কিছুক্ষণ কাঁদলাম----আমার আর ভাষা নেই।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
চট্রগ্রামের নাসিরাবাদ শিল্প এলাকার শেরশাহ কলোনীতে আমার বেড়ে উঠা।বলে রাখা ভালো, এই কলোনীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অনেক গার্মেন্টস। ছোটবেলায় খুব বিরক্ত হতাম, যখন দেখতাম সকালবেলা বের হলেই অনেক মেয়ে আর ছেলে লান্স বক্স হাতে নিয়ে হেটে যাচ্ছেন গার্মেন্টস এর উদ্দেশে। ওদের সংখ্যা এত বেশি ছিলো যে, আমি ছোট মানুষ বলে ওদেরকে টপকিয়ে স্কুলে যেতে পারতাম না। মেজাজ খারাপ হয়ে যেতো এত মানুষ এর ভীড় দেখে।
আস্তে আস্তে স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলাম। তখন, শিক্ষকদের কাছে জানলাম, আমাদের দেশ মূলত চলছে গার্মেন্টস এর আয় দিয়ে। তার চেয়ে ও গুরুত্বপূর্ণ, এই সেক্টরেই সবচেয়ে বেশি মানুষ কর্মরত আছেন। মানে, এই সেক্টর আমাদের বেকারত্ব দূরীকরণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে। সেইদিন থেকেই,গার্মেন্টস এর প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা তৈরি হয়। আর সকালবেলা ঘর থেকে বের হয়ে বিরক্ত হতাম না, ওই মেয়ে আর ছেলেদেরকে লান্স বক্স হাতে নিয়ে গার্মেন্টস এ যেতে দেখতে।
সবাই বলে, আমরা নাকি ডিসিপ্লিন না মানা জাতি।কিন্তু,আমি অবাক হয়ে দেখতাম, সকাল বেলা ঘড়িতে যখন ঠিক ৭.৩০ বাজতো তারা দলবেঁধে গার্মেন্টস এর উদ্দেশে বের হতো। কখনো এর বেতিক্রম হতে দেখিনি। এমন হয়ে গিয়েছিলো, আমি ওদেরকে দেখেই বুঝতাম,এখন ৭.৩০ বাজে।
ইউনিভার্সিটি পাশ করার পর ইচ্ছে হলো, কয়দিন এই সেক্টরে কাজ করবো। যেই ভাবা সেই কাজ। আমার বাসার কাছেই কেডিএস এক্সেসরিজ নামে একটা প্রতিষ্ঠান ছিলো। এপ্লাই করে জয়েন করলাম ওইখানে। এটা মূলত গার্মেন্টস এর একটি সহায়ক প্রতিষ্ঠান। যেদিন জয়েন করলাম, সেইদিন বাসায় এসে ভাবতে লাগলাম, যে আমি ছোটবেলা ৭.৩০ টায় বের হওয়া ছেলে-মেয়েদেরকে দেখে বিরক্ত হতাম,সেই আমি আজকে ওদের পথেই হাঁটছি, ওদেরই সহকর্মী হয়ে।
জয়েন করার পরের দিন আমাকে ফ্যাক্টরিতে ওরিয়েন্টশন করানো হয়। সব ওয়ার্কারদের বলে দেয়া হ্য়,আমি উনাদের নতুন অফিসার। ওয়ার্কাররা আমাকে সালাম দিল। অনেক বয়স্ক ওয়ার্কার ছিলো ওইখানে। তারা যখন স্যার বলে ডাকছিলো, নিজের কাছে কেমন যেন লজ্জা লাগছিলো।তবে, মনে মনে একটা ভাব ও তৈরি হয়েছিলো। আমি ২ হাজার মানুষের স্যার। তিন মাস ওইখানে ছিলাম। প্রতিটা দিন নতুন কিছু না কিছু শিখেছি।
এখনো আমি স্যার। তবে ওই ওয়ার্কারদের নয়। একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হিসেবে আছি।
সাভারের এই ট্র্যাজেডি, বাংলাদেশের কোন মানুষকে কতটুকু নাড়া দিয়েছে জানি না। টিভিতে বসে দেখছিলাম নিউজগুলো। একেকটা মানুষকে জীবিত বা মৃত যখন উদ্দার করা হচ্ছিলো, মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো।কিছু কিছু ছবি আর ভিডিও দেখে মনের অজান্তে চোখ বেয়ে পানি বেরিয়ে এলো। আমি বুঝছিলাম না কেনো? ওরা তো আমার আপন কেউ না। তবু কেন এমন হচ্ছে।আমি তো ইট-কাঠ পাথরে বেড়ে উঠা একজন মানুষ। এটা তো আমার জন্য বেমানান।
সত্যি করে বলছি, ওই আহত ও নিহত মানুষগুলোকে যখন দেখছিলাম, তখন আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। যে মানুষগুলোকে দেখে আমি ছোটবেলায় বিরক্ত হতাম,সেই মানুষগুলোকে দেখে আমি আজ কাঁদছি, স্তব্দ হয়ে যাচ্ছি। আমি আসলে লেখার মত কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।শুধু একটা কথাই মনে পড়ছে, "সত্যি, মানুষ এর মন কত বিচিত্রময়।"
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন