ঘটনা ১:
২৬ মার্চ ২০১৫
স্থান: গণজাগরণ মঞ্চ, শাহবাগ।
স্বাধীনতা কনসার্টে যোগ দেওয়ার জন্য ঠিক বিকেল ৪ টায় এসে বসে রইলাম গণজাগরণ মঞ্চের সামনে পাতা অনেকগুলো চেয়ারের একটিতে। ফেসবুকে ইমরান ভাইয়ার খোলা ইভেন্ট থেকে জানতে পেরেছিলাম যে কনসার্টে আমার প্রিয় দুইটি ব্যান্ড গান করবে। একটি " Artcell" অপরটি " Shironamhin ". তাই আজকে আসা।
কিছুক্ষণ পর ইমরান ভাইয়া ঘোষণা করলেন যে, পতাকা মিছিল হবে, সবাই যেন এ মিছিলে অংশগ্রহণ করে এবং হাতে ছোট্ট একটা পতাকা থাকে। আমি একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম। কিছুক্ষণ আগে দুইটা পতাকা কিনলাম। মাথায়ও বাধলাম। আবার পতাকা !!!
................... একটা বড় মাপের পতাকা রাস্তায় নামানো হয়েছে। আমার মতো যারা আর পতাকা কিনতে রাজি না, তারা পতাকা ধরায় শামিল হওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। আমিও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পতাকায় নিজের দুটো হাত রেখে পতাকা মিছিলে অংশগ্রহণ করলাম। আমার ডানপাশের ছেলেটাকে চেনা চেনা লাগছে। ..... ... ও হ্যা। এটা আমার পাশের চেয়ারে বসা ছেলেটি। এমন সময়ে একটা মেয়ে এসে বলল, " পতাকাটা একটু ধরতে পারি " । আমি বিরক্ত হয়ে মেয়েটির দিকে তাকালাম। কিন্তু তাকিয়েই ঠান্ডা হয়ে গেলাম। মেয়েটির চেহারা আমার স্কুলের এক ছোট বোন উর্মির মতো। বললাম, হ্যা..... ধরতে পারেন। সে পতাকা ধরল। আমার আর পাশের চেয়ারের ছেলেটির মাঝখানে অবস্থান নিল।
মিছিল শুরু হয়ে গেলো। বিভিন্ন রকম স্লোগান দিতে দিতে আমরা এগিয়ে চললাম হোটেল শেরাটনের দিকে। " জামা'আত শিবিরের আস্তানা ভেঙ্গে দাও গুঁড়িয়ে দাও................রাজাকারের আস্তানা ভেঙ্গে দাও গুঁড়িয়ে দাও.......একশন একশন, ডাইরেক্ট একশন " ___ ইত্যাদি। হঠাৎ একটা ধাক্কা খেয়ে পাশের মেয়েটির ওপরে পড়তে গিয়েও কোনোরকমে পড়লাম না। কিন্তু আমার পায়ের পাড়া গিিয়ে মেয়ের পায়ে লাগল।
আমি: sorry
মেয়ে: It's okay
কিছুক্ষণ পর আরেকটা ধাক্কা। মেয়ের গায়েও হাল্কা একটু ধাক্কা লাগল। এবার বাম পাশে তাকিয়ে দেখি এতক্ষণ দুটো বদমাশ টাইপের ছেলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে মেয়েটির ওপর ফেলার চেষ্টা করছিল । আরেকটা ধাক্কাকা দেওয়ার সাথে সাথে নিজেকে সামলে নিয়ে কিছু উউত্তপ্তবাক্য বিনিময় করলাম
আমি: কি ব্যাপার ভাইয়া! এমনভাবে ধাক্কা দিচ্ছেন কেনো?
বদমাশ: চেতেন কে ভাই?
আমি: আবার ধাক্কা দিলে কিন্তু আপনাকে এমন ধাক্কা দিব যে.. .....।
.............কিছুক্ষণ পর
বদমাশ: ভাই আপনার gf নাকি !
আমি:না।
বদমাশ:তবে.....?
আমি:এমনিই আমার পাশে দাঁড়িয়েছে......।
বদমাশ:তাইলে ভাই সমস্যা কি? আমরা আমরাইতো!....
আমি কিছুই বললাম। আমার পাশের মেয়েটি বেশ নিরাপদ বোধ করছে আমার পাশে। আর আমি ভাবছি এটা আমার স্কুলের পাতানো ছোট বোন উর্মি। এই বদমাশের দল থেকে তাকে আগলে রাখতেই হবে।
আস্তে আস্তে বদমাশ টাইপের ছেলে দুটোর সাথে পরিচয় হলো। প্রথমে ভেবেছিলাম কোনো অভিজাত বস্তির ছেলে-পেলে হবে। তাই এখানে এসেছে। কিন্তু না। ....তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের Arts এর student. গত বছর চান্স পাইছে। মহসীন হলে থাকে। কোনো এক জেলার অজপাড়া গা থেকে আসছে। তাদের এলাকায় মেয়েদেরকে এত পাশা-পাশি পায় না। আজ এখানে পাইছে। তাই মজা নিতে চাইছে!!
