গত ৮ই মার্চ শ্রদ্ধেয় লেখক আনু মুহাম্মদ দৈনিক প্রথম আলোতে “সজাগ মানুষেরাই এখন একমাত্র বাতি” শীর্ষক একটি কলাম লেখেছেন। তিনি লেখক ফরহাদ মজহারের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, “ জামায়াতপন্থী তাত্ত্বিকদের কেউ কেউ গত কিছুদিনের সহিংসতা ও সংঘাতকে গরিব মানুষের লড়াই বলছেন। বলছেন ইসলামপন্থী রাজনীতি বর্তমান বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াইয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে, সাম্রাজ্যবাদ ইসলামকে ধ্বংস করতে চাইছে সে কারণেই”।
প্রথমে বলে নেই ফরহাদ মজহারকে জামাতি তাত্ত্বিক বলে আনু মুহাম্মদ মিথ্যাচার করেছেন, মজহার এর লেখা থেকেই তার জবাব দিব। “একাত্তরে জামাতের ভূমিকা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। মানবতার বিরুদ্ধে তাদের অনেকে জড়িত ছিল এবং তার বিচার হওয়া দরকার, এব্যাপারে কোনই সংশয় বা সন্দেহ নাই। জামাতের মতাদর্শের বিরুদ্ধে অবশ্যই মতাদর্শিক ভাবে লড়বার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু এই কাজটি রাজনৈতিক কাজ, চিন্তা দিয়ে মোকাবিলা করবার কাজ, বুদ্ধি দিয়ে পরাস্ত করবার কর্তব্য”।
“জামাত-শিবির আওয়ামী লীগের মতোই মধ্যবিত্ত শ্রেণির দল। এই লড়াইটা মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত এবং এতে জামাতশিবিরের পরাজয় ছাড়া অন্য কোন সম্ভাবনা ছিল বলে আমার মনে হয় নি। কিন্তু আমার দেশ পত্রিকা নিষিদ্ধের দাবি ও তার সম্পাদক মাহমুদ রহমানের ওপর শেখ হাসিনার দমন পীড়নের কারনে মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি অংশ এবং ইসলামপ্রিয় বিশাল একটি জনগোষ্ঠিকে সরকার বিরূপ করে ফেলেছিল। “
অর্থাৎ ফরহাদকে জামাতি তাত্ত্বিক বলে গালি দিয়ে এক ধরনের সুখ পেলেও আনু মুহাম্মদ যে চরম ভুলভাবে ফরহাদকে তুলে ধরেছেন তা ফরহাদের লেখা পড়লেই বুঝা যায়। ফরহাদ কখনোই জামাত এর চলমান সহিংস আন্দোলনকে গরিব মানুষের লড়াই বলেননি। জামাত-শিবির আওয়ামী লীগের মতোই মধ্যবিত্ত শ্রেণির দল এ কথা ফরহাদের লেখায় উঠে আসার পরও আনু মুহাম্মদ ফরহাদের উপর দোষ চাপাচ্ছেন তিনি নাকি জামাতের আন্দোলনকে গরিবের সংগ্রাম বলেছেন। আনু মুহাম্মদের আপত্তির জায়গা মূলত ফরহাদের নিম্ন বর্ণিত মন্তব্য -
“দেলোয়ার হোসেন সাইদী কোন শ্রেণির প্রতিনিধি সেটা এই রায় ঘোষণার পর স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কমপক্ষে পঞ্চাশের বেশি গ্রামের গরিব মানুষ জীবন দিল। আহত হয়েছে কয়েক হাজার। মনে রাখতে হবে তাকে এখনও ফাঁসি দেওয়া হয় নি, শুধু ট্রাইবুনালে রায় ঘোষণা করা হোল মাত্র। এর ফলে লড়াই মধ্যবিত্তের পরিসর থেকে বেরিয়ে গ্রামীণ খেটে খাওয়া গরিব মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল। রাজনীতির গুণগত উল্লম্ফন ঘটে গেল। শহরের বিরুদ্ধে গ্রামের গরিব জনগণের বিদ্রোহের একটি পটভূমি তৈরী হোল”।
বাংলাদেশের গরিব এবং ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে মনে হয়েছে বর্তমান সরকার ইসলাম বিদ্বেষী লেখক ব্লগারদের শাস্তি না দিয়ে উলটো আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছেন, এই প্রেক্ষিতে এবং সাইদি সাহেবের রায়ের পর গ্রামের এবং জেলা শহরের সাইদি ভক্ত গরিব মানুষের বিক্ষোভ এবং পাল্টা প্রতিরোধ (এখানে শান্তি পূর্ণ বিক্ষোভ যেমন ছিল তেমনি পুলিশের নির্বিচার গুলিতে আরও বিক্ষুব্ধ জনতার সহিংস হয়ে উঠাও ছিল, জামাত-শিবিরের মারমুখি ভূমিকাও ছিল) তা চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটে কি করে উপাদান হিসেবে হাজির হয়েছে তার কনক্রিট এনালাইসিস করার প্রয়াস পেয়েছেন ফরহাদ। আনু মুহাম্মদের আপত্তির জবাব ফরহাদের লেখাতেই সুস্পষ্ট -“বিভিন্ন শ্রেণি ও শক্তির লড়াই কিভাবে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়ে, কিভাবে ক্ষমতার ভারসাম্য নানাভাবে নিজেকে ব্যক্ত ও প্রতিষ্ঠা করে সেটা বোঝার বিজ্ঞান আলাদা। যারা মার্কস ভাল করে পড়েছেন তাদের কাছে মার্কস নিছক আদর্শ মাত্র নয়। চোখের সামনে বাস্তবে কি ঘটছে, এবং সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে তা পাঠ ও বিশ্লেষণের বিজ্ঞানও বটে। বাংলাদেশ যারা নিজেদের মার্কসের ছাত্র মনে করেন, তারা বাস্তবতার প্রতি মনোযোগী না হয়ে, মতাদর্শিক ভাবে কতোটা কারেক্ট বা সঠিক সেটা সামাজিক ভাবে প্রমাণের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন”।
মূলত জামাতের প্রশ্নে আনু মুহাম্মদদের সাথে ফরহাদের মূল দ্বন্দ্বতা জামাতের রাজনীতি মোকাবিলার ধরন নিয়ে। ফরহাদ যেখানে জামাতের মতাদর্শের বিরুদ্ধে মতাদর্শিক ভাবে লড়বার কথা বলেন , চিন্তা দিয়ে মোকাবিলা করবার কথা বলেন, বুদ্ধি দিয়ে পরাস্ত করবার কথা বলেন, রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলার কথা বলেন সেখানে আনু মুহাম্মদরা জামাতের নির্মূলের দাবি তুলেন।
