হোটেলের নাম নেংটং। নেংটং এ পৌঁছতেই হিম বাতাস দিয়ে বৃষ্টি নামল। আমি মোটা জ্যাকেট পরে আছি। আমার পাশে মংছি কাল সোয়েটার পরা। মংছির দিকে তাকিয়ে আমার আবারো হাসি পেল। মংছি লুঙ্গির নিচে সোয়েটার ইন করেছে। বার্মিজ ছেলেদের এই এক অভ্যেস- লুঙ্গির সাথে যাই পরে ইন করে পরে।
হোটেল নেংটং এর গালফোলা গোঁফওয়ালা ম্যানেজারের পেছনের বোর্ডে একটামাত্র চাবি সাঁটানো। অর্থাৎ হোটেলে একটাই রুম খালি আছে। আমার মনে হল হোটেলের সবচেয়ে পঁচা রুম টা আমার জন্য খালি আছে।
হোটেলের রেজিস্টার খাতায় কুমুদ হাসান, পেশা-ছাত্র,বয়স-বাইশ,বাবার নাম, স্থায়ী ঠিকানা লিখে ম্যানেজারের থেকে চাবি বুঝে নিয়ে ব্যাগ ট্যাগ সহ রুমের দিকে রওনা হলাম। মংছি এখান থেকেই আমার থেকে বিদায় নিল। যাবার সময় আমার দিকে তাকিয়ে ফ্যাকাসে ঠোঁটে হাসল। সন্ধ্যাবেলা থেকেই মংছি ডান পা খুঁড়িয়ে হাঁটছিল। ফিরে আসার সময় খেয়াল করলাম, সে ডান দিকে আরো ঝুঁকে আরো খুঁড়িয়ে হাঁটছে।
হোটেল রুমে ঢুকতেই চমক লাগল। রুমটা ঝকঝকে পরিষ্কার। রুমের দেয়ালে হাল্কা নীল রঙের ডিসটেম্পার, একপাশের ছোট্ট সিঙ্গেল খাট গোলাপি বেড কভারে ঢাকা। খাটের মাথার কাছে আয়নাওয়ালা ছোট্ট টেবিলের উপর পোড়া মাটির তৈরি অ্যাশ ট্রে। অ্যাশ ট্রে র পাশে পরিষ্কার একটা গ্লাসে একগ্লাস পানি ও আছে।
আমি মোটা কাপড় টাপড় ছেড়ে বাথরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে লুঙ্গি পরে খাটের উপর আরাম করে বসে একটা সিগারেট ধরালাম। বাথরুমে যাওয়ার সময় খেয়াল করেছি, রুমের সাথে লাগোয়া ছোট্ট একটা ব্যালকনি ও আছে। ব্যালকনি’র ওপারে অনেক দূর পর্যন্ত গা ছম ছম করা খোলা অরণ্য। রাতের নাটক(!) শেষ হওয়ার পর ব্যালকনি তে চেয়ার নিয়ে বসে খোলা অরণ্য দেখব- এরকম একটা পরিকল্পনা আমি আগেই ঠিক করে রাখলাম।
রাতের নাটকের একটু ভূমিকা এখানে আবশ্যক। সেই দূপুরবেলা মংছির সাথে বেরিয়ে টেকনাফ বিচে গিয়ে কম করেও তিন চার কিলোমিটার হেঁটেছি। হাঁটতে হাঁটতে মংছির সাথে অনেক গল্প করেছি। বেশিরভাগ গল্পই নরনারীর শারীরিক সম্পর্ক বিষয়ক। মংছি আমার থেকে বয়সে ছোট হলেও বিবাহিত। বউয়ের সাথে কিভাবে কি করে(!) মংছি আমার কাছে অবলীলায় বর্ননা করেছে! শুনে আমি যুগপৎ উত্তেজনা এবং মংছি’র প্রতি ঈর্ষা অনুভব করেছি। আমার এই বয়সেও কোন যৌন অভিজ্ঞতা হয়নি শুনে মংছি আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়েছে এবং আমার এ শূন্যতা যে চাইলেই পূরণ করা যায় সে বিষয়ে পরিষ্কার ইঙ্গিত দিয়েছে!
