হে প্রবাসী স্বামী! আবার তুমি আসবে ফিরে আমায় কথা দাও
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই প্রতিবছর কাজের সন্ধানে হাজারো শিক্ষিত-অশিক্ষিত যুবক মধ্যেপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকায় পাড়ি জমাচ্ছেন। জীবনের গুরত্বপূর্ন সময়টি প্রবাসে ব্যয় করেন। সোনার হরিণের পেছনে ছুটতে ছূটতে অনেক প্রবাসী যুবকের বিয়ের বয়স পার হয়ে যায়। পরিবারের সদস্যদের আহবানে কোন এক সময় বিয়ে করতে দেশে ছুটে যান। দুই মাস অথবা তিন মাসের ছুটি নিয়ে দেশে গিয়ে পাত্রী দেখতে দেখতেই ছুটির দিনগুলি শেষ প্রান্তে এসে যায়। তাই তাড়াহুড়ো করেই বিয়ের কাজটি সম্পূর্ন করতে হয়। একসময় প্রবাসী পাত্রের অনেক কদর ছিল। বর্তমানে সেই চিত্র পাল্টেছে। বর্তমানে প্রবাসী পাত্রের চাহিদা খুব একটা নাই বললেই চলে। সবাই দেশীয় পাত্রের হাতে কন্যা তুলে দিতে পছন্দ করেন। তাই বলে প্রবাসীরা অবিবাহিত থাকেন না। তাদের জন্য আল্লাহ তায়ালা জীবন-সঙ্গীনী ঠিক করে রেখেছেন এবং তাদের সাথেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
তবে সমস্যার কথা হলো বিয়ের অল্প কিছু দিন পরে নতুন বউয়ের হাতের মেহেদীর রং মুছতে না মুছতে প্রবাসী স্বামীকে আবারও কর্মস্থলে চলে যেতে হয়। আর চলে যাওয়ার মুহুত্বটি খুবই বেদনাদায়। নববধুটি কান্নায় বুক ভাসাতে থাকে। গুনগুন করে গাইতে থাকে "সুখ তুমি কি বড় জানতে ইচ্ছে করে"---একসময় নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে। সংসারে স্বামীর অনপুস্থিতিকে মেনে নেই। স্বামী দুরে থাকার কষ্টটাকে ভুলতে থাকে। কোন কোন পরিবারে শশুর-শাশুড়ী, দেবর-ননদের নির্যাতন সহ্য করতে হয়। কয়েকমাস পরেই নিজের মধ্য আরেকজনের অস্তিত্ব খুজে পায়। এই কঠিন সময়ে স্বামী পাশে নেই বলে সারাক্ষণ মন খারাপ করে। তারপর কোন একদিন একটি ফুটফুটে সন্তানের মা হয়।
সন্তানের প্রবাসী বাবাটি কলিজার টুকরার একটি ছবি পাবার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। সন্তানকে আদর করতে না পারার জন্য কাঁদতে থাকে। এই কান্না দেশের কেউ শুনতে পায় না। সন্তান মায়ের আদরে বড় হতে থাকে। বাবার অনাদরে বেড়ে উঠা সন্তান বাবাকে পাবার জন্য ব্যাকুল হতে থাকে। বাবাটি আসছি আসছি বলেই দুই তিন চার বছর পার করে দেয়। কয়েক মাসের ছুটিতে দেশে গিয়ে ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আবারও কর্মস্থলে ফিরে আসতে হয়। এইভাবেই লাখো প্রবাসীদের সংসার জীবন চলছে।
মু. নূরনবী (ঢাকা) লিখেছেনঃ---
একবার এয়ারপোর্ট গেলাম সেজে মামাকে রিসিভ করার জন্য। বিমান লেটে ল্যান্ড করবে জানতে পেরে এয়ারপোর্টে সিভিল লোকের জন্য যতটা ঘুরা যায় ততটা ঘুরে সময় কাটানোর চেষ্টা করলাম। হাঁটতে হাঁটতে কতদূর যেতেই দেখলাম শাড়ী পরা এক তরুণী অনেক জোরে শব্দ করে কান্নাকাটি করছে। আর পাশের সবাই তাকে নিবৃত করার চেষ্টা করছে। পাশের একজনকে জিজ্ঞাসা করতে যা জানলাম, তা হলো সদ্য বিবহাহিতা তরুণীর প্রাণপ্রিয় স্বামী বিদেশে চলে যাচ্ছে। আর তাতেই নবপরিণীতা এই তরুণীর অশ্রু বিসর্জন। আমাদের প্রচলিত সমাজে এ বিষয়টা লজ্জার হলেও..এমন অনেককে দেখেছি নীরবে অশ্র“ ফেলে স্বামীর পথপানে চেয়ে থাকে।
==========================================
আমাদের দেশের ৮০ লাখের বেশী মানুষ কেন প্রবাসী ?