এবার এই লেখার মূল আলোচনায় প্রবেশ করব। আনু মুহাম্মদ ফরহাদকে ক্রিটিক করেছেন তিনি নাকি বলছেন ইসলামপন্থী রাজনীতি বর্তমান বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াইয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ে ইসলাম যে প্রেরণা হতে পারে তা ফরহাদ তার নিজের লেখায় তুলে ধরেছেন, কিন্তু ফরহাদ আবার এটা ক্লিয়ার করেছেন তার লেখায় যে ইসলামকে রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রতিষ্ঠার পক্ষে তিনি নন। ফরহাদ পলিটিক্যাল ইসলামের কথা বলেন নি তার প্রমান তার বয়ান থেকেই শুনুনঃ " নিঃসন্দেহে নবী করিমের ইজ্জত ও ইসলামের মর্যাদা রক্ষা এ লড়াইয়ের প্রধান বিষয়, কিন্তু এটা নয় যে বাঙালি জাতীয়তাবাদের মতোই আমরা ইসলাম ধর্মকে রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেমেছি। আমরা লড়ছি আত্মমর্যাদার জন্য, শেখ হাসিনা আমাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছেন। আমরা লড়ছি গণতন্ত্রের জন্য—যেখানে ইসলাম, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি তো অবশ্যই, একই সঙ্গে অন্য সব জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতির সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/03/04/190532#.UTg00qKegmd
সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার লড়াইয়ে ইসলাম যে উপাদান হতে পারে ফরহাদের এই বয়ানের প্রতিক্রিয়ায় আনু মুহাম্মদ যে যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করেন তা বিপ্লবী ইসলাম প্রশ্নে তাঁর অজ্ঞতা, ইতিহাস এর একদেশদর্শী মূল্যায়ন, ক্ষেত্র বিশেষে অপব্যাখ্যাই তুলে ধরে। আনু মুহাম্মদ বলেন, “আর বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদ আর ইসলামপন্থী রাজনীতির সম্পর্ক মোটেই সরল নয়। ১৯৯০ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ধর্মপন্থী রাজনীতির ওপর ভর করেই সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন পরিচালিত হয়েছে।“
যে “মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একটি খুঁটি যদি হয় ইসরায়েল, আরেকটি অতি অবশ্যই সৌদি আরব। এই সৌদি আরবের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছাড়া ইরাক ও লিবিয়ায় মার্কিন আগ্রাসন কিংবা সিরিয়ায় দখলের প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হওয়া সম্ভব ছিল না। শুধু সৌদি আরব নয়, মধ্যপ্রাচ্যের আরও বেশ কয়েকটি দেশ ইসরায়েলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। ইরানবিরোধী মার্কিনপন্থী জোট তৈরিতেও এই দেশগুলো পশ্চিমা বিশ্বের প্রধান ভরসা। একদিকে আল-কায়েদা ও তালেবানবিরোধী কথাবার্তা আমরা শুনি বটে, কিন্তু লিবিয়া ও সিরিয়ায় এ ধরনের গোষ্ঠীগুলোকেই মদদ দিয়েছে ও দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরাক ও লিবিয়ায় আগে সেক্যুলার সংবিধান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট সরকার সেই সংবিধান বাতিল করে শরিয়া আইনের অনেক ধারা যুক্ত করেছে। আফগানিস্তানে আশির দশকে সরকার সামগ্রিক সংস্কার করতে উদ্যত হয়েছিল,তাকে ইসলামপন্থীদের দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রই উচ্ছেদ করেছিল। এখন কারজাই সরকার নিজে টিকে থাকতে মার্কিন সেনাদের সরে যেতে বলছে। আর মার্কিনরা তালেবানদের সঙ্গে বৈঠক করতে চেষ্টা করছে”।
“ইহুদি-খ্রিষ্টানবিরোধী রাজনীতি আর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী রাজনীতি এক কথা নয়। সাম্রাজ্যবাদ মানে শুধু বুশ বা ওবামা বা কিছু ইহুদি ব্যবসায়ী নয়, এটি একটি বিশ্বব্যবস্থা। এর চালকদের মধ্যে খ্রিষ্টান, ইহুদি যেমন আছে মুসলমান-হিন্দুও আছে। আবার প্যালেস্টাইন থেকে শুরু করে ভেনেজুয়েলা পর্যন্ত যে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী প্রতিরোধ, সেখানে মুসলমানদের পাশাপাশি আমরা খ্রিষ্টান, ইহুদি, হিন্দু পরিচয়ের মানুষদেরও দেখি। ধর্মপরিচয় দিয়ে রাজনীতি শনাক্ত করা যায় না। কেননা এক ধর্মের মধ্যেই বহু সুর থাকে। বুশের গড ইরাকে হামলার নির্দেশ দেয়, শাভেজের গড তাকে রুখে দাঁড়াতে বলে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা ইসলাম ও আল্লাহ-রাসুলের দোহাই দিয়েই এ দেশের লাখ লাখ মানুষকে খুন-ধর্ষণসহ ভয়ংকর অপরাধ করেছে। আবার অন্যদিকে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা আল্লাহ-রাসুলের নাম নিয়েই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। আল্লাহ ও ধর্মের অর্থ তাই দুজনের কাছে ভিন্ন। একজনের কাছে নিপীড়নের অবলম্বন, আরেকজনের কাছে নিপীড়িতের আশ্রয়। আমাদের ইতিহাসে পাকিস্তান আমল তো বটেই, বাংলাদেশেরও সরকার ও ক্ষমতাবানেরা নিপীড়কের অবলম্বন হিসেবেই বরাবর ধর্মকে ব্যবহার করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র মওলানা ভাসানী ধর্মনির্বিশেষে জনগণের মুক্তির সংগ্রামে ইসলামের নিপীড়িতের ভাষা মানুষের কাছে উপস্থিত করেছিলেন। সেই ভাষা কোনো ধারা হিসেবে এখনো দাঁড়ায়নি। মানুষের লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই হয়তো একদিন তা দাঁড়াবে।“
