ই-কমার্স বাংলাদেশে এখন বেশ জনপ্রিয় এবং এই জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৩ কোটির বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে এবং ১১৬ মিলিয়ন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী। ফেসবুক বাংলাদেশে এখন ভীষণ জনপ্রিয়। এসব ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই তরুণ-তরুণী যারা ইন্টারনেট এবং কম্পিউটার নিয়মিত ব্যবহার করে আসছে এবং আইসিটি সম্পর্কে তারা খুবই উৎসাহী।
বাংলাদেশের ই-কমার্স বাজারের মূল শক্তি এ তরুণ সমাজ। অনেক তরুণ ৯টা-৫টা চাকরি না করে তাদের নিজস্ব ই-কমার্স কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেছে এবং এসব কোম্পানীর অনেকগুলোই এখন বেশ সফল। বাংলাদেশে এ ধরণের কয়েক’শ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠান ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের পণ্য এবং সেবা বিক্রী করছে।
দূর্ভাগ্যজনক হলেও এটি সত্যি কথা যে, বাংলাদেশে ই-কমার্সের বিপুল সম্ভাবনা থাকা স্বত্বেও এ সেক্টরটি সেভাবে বৃদ্ধি পায়নি। বাংলাদেশের ই-কমার্স সেক্টরকে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে আগামী ২৫-২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আয়োজিত হতে যাচ্ছে ঢাকা ই-কমার্স মেলা ২০১৪। এবারের মেলায় দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য এবং সেবা সমূহ দর্শনার্থীদের কাছে তুলে ধরবে। প্রদর্শনী ছাড়াও মেলাতে রয়েছে- সেমিনার, কর্মশালা, এওয়্যার্ড নাইট, ই-ডাইরেক্টরি প্রকাশ ও গেমিং প্রতিযোগিতাসহ নানা আকর্ষণ।
ই-কমার্স মেলা উপলক্ষে ১২ আগস্ট ২০১৪ মঙ্গলবার, ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাব কনফারেন্স রুমে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। উক্ত সম্মেলনে মেলার আয়োজকগণ সাংবাদিকদের মেলার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে অবগত করেন এবং মেলা সম্পর্কে আলোচনা করেন।
ই-কমার্স মেলার আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ তমাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ই-কমার্স বাংলাদেশে এখন দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে এখন তিন কোটির বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে। এসব ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বেশির ভাগই তরুণ-তরুণী। এরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে এবং ই-কমার্স সম্পর্কে খুবই আগ্রহী। অনেক তরুণ-তরুণী ৯টা-৫টা চাকরি না করে তাদের নিজেদের ই-কমার্স কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেছে এবং তাদের অনেকেই সফল হয়েছে। দেশে বর্তমানে ছোট বড় মিলিয়ে কয়েক শ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও প্রায় দুই হাজার প্রতিষ্ঠান ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসা করছে।’
মেলায় কমপিউটার জগৎ- এর সহকