যক্ষের ধন পাওয়ার লোভে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জিত ধন গচ্চা দিল সাতকানিয়া দক্ষিণ কাঞ্চনার আহমদ হোসেন। প্রতারক চক্রটির ফাঁদে পড়ে বিভিন্নভাবে ৭ লক্ষ টাকা খুইয়ে এখন তার দিন কাটছে বিপর্যস্ত বেশে। এ ব্যাপারে স্থানীয় জন প্রতিনিধি, প্রভাবশালী, এমনকি থানা পুলিশের কাছে বিচার চেয়েও নিরাশ হতে হয়েছে তাকে। নিরুপায় হয়ে ছুটে আসেন দৈনিক আজাদী কার্যালয়ে। খুলে বলেন তার প্রতারিত হওয়ার কাহিনী।
গুপ্তধনের খবর যেভাবে পায় :- আহমদ হোসেনের চাচার বাড়িতে কামলা হয়ে আসে চার যুবক। কাজ করতে করতে অন্যান্য বিষয়াদির ফাঁকে নুরুল কাদের চুপি চুপি জানায়, তার খালা দুইটি স্বর্ণের মুদ্রাভর্তি ডেক (ডেকচি বিশেষ) পেয়েছে। স্বপ্নে পাওয়া ডেক দুটি নিতে হলে কিছু নিয়ম কানুন মানার কথা বলা হয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় শর্তও মানতে হবে দুই একটা। কিন্তু এই শর্তগুলো মানতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে তা আমাদের নেই। তাই ডেক দুটি নিজের কাছেও রাখতে পারছে না, বিক্রিও করতে পারছে না। কেউ সাহায্য করলে খালা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে একটি ডেক দিয়ে দেয়া হবে। এ সংবাদ শুনে আহমদ হোসেনের চোখ চক্চক্ করে ওঠে।
জিকিররত রমণীকে দেখে বিশ্বাস গাঢ় হয়ঃ
গুপ্তধনের শর্ত শুনে আহমদ হোসেন ছুটে যায় ঘটনাস্থলে। দেখেন কালুনীর মা নামের জনৈকা বৃদ্ধার ঘরে তিনি হারুণ ও আলমগীর কবীর নামে অন্য দুই জন নির্দিষ্ট আসনে বসে জিকির করছে। মহিলার আদেশে আহমদ হোসেন বারান্দা থেকে গুদাম ঘরে ঢুকে। ঘরের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং জিকির রত তিনজনকে দেখে তার মন আরো দুর্বল হয়ে পড়ে। মোমবাতি জ্বালিয়ে খাটের নিচ থেকে ডেক দুটি বের করে দেখনো হয় তাকে। তিনি দেখেন, প্রতিটি ডেকে ৮০০টি করে স্বর্ণ মুদ্রা আছে।
অভিনব শর্ত, অবিশ্বাস্য ধূর্ততাঃ- ডেকে স্বর্ণমুদ্রা দেখে আহমদ হোসেন অধৈর্য হয়ে পড়েন। মহিলা তাকে শর্তগুলো খুলে বলেন। (১) প্রতিটি ২ মণ ওজনের ২০টি গরু দিয়ে মুসলিমদের মেজবান খাওয়াতে হবে। (২) ১০টি খাসি দিয়ে হিন্দুদের নিমন্ত্রণ খাওয়াতে হবে এবং (৩) ১০টি শূকর দিয়ে বৌদ্ধদের নিমন্ত্রণ খাওয়াতে হবে। শর্তে রাজি হয়ে যান আহমদ হোসেন। তাকে বলা হয় এ শর্ত তিনটি পূরণের জন্য আগামী ৭ দিনের মধ্যে ৭ লক্ষ টাকা দিতে হবে। আহমদ হোসেনও এই ফাঁকে স্বর্ণ মুদ্রা আসল কিনা যাচাই করার কথা বললে তারা রাজি হয়। নুরুল কাদের ও হারুণ বৃটেনের রাণীর ছবি সম্বলিত ১০ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণ মুদ্রা নিয়ে সাতকানিয়া মুজিব সওদাগরের স্বর্ণের দোকানে নিয়ে যান। স্বর্ণকার পরীক্ষা করে মুদ্রাটি ১০ গ্রাম ওজনের আসল স্বর্ণ মুদ্রা বলে রায় দেন।
যে কোন উপায়ে ৭ লক্ষ টাকা চা-ই চাই :
আহমদ হোসেন ইসলামী ব্যাংক কেরানী হাট শাখা থেকে এফডিআর জামানত বাবদ চার লক্ষ নয় হাজার ৮৫০ টাকা উত্তোলন করেন। এছাড়া স্ত্রী ও ভাইয়ের স্ত্রীর ১৩ ভরি ১১ আনা স্বর্ণালংকার মুজিব সওদাগরের দোকানে ৩ লক্ষ ১৪ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করেন এবং ৭ লক্ষ টাকা নিয়ে নুরুল কাদেরকে ফোন করেন টাকা নিতে আসতে। প্রতারক চক্রটি একটি মাইক্রোবাস যোগে সাতকানিয়া জোট পুকুরিয়া বাজার আসে। আহমদ হোসেন তাদের সাথে একই গাড়িতে চেপে বাঁশখালী নাপোড়া বাজার এলাকায় কালুনির মা’র ঘরে আসেন। হারুন ডেক থেকে স্বর্ণ মুদ্রা বের করে একটা পুটুলি বেঁধে আহমদ হোসেনকে দেয় এবং তিনি ৭ লক্ষ টাকা তার হাতে তুলে দেন। এরপর শুরু হয় ঝাড় ফুঁক। কিছুক্ষণ পরে নাপোড়া নজির আহমেদ কলেজ সড়ক থেকে নুরুল কাদের, আনসুর আলী ও হারুনসহ সিএনজি টেক্সি যোগে বাড়ির দিকে রওনা দেন। প্রতারক তিন জন বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজের সামনে নেমে যান এবং আহমদ হোসেন বাড়ি চলে যান। স্বর্ণকার মুজিব সওদাগরকে বাড়িতে ডেকে স্বর্ণমুদ্রাগুলো দেখান। স্বর্ণকার নানাভাবে পরীক্ষা করে জানান, মুদ্রাগুলি নকল।
বিভিন্ন জনের কাছে ধর্ণা দিয়েও লাভ হয়নিঃ-
আহমদ হোসেন প্রতারণার ঘটনাটি তার পূর্ব পরিচিত এওচিয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জানান। পরে দু’জন বাঁশখালী গিয়ে জলদী উপজেলা আদালতের সামনে হারুনকে খুঁজে পান এবং টাকা ফেরত চান। কিন্তু অতটাকা তার কাছে নেই। এরপর ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের ঘটনাটি জানান। কিন্তু তাতেও লাভ হয় নি। পরে তার পরিচিত ছনুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজার পরামর্শে বাঁশখালী থানায় একটি অভিযোগ করেন। পুলিশও এ ব্যাপারে কিছু করতে পারে নি। সর্বশেষ গত ১ মার্চ সোমবার আহমদ হোসেন পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এসে তাকে সবিস্তরে ঘটনা খুলে বলেন। পুলিশ সুপার জেড এন মোরশেদ তাৎক্ষণিক বাঁশখালী থানা পুলিশকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন বলে আহমদ হোসেন জানিয়েছেন।
দৈনিক আজাদী,৩ মার্চ,২০১০