গোলাপি গালের একটা মেয়ে একান্ত আমার হয়ে আমার পাশে থাকবে-এরকম কল্পনা করে বহু রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি। আজকের এই অচেনা যায়গায়, যেখানে আমাকে কেউ চিনবে না সেখানে কল্পনাকে বাস্তব রূপ দেবার প্রায় অযাচিত সুযোগ পেয়ে রোমাঞ্চিত হয়ে উঠলাম। মংছি র দিকে আড়চোখে তাকিয়ে কিছুটা দ্বিধা জড়িত গলায় জিজ্ঞেস করলাম-
এদিকে পাওয়া টাওয়া যায় নাকি?
মংছি দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলল, যায়, পয়সা যত বেশি, জিনিষ তত ভাল!
মংছি টাকার বিনিময়ে আমার জন্য জিনিষের(!) ব্যবস্থা করেছে এবং বলেছে রাতের বেলা আমার হোটেল রুমে পৌঁছে দেবে। এই হচ্ছে নাটকের ভূমিকা।
রাত আট টা বাজতেই খাওয়া দাওয়া শেষ করে ফেললাম। খাওয়ার পরে বাড়তি ক্যালরি পাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই গা একটু গরম হয়। কিন্তু আমি রীতিমত ঘামতে শুরু করলাম। প্রতি মুহুর্তেই- এই বুঝি কেউ দরজায় টোকা দিল- এই ভাবনা ছাড়াও বিভিন্ন রকমের ভয় আমার বুকের মধ্যে কাজ করতে শুরু করল। মনে হতে লাগল, এক্ষুনি দরজায় টোকা দিয়ে ঢুকবে পুলিশ। আমার হাতে হাতকড়া পরিয়ে বলবে-কুমুদ সাহেব,আমার সাথে থানায় চলুন।আপনি নাকি অসামাজিক কাজ করার জন্য এই হোটেলে এসেছেন! বড় ভাই এবং আব্বার চেহারাও চোখের সামনে ভাসতে লাগল। আমি যেন স্পষ্ট দেখতে পেলাম-একই সাথে রাগী এবং দুঃখী দুঃখী মুখ করে আব্বা এবং আমার বড় ভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে! ‘এই মুহুর্তে হোটেলের রুম ছেড়ে পালিয়ে গেলে কেমন হয়?’ এরকম একটা ভাবনাও মনে একবার উঁকি দিয়ে গেল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত পালিয়ে যাওয়া হল না। প্রচণ্ড শীতের মধ্যে কূল কূল করে ঘামতে ঘামতে রাত এগারোটা বেজে গেল। পোড়ামাটির অ্যাশ ট্রে টা তে ছাই এর স্তূপ জমে উঠল একসময় আমি দরজার বাইরে টুক টুক শব্দ শুনলাম!
দরজা খুলে দেখি সারা মুখে বিষণ্ণতার আভা নিয়ে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মেয়েটার বিষণ্ণ কোমল মুখটাই শুধু দেখা যাচ্ছে; মাথা শরীর সবই শালের মত একটা চাদরে ঢাকা। মেয়েটা দ্রুত একবার আমার দিকে তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিল। আমার বুকের ভেতর তখন দ্রুম দ্রুম শব্দ হচ্ছে, গলার স্বর যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে মেয়েটার দিকে প্রায় না তাকিয়ে বললাম, ‘ভেতরে আসুন!’ আমার ‘আসুন’ শুনেই সে ফিক করে হেসে ফেলল। সম্ভবত সে কারো ‘আপনি’ সম্বোধনে অভ্যস্ত নয়।
মেয়েটা রুমে ঢুকতে ঢুকতে উপজাতি দের বাঁধো বাঁধো বাংলা উচ্চারণে বলল- মংছি আমাকে এখানে পাঠাইছে’। তার গলার আওয়াজ শুনে আমার সারা শরীরে একটা শিহরন খেলে গেল। কি সুন্দর গলার আওয়াজ! খাটের উপর বসতে বসতে চকিতে সে একবার রুমের খোলা দরজার দিকে তাকাল। আমি দ্রুত উঠে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলাম।
দরজা আটকে ফের তার মুখোমুখি হতেই চমকে উঠলাম! শালের মত যে চাদর টা শরীরে জড়ানো ছিল ততক্ষণে সেটা সরিয়ে একপাশে রেখেছে। আর সেটা সরাতেই যেন মেঘ সরে গিয়ে আস্ত চাঁদ বেরিয়ে পড়েছে!
