এক সময় এমন এসেই যায়, যখন কিশোরী ছোট মেয়েটিকে নববধূর সাজে সাজতে হয়। অনেক আদর সোহাগে লালিত কন্যাকে মাতা-পিতা অপরিচিত এক যুবকের হাতে অর্পণ করেন। আদরের দুলালী স্বীয় মাতা-পিতা, ভাই-বোন হতে পৃথক হয়ে স্বামীর সাথে নতুন জীবন শুরু করে। যেখানকার পরিবেশ পিত্রালয়ের পরিবেশ থেকে সম্পূর্ন ব্যতিক্রমধর্মী হয়ে থাকে। সেখানে এ নববধুর বিভিন্ন প্রকার লোকদের বিভিন্ন প্রকার মেজাজের মানুষদের উঠা-বসা করতে হয়। টক-মিষ্টি-ঝাল-তিক্ত ফেকাসে কড়া স্বভাবের আদম সন্তাদের সম্মখীন হতে হয়। শ্বাশূড়ী ও ননদের মন রক্ষা করা প্রাণ-প্রিয় জীবন সাথীর মান-অভিমান সামাল দেওয়া, সন্তানদের দেখাশুনা এবং গৃহের দায়িত্বের বিরাট বোঝা চেপে বসে। এজন্য তাকে একজন আদর্শ মেয়ে, আদর্শ বোন, আদর্শ বধূ এবং আদর্শ মা হওয়ার প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এটা মায়েরই কর্তব্য। নিজ কন্যার উজ্ঝল ভবিষ্যতকে উজ্ঝলতর করার নিমিত্তে মাকে এই কাজটি করতে হয়।
আদরের কন্যরা! নারীদেরকে শ্বশুরালয়ে অবস্থান করতেই হয়। এটা নারীর জন্মের ভাগ্যের লিখন। তাই খুব সতর্কতার সাথে মেহমান স্বরূপ অবস্থান করতে হবে। এবং নিন্মেক্ত বিষয়গুলি অবশ্যই মনে রাখতে হবে।
১. লজ্জিত, অপমানিত ও ধিকৃত হতে হয় এমন কাজ কখনো করবে না।
২. শ্বশুরালয়ে যখন যা ভাগ্যে জোটে, তা খেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে।
৩. কোন জিনিষ অপছন্দ হলে অসন্তোস প্রকাশ করবে না।
৪. শ্বাশুড়ীতে নিজ মা জননীর মত এবং শ্বশুরকে নিজ পিতার মত শ্রদ্ধা করবে।
৫. ননদদেরকে আপন ভগ্নীর চেয়েও বেশী আদর করবে। তারাও একদিন তোমার মত পিত্রালয় ছেড়ে পরের ঘরে চলে যাবে। তাই তাদের মনে দুঃখ দিও না।
৬. প্রত্যেক ব্যাপারে তাদের সাথে পরামর্শ কর। এমন কথা বলবে না বা কাজ করবে না , যাতে তাদের অন্তরে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি হয়।
৭. পিত্রালয় থেকে কিছু এলে তা গোপন করে রাখবে না। তবে একান্ত গোপনীয় বিষয় হলে ভিন্ন কথা।
৮. শ্বাশুড়ী বা ননদদের থেকে গৃহের কাজ কর্মের দায়িত্ব বুঝে নিবে।
৯. কি কি রান্না করতে হয়? কিভাবে বন্টন করতে হয়? পানাহারের নিয়ম পদ্ধতি কি? মেহমানদের সাথে আদর-আপ্যায়নের ব্যবস্থা এ বাড়ীতে কেমন ধরনের হয়? এ সব কিছু গুরত্বের সাথে পর্যবেক্ষন, নিরীক্ষন ও লক্ষ্য করবে।
১০. শরীয়ত পরীপন্থী কুপ্রথাসমুহে কোন প্রকার সহযোগিতা করবে না। প্রকাশ্য বিরোধীতা ও করবে না। বরং ধীরে ধীরে ভালবাসা দ্বারা, নম্রতা-ভদ্রতা দ্বারা আলোচনার মাধ্যমে বুঝাতে থাকবে।
১১. অবসর সময়ে স্বামীর গৃহের এবং প্রতিবেশী মুসলমান মেয়েদের নিয়ে একত্রিত হয়ে বসে নিজের জানা মাসয়ালা-মাসায়েল ও দ্বীনের আলোচনা করবে।
১২. আদব ইলম এ প্রজ্ঞাভরা কথায় তোমার মন ভরে যাবে এবং তাদের ও অজানা অনেক কিছু জানা হয়ে যাবে।
১৩. তোমার ভাই-বোন বেড়াতে এলে আনন্দচিত্তে তাদের স্বাগত জানাও। তাদের আদর আপ্যায়নে কৃপনতা করবে না। ফিরে যাওয়ার সময় কিছু উপহার সামগ্রী সঙ্গে দিয়ে দিও।
১৪. পিত্রালয় থেকে আগমনকারী কারো সাথে কানাকানি করবে না।
১৫. আশে-পাশের থেকে আগত সাক্ষাতকারীদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে।
১৬. ছোট-ছোট মেয়েদেরকে জরুরী মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা দিবে। দ্বীনের আলোচনা করবে। বড় হওয়ার পর এরা সকলেই তোমাকে সম্মান করবে।
১৭. শ্বাশুড়ী ও ননদদের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করলে আদবের সাথে উত্তর দিবে। সময় পেলে তাদের কাজ করে দিবে।
১৮. বাড়ীতে কাউকে দাওয়াত করলে কাজ কর্মে অগ্রনী ভূমিকা পালন করবে।
১৯. স্বামীর ভাই-বোনদের সন্তান-সন্ততিকে আদর সোহাগ করবে।
২০. শিশুদের পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদ হলে কোন পক্ষপাতিত্ব করবে না। এতে এক মা সন্তুষ্ট এবং অন্য মা অসন্তুষ্ট হবে নিঃসন্দেহে।
২১. শ্বশুরালয়ের কোন কথা প্রতিবেশী বা পিত্রালয়ের কারো নিকট প্রকাশ করবে না।
২২. অন্য কারো নিকট থেকেও শ্বশুরালয়ের নিন্দা শ্রবণ করবে না। বরং পরিস্কার ভাষায় বলে দিবে যে, বোন! আজকের পরে আমার সম্মুখে আর কোন দিন এমন কথা বলবে না।
২৩. পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক ঝগড়ায় কোন পক্ষপাতিত্ব বা অংশগ্রহন করবে না।
২৪. স্বামীর ধন-সম্পদ রক্ষা করবে। স্বামীর অনুমতি ছাড়া কখনো বাইরে যাবে না। অবশ্যই পর্দা প্রথা মেনে চলবে।
২৫. নিয়মিত নামায পড়বে ও কোরআন তেলোয়াত করবে এবং স্বামীকে ও পালন করতে উৎসাহ দিবে। স্বামীকে হালাল উপার্জন করতে বলবে।
মোট কথা, একজন সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের আদর্শ মেয়ে, বধু বা মা রূপে যা কিছু শোভা পায়, সেভাবে জীবন যাপন করবে এবং নিজের চাল-চলন, আচার-আচরণ ব্যবহার এমন অমায়িক রাখবে যে, পরিবারের সকলের মন জয় করে নিতে পার। সকলেই যেন তোমার দেওয়ানা হয়ে যায়।