মুক্তিযোদ্ধা আজিজ মিয়া সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তিন নম্বর পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের বাউর বাগ হাওর গ্রামের বাসিন্দা। বয়স প্রায় ছিয়াত্তর ছুঁইছুঁই করছে। নানাবিধ কারণে তিনি এখন শয্যাশায়ী। সরেজমিনে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারলাম- প্রায় কয়েক বছর ধরে তিনি প্যারালাইজডে ভোগছেন। দেখার কেউ নেই! ছেলে-মেয়েরা থেকেও যেন নেই! প্যারালাইজড রোগীকে নিয়মিত ঔষধ-পথ্যাদি দেওয়া আর সেবা-শুশ্রূষা করতে করতে একামাত্র পুত্রবধূ্ও ক্লান্ত!
বছর পাঁচেক ধরে অসুস্থ হলেও এখনো মেলেনি রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা সেবা। তাঁকে দেখতে যান না জীবিত সহযোদ্ধারাও। খোঁজখবর নেননি ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কিংবা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারও! ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার কিংবা চেয়ারম্যানের কথা না হয় নাই বা বললাম। যদিও সদ্য নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার! উল্লেখ্য, নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের নির্বাচনী প্রচার ও প্রসারে তাঁর পরিবারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা ছিল।
নিজের প্রাণের বিনিময়ে হলেও দেশকে রক্ষা করতে হবে- এই পণ করে একসময় জীবন বাজি রেখে দেশের স্বাধীনতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। লোকমুখে শুনেছি- যুদ্ধক্ষেত্রেও তিনি নাকি বেশ সাহসী ভূমিকা দেখিয়েছেন। নিজের বুদ্ধি ও কৌশলগুণে পাকিস্তানী হানাদারদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন সহযোদ্ধাদের। একের পর এক অপারেশনে তাঁর সাহসী ভূমিকায় প্লাটুন কমান্ডার থেকে শুরু করে সহযোদ্ধারাও অভিভূত হয়েছেন।
দেশমাতার অকোতোভয় এই বীর সৈনিক আজ জীবনযুদ্ধে বড়ই ক্লান্ত! দীর্ঘদিন প্যারালাইজডে ভোগা আজিজ মিয়া আজ বড়ই অসহায়। পারিবারিক টানাপোড়েনের কারণে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। রাষ্ট্রীয় চিকিৎসার আশায় এখনো তিনি তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষার প্রহর গুণছেন।
চারদিকে অসংখ্য মানুষ; কিন্তু কেউ যেন তাঁর আপন নয়! কেউ যেন তাঁকে দেখেও দেখে না। পৃথিবীর কাছে তিনি ক্রমশ হয়ে উঠছেন আপাঙক্তেয়!
মুনশি আলিম
জাফলং, গোয়াইনঘাট, সিলেট
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৬ রাত ২:০৩