আমাদের এই ছোট দেশে প্রতিদিন বেকার যুবকের সংখ্যা বাড়ছে। শিক্ষিত ও অশিক্ষিত বেকার যুবকরা দেশে ভাল কাজ না পেয়েই প্রবাসের দিকে ছুটেন। কেউ সখের বসে পরিবার-পরিজন থেকে দুরে থাকতে চায় না। পরিস্থিতিই প্রবাসী হতে বাধ্য করে।
প্রবাসীদের সুঃখ-দুঃখঃ
প্রবাসীদের সুখ বলতে প্রতিবছর একমাস অথবা দুইমাসের ছুটিতে দেশে গিয়ে পরিবারকে সময় দিতে পারে। বেশীর ভাগ প্রবাসী পরিবারের কোন কঠিন সময়ে পাশে থাকতে পারে না। প্রিয়জনদের মৃত্যুতে অংশগ্রহন হতে পারে না। কোন সামাজিক অনুষ্টানে অংশ গ্রহন করতে পারে না।
প্রবাসীদের অবদানঃ
প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্স দিয়ে সরকার দেশের অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধ করছে। বিদেশ থেকে প্রতিমাসে হাজার হাজার ডলার আসছে। সেই ডলার দিয়ে সরকার বিদেশী রিন পরিশোধসহ নানান উন্নয়নমুলক কাজ করছে। প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ দিয়ে নতুন নতুন দালান-কোটা, মার্কেট, মসজিদ মাদ্রাসা গড়ে উঠছে। প্রবাসীরা বিভিন্ন উৎপাদনমুখী খাতে অর্থ বিনিয়োগ করছে।
প্রবাসীদেরকে শ্রদ্ধা করুনঃ
পত্রিকার পাতা ওল্টালেই বিভিন্ন সংবাদ দেখতে পায়। তার মধ্যে প্রবাসী স্ত্রীর উপর নির্যাতন, প্রবাসীর সন্তানকে অপহরণ, প্রবাসীর ঘরে ডাকাতি ইত্যাদি। সরকার কারো বেড রুম পাহারা দিতে না পারলেও অন্তত নির্যাতিত পরিবারকে শান্তনা বা নির্যাতনকারীকে উপযুক্ত শাস্তি পারে। পরিবারকে একটু নিরাপত্তা দিতে পারলেই প্রবাসীরা নিশ্চিন্ত ঘুমাতে পারবেন।
আপনার পরিবার বা আত্বীয়স্বজন কেউ প্রবাসী হলে তার খোজ-খবর রাখুন। মাঝে মধ্যে ফোন করুন। এসএসএস করুন। প্রবাসী পরিবারের যে কোন দুঃসময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। প্রবাসীকে ঘৃনা নয়,ভালবাসুন, শ্রদ্ধা করুন।
প্রবাসে এসে প্রতারিত হবেন নাঃ
গত ২৭.০৩.২০১২ দুবাই আন্তজাতিক বিমান বন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ ৩০ জন বাংলাদেশীকে আটক করে। দালাল ও এয়ারপোর্টের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় জাল ভিসা নিয়ে ওরা দুবাই হয়ে ইউরোপ যেতে চাইছিল। কিন্ত দুবাই ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদেরকে আটক করে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। ইতিমধ্যে ৬জন দেশে ফেরত গেছে। বাকীদের কয়েক দিনের মধ্য ফেরত পাঠাবে। ওরা নাকি প্রতিজন ৬ লাখ টাকা করে দালালকে দিয়েছিল। প্রতারিত হয়ে এখন সবাই দেশে চলে যাবে। আর দালালরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। এই দুঃসংবাদটি মিডিয়াতে আসবে না।