকাহাফং যে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পিক তা নিম্নের সবগুলো উপায়ে মিলিয়ে দেখা হয়েছে:
১ । US 1:250K Topo Map
২। Russian 1:200K topo Map
৩। SRTM data
৪। ASTER (Advanced Spaceborne Thermal Emission and Reflection Radiometer)
৫। Google Earth
৬। Data Recoarded by trekkers using
৭। handheld GPS receiver.
এছাড়াও maps.google.com – E টপগ্রফিক ম্যাপ আসে, কনটোর লাইন দেখা যায়, সেখানেও উচু একটা জায়গাই দেখা যায়। বিস্তারিত রেফারেন্স এর জন্য ” বাংলাট্রেক” এর সাইট ভিজিট করুন। http://www.banglatrek.org/
এবার আসুন আলোচনা করি, তথাকথিত সরকারি সর্বোচ্চ তাজিংডং নিয়ে : তাজিংডং এর উচ্চতা ৮৭১ মিটার, ঠেলে ঠুলে ২৮৫৬ ফুট হবে! সুত্র : Click This Link
আর বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তিনটি চুড়া :
মদকতুং/সাকাহাফং ৩৪৮০ ফুট (১০৬২ মিটার ),কোন কোন সুত্রে ৩৪৫৪ ফুট।
দ্বিতীয় জত্লং ৩৩৪৮ ফুট ( ১০২১ মিটার)
তৃতীয় দুমলং ৩৩০৬ ফুট (১০০৮ মিটার )
এছাড়া ৩০০০ ফুটের পাহাড় আছে :
সিপ্পি ৩০১৬ফুট ( ৯১৯ মিটার )
কপিতাল ৩০৮৩ ফুট (৯৪০ মিটার)
তিনমুখ পিক ৩১০০ফুট (৯৪৫ মিটার )
থাইক্যাং ও তিনদলতে পাড়ার পুব দিকের একটি পাহাড় লম্বক্র রেন্জে ৩০৬৭ ফুট।
আর এ কয়টি ছাড়াও ৯০০ মিটার পিক আছে, যেগুলো ৩০০০ ফুট না
ক্রিসতুং ৯০৮মিটার
ফনথুসিপ/নাগ পাহাড়
থানচি যাবার পথে মেরুয়া পাড়ার কাছের পাহাড় ( পশ্চিম দিকে) আর এ বিষয়ে খুব নির্ভরযোগ্য তথ্য পাবেন : http://www.banglatrek.org/ তে
এই লেখার অনেক তথ্য -ই উপরের সাইট থেকে নেওয়া । এতসব পাহাড় বাদ দিয়ে তাজিংডংকে সবচেয়ে উচু বলার রহস্যটা কি ? ?? ?? ??????? ?????? ?????? ??? ????? ???????????