গোলাপি রঙের আঁটো ব্লাউজ, কোমরে পেঁচিয়ে পরা কাল থামি’র আড়ালে দুধে আলতা গায়ের রঙের মেয়েটার সতেজ যৌবন যেন জ্বল জ্বল করছে! একটু আগেও যে মুখ টাকে বিষণ্ণ মনে হয়েছিল সেটা এ মুহুর্তে গোলাপি আভায় ঝলমল করছে! বাঁকা ভুরু দুটো নাচিয়ে সে যখন আমার দিকে চকিত দৃষ্টি হানল আমার মনে হল এ অপূর্ব সুন্দরী রমণী টাকে দূ’হাতের আলিঙ্গনে জড়ানো ছাড়া এই মুহুর্তে আমার কিছু করার নাই।
কোন মেয়েকে একেবারে নিজের করে পাওয়ার সে আমার প্রথম অভিজ্ঞতা। আমি তার গোলাপি গাল ছুলাম।আমার উষ্ণ নিশ্বাস গুলো তার ঠোঁটে চুম্বন হয়ে ঝরে পড়ল। আমার তৃষ্ণার্ত বাহুর নিবিড় আলিঙ্গনে সে থর থর করে কেঁপে উঠল এবং অনেক অচেনা নৌকো জাহাজ ডুবিয়ে সুখ সমুদ্রে উঠা ঝড় যখন থামল তখন তার প্রতি ভীষণ কোমল একটি ভালোবাসা আমি অনুভব করলাম!
ভালোবাসার কোমল হাতে তাকে জড়িয়ে তাকে নিয়ে যখন ব্যালকনি তে এসে বসলাম তখন বাইরের আঁধার সরিয়ে আকাশ পূর্ন করে উঠেছে বিশাল চাঁদ। চাঁদের আলো ঠিকরে পরা ওর ভেজা ভেজা মুখের দিকে তাকিয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম-
তোমার নাম কি?
ওটিনু!
কি সুন্দর নাম! মুখে চাঁদের আলো খেলা করা অপরূপ সুন্দর মেয়েটাকে ঐ মুহুর্তে আমি কিছুতেই ‘রাতে হোটেলে আসা মেয়ে’র সাথে মেলাতে পারছিলাম না। এই মেয়ে শুধুই একান্ত একজনের হাত ধরে নিভৃত চাঁদের আলোয় হাঁটবে- এরকম বোধ আমার ভেতর জেগে উঠছিল। ওর নাম শোনার পর সেই বোধ টা আরো বাড়ল।
‘ ওটিনু, তুমি কি আমাকে বলবে এসব কাজ তুমি কেন করছ?, আমি ওটিনুর দিকে তাকিয়ে কোমল স্বরে জিজ্ঞেস করলাম।
ওটিনু ব্যালকনি’র গ্রিলে দূ’হাত চেপে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল। আমার প্রশ্নের কোন জবাব দিল না।
ওটিনু’র সাথে আরো ঘনিষ্ট হয়ে ওর উন্মুক্ত গ্রীবা’য় হাত রেখে আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম,
ওটিনু তোমার কি বাবা মা আছে?
আছে! ওটিনু আস্তে করে জবাব দিল। ওর সুগন্ধি চুলে হাত বুলাতে বুলাতে আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম,
তুমি তাদের সাথে থাক না?
ওটিনু প্রবল ভাবে মাথা নাড়ল। মনে হল আমার এসব প্রশ্নের জবাব দিতে সে মোটেই আগ্রহী নয়। কিন্তু ততক্ষণে আমার কৌতূহল প্রবল হয়ে উঠেছে। ওর জীবনের গল্প আমাকে জানতেই হবে। ওর একটা হাত মুঠোয় নিয়ে ওর গোলাপি গালে আদর ছুঁইয়ে আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম,
তুমি কার সাথে থাক ওটিনু?
আমার স্বামী’র সাথে।
স্বামী’র সাথে!! আমি চমকে উঠলাম। রাতে হোটেলে অভিসার করে বেড়ায় যে মেয়ে- সে স্বামী’র সাথে কিভাবে থাকে?
- তোমার স্বামী কি করে?
- আগে বোটের মাঝি ছিল।
- এখন?
- এখন কিছু করে না।
- সংসার তুমি চালাও?
- হ্যাঁ!
ওর স্বামী প্রাণী টার জন্য আমি মনে মনে তীব্র ঘৃণা অনুভব করলাম। স্ত্রী’র পতিতাবৃত্তির টাকায় জানোয়ার টা ঘরে বসে বসে খায়! ওর স্বামী’র প্রতি ঘৃণা মেশানো গলায় আমি জিজ্ঞেস করলাম- তোমার স্বামী রূপী জানোয়ার টা কে?
ওটিনু এতক্ষণ আমার সাথে ঘনিষ্ট হয়ে ছিল। এবার আমার কথা শুনে যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল! আমাকে প্রায় ধাক্কা মেরে সরিয়ে তীব্র গলায় বলল,
‘তুমি আমার স্বামী কে গালি দেবে না’। ওটিনু রাগে থর থর করে কাঁপতে লাগল।
আমি ভীষণ অসহায় বোধ করতে লাগলাম। মনে হল সে আর আমার সাথে কথাই বলবে না।
কোথায় আমার বোকামি হয়েছে বুঝতে না পারলেও নিজের বোকামির জন্য নিজেকে মনে মনে ধিক্কার দিলাম!
ওটিনু’র চোখে চোখে তাকিয়ে ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গিতে আমি বললাম, ওটিনু আমি দুঃখিত। তোমার স্বামী’র নামে না জেনে খারাপ কথা বলেছি!’
ওটিনু আমার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। তবে সেই সাথে মনে হল ও কিছুটা শান্ত ও হল। আবছা চাঁদের আলোয় আমি ওর চোখে জল টলমল করে উঠতে দেখলাম। গলার স্বর যতটা সম্ভব নরম করে আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
তোমার স্বামী’র নাম কি?
মংছি।
মংছি!মুহুর্তে যেন বজ্রপাত হল।দেখতে খাটো, ইন করে স্যুয়েটার পরা, গোলগাল চেহারার এবং এক পা খুঁড়িয়ে হাঁটা এই ছেলেটাই তাহলে ওটিনুর স্বামী! ওটিনুর একটু আগের সাপের ফণার কথা চিন্তা করে চেহারায় সেই ভাব প্রকাশ না করলেও মংছির প্রতি তীব্র ঘৃণায় আমার অন্তরাত্মা রি রি করে উঠল। আমার সাথে টেকনাফ বাস স্ট্যান্ডে ট্যুরিষ্ট গাইড হিসেবে পরিচয় হবার পর থেকে মংছি’র সমস্ত কার্যকলাপের মধ্যে পরিকল্পিত একটা ষড়যন্ত্রের আভাস-আমার মনের মধ্যে মুহুর্তে উঁকি দিয়ে গেল।
মনের ভাব গোপন রেখে ওটিনুর দিকে তাকিয়ে আমি আগের মতই কোমল স্বরে জিজ্ঞেস করলাম,
ওটিনু তুমি কি মংছি কে খুব ভালবাস?
