ক্লাসের সবাই মামাকে দুষ্টু রসিকচান বলেই জানে। একদিন ক্লাসে ঢুকতে আমাদের পাঁচ মিনিট দেরি হয়ে গেল। আমরা সংখ্যায় পাঁচ কী ছজন হব। রসিকচান সামনে আমরা পিছনে। পেছনের দরজা দিয়ে ক্লাসে ঢুকব এমন সময় মাওলানা ইব্রাহিম হুজুরের সঙ্গে দেখা। মাওলানা হুজুর খুবই কড়া! কিন্তু মজার বিষয় হলো তিনি কানে কম শোনেন। রসিকচান সামনে গিয়ে সালামের ভঙিতে হাত তুলে বললেন-স্যার, আপনার মেয়েকে বিয়ে করব। মামার সঙ্গে সঙ্গে আমরাও হাত তুললাম। ইব্রাহিম হুজুর জোরে বললেন-ওয়ালাইকুম আস্ সালাম। পেছনের দিকেই বেঞ্চে বসা ছিল স্যারের মেয়ে ইমা। দেখতে ভারি মিষ্টি। মামার এমন কাণ্ড দেখে সে প্রথমে ফিক করে হেসে উঠল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর খুবই মন খারাপ করল। কেবল সুযোগের অপেক্ষায় থাকল।
দ্বিতীয় পিরিয়ডে ক্লাসে ঢুকলেন মির্জা লতিফ। তিনিও মাওলানা হুজুরের মতোই কানে খাটো। বেশিরভাগ সময়ই চেয়ারে বসে বসে ক্লাস করাতেন। পড়াতেন ভূগোল। যথারীতি প্রথম বেঞ্চ থেকেই প্রশ্ন শুরু হলো। দ্রাঘিমা কী? আমিসহ হাতেগোনা কয়েকজনমাত্র সঠিক উত্তর দিলাম। সর্বশেষ মামা রসিকচানের পালা। আমাদের সবার দৃষ্টিই তখন তার দিকে। তিনি শুরু করলেন পৃথিবীর উত্তরের দিকে বিরাট এক পর্বত আছে। আমার বাড়ি সে পর্বতের কাছাকাছি। প্রথমে আমি রিকশায় এবং পরে খেয়া নৌকা করে নদী পার হলাম। অনেকক্ষণ রেখার মতো দাঁড়িয়েছি। একেই দ্রাঘিমা বলে। প্রথম দুটি শব্দ জোরে এবং শেষ তিনটি শব্দ জোরে বললেন।
উত্তর শুনে আমরা মুখটিপে হাসতে লাগলাম। অপেক্ষায় থাকলাম স্যারের প্রতিক্রিয়া দেখার। স্যারের চোখেমুখে কিন্তু মুহূতেই আনন্দের বন্যা বয়ে গেল! তিনি খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন-সাব্বাস! বেটা। আমি তো চিন্তাই করি নাই, তুই এত সুন্দর সঠিক উত্তর দিবি!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৯