তখন মাথায় শুধু একটা কথাই কাজ করছে। আল্লাহ সবাইকে মেধা দিছে । কিন্তু পারবারিক শিক্ষা দেয় নাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবীরা পড়ে। কিন্তু তাদের পারবারিক শিক্ষা নাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীই গ্রাম থেকে আসা। সুতরাং ঢাকা বিশ্বিদ্যালয়ে আসা এসব নিম্নবিত্ত পরিবারের মেধাবী ছাত্ররা বদমাশ টাইপের হয় এরম একটা ধারণা মাথায় ঢুকল।
ঘটনা২::
১৬ মে ২০১৫
স্থান:আমার কলেজ,ঢাকা।
....... Biology exam শেষ। I mean, year change exam ই শেষ। হল রুম থেকে নিচে এসে দাঁড়ালাম। স্কুল ভবনের সামনে। আজকে থেকে টানা ১৫ দিন কলেজ বন্ধ থাকবে। তাই কলেজের প্রতি মায়া পড়ে গেলো। স্কুলের সব ছেলে মেয়েকে পানি দিয়ে একজন আরেক জনকে ভিজিয়ে দিতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম একটা ছেলেকে........
আমি: সবাই পানি নিয়ে খেলছে কেনো?
ছেলে: আজকে half yearly exam এর আগে শেষ ক্লাস। স্কুল খোলার পর তো exam শুরু হবে। তাই সবাই পানি নিয়ে খেলছে।
আমি: অহ... তাই.......
........ কিছু মেয়ে এসে আমাকে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিল। কিছুক্ষণ আগে এদেরকে পানি নিয়ে খেলার কারণ জিজ্ঞেস করায় তারা মুখ ভেঙচিয়ে চলে গিয়েছিল। তাদের হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দ উল্লাস দেখে আমার মন অজানা সুখে ভরে গেলো। principal স্যারের স্তুতি গাইছিলাম তখন মনে মনে। এই একটা দিন তাদেরকে এত স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য। ঠিক তখনই এক বন্ধু ..
বন্ধু:দেখছস দোস্ত?
আমি:কি?
বন্ধু: আরে দেখস না......
আমি:আরে কি?
বন্ধু: সালায় দেখে না। তুই কানা নাকি! ঐ দেখ ছোট মেয়ের (★ - ★★) অন্তর্বাস দেখা যাচ্ছে।
আমি একটু অবাক হয়ে ছোট মেয়ের দিকে বন্ধুর তাকানো দেখলাম। তারপর বললাম) ছিঃ ★★★ ছিঃ। আমি এই ছোট মেয়েদের হঠাৎ পাওয়া স্বাধীনতা উপভোগ করা দেখছিলাম। আর তুই?
বন্ধু: পানিতে ভিজছে পরে সব দেখা যায়। আমি কি করব? খাবার সামনে থাকলে তাকাব না. ......
............... কলেজ থেকে বের হয়ে TSC দিকে হাঁটা শুরু করলাম। । TSC তে এসে ইটের প্রাচীর ঘেরা ছোট জায়গাতে বসে আবার বন্ধুকে এসে জিজ্ঞেস করলাম.............
আমি: তুই ঐ ছোট মেয়েটাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করলি কেনো?
বন্ধু: আচ্ছা মামা! তুই কেমন আমি বুঝলাম না। এইগুলো হল খাবার। এগুলো শুধু দেখব, খাবো আর মজা নেবো না । তোর মতো বলদ, ভোদাই, দামরা আমার লাইফে আর দেখি নি। তুই .............
আমি: তোর দৃষ্টিভঙ্গি চেঞ্জ কর ।
তারপর........ । তারপর কিছু বাক-বিতন্ড হলো এবং সসে চলে গেলো।
.... বন্ধু ভালো পরিবারের সন্তান। কিন্তু সমস্যা হল তাদের গ্রামে মেয়ে এবং ছেলে পাশা-পাশি বসে কথা বলার নিয়ম নাই। আর আজকে সেই জায়গায় অন্তর্বাস দেখা তো বিরাট সাফল্যের ব্যাপার। আর বন্ধুর আচরণ থেকে বুঝতে পারলাম যে তার গ্রাম্য সমাজ তাকে ভালো শিক্ষা দেয় নি। তাই সে ক্লাস ৬ এ পড়া মেয়েকেও ভোগ্য-পণ্য ভাবতে দ্বিধাবোধ করে না।
কিন্তু আজ..........। আজ যখন উচ্চ বিত্ত পরিবারের ছেলেরা গারো মেয়েকে চলন্ত মাইক্রোবাসে ধর্ষণ করল...........
.........।মাথায় কোনো ধারণা আসে না।
speechless !
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৫ রাত ৮:১৯