আমার আব্বুর কিছু মেডিকেল টেস্ট এর রিপোর্ট নিয়ে কিছুক্ষণ আগে কাকরাইল মোড় থেকে আরামবাগ আসার জন্য রিক্সা খুঁজছিলাম। ২-৩ টা রিক্সাওয়ালার সাথে দরদাম করছি।ঠিক এই সময় পিছন থেকে এক রিক্সাওয়ালা বলল উনি যাবেন। তাকিয়ে দেখি খুব বয়স্ক একজন। ঠিক বুঝতে পারছিলাম না উঠব কি উঠব না।এরই মধ্যে উনি বললেন উ্ঠেন স্যার। ভাড়া দরকার হলে কম দিয়েন।অবাক হলাম এই কথা শুনে। আমি উঠলাম। রিক্সাতে উঠেই কেমন যেনো লাগছিলো। উনার গায়ে কোন জামা নেই। শরীরটা জীর্ণশীর্ণ। উনাকে জিজ্জাস করলাম,চাচা আপনার বয়স কত? বললেন,৭৭ এর মত। জিজ্জাস করলাম,চাচা আপনার বাড়ি কোথায়? বললেন, বরগুনা। জিজ্জাস করলাম,আপনার বাড়িতে কেউ নাই?এই বয়সে রিক্সা চালান কেন? বললেন, ১ ছেলে আছে। ও খারাপ হয়ে গেছে। মদ,জুয়া খেলে। আমার যে বাড়ি ছিলো সেটা থেকে আমারে বের করে দিছে। পরে,আরেকজনের কাছে বাড়ি বিক্রি করে দিছে। এরপর থেকে আমি ঢাকায়।জিজ্জাস করলাম,আর কেউ নাই? বললেন, না। জিজ্জাস করলাম,রিক্সা চালাতে কষ্ট হয় না? বললেন, ভাত তো খেতেই হবে।এইজন্য টাকার দরকার। আর,কেউ তো আমারে কোন কাজ ও দিবে না। তারপর বললেন, ২ ঘণ্টা পর আমার ভাড়াটা পেলেন। আমি বললাম,কেন? বললেন, আমারে বুড়া দেখে কেউ রিক্সায় উঠতে চায় না। তখন বুঝলাম,উনি কেন কম ভাড়াতে ও যেতে চাচ্ছিলেন। উনার সাথে কথা বলার পর আমার নিজের আব্বুর কথা মনে পড়ে গেলো। আমি আমার আব্বুকে সুস্থ করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি।আর এই মানুষটা দু'বেলা খাবার এর জন্য আপ্রান চেষ্টা চালাচ্ছেন। মানুষ হিসেবে তখন খুব লজ্জিত,দুঃখিত, অপমানিত বোধ করছিলাম।কারণ, আমার মত বা আমার চেয়ে বড় তো উনার ও একটা ছেলে আছে। ওই ছেলে কি এই বুড়া মানুষটাকে দু'বেলা খাবার এর বেবস্থা করে দিতে পারে না?অথছ এই মানুষটাই ওই ছেলেকে না জানি কত যত্ন করে বড় করে তুলেছিলেন। ধিক্কার ওই ছেলের প্রতি। এইরকম ছেলে থাকার চেয়ে না থাকাই ভাল।পাশাপাশি ক্রুদ্ধ এই জন্য যে, উনাকে বয়স্ক দেখে উনার রিক্সায় কেউ উঠেন না। কিন্তু কেন? এটা কি উনার প্রতি করুণা, অবহেলা নাকি সহমর্মিতা? এই ধরণের করুণা বা সহমর্মিতা না দেখানোই ভাল। কারণ, আমরা সবাই এই ধরণের করুণার চোখে উনাদের মত বয়স্ক রিক্সাওয়ালাদেরদেরকে দেখে উনাদের রিক্সায় না উঠলে উনাদের পেটে ভাত ঝুটবে না। উনারা তো আপনার কাছে ভিক্ষা চাচ্ছেন না। সবাইকে ভেবে দেখার অনুরোধ করছি।
বাসায় এসে আব্বুকে বললাম, ওই মানুষটার কথা। আব্বু আফসোস করল আর জিজ্জাস করল, উনাকে কিছু অতিরিক্ত টাকা দিয়েছি কিনা? বললাম, পকেটে ভাড়া বাদ দিয়ে ১৫০ টাকা ছিলো।তার পুরোটাই দিয়ে দিলাম। না, করুণা করে নয়। আমি ও তো একজনের ছেলে। ওই ছেলে হিসেবে ক্ষুদ্র একটা দায়িত্ববোধের পরিচয় দিলাম মাত্র। আর, এই লেখাটি লিখতে লিখতে ভাবতেছি, আমাদের সবাইকে বার্ধক্যের মুখোমুখি হতে হবে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের প্রতি কতটুকু সদয় হবে?