আমার জীবনের জার্মানি অধ্যায়ের বর্তমান বয়স এক বছর দু’মাস প্রায়। এখানে আসার পর থেকে ভাই-বোন, পরিবার-পরিজন, প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী, আত্নীয়-স্বজন সবাইকেই কম বেশি মিস করতে শুরু করি। এখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি অগ্রজ ভাই, সহপাঠী থাকার কারণে কিছুটা হলেও তাদের অভাব পূরণ করা যায়। তবে যে জিনিসটার অভাব কিছুতেই পূরণ হয় না, পূরণ হবার নয় তা’ হলো মায়ের আদর, মায়ের ভালবাসা, মায়ের হাতের রান্না। সত্যি কথা বলতে মা কী জিনিস দেশে থাকতে বুঝিনি। গাজীপুর থেকে ঢাকা গিয়ে প্রতিদিন ক্লাস/অফিস করে বাড়ীতে ফিরতে ফিরতে প্রায় প্রতিদিনই অনেক রাত হতো আমার। মা আমার কোনোদিনই আমাকে না খাইয়ে ঘুমাননি। বারান্দায় খাবার টেবিলে ভাত নিয়ে আমি কখন আসবো তার প্রতীক্ষায় থাকতেন। আবার অনেক সকালে যখন অফিস/ক্লাসে যাবার সময় হতো তার আগেই টেবিলে খাবার রেডি করে বসে থাকতেন। যাতে তাড়াহুড়া’র জন্য কখনো আমাকে না খেয়ে চলে যেতে না হয়। যদি কোনোদিন আমার নিজের অলসতার কারণে আমার দেরি হয়ে যেতো, আর সে কারণে আমি না খেয়ে চলে যেতাম সেদিন মা আমার কেঁদেই দিতো।
জার্মানিতে ক্লাস করি, জীবিকার তাগিতে করতে হয় কাজও। সকালে ক্লাস থাকলে নাস্তা করে যেতে পেরেছি এমন খুব কম দিনই হয়েছে। ক্লাসের মাঝে যখন ক্ষুধায় পেট চো চো করে তখন মা’কে মিস করি। ক্লাস/কাজ শেষ করে ক্লান্ত-ভারী শরীর নিয়ে রুমে এসে রান্নাঘরে গিয়ে যখন দেখি কিছুই রান্না করা নেই; তখন মা’কে মিস করি। সামান্য একটা করলা ভাজি করতে গিয়ে যখন মনে পড়ে আমি তো জীবনে করলা ভাজি করি নাই তখন মা’কে মিস করি। গভীর রাতে যখন একটু নুডলস রান্না করে ক্ষুধার জ্বালা মিটাতে হয় তখন মা’কে মিস করি। বাইরে থেকে যত কিছুই খেয়ে আসতাম না কেন বাসায় এসে রাতে কিছু না খেয়ে ঘুমাতে দিতো না মা। আর এখানে যখন বাইরে থেকে ছোট একটা ডোনার/বার্গার খেয়ে এসে অথবা কোনো সময় একেবারেই কিছু না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি তখন মা’কে মিস করি। অসুখে মায়ের সেবা-শুশ্রূষা মিস করি। বেশি রাত জাগলে অথবা দেরি করে সকালে ঘুম থেকে উঠলে মায়ের বকুনি মিস করি। গরম ভাতের সাথে শুটকি ভর্তার মায়ের হাতের মাখুনি মিস করি। মিস করি মায়ের কোল, মায়ের আদর। জার্মানিতে মিস করার জিনিসের তালিকা অতিদীর্ঘ হলেও আমি আমার মা’কেই সবচে’ বশি মিস করি।
পূর্বে প্রকাশিতঃ জার্মান প্রবাসে ম্যাগাজিন – নভেম্বর ২০১৪ – ‘যেমন খুশি তেমন’
ম্যাগাজিন ডাউনলোড/দেখতে ক্লিক করুন ( প্রায় ৭.৮ মেগাবাইট)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:৫৮