ছোটকালে সিনেমা দেখার পোকা ছিলাম। আমাদের যশোর এলাকার ছেলেরা সেভেন এইটে থাকতেই মনিহার সিনেমা হলে ফ্রিতে ছবি দেখা শুরু করে। তখন মনে করতাম আমি যে বড় হয়েছি তার প্রমান হলো, আমি মনিহার সিনেমা হলের গেটের সামনে যাবো আর আমাকে দেখে গেট খুলে দিবে। তাহলেই প্রমান হবে আমি বড় হইছি। এই বড় হবার চেষ্টা আমাদের মোল্লাপাড়া, সিটিকলেজ পাড়ার পুলাপাইন ছোটবেলা থেকেই করতে থাকে। প্রথম প্রথম দুই একদিন ছুরি মারামারি করতে হইতো, তারপর থেকে দেখলেই খুলে দিত।
সেই ছোটকাল থেকেই টিভি সিনেমা হলে অনেক মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র দেখেছি। তখনকার ও এখনকার মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র গুলোর ভিতর একটা কমন মিল পাওয়া যায়। যেকোন চলচিত্রে গল্পের মিল থাকলেও গেটআপ, কস্টিউম অবশ্যই চেঞ্জ থাকে। কিন্তু মজার বিষয় হলো মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রে একটি চরিত্রের গেটআপ মেকাপের ভিতর আজও কোন পরিবর্তন দেখলাম না! বিষয়টি খুবই হাস্যকর ও উদ্দেশ্য প্রনেদ মনে হয়।
রাজাকারের চেহারাটা কেমন একবার ভাবুনতো! আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে মুখে বড় বড় পাকা সুন্নতি দাড়ি! মাথায় টুপি, চোখে সুরমা! কপালে স্পষ্ট নামাযের কালো দাগ!! এর বাহিরে কোন ছবি আপনার মানসপটে ভেসে উঠবেনা। কারন আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের বিজ্ঞ নির্মাতারা আপনার মস্তিস্কের সেলের ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়েছে রাজাকার মানে এমন দাড়িওয়ালা একজন মুফতি হতে হবে। কেউ কি কোনদিন কোন চলচ্চিত্রে দেখেছেন ১৭/১৮ বছরের কোন ক্লিনশেভ ছেলে, চোখে সানগ্লাস পড়া, হাতে সিগারেট নিয়ে রাজাকারের চরিত্রে আছে? না, ররঞ্জ দেখানো হয় পাক্কা একজন মুসলিম মুফতি কচি কচি মাইয়া ধরে এনে রেপ করতেছে। আর এখনকার জেনারেশন এই চিত্র দেখেই রাজাকারের চেহারা মাথায় গেথে ফেলেছে। এটাই যদি রাজাকারের আসল গেটআপ হয়ে থাকে তাহলে আসুন এখনকার শাস্তিপ্রাপ্ত কিছু কথিত রাজাকারের ৭১ সালের গেটআপ কেমন ছিল দেখে নিই।
কাদের মোল্লা অরফে কথিত কসাই কাদেরঃ
কাদের মোল্লা যে কসাই কাদের ছিল সেটা প্রমানের জন্য নিয়াজির পিছনে ক্লিনশেভ চোখে সানগ্লাস পড়া একটি ছবি ব্যবহার করা হয়। ধরে নিলাম এইটাই সেই কাদের মোল্লা যদিও তিনি সেটা অস্বীকার করেছেন। তার অস্বীকার করায় যায় আসেনা। শাস্তিপ্রাপ্ত সেই বিখ্যাত কসাই কাদেরের মুখে ৭১ সালে কোন দাড়িও আছিলনা, মাথায় টুপিও নাই। আর তখন সে একজন যুবক ছেলে। তাহলে চলচ্চিত্রে কোন লেভেলের রাজাকারকে উপস্থাপন করা হয় আমার মাথায় খেলছেনা! নাকি ইসলামকে ছোট করাই মুল উদ্দেশ্য??
কামারুজ্জামানঃ
রাজাকার কামারুজ্জানের বয়স ছিল ১৭ বছর। এই বয়সেই সে নয় মাসে ৩২২ টা রেপ করে। এই রাজাকারের সকল তেজ এই নয় মাসই স্থায়ীত্ব ছিল। এর আগেও তার এই ধরনের রেকর্ড পাওয়া যায়নি, মুক্তিযুদ্ধ শেষ হবার সাথে সাথে তার চেতনা দন্ডের পতন ঘটে। এমন কোন চলচ্চিত্রে কি দেখেছেন রাজাকারের চরিত্রে ১৭ বছরের কোন কিশোরকে রেখেছে? যে সমানে হাটতে চলতে রেপ করতেছে! কেন দেখানো হয়না?? এই পুলার তখনকার ছবিতে দেখা যায় শার্ট প্যান্ট পরিহিত একজন কিশোর। তাহলে জোড় করে পাঞ্জাবী দাড়ি টূপী টেনে আনা কেন?
রাজাকার সাকাঃ
উপরের দুজনের এখনকার চেহারায় বাস্তবে মুখে দাড়ি ছিল। তাই অনেকে ভিমরী খেতে পারেন। তাই সালাউদ্দিন কাদেরকে নিয়ে আসলাম। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ক্লিনশেভ করা একজন ব্যাক্তি। সরকারের ভাষ্যমতে চট্রগ্রামের রাজাকার প্রধান! একজন প্রধান রাজাকারের গেটআপ বাদ দিয়ে কোন রাজাকারের চিত্র আমাদের চলচ্চিত্রে তুলে ধরা হচ্ছে?
আমার কাছে মনে হয় মুল সমস্যা হলো ইসলাম নিয়ে তাদের অশেষ চুলকানির ফলাফল। তখনকার চাকমা রাজা ত্রিবেদী একজন রাজাকার ছিল। মুক্তিযদ্ধের পরে সে পাকিস্থনে চলে যায় এবং সেখানেই ইন্তেকাল ফরমায়। কই, কোন চলচ্চিত্রে এমন কোন চরিত্র কেউ তুলে ধরলোনা??
এখন উপসংহারে কি টানবো জানিনা। বাস্তব চরিত্রের সাথে মেলাতে গেলে দুটি জিনিস সামনে আসে। এক, ইসলামকে হেয় প্রতিপন্ন করতে উদ্দেশ্যমুলকভাবে রাজাকার চরিত্র রুপায়ন করা হয় অথবা দুই, এখন যাদের রাজাকার বানানো হলো টোটালটাই মিথ্যা। যদি শেষের কথাটা সত্য না হয় তাহলে ইসলামকে অপমান করতেই যে রাজাকারের এমন রুপদান করা হয়ে সেটা স্বীকার করে যাবেন জনাব।বাকি মন্তব্য পাঠকদের উপর ছেড়ে দিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫১