টিএসসিতে সাহিত্য সভায় বক্তৃতা দিয়ে ফিরছিল কুশল। হলের ক্যান্টিনের সামনে এসে দেখল আনিস আর তুষারের মধ্যে তুমুল তর্ক হচ্ছে। তর্কের বিষয় বস্তু নিম্নরূপ-
আনিস নতুন টিউশনি পেয়েছে। ছাত্রী ক্লাস নাইনে পড়ে। প্রথম দিন পড়িয়ে এসে আনিস হলের বন্ধুদের কাছে ছাত্রীর বর্ননা দিয়েছে এই ভাবে- আমার স্টুডেন্ট এর সেই রকম ফিগার। পুরা ছত্রিশ চব্বিশ ছত্রিশ।এরকম কঠিন মাল যে স্টুডেন্ট হিসাবে পাব আমি কোনদিন কল্পনাও করি নাই।
তুষার বলেছে- দোস্ত তুই মেয়েটাকে বাসায় পড়াতে গিয়েছিস।পড়িয়ে এসে সবার কাছে তার শরীরের বর্ননা দিচ্ছিস। তোর বর্ননা শুনে সবাই মেয়েটার শরীর কল্পনা করছে। তুই কি ভয়ঙ্কর অন্যায় করেছিস সেটা কি তুই চিন্তা করেছিস দোস্ত? মেয়েটা অথবা তার বাবা মা যদি ঘুণাক্ষরেও তোর এই কথাগুলো শুনে ফেলে তাদের মনের অবস্থা কি হবে চিন্তা করেছিস?
আনিস বলেছে- দোস্ত ফান কে ফান হিসেবেই দেখা উচিত। আমি কি বলছি সেটা স্টুডেন্ট অথবা তার বাপ মা কে যেহেতু কেউ বলতে যাচ্ছে না কাজেই আমি এতে দোষের কিছু দেখি না। আমরা আমরাই ত!
সব শুনে কুশল তুষার কে তুখোড় সাহিত্যিক বক্তৃতা দিয়ে ফ্যাক্ট বুঝিয়ে দিয়েছে-দেখ তুষার। এখানে ত সত্যি সত্যি কেউ কিছু করছে না! এটা জাস্ট একটা মানসিক ফ্যান্টাসি। এটা করে ইয়ং ছেলেপেলে যদি একটু মজা পায় তাহলে ক্ষতি কি? এটা জাস্ট বিনোদন। এখানে সিরিয়াস হবার কিছু নাই।
বিশ বছর পর।
বিশিষ্ট সাহিত্যিক এবং উচ্চ পদস্থ চাকুরে কুশল চৌধুরী নারী অধিকার বিষয়ক সেমিনারে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে নিজেই গাড়ি চালিয়ে ঘরে ফিরছেন।লোড শেডিং এ অন্ধকার ঝড় বৃষ্টির রাত। যানজটে পুরা রাস্তা ভজকট পাকিয়ে গেছে। কুশল চৌধুরী’র থেমে থাকা গাড়ির পাশে একটা সিএনজি। বৃষ্টির কারনে সিএনজির পর্দা ফেলানো। অন্ধকারে মুখ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু সিএনজির ভেতর কোন তরুণ মোবাইলে কথা বলছে- আমার স্টুডেন্ট এর সেই রকম ফিগার। পুরা ছত্রিশ চব্বিশ ছত্রিশ।এরকম কঠিন মাল যে স্টুডেন্ট হিসাবে পাব আমি কোনদিন কল্পনাও করি নাই।
অকস্মাৎ বিদ্যুৎ চমকাতে পর্দার ফাঁক দিয়ে তরুণের চেহারা দেখতে পেলেন কুশল চৌধুরী। তরুণ কুশল চৌধুরীর মেয়ে অবন্তী কে পড়ায়। অবন্তী ক্লাস নাইনে পড়ে আর তরুণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। সপ্তাহ খানেক হল তরুণ অবন্তী কে বাসায় এসে পড়ানো শুরু করেছে।
‘কুত্তার বাচ্চা’ বলে গাড়ির দরজা খুলে লাফ দিয়ে নামলেন কুশল চৌধুরী। সিএনজির নেটের দরজার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন! ঠিক তখন একটা অতি প্রাকৃতিক ব্যাপার ঘটল!!
কুশল চৌধুরী দেখলেন বিশ বছর আগের তরুণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র এবং সাহিত্য কর্মী কুশল তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সে হাহাহাহা অট্টহাস করতে করতে বলছে-দেখুন কুশল চৌধুরী! এখানে ত সত্যি সত্যি কেউ কিছু করছে না! এটা জাস্ট একটা মানসিক ফ্যান্টাসি। এটা করে ইয়ং ছেলেপেলে যদি একটু মজা পায় তাহলে ক্ষতি কি? এটা জাস্ট বিনোদন। এখানে সিরিয়াস হবার কিছু নাই।
প্রবীণ কুশল চৌধুরী সজোরে তরুণ কুশলের মুখে ঘুসি হাঁকালেন। হাঁকাতেই থাকলেন।
পরিদিন খবরের কাগজে নারী অধিকার বিষয়ক সেমিনারে দেয়া সাহিত্যিক কুশল চৌধুরীর জ্বালাময়ী বক্তৃতার পাশাপাশি বক্তৃতা দিয়ে ফেরার পথে কুশল চৌধুরীর অকস্মাৎ হার্ট এটাকে মৃত্যুর খবর ছাপানো হল।