দেখলাম অনন্ত জলিলের দিন : দ্য ডে।
দিন-দ্যা ডে হলো ২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ইরান-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার একটি অ্যাকশন থ্রিলার চলচ্চিত্র। এটি পরিচালনা করছেন ইরানি পরিচালক মুর্তজা অতাশ জমজম।
প্রথমেই এ সিনেমার পরিচালক এবং স্ক্রিপ রাইটারকে ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশে ব্যতীত ইরান, আফগানিস্তান, হেরাত, মরক্কো, তুরস্ক প্রভৃতি দেশের সংস্কৃতিকে এ সিনেমায় তুলে ধরার জন্য। আলোক সজ্জা এবং রূপ সজ্জা উভয়ের জন্যও সংশিল্পষ্ট ব্যক্তিবর্গ ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি রাখেন।
তবে সিনেমার সাউন্ড কোয়ালিটি খুবই বাজে। মূল সংলাপের তুলনায় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের ভলিয়ম বেশি হওয়ায় সংলাপগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। যেভাবে বাজনার ভিড়ে গান হারিয়ে যায় ব্যাপারটি সেরকমই আরকি!
যারা অ্যাকশন মুভি পছন্দ করেন তাদের কাছে ছবিটি ভালো লাগতে পারে। তবে মোটের ওপর ছবিতে দর্শক ধরে রাখার মতো করে কাহিনিটি তৈরি হয়নি। কালজয়ী সাহিত্যগুলোর নায়ক নায়িকাদের সুখে পাঠক সিক্ত হয়, আহলাদিত হয় আর তাদের দুখে পাঠককুলের হৃদয়েও ক্ষরণ ঘটে। ভালো সিনেমার ক্ষেত্রেও এমনটি হওয়া উচিত। এদিক থেকে বিবেচনা করলে 'দিন : দ্য ডে' মুভির অনেক ঘাটতিই পরিলক্ষিত হবে।
সিলেট নন্দিতা সিনেমা হলের পঞ্চম তলায় যেখানে আসন সংখ্যা ৪৫০-এর অধিক সেখানে উপস্থিত ছিল ১০ থেকে ১২ জনের মতো। অনেক দর্শকই পুরো সময় ভরে ছবটি দেখেনি।
হুমায়ুন আজাদ একবার শামসুর রাহমন সম্পর্কে বলেছিলেন, ''কাকে নিয়ে সজ্জায় যেতে হয় আর কাকে নিয়ে প্রমোদে যেতে হয় শামসুর রাহমানের এ বিষয়ে জ্ঞান খুবই কম।'' দিন : দ্য ডে- মুভিটি দেখে আমারও কেন যেনো মনে হলো যেখানে যে ভয়েসে, যে উচ্চারণে, যে বলিষ্ঠতায় কথা বলতে হয় অনন্ত জলিলের তাতে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।
দিন : দ্য ডে মুভিতে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের বহুল আলোচিত সমালোচিত চলচ্চিত্র অভিনেতা অনন্ত জলিল। চলচ্চিত্রটি ইরানের ফারাবি সিনেমা ফাউন্ডেশন ও অনন্ত জলিল যৌথভাবে প্রযোজনা করছেন।
বলা হয়েছে চলচ্চিত্রটি নির্মাণে ১০০ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে ।কিন্তু ছবিটির পুঙ্খানুপুঙ্খ ক্যালকুলেনে মনে হয়েছে খরচের অ্যামাউন্টের হিসাবটি সঠিক নয়। বড়োজোর ৮ থেকে ৯ কোটি টাকার মতো খরচ হতে পারে।
ইরান, আফগানিস্তান, তুরস্কের পুলিশসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কেন্দ্রীয় চরিত্রের অভিনেতা অভিনেত্রীদের বাংলা কথাবার্তা বাস্তব শিল্পসত্তকে কিছুটা হলেও ক্ষুণ্ণ করেছে। প্রগলভতা মনে হয়েছে।
তবে মুভিতে দেশকে নানাভাবেই রিপ্রেজেন্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশি পুলিশের বিশেষ বাহিনি সোয়াদ-এর কর্মযজ্ঞকেই বেশি হাইলাইটস করার চেষ্টা করা হয়েছে।
নায়িকা বর্ষা অনন্তের অভিনয় থেকে অনেকটাই এগিয়ে। তবে অসেক সিকুয়েন্সেই তার মুখের এক্সপ্রেশন প্রশ্নবিধ। বিশেষ করে করুণ মুহূর্তগুলোতে।
আসিফ আকবর যখন গান গায়, তখন মনে হয় সে তার ভেতর থেকে গাচ্ছে। সম্পূর্ণ সত্তা দিয়ে গাচ্ছে। কিন্তু এ ছবিতে বর্ষার বিভিন্ন সিকুয়েন্সের বডি ল্যাংগুয়েজে বর্ষাকে কেমন কৃত্রিম কৃত্রিম মনে হয়েছে। মনে হয়েছে দরদের জায়গায় যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।
এছাড়া কাহিনির ঘনঘটাকেও প্রশ্নবিদ্ধ মনে হয়েছে। ঠিক যেনো জমে ওঠেনি। আবেগের জায়গাটাকে আরও একটু শান দেওয়া যেতে পারত।
তবে অভারল বাংলাদেশের জন্য অনন্ত জলিলের 'দিন : দ্য ডে' মুভিটি নিঃসন্দেহে মাইলফলক। বিগ বাজেট, দেশপ্রেম, বিদেশি সংস্কৃতির সন্নিবেশসহ, আলোক সজ্জা, রূপসজ্জাসহ নানা কারণেই ছবিটি নতুন আলোচনার দাবি রাখে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:০২