হ্যাঁ। বলতে বলতে ওটিনুর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
কিন্তু ওটিনু, ব্যাপার টা তাইলে কেমন হল? তুমি একজন কে মনপ্রান দিয়ে ভালবাস অথচ-
আমি কিছুটা অনুযোগ মেশানো গলায় বললাম।
‘আমি মংছি কে বাঁচানোর জন্য করছি!’ প্রায় অনুচ্চ স্বরে ওটিনু বলল। বলতে বলতে ওটিনু মাথা নিচু করে ওর ওষ্ঠ দিয়ে অধর কামড়ে ধরল।
মংছির কি হয়েছে? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
ওর পায়ে হাড়ের অসুখ। ডান পায়ে তীব্র ব্যাথা হয়। বলতে বলতে ওটিনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
অসুখ টা কিভাবে শুরু হল?
আমার কথার জবাব না দিয়ে ওটিনু বাইরের দিকে তাকিয়ে রইল।
মংছিই কি তোমাকে এ পথে এনেছে? প্রায় অপ্রাসঙ্গিক ভাবে আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম।
না! ওটিনুর গলার স্বর আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল।
তাহলে?
আমিই ওকে জোর করে রাজি করিয়েছি! বলেছি, ও রাজি না হলে আমি আত্নহত্যা করব।
মংছির পায়ে কি খুব ব্যাথা হয়?
হ্যাঁ, রাতে যখন ব্যাথা খুব বাড়ে তখন সে চিৎকার করে কাঁদে। ডাক্তার বলেছে ওর চিকিৎসা করতে অনেক টাকা লাগবে।
আমি আর কিছু বলার না পেয়ে চুপ করে থাকলাম। আর কিই বা বলার থাকতে পারে? মেয়েটা প্রাণপণে চায় তার স্বামী সুস্থ হয়ে উঠুক। হয়ত এই মুহুর্তে ওর সামনে আর কোন পথ খোলা নেই।
নীরবতায় অনেকক্ষণ সময় পার হয়ে গেল। বাইরে থেকে হিম ঠাণ্ডা একটা বাতাস এসে গায়ে ঝাপটা দিয়ে গেল।অনেক দূরে কোথাও রাতজাগা একটা পাখির ডাক ও শুনতে পেলাম। এক সময় ওটিনু নিজে থেকেই বলতে শুরু করল-
টাকা জোগাড়ের আর কোন উপায় না দেখে মংছিকে এই পথে টাকা রোজগারের কথা বললে মংছি প্রথমে খুব রেগে যায়। সে রেগে যাওয়াতে আমি ওর চেয়ে আরো বেশি রেগে যাই। আমি ওকে বলি ওর জীবনের চেয়ে মূল্যবান আমার কাছে আর কিছুই নয় এবং ও অমত করলে আমি আত্নহত্যা করব। মংছি আমার জিদ জানত। সে আমার কথায় রাজী হয়। কিন্তু এ পথে আসার জন্য আমাকে অন্য কারো হাতে তুলে দিতে সে রাজি নয়! সে নিজেই গোপনে খোঁজ খবর করে সব ব্যবস্থা করে।
নিজেই সব ব্যবস্থা করে?
হ্যাঁ।
বলতে বলতে আশ্চর্য্য এক আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠল ওটিনুর মুখ মণ্ডল। সে মুখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ অদ্ভুত ভাবে আমার কল্পনায় একটা দৃশ্য ফুটে উঠল-
উথাল পাথাল কোন জ্যোৎস্নায় জোয়ার আসা সমুদ্রের তীরে বালিয়াড়িতে পা ফেলে হাঁটছে ওটিনু। পাশে তার হাত ধরে ছোটখাট গোলগাল চেহারার এক পুরুষ; এবং সে মোটেও খুঁড়িয়ে হাঁটছে না।
মহিউদ্দিন খালেদ।
১৭/১২/২০০৩
মীরপূর-২,ঢাকা।