“ধর্মপরিচয় দিয়ে রাজনীতি শনাক্ত করা যায় না। কেননা এক ধর্মের মধ্যেই বহু সুর থাকে। বুশের গড ইরাকে হামলার নির্দেশ দেয়, শাভেজের গড তাকে রুখে দাঁড়াতে বলে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা ইসলাম ও আল্লাহ-রাসুলের দোহাই দিয়েই এ দেশের লাখ লাখ মানুষকে খুন-ধর্ষণসহ ভয়ংকর অপরাধ করেছে। আবার অন্যদিকে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা আল্লাহ-রাসুলের নাম নিয়েই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। আল্লাহ ও ধর্মের অর্থ তাই দুজনের কাছে ভিন্ন। একজনের কাছে নিপীড়নের অবলম্বন, আরেকজনের কাছে নিপীড়িতের আশ্রয়।“
“বুশের গড ইরাকে হামলার নির্দেশ দেয়, শাভেজের গড তাকে রুখে দাঁড়াতে বলে”- আনু মুহাম্মদ যে জায়গায় ভুলটা করছেন তা হচ্ছে গডকে দ্বিখণ্ডিত করা। বুশ যখন বলেন, “ঈশ্বর তাঁকে বলেছেন ইরাক আক্রমন করতে” (যে ইরাক আক্রমন হয়েছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে এবং যার উদ্দেশ্য ছিল ইরাকের তেল সম্পদ লুণ্ঠন করা এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে মার্কিন আধিপত্য সুসংহত করা) তখন বুঝতে হবে বুশ গড না শয়তানের সাক্ষাৎ প্রতিনিধি হিসেবেই কাজ করেছেন, কিন্তু জনগণকে ধোঁকা দেয়ার জন্য গড এর প্রেরণার কথা বলেছেন। আবার শাভেজ খ্রিষ্ট ধর্মের চেতনায় অন্যায় অবিচার আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার যে শক্তি নিহিত ( যিশু খ্রিস্ট তাঁর সমকালীন শাসকদের অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে খ্রিস্ট ধর্মের মহান আদর্শ নিয়েই রুখে দাঁড়িয়েছেন) তাকে “ থিওলেজিয়ান লিবারেশন” তত্ত্বের মধ্য দিয়ে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ের উপাদান হিসেবে ব্যাবহার করেছেন। তাই বুশ যিশু খ্রিষ্টের প্রবর্তিত ধর্মের অনুসরন না করে বরং যিশুর আদর্শের বিপরীত কাজ করেছেন, “বুশের গড” প্রত্যয় ব্যাবহার করে তাই “ধর্ম নিপীড়কের অবলম্বন” এ কথা বলার কোন ফুরসৎ নেই কেননা বুশ যিশুর মহান ধর্মের আদর্শ ধারন করেননি! ধর্ম পরিচয় দিয়ে রাজনীতি শনাক্ত করা যায় না কারন এক ধর্মের মাঝে বহু সুর। প্রায়োগিক ক্ষেত্রে ধর্মের বহু সুর থাকবেই কিন্তু মুলসুর একটাই তা হচ্ছে অন্যায় অবিচার আর জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, সেই মূলসুর যারা ধারন করে তাদের রাজনীতিও ধর্ম পরিচয়েই হয়। সমাজের সকল বিষয়েরই অপব্যাবহার, অপব্যাখ্যা সম্ভব। মূলধারার চেতনা থেকে বিকৃত ধারার পার্থক্য বের করে মূল চেতনার ভিত্তিতে চলাই মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক দাবি। সমাজতন্তের মাঝেও বহু সুর আছে, লেনিনের সমাজতন্ত্র আর স্তালিনের সমাজতন্ত্র এক নয়, স্তালিন এর নির্বিচার আচরন, চরম স্বৈরাচারী ভূমিকার উপর ভিত্তি করে সমাজতন্ত্রকে আধিপত্যবাদী আর সাম্রাজ্যবাদী বলা ঠিক হবে কিনা? মিখাইল গর্বাচেভ এর সংস্কারবাদী নীতি যা সোভিয়েত ইউনিয়নকে পুঁজিবাদের কোলে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে তার উপর ভিত্তি করে সমাজতন্ত্রকে বিচার করলে সমাজতন্ত্র পুঁজিবাদের বেদিতে সঁপে দেয়া এক ক্ষয়িষ্ণু মতাদর্শ হিসেবেই বিবেচিত হবে, আর বাজার অর্থনীতির উপর ভর করে চীনের কম্যুনিস্ট পার্টি সমাজতন্ত্রের যে বিকৃত রূপ তুলে ধরেছে তার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করলে সমাজতন্ত্রকে পুঁজিবাদের হাতিয়ার বলা যুক্তিযুক্ত হবে কিনা। এখন চীনকে তো কিছুদিন আগে এক কলামে বদরুদ্দীন উমর সাম্রাজ্যবাদী বললেন। এই চীনকে দেখে কেউ যদি সমাজতন্ত্রকে সাম্রাজ্যবাদী আদর্শ বলে, আপনি কি একমত হবেন? তাহলে সমাজতন্ত্রের যে ব্যাবহারিক নানান রূপ, নানা সুর তার ভিত্তিতে কি আনু মুহাম্মদ বলবেন সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শ দিয়ে রাজনীতির পরিচয় সনাক্ত করা যায় না? তিনি কি বলতে রাজি হবেন সমাজতন্ত্র নিপীড়কের অবলম্বন? নাকি তিনি মূল ধারার সমাজতন্ত্র আর বিকৃত সমাজতন্ত্রের মাঝে পার্থক্য করে অগ্রসর হবেন?
