অগল্প -১ "রাজার রাজা"
দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে আমি যখন ক্লান্ত ,ভিক্ষা থেকে পাওয়া অন্ন যখন আমার ক্ষুদা কে সামাল দিতে পারে না যখন নিঃস্ব রিক্ত অবস্থায় ভিক্ষুক আমি দাড়িয়ে আছি রাজপথের ধরে ............ তখনি দেখি স্বর্ণ নির্মিত এক রথ আমার দিকে আসছে ।ধন্যবাদ ভগবান !আজ আমি খেতে পাব !! অনেক দিন পর খেতে পাব ।অবশেষে যেন আজন্ম প্রতিক্ষার এক সমাপ্তি ...রথ থেকে নেমে আমার কাছে কাছে আসছেন "রাজার রাজা " ।দীপ্তিময় তার চোখ ..লাবন্য ময় তার চেহারা ।আমার কাছে এসে বললেন "দুটো ভিক্ষা দেবে বাবা "।
একি রসিকতা !!ভিক্ষুকের কাছে ভিক্ষা পার্থনা ।ক্রোধে লজ্জায় অপমানে আমি আমার ভিক্ষা পাত্র থেকে একটি মাত্র চাল সেই "রাজার রাজা" কে দিলাম ।
ক্লান্ত পায় গৃহে ফিরে সমস্ত ভিক্ষান্ন এক জায়গায় জড়ো করে দেখি আরে ! সমস্ত চালের মাঝে একটি মাত্র চাল স্বর্ণ নির্মিত ।
হায় !সময় ছিল, সুযোগও ছিল ..কেন আমি আমার সর্বস্ব বিলিয়ে দিলাম না সেই রাজার রাজার কাছে ।
(রবি ঠাকুরের গীতাঞ্জলী কাব্য গ্রন্থের একটি কবিতা অবলম্বনে )
অগল্প -২ "পালক"
ছেলেবেলায় আমার কাছে একটা পালক ছিল ।ময়ুরের পালক ।ছেলেবেলার দিনগুলোতে ওই পালকের দিকে তাকিয়ে কত কল্পনা করতাম ।কত আবিস্কার করতাম ,কত দুষ্ট রাজাকে বধ করতাম ।ঘাড়ে গামছা গিট্টু লাগিয়ে নিজেকে রাজা ভাবতাম ।তারপর একসময় পালকটা
হারিয়ে গেল ।কিছুতেই খুঁজে পেলাম না ।
তখন কলকাতায় কলেজের হোস্টেলে থাকি ।একদিন রাতেরবেলা ক্যান্টিন বন্ধ থাকবার জন্য ,হাতে তৈরি রুটি কিনতে যাব বলে ঠিক করেছি ।কিন্তু আপদ !একটা জমাও পড়বার মতো নয় ।সবকটা অনেকদিন কাচা হয় না ,যে একটা ঠিক ঠাক আছে কিন্তু সেটা কলেজে যাবার জন্য । এ সব ক্ষেত্রে সাধারনত রুম মেটের জামাই কাজে লাগে ।কিন্তু সেদিন কি হলো ..সুটকেস খুলে পুরনো ছোট হয়ে যাওয়া একটা জামা পরেই বের হলাম ।
রাস্তার ধারে গুমটি একটা দোকানে রুটি কিনতে গেলাম ।দেখি একটা ১২ -১৩ বছরের বাচ্চা মেয়ে রুটি বানাচ্ছে ।পাশে মেয়েটির ভাই (দেখে তাই মনে হয়েছিল ) হিন্দিতে কি সব যেন লিখছিল ।মেয়েটির পাশে বই খোলা ছিল সে ,মাঝে মাঝেই তাতে সে উকি দিচ্ছিল ।
আমি :রুটি কত করে ?
মেয়েটি :দো রুপিয়া ।
আমি :পড়াশুনা কর ?
মেয়েটি :হা ।
আমি :তোমার বাবা মা কোথায় ?
মেয়েটি :বিহার ।
আমি :আসে না ?
মেয়েটি :মহিনে মে এক দো বার ।
রুটি তৈরি শেষ হয়ে গিয়েছে ।এবার দাম চুকানোর পালা ।পকেটে হাত ঢুকতেই টাকার সাথে অন্য কিছুও ঠেকলো ।পকেট থেকে হাত বের করে দেখি আমার সেই ছেলেবেলার পালকটা ।আমি টাকাটা আর ময়ুরের পালকটা একই সাথে মেয়েটার হাতে তুলে দিলাম ।মেয়েটি খুশি হয়ে পালকটি তার রুক্ষ চুলের ঝুটি তে গুজে দিল ।উনুনের গনগনে হলুদাভ আচে মেয়েটিকে আমার শ্রীকৃষ্ণের চেয়ে বিন্দুমাত্র কম সুন্দর লাগে নি ।