কিছুদিন ধরে ফিলিস্তিনী মুসলিমদের উপর নতুন করে শুরু হয়েছে ইসরাইলী বাহিনীর তাণ্ডব। প্রতিদিন নারী পুরুষ ও শিশুদের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে ফিলিস্তিন। একটি শিশু জন্ম নেয় যুদ্ধের ভিতর, হাটিহাটি পা পা করে ইসরাইলী নির্যাতন দেখে দেখেই তাঁরা বড় হতে থাকে। শৈশব থেকেই শুরু হয় তাঁদের ইসরাইল প্রতিরোধের সংগ্রাম। এক সময় শাহাদতের মাধ্যমে তাঁদের জীবনের ইতি ঘটে। এই হলো ফিলিস্তিনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
এবারের হামলার পরে ফিলিস্তিনী প্রতিরোধে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। সেখানকার নারীরাও পুরুষের সাথে ইসরাইলী সেনা প্রতিরোধে রাস্তায় নেমে এসেছে। এটা ছিল সময়ের দাবি। ইসরাইলী নর পশুদের ভোগের সামগ্রী না হয়ে যুদ্ধ করে শহীদ হওয়া অনেক উত্তম। এছাড়া যুদ্ধে নারীদের অংশ নেওয়া ইসলাম সমর্থন করে। রাসুল (সা) জামানায় মেয়েরাও যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। ফিলিস্তিনী নারীদের যুদ্ধে যাওয়া নিয়ে কারো কথা বলার স্পর্ধা না থাকলেও কিছু ফেবু ফতোবাজকে দেখলাম তাঁদের পোষাক নিয়ে ফতোয়াবাজী করছে। এই পোষাকের জন্যেই নাকি ফিলিস্তিনি মুসলিম জনগোষ্ঠীকে আল্লাহ্ শাস্তি দিচ্ছেন।
ইসরাইলী সেনাদের হাতে নির্যাতিত এক নারী
এর আগেও দেখেছি আইএস ও এদেশে তাঁদের ফেবু জিহাদীদেরকে হামাসকে বাতিল বলে ঘোষনা দিতে। পৃথিবীতে ইহুদীদের সাথে একমাত্র এই হামাস প্রতিরোধী সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ফেবু জিহাদীরা তাঁদেরকে মুজাহিদেরা তাঁদেরকে মুজাহিদ হিসাবে মানতে রাজি নয়। কারন হামাস গণতন্ত্র বিশ্বাস করে। তাই তাঁরা কুফফার হয়ে গেছে ফেবু জিহাদীদের কাছে। অন্যদিকে রাশিয়া আইএসকে হামলার পরে পরিষ্কার হয়ে গেছে আইএস ছিল ইসরাইলী মোসাদের প্রডাক্ট। একারনেই তাঁরা হামাসের বিরোধীতা করতো। এখন তাঁদের ফিলিস্তিনের নারী যোদ্ধাদের নিয়ে চুলকানী শুরু হইছে।
ফিলিস্তিনী নারী যোদ্ধা
একজনের লেখায় এক ভাই ফতোয়া দিল " ,,,,,,,যতদিন পর্যন্ত ইসলামের পুর্নাঙ্গ অনুসরন না করবে ততোদিন নির্যাতন ভোগ করতেই হবে,,,এই মেয়েরা বিপ্লবী সন্দেহ নেই,,, কিন্তু ইসলামের অনুসরন ছাড়া এই বিপ্লবে বদরের মত বিজয় কখনোই আসবে না,,,"
উনি কেন এমন কথা বললেন জিজ্ঞেস করলে উত্তরে বললেন- জিন্স প্যান্ট ইসলামী অনুশাসন না। জিন্স কাপড়ের সাথে ইসলামের বিরোধ কোথায় সেই উত্তর উনার বড় মুরুব্বি আসলেই উত্তর দিতে না পারলেও তিনি ফতোয়া দিতে ছাড়েন নাই।
কমেন্টের স্কিনশট
আমাদের দেশের কিছু কোরআন শরীফের পিছনে দেখে থাকবেন প্রেমে ব্যর্থ হলে কি তাবিজ বানাবেন এইসব দেওয়া আছে। সাঙ্কেতিক অক্ষরে তাবিজ লেখা আছে। কোরআন শরীফের পিছনে থাকায় অনেকে এগুলোকেই হয়তো তাঁরা কোরআনের অংশ মনে করে থাকে। যেমন মিলাদের বালাগাল উলা... কবিতাকে ভাবে বিশাল কোন দোয়া/ সুরা পাঠ করলো! কারো কাছ থেকে যেহুতু পোষাকের বিষয়ে কোরআন হাদিসের বিষয়ে রেফারেন্স চাইলে দেখবেন তিনি রেফারেস্ন্স না দিয়ে কোন কিতাবে কি আছে সেই ত্যানা প্যাচানি শুরু করবে। ভুলেও একবার কোরআন হাদিসের শিক্ষার দিকে যাবেনা।