আনু মুহাম্মদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দোসর তালেবান, আল কায়েদা, সৌদি আরবকে ইসলামপন্থি বলেন কি করে? যে তালেবান আমেরিকার অস্ত্র নিয়ে আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতা দখল করে, যে সৌদি আরব ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, ফিলিস্তিন সহ মুসলিম বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার স্বার্থ সুরক্ষায় নিরন্তর কাজ করে যায় তাকে ইসলাম বিরোধীই বলতে হবে। এজিদ তো নিজেকে মুসলিম দাবি করত তাই বলে এজিদের ইসলামকে কি আপনি ইসলাম বলবেন নাকি ইসলাম বিরোধী বলবেন? এসব মুসলিম নামধারী ইসলাম বিরোধী শক্তিকে ইসলাম পন্থি বলার কোন যুক্তি থাকতে পারেনা, এদের কর্মকাণ্ডের দোহাই দিয়ে বিপ্লবী ইসলামের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ভুমিকাকে নাকচ করে দেয়ার দুরভিসন্ধি সমর্থন যোগ্য নয়। ইসলামের মহান আদর্শ থেকে বিচ্যুত তালেবান, আল কায়েদা আর আরবের ভণ্ড মুসলিম নামধারী অত্যাচারী শাসকদের ধর্মের অনুসারী বলে চালিয়ে দিয়ে ধর্মকে নিপীড়কের অবলম্বন বলার মাঝে এক প্রকার বুদ্ধিবৃত্তিক সন্ত্রাস নিহিত রয়েছে। অপধর্ম কিংবা বিকৃত ধর্মকে উদাহরণ হিসেবে টেনে এনে বাংলাদেশের বামপন্থি কিছু বুদ্ধিজীবী সব সময়ই দাবি করেন ধর্ম শোষণ এবং সাম্রাজ্যবাদের সেবায় লিপ্ত, ধর্ম শোষিত জনগনের প্রতিরোধ স্তব্ধ করার জন্যে শোষকশ্রেণী কতৃক আবিষ্কৃত হাতিয়ার । তারা বলেন, ধর্ম বঞ্চিত শ্রমজীবীদেরকে ধোঁকা দেবার জন্যে এবং তাদের বঞ্চনাকে গ্রহণযোগ্য করে তুলবার জন্যে ব্যবহৃত হয় । এ বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না যে, দুনিয়ার আর দশ টা জিনিসের মত ধর্মেরও অপব্যবহার সম্ভব । ধর্মকে মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করে ফেললে তা মুনাফাখোরদের হাতে জাতিসমূহকে দাসত্ব শৃঙ্খলে আবদ্ধ করার যন্ত্রে পরিণত হয় । জনগণকে ধোঁকা দেবার জন্যে সাম্রাজ্যবাদের ফাঁদস্বরূপ বিকৃত ধর্ম এবং খাঁটি গঠনমূলক ধর্ম এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য না করে ধর্ম সম্পর্কে মূল্যায়ন চরম অযৌক্তিক এবং অন্যায় ।
১৯৯০ এর আগ পর্যন্ত ধর্মপন্থী রাজনীতির ওপর ভর করেই সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন পরিচালিত হয়েছে বলে তুলে ধরে আনু মুহাম্মদ মিথ্যাচার করেছেন। সাম্রাজ্যবাদের ফাঁদস্বরূপ বিকৃত ধর্ম কে দায়ি না করে তিনি ধর্মপন্থী রাজনীতির উপর দোষ আরোপ করার যে অপপ্রয়াস চালান তা উপরেই বিশদভাবে আলোকপাত করেছি। কিন্তু আনু মুহাম্মদ অত্যন্ত সুকৌশলে ৯০ এর আগের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ইসলাম পন্থি রাজনীতির উদাহরণ টানতে ভুলে গিয়েছেন। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সমস্ত চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিয়ে সংঘটিত হওয়া ১৯৭৯ এর ইরানের ইসলামী বিপ্লব এর কথা বেমালুম ভুলে গেলেন তিনি। ভারতবর্ষে তিতুমির, হাজি শরিয়তুল্লাহ, দুদু মিয়ার ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম, ফকির বিদ্রোহ, ফরাসি উপনিবেশবাদ এর বিরুদ্ধে আলজেরিয়ার ইসলাম পন্থিদের সংগ্রাম সহ দেশে দেশে উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে ইসলাম এর যে বিপ্লবী ভূমিকা প্রধান উপাদান হিসেবে কাজ করেছে তাই সাম্রাজ্জবাদের মোকাবেলায় ইসলামী রাজনীতির পটভূমি হিসেবে কাজ করতে সক্ষম। ইসলামের বিপ্লবী শিক্ষা যে কোন অন্যায়, অবিচার, শোষণ-জুলুম এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আহবান জানায়। এর ভিত্তিতেই উপনিবেশবাদ, পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ এর বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াইয়ে ইসলামী রাজনীতির অবস্থান সুস্পষ্ট। ১৯৯০ এর আগে শতাব্দীব্যাপী প্রায় সবগুলো ইসলামী দেশেই প্রকাশ্যে বা গোপনে ইসলামী আন্দোলনের সবগুলোই স্বৈরাচারী, পুঁজিবাদী, ঔপনিবেশবাদী অথবা বস্তুবাদী মতাদর্শ যা নব্যঔপনিবেশিকতা নামে পরিচিত ইত্যাদির বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছিল হয়ত নানা কারনে তার অনেকগুলোই সফল হয়নি। ইরানবিরোধী মার্কিনপন্থী জোট তৈরিতেও এই দেশগুলো ( সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, আমিরাত ইত্যাদি মুসলিম দেশ) পশ্চিমা বিশ্বের প্রধান ভরসা বললেও আনু মুহাম্মদ ইরানের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী চলমান ভূমিকা যে ইসলাম এবং ৭৯ এর ইসলামী বিপ্লবের মতাদর্শ থেকেই উৎসারিত তা নিয়ে কিছুই উল্লেখ করেন নি।
রাজনীতি বিশ্লেষক একবাল আহমদ যিনি ছিলেন খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাইদ এর গুরু তাঁর বয়ানেই তুলে ধরব ইরানের ইসলামী বিপ্লবের স্বরূপ -
“তথাপি ইতিহাসবিদরা ইরানি বিপ্লবকে একটি যুগান্তকারী বিপ্লব হিসাবেই উপস্থাপন করে। এই বিপ্লব আধুনিক ইতিহাসের অন্য যেকোনো ঘটনার চেয়ে ফরাসি বিপ্লবের সাথেই অধিক তুলনীয়। ফরাসি বিপ্লবের মতোই এই বিপ্লবের গুরুত্ব এর তাৎক্ষণিক ফলাফলে নয় বরং সেসব প্রবণতায় যা এই বিপ্লবের প্রভাবে উদ্ভূত হয়েছে এবং যেসব ভীতি এ বিপ্লব জাগিয়ে তুলেছিল। ফরাসি বিপ্লব যেমনিভাবে ইউরোপে এক নবযুগের সূচনা করেছিল তেমনি ইরানি বিপ্লবও মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশেষত তৃতীয় বিশ্বে অনুরূপ প্রভাব ফেলেছিল। ফরাসি বিপ্লব যেমন ইউরোপে একটি যুদ্ধ-বিগ্রহের সূচনার ইঙ্গিত দিয়েছিল ঠিক তেমনিভাবে ইরানি বিপ্লবও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়াকে প্রভাবিত করেছে। আবার, ফরাসি বিপ্লব ঠিক যেমনিভাবে ইউরোপে ব্রিটেনের প্রভাব-প্রতিপত্তির প্রতি হুমকি স্বরূপ হয়েছিল এবং পরবর্তীতে যার ফলে ইউরোপে ব্রিটেনের হস্তক্ষেপ বেড়ে যায়, ঠিক তেমনি ইরানি বিপ্লবের ফলেও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিনস্বার্থ সর্বপ্রথম হুমকির মুখে পড়ে এবং পরিণতিতে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন উপস্থিতি ও হস্তক্ষেপ আরও প্রসারিত হয়।
অন্যভাবে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় উত্তর-ঔপনিবেশিক যুগে ইরানি বিপ্লব ছিল ফরাসি বিপ্লবের মতোই অনন্য এবং পরবর্তী বিকাশের ভিত্তি প্রসবিনী, ঠিক যেমনি ফরাসি বিপ্লব ছিল শিল্প-বিপ্লবের যুগে। জানুয়ারি ১৯৭৮ এ শুরু হওয়া গণজাগরণের সফল সমাপ্তি ঘটে ১৯৭৯ সনের ১১ ফেব্রুয়ারি। উত্তর-ঔপনিবেশিক যুগে চীন, আলজেরিয়া, কিউবা, ভিয়েতনাম, লাওস, এঙ্গোলা, মোজাম্বিক এবং গিনি-বিসাউ প্রভৃতি দেশে সংঘটিত দীর্ঘ সশস্ত্র-লাড়াইয়ের বিপ্লবী মডেল থেকে ইরানের এই গণবিপ্লব ছিল সর্বপ্রথম ব্যতিক্রম। দীর্ঘ সশস্ত্র-লড়াইয়ের বিপ্লবী-মডেলের বিপরীতে ইরানে ঘটেছিল এক ব্যাপক গণঅভ্যুত্থান এবং এটি ছিল সমসাময়িক ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং অব্যাহত গণআন্দোলন। মাত্র একবছরের মধ্যে, ১৯৭৮ - ইরানে প্রায় ৩০ হাজার আন্দোলনকারী নিহত হয়। এই আন্দোলন সরকারী দমন-পীড়নের মুখেও এর জঙ্গি কিন্তু সংঘাতহীন (non-violent) চরিত্র এবং শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার জন্য ছিল অতুলনীয়। সাধারণভাবেই, এই বিপ্লবের মনোযোগী পাঠ গণঅভ্যুত্থান ও আন্দোলনমুখী রাজনীতির শিক্ষা গ্রহণের জন্য জরুরি।“ এ প্রসঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী শিক্ষা বিষয়ের অধ্যাপক অধ্যাপক হামিদ আলগার লিখেছেন: "ফরাসি ও রুশ বিপ্লবের সঙ্গে ইরানি বিপ্লবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হল, শেষোক্তটির ধর্মীয় পটভূমি বা শেকড়। ধর্মই ছিল ইরানের ইসলামী বিপ্লবের প্রধান চালিকা-শক্তি। এ বিপ্লবের স্ফুলিঙ্গ বা ফুলকি উত্থিত হয়েছিল মসজিদ থেকে এবং শেষ পর্যন্ত তা ইসলামী বিপ্লবকে বিজয়ী করে।" আইরিশ লেখক ফ্রেড হলিডে'র মতে, জনগণের বিপুল অংশকে আকৃষ্ট করার দিক থেকে ইরানের ইসলামী বিপ্লব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিপ্লব।ইসলাম-প্রেম, ন্যায়-কামীতা, সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা, দেশের স্বাধীনতা রক্ষা, মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং মজলুম মানুষের প্রতি সহায়তার কারণে এ বিপ্লব সঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে ব্লক তা তার এক দিকে রয়েছে ইসলামী ইরান, হামাস, হিজবুল্লাহ জোট অন্যদিকে রয়েছে ভেনেজুয়েলা, কিউবা সহ ল্যাটিন আমেরিকান জোট। ভেনেজুয়েলার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজ ও ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ‘সাম্রাজ্যবাদের’ বিরুদ্ধে একসঙ্গে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ব্লক তৈরির কাজ অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যান।
আমরা প্রথমে দেখব তাত্ত্বিকভাবে মতাদর্শ হিসেবে ইসলাম সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতায় ভূমিকা রাখতে সক্ষম কিনা এবং তার ব্যাপ্তি কতটুকু।
সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীতার উপাদান শুধু সমাজতন্ত্রেই নয়, ইসলামেও আছে এবং খুব ভাল করেই আছে । ইসলাম রাজনৈতিক এবং দার্শনিকভাবেই সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদ বিরোধী । ইসলামের শিক্ষাই হচ্ছে সমস্ত জুলুম, অবিচার , অন্যায়ের বিরোধীতা করে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করা । পবিত্র আল কোরআনে যতবার নামাজ পরতে বলা হয়েছে তার চেয়ে বেশি বলা হয়েছে জুলুম , নির্যাতন এবং অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য । তাই ইসলামের নবীগণকে ( মুহাম্মদ (সাঃ), মুসা, ঈসা.. ) দেখতে পাবেন সমকালীন শাসকগণের শোষণ-জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে । তাই ইসলাম আদর্শিকভাবেই শুধু সাম্রাজ্যবাদ নয়, সমস্ত অন্যায়, অবিচার, নির্যাতনের বিরোধী ।
ইসলামের মূলনীতি হচ্ছে, “ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, হযরত মুহাম্মদ (স) তার প্রেরিত রাসুল” এর মাঝেই লুকিয়ে আছে আধিপত্যবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ইসলামের রাজনৈতিক বয়ান। আল্লাহ ছাড়া আর কারো আনুগত্য ইসলাম অনুমোদন করে না। অর্থাৎ একজন মুমিন বা ইসলামি চেতনার অনুসারীর জীবন অতিবাহিত হবে আল্লাহ বিরোধী দর্শন, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, আইন প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহর মনোনীত জীবন বিধান এবং রাসুলের প্রদর্শিত পথে অনুসরণের মধ্য দিয়ে। এই যে আল্লাহ বিরোধী সামাজিক এবং রাজনৈতিক শক্তির আনুগত্য করে মানুষ যে শৃঙ্খলের মাঝে নিপতিত হয়েছে তার নিরসনের জন্যই যুগে যুগে নবী রাসুলদের প্রেরণ করা হয়েছে। কোরআনের একটা আয়াতে বলা হয়েছে, “ আমি নবী রাসুলদের প্রেরণ করেছি কিতাব এবং ন্যায়দণ্ড সহকারে যেন মানুষ তার সমাজের যেসব প্রথা এবং আচারের দ্বারা বন্দী তা থেকে তাদের মুক্ত করা সম্ভব হয়”। এই আয়াত থেকে এটা সুস্পষ্ট যে কিতাব বা ধর্মগ্রন্থের বা ঐশী জ্ঞানের উদ্দেশ্য হচ্ছে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং তা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী রাজনীতি ছাড়া সম্ভব না। সূরা হাদীদের ২৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে : “আমি আমার নবীদের সুস্পষ্ট বিধানসহ পাঠিয়েছি। তাঁদেরকে দিয়েছি কিতাব ও মীযান, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আমি লৌহও দিয়েছি, এতে রয়েছে বিরাট শক্তি ও মানুষের কল্যাণ।” আয়াতে সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্যে কিতাব ও মীযান নাযিল করা প্রসঙ্গে লৌহ নাযিল করার বিষয় জুড়ে দিয়ে রাষ্ট্রশক্তির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। সূরা হাজ্বের ৪১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন : “এদের যদি আমি ভূপৃষ্ঠে কর্তৃত্ব দান করি তবে তারা নামায যথারীতি আদায় করবে, যাকাত দেবে এবং ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে। সূরা আল-ইমরানের ১১০ নং আয়াতে বলা হয়েছে : “তোমরা সর্বোত্তম জাতি, মানুষের কল্যাণের জন্যে তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দেবে, এবং অন্যায়ের মূলোচ্ছেদ করবে”। আয়াতগুলোতে আল্লাহর ওপর বিশ্বাসের পাশাপাশি সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা,সুকৃতির প্রতিষ্ঠা ও দুষ্কৃতির পথ বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে।
কোরআনের অনেক আয়াতে জুলুম, অত্যাচার , নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার কথা বলা হয়েছে, যেমন সূরা নিসায় বলা হয়েছে, “ তোমাদের কি হল যে তোমরা সংগ্রাম করবে না অসহায় মজলুম নর-নারী ও শিশুদের জন্য যারা বলে হে প্রতিপালক এই জনপদ যার অধিবাসী জালিম তাদের কাছ থেকে আমাদের রক্ষার জন্য তোমার পক্ষ থেকে অভিভাবক প্রেরণ কর? (আয়াত ৪ঃ৭৫); নির্যাতন- নিপীড়নদের ব্যাপারে আল্লাহ্কে ভয় কর এবং তাদের পক্ষে ন্যায়সঙ্গত কথা বল “ বিশ্বাসীদের মাঝে সর্বদা এমন একটি দল থাকা দরকার যারা সর্বদা ন্যায়ের এবং সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং দুষ্কৃতি/অন্যায়ের প্রতিরোধ করবে” । “ এখন প্রশ্ন হচ্ছে জুলুম এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ জানানো, তার বিরুদ্ধে যে নিরন্তর সংগ্রাম চালানোর আহবান জানানো হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে সমাজ থেকে অন্যায় অবিচার উচ্ছেদ করে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার যে আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়েছে কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে তা কি সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী রাজনীতির জন্য মতাদরশিক ভূমিকা পালন করতে পারবে না? এ কারনেই ইসলামের ইতিহাস হচ্ছে জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাস, আধুনিক যুগে এসে এই লড়াই সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের রূপ পরিগ্রহ করবে এটাই স্বাভাবিক। প্রত্যেক নবী রাসুলকে তাই আমরা সামাজিক এবং রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করতে দেখেছি। মুসার সাথে অত্যাচারী ফেরাউনের যে লড়াই, ইব্রাহীমের সাথে জালিম নম্রুদের যে লড়াই, ঈসার সাথে সমকালীন রাজন্যবর্গের যে লড়াই, মুহাম্মদের সাথে আবু জেহেল, আবু সুফিয়ান, আবু লাহাবের যে সংগ্রাম তা নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংগ্রাম ছাড়া আর কি? সূরা মায়িদাহর ৪৪-৫০ পর্যন্ত সাতটি আয়াতে আল্লাহ তা’লা হযরত মূসা, ঈসা ও মহানবী সা. এর শরীয়ত নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনটি শরীয়তের যৌথ বিধান আল্লাহর দেয়া নিয়ম অনুযায়ী ফায়সালা ও মীমাংসা করতে হবে। এজন্যে হযরত মূসা আ. ও তৎপরবর্তী নবীগণকে নিজ নিজ সময়ের রাজ-রাজড়াদের মোকাবেলা করতে হয়েছিলো সবচেয়ে জোরালোভাবে। কারণ এক আল্লাহর ইবাদত ও তাঁর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার দাওয়াত মানেই সমাজপতি, গোত্রপতি ও রাষ্ট্রপতিদের কর্তৃত্বে আঘাত হানা। আবু জাহল-উতবার মতো মক্কার অসাধু স্বার্থান্ধ গোত্রপতিরা তাদের কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব অবসানের আশঙ্কায়ই আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধে এতোটা ক্ষেপে উঠেছিলো। মুহাম্মদ (স) শুধু অত্যাচারী, নিপীড়নকারী সমকালীন সমাজপতি, গোত্রপতি ও রাষ্ট্রপতিদের বিরুদ্ধেই লড়াই করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি প্রথমে মদিনা, এরপর মক্কায় ইসলামি রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠা করেন যে সরকার পরিচালনার জন্য মদিনা সনদ নামে লিখিত সংবিধান ও ছিল। মুহাম্মদ (স) বলেন, “ যদি কেউ কোন অত্যাচারী ও স্বৈরাচারী সরকারকে দেখে যে হালালকে হারাম করে, হারামকে হালাল করে, বায়তুলমালকে (রাষ্ট্রীয় কোষাগার) নিজের বাক্তিগত খাতে খরচ করে, আল্লাহর বিধি বিধানকে পদদলিত করে, মুসলমানের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষা করে না, এরপরও যদি সে নীরবে বসে থাকে তাহলে আল্লাহ তাকে ঐ জালেমদের সাথে একই শাস্তি প্রদান করবেন”। এখন এই জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম করা মানে হচ্ছে আপনাকে স্বৈরাচারী জালিম শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, আপনাকে বিদ্যমান অত্যাচারী রাষ্ট্রকাঠামোর বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে। রাসুলের পরেও ইসলামী বিপ্লবী রাজনীতি আমরা দেখেছি ইমাম আলী এবং ইমাম হোসাইনের মাঝে। ইমাম হোসাইন অত্যাচারী স্বৈরাচারী জালিম শাসক ইয়াজিদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে রুখে দাঁড়ান এবং নিজের সঙ্গী সাথী পরিবারের সদস্য সহ কারবালায় জীবন উৎসর্গ পর্যন্ত করেছেন। আপনি যদি কিউবার বাতিস্তা সরকারের জুলুমের বিরুদ্ধে চে গুয়েভারার এবং ফিদেলের সংগ্রামকে রাজনীতি বলতে পারেন তাহলে ইমাম হোসাইনের জালিম ইয়াজিদের বিরুদ্ধে বিপ্লবী প্রতিরোধকেও মহান রাজনৈতিক আন্দোলনই বলতে হবে। ইমাম হোসাইনের এই বিপ্লবী রাজনীতি যুগে যুগে ইসলামের ন্যায্য রাজনৈতিক সংগ্রামের দিকেই আমাদের আহবান জানায়। হোসাইনি রাজনীতির অনুসরণেই ১৯৭৯ সালে ইরানের বিপ্লবী জনগন ইমাম খোমেনির নেতৃত্বে জালিম শাসক মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালাল শাহ সরকারকে উৎখাত করে ইসলামী শাসন কায়েম করে।
অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে বলা যায় ইসলাম তাত্ত্বিকভাবেই অন্যায়, অবিচার, জুলুম নির্যাতন, স্বৈরাচার , পুঁজিবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদের বিরোধী এবং এসবের মূলোচ্ছেদ করে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের আহবান জানায় যেখানে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী প্রশাসন, বিচার, সমাজনীতি, অর্থনীতি সবকিছুই চলবে।সাইয়্যেদ কুতুব তাঁর “ইসলাম এবং সাম্রাজ্যবাদ” প্রবন্ধে ইসলামের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বিপ্লবী ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, ইসলাম ব্যাপক ও প্রচন্ড স্বাধীনতাকামী এক শক্তির নাম- এই ভাষা ও প্রত্যয় থেকেই সাম্রাজ্যবাদের উপর ইসলামী আকীদার অন্তর্নিহিত শক্তির হুমকি ও তীব্রতার প্রথম উৎসারণ। ইসলামের মূল স্পিরিট বা প্রাণশক্তি স্বাধীনতাবিরুদ্ধ সমস্ত বিদ্বেষ ও শত্র“-শক্তিকে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করে দেয়। এই শত্র“তাকে-জুলুমকে ইসলাম অত্যন্ত কঠোরভাবে সরাসরি প্রতিহত করে। যে প্রতিরোধের পথে অসংখ্য জীবন এবং সেই জীবনের ত্যাগ ও কুরবানীকে খুবই সামান্য মনে করা হয়। সেকারণে যখনই ইসলামের এ প্রাণশক্তি উম্মাহর মধ্যে জেগে ওঠে তখন উম্মাহর মুক্তির পথ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। অসম্ভব হয়ে যায় সত্যিকার লড়াই থেকে চুপ করে বসে থাকা। যে লড়াই সাম্রাজ্যবাদের সমস্ত ত্রেকেই ধ্বংস করে দেয়। ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়।“ ইসলাম যে কোনো মুক্তি ও স্বাধীনতা আন্দোলনকেই ভালোবাসে সমর্থন কওে, যদিও সে আন্দোলন ঘুমিয়ে পড়া কমিউনিস্ট আন্দোলন আর কোরিয়ার আন্দোলন হোক। ইসলাম চায় সেসব আন্দোলন পশ্চিমের ঘৃণ্য সাম্রাজ্যবাদের উপর জয়লাভ করুক। পৃথিবী থেকে কুঞ্চিত হয়ে পড়–ক সাম্রাজ্যবাদের কালো ছায়া। ইসলামের এটা চাওয়ার কারণ হলো, তার মূল বৈশিষ্ট্যের সাথেই জড়িয়ে আছে এক বৃহত্তর মুক্তির জাগরণ। পৃথিবীতে ইসলামের সামগ্রিক উদ্দেশ্যই হলো মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতা বহাল রাখা। “ এ কারনেই ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেনি বলে উঠেন, “পৃথিবীর যেখানেই জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের সংগ্রাম সেখানেই আমরা আছি!”