মহান আল্লাহ্ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সুন্দর আকৃতিতে। অতঃপর এই সুন্দর আকৃতির মানুষগুলোর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য তিনি সুন্দর পোষাকের ব্যবস্থা করেছেন। আল্লাহ পাক মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে বলেছেন- হে আদমের সন্তানগন! আমরা তোমাদের নিকট পোষাক পাঠিয়েছি। তোমদের দেহের গোপনাঙ্গ ঢেকে রাখার জন্য এবং সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য। সর্বোত্তম পোষাক হচ্ছে খোদা ভক্তির পোষাক (সুরাঃ আল-আরাফ, আয়াত-২৬)।
প্রথমেই আমরা পেলাম পোষাক পাঠানো হয়েছে দেহের গোপনাঙ্গ ঢেকে রাখার জন্য এবং সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য আর সুন্দর পোষাক পড়াটাই খোদা ভক্তির একটা অংশ। খেয়াল করে দেখবেন এখানে কিন্তু সেই পোষাকটি কেমন হবে তাঁর বর্ণনাও আসেনি।
ইসলাম পুরুষ ও নারীর পোষাক-পরিচ্ছদ সম্মন্ধে যথাযথ উপদেশ ও নির্দেশনা দান করেছে। ইসলাম যথোপযুক্ত পোষাকের মাধ্যমে দুটি বিষয় প্রতিষ্ঠা করতে চায়- প্রথমতঃ মানবদেহ টিকমত আচ্ছাদন করা। কারণ বিশ্রী ভাবে দেহ সৌষ্ঠভ প্রদর্শন ঠিক নয়। দ্বিতীয়তঃ সৌন্দর্যায়ন ও ভূষন বাড়িয়ে তোলা। সেটা কোনদিকে কত ফিট বাই কত সেটা বলা হয়নি। যে পোষাক পড়লে আপনাকে সুন্দর দেখাবে সেটাই আপনার ইসলামী পোষাক...
এক ফিলিস্তিনী নারী নিজের হাতের পাথর তুলে দিচ্ছে এক পুরুষকে।
ইসরাইলী প্রতিরোধে এই নারী যোদ্ধাটি কোথায় ইসলাম বরখেলাপ করেছে আমি দেখতে পারছিনা। হয়তো আমার চোখে সমস্যা হয়েছে। কোন ভাইয়ের যদি সমস্যা চোখে পড়ে একটু ধরিয়ে দিবেন আশা করি। তবে শরীর ঠিকমত ঢেকে রাখা ও ভূষনের মধ্যে ভারসাম্য থাকা উচিৎ। যদি এই ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে যায় তাহলে শয়তানের পথ অনুসরন করা হবে। এসম্পর্কে কোরআন পাকে ইরশাদ হয়েছে- ওহে আদম সন্তানগন শয়তান তোমাদের প্রথম পিতা-মাতাকে যেভাবে বেহেশত থেকে বহিষ্কার করেছিল এবং তাঁদেরকে তাঁদের গোপনাঙ্গ উভয়ের সামনে দেখানোর জন্য বিবস্ত্র করেছিল, তোমাদেরকে শয়তান যেন সেভাবে প্রলুব্ধ না করতে পারে (সুরাঃ আল-আরাফ, আয়াত- ২৭)। যুদ্ধ ক্ষেত্রে ইসলামকে স্বরনে রেখে এই নারীরা যেভাবে তাঁদের ঢেকে রেখেছে সেটা অনন্য। কোনভাবেই ইসলাম এখানে ছুটে যায়নি বলেই আমি মনে করি।
একটি বিষয় জেনে রাখা ভাল। রাসুল সা. এর সময় সেলাই করা পোষাকের প্রচলন ছিলনা। এটি হযরত ওমর রা. এর সময় একটি যুদ্ধ থেকে মুসলিমরা শুরু করে। সেটার অন্য এক ইতিহাস আছে। এখন যেমন পাঞ্জাবী জুব্বাকে ইসলামের পোষাক বলে মনে করি এমন জিনিস রাসুল সা. কোনদিনও পরিধান করেননি। এই কথার বিরোধীতা কেউ করতে চাইলে রেফারেন্স নিয়ে এসে কথা বলবেন আশা করি। পুরুষ ও নারী অবশ্যই শালিনতা পুর্ন পোষাক পরিধান করবে। (রাসুল সাঃ) এর সুন্নাহ হচ্ছে যে, মানুষ তার দেহ যথাযথভাবে আচ্ছাদন করবে।
পুরুষদের নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হবে। এছাড়া অন্যন্য অংশ বিভিন্ন কারনে খোলা রাখা যেতে পারে। এখানে তাঁর কোন প্রকার ইসলাম ছুটে যাবেনা।
নারীগন অবশ্যই তার শরীর যথাযথভাবে ঢেকে রাখবে। নবী করীম (সাঃ) ইরশাদ বলেছেন যে, একটি বয়স্ক মেয়ের জন্য তার শরীর খোলা রাখা ঠিক নয়। সে অবশ্য তার মুখমন্ডল ও হাতের সামনের অংশ খোলা রাখতে পারে (আবু দাউদ)।
নবী করীম (সাঃ) আরও বলেছেন যে, মহিলাদের এমন পাতলা পোষাক পরতে অনুমতি দেয়া হয়নি যা তার দেহ দেখাতে পারে। (মুসলিম)।
যেখানে রাসুল (সা) পাতলা পোষাক পড়তে নিষেধ করেছেন সেখানে জিন্স পড়লে আরো বেশি সওয়াব হবার কথা। অন্যান্য কাপড়ের তুলনায় জিন্স কাপড় অনেক মোটা। তাহলে কেন মেয়েদের জিন্স পড়া নিয়ে কথা বলি আমরা!!
আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে নারীরা মাথার উপর এক প্রকারের চাদর দ্বারা পেছনের খোপা বেঁধে রাখত। সম্মুখের দিকের বোতাম খোলা থাকত । এতে গলা ও বুকের উপরংশ স্পষ্ট দেখা যেত। বুকের উপর কোর্তা ছাড়া আর কিছু থাকত না।(ইবনে কাসীর, কাশশাফ, মুহাম্মদ আসাদ লিখিত জ্ঞজ্ঞমেসেজ আব দি কুরআন, সুরা নুরের তাফসীর অংশ) ।
বুকের উপর কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখে ইট ছুড়ে মারছে এক ফিলিস্তিনী নারী।
পোষাক ব্যবহারে জাঁক-জমক ও আড়ম্বর নিষিদ্ধ করেছে ইসলাম। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে বলা হয়েছে- আল্লাহ জাঁক-জমক পূর্ণ (গর্বিত) লোককে পছন্দ করেন না। (সুরাঃ আল-হাদীদ, আয়াত-২৩)
মহানবী (সাঃ) বলেন- যে ব্যক্তি জাঁক-জমক বা গর্ব দেখানোর জন্য তার পোষাক জমি পর্যন্ত স্পর্শ করায় (বিনা কারণে লম্বা করে) আল্লাহ শেষ বিচারের দিনে তার দিকে তাকাবেন না। ( কিতাবুল লেবাস, সহীহ আল-বুখারী)।
মহান আল্লাহ তায়ালা স্ত্রীলোকদের ওড়না পরার নির্দেশ দিয়ে ঘোষনা করেছেন- মুসলিম নারীদেরকে বলুন যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, তারা যেন যা সাধারনতঃ প্রকাশ পায় তা ব্যাতীত তাদের সাজসজ্জা ও সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যে মাথার ওড়না দিয়ে আবৃত করে (সুরাঃ নূর, আয়াত- ৩১)।
উপরোল্লেখিত বিধান ঘরে-বাইরে সমান প্রযোজ্য। এ আয়াতে পুরুষদেরকেও তাদের দৃষ্টি সংযত রাখার ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এই আয়াত অবতীর্ন হওয়ার পর মুসলিম মহিলা ও যুবতীদের মধ্যে ওড়না ব্যবহার করার রেওয়াজ চালু হয়। মুমিন নারীগন এ নির্দেশ শুনে দ্রুত সেই অনুযায়ী আমল শুরু করেন।
ইসলাম নারীদের সম্ভ্রমের প্রতি মর্যাদা দেয়। তাই ইসলাম নারীদের তার সাধারন পোষাকের উপর চাদর ব্যবহারে নির্দেশ দিয়েছে, যখন সে কাজের জন্য অন্যান্য উদ্দেশ্যে বাইরে যায়। কালামে পাকে এ সম্পর্কে ঘোষনা হয়েছে- হে নবী! আপনার পত্নী, কন্যা, ও মুমিনদের স্ত্রী গনকে চাদর (মাথা ও বুক ঢেকে) পরিধান করতে বলুন, এটাই সম্ভ্রান্ত স্ত্রীলোকদের পরিচয়ের উত্তম পথ এবং এতে করে তাদের বিব্রত করা হবে না।
পোষাক পরিচ্ছদ অব্যশ্যই পরিষ্কার হতে হবে। করণ ইসলাম পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর দিয়েছে। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন- পরিস্কার -পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ । (কিতাবুত তাহারাত, সহীহ আল-বুখারী)।
ফতোয়া ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেটা দেওয়ার আগে কোরআন হাদিসের বিধান ভালভাবে জানতে হবে। কোন উলামায়ে সু'র লেখার জ্ঞান নিয়ে ফতোয়া দিলে গোনাহের মাঝে পড়তে হবে। আল্লাহ্ আমাদের ইসলামকে বোঝা ও মেনে চলার তৌফিক দিন, আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৪০