ইসলামের বিপ্লবী আন্দোলন এর সরূপ সম্পর্কে আমরা ধারনা পাই ইরানের লেখক দার্শনিক মোতাহারির কাছ থেকে। তিনি বলেন, “ এ আন্দোলন হচ্ছে ঐ ধরনের আন্দোলন যা মানব ইতিহাসের পরিক্রমা পথে নবী-রাসুলগণ একটি ‘স্বর্গীয় আত্মোপলব্ধি বা খোদা উপলব্ধির’ দ্বারা তাড়িত হয়ে পরিচালনা করেছিলেন। স্বর্গীয় আত্মোপলব্ধিটা মানব প্রকৃতির গভীরে প্রোথিত। যখনই মানুষের আদি উৎস ও জন্মবৃত্তান্ত এবং আবাসিক নগরী ও মাতৃভূমি ইত্যাদি সম্পর্কে ঐশীবাণী উচ্চারিত হয় তখনই সে এক অদ্ভূত আত্মচেতনার অনুভূতি লাভ করে, যে অনুভূতি তাকে খোদার সান্নিধ্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। খোদার সাথে সম্পর্কই হচ্ছে সমস্ত সম্পর্কের সেরা সম্পর্ক। এ সম্পর্কের মাঝে সংশ্লিষ্ট রয়েছে সৌন্দর্য, সুবিচার, সাম্য, ক্ষমাশীলতা, ত্যাগ এবং অপরের কল্যাণের প্রেরণা ইত্যাদি গুণাবলী। খোদাকে অনুসন্ধান এবং তাঁকে আরাধনা করার প্রেরণা প্রত্যেকটি মানুষের অন্তরেই সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। নবীরা মানুষের মধ্যে এ প্রেরণার উত্থান ঘটিয়েছেন যেন মানুষ সবরকম নীচতাকে পরিহার করে উচ্চমার্গে আসীন হতে পারে। এটি মানুষের মধ্যে এমন একটি ধারণা জাগ্রত করে যে, সে এজন্য সত্য ও ন্যায়ের অনুসারী হবে, শুধুমাত্র এ কারণে যে, তা সত্য ও সঠিক; এজন্য নয় যে, তাতে তার কল্যাণ নিহিত আছে। ক্ষতি বা লাভের দ্বারা মোটেও বিব্রত না হয়ে ন্যায়, সাম্য, সত্য ও সততা স্বাভাবিকভাবে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে উত্থিত হয়। কেননা এগুলো খোদা নির্দেশিত মূল্যবোধ; এ কারণে নয় যে, এগুলো জীবন যুদ্ধে সফলতা অর্জনের হাতিয়ার। যখন একজন মানুষের মধ্যে স্বর্গীয় উপলব্ধি জাগে আর উন্নত মানবীয় গুণাবলী তার লক্ষ্যে পরিণত হয় তখন সে আর কোন লোকেরই শত্রু বা মিত্র থাকে না; বরং সে হয়ে পড়ে ন্যায়ের ধ্বজাধারী, বিচারপতি নয়। সে অত্যাচারী ও অত্যাচারের শত্রু হয়ে যায়। ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধতা তার মানসিক বা দৈহিক প্রয়োজন থেকে নয়; বরং তা একটি মৌলনীতি ও একটি আদর্শ হতে উৎসারিত।“
আনু মুহাম্মদের মতে “আল্লাহ ও ধর্মের অর্থ তাই দুজনের কাছে ভিন্ন। একজনের কাছে নিপীড়নের অবলম্বন, আরেকজনের কাছে নিপীড়িতের আশ্রয়”। আনু মুহাম্মদের এ কথা তাত্ত্বিক ভাবে পুরাপুরি ভুল এবং ইসলাম সম্পর্কে তাঁর অজ্ঞতাই তুলে ধরে। আল্লাহ এবং ধর্মের অর্থ একটাই ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধতা এবং এরই প্রেক্ষিতে সমস্ত জুলুম তা পুঁজিবাদ হোক, উপনিবেশবাদ হোক কিংবা সাম্রাজ্যবাদ হোক তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোই খোদা নির্দেশিত মূল্যবোধ এর দাবি।এখন ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি (ইয়াজিদ, ইরানের রেজা শাহ, বর্তমানে আরবের রাজা বাদশাহ) গোষ্ঠী, দল (তালেবান, আল কায়েদা ইত্যাদি) ইসলামের বিপ্লবী শিক্ষা পালন না করে সাম্রাজ্যবাদীদের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে তাদের মতাদর্শ ইসলাম বিরোধী। আনু মুহাম্মদ কাতার, সৌদি আরব এসব দেশের রাজা বাদশাহর ইসলামের কথা বললেন, এরা ইসলাম বিরোধী, কারন ইসলামে রাজতন্ত্র নেই । ইমাম হোসাইন যিনি এজিদের রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করে জীবন দিলেন । সে ইতিহাস নাই বা বললাম । আরব রাজা বাদশাদের এসব তথাকথিত ইসলাম (?) হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী ইসলাম যাকে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেনি আমেরিকান ইসলাম বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাই সাম্রাজ্যবাদের অনুগত ধর্ম আর সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ধর্মের পার্থক্য না বুঝলে ধর্মকে সমাজের জন্য আফিমই মনে করা হবে। ধর্মের অপব্যবহার আর ধর্ম এক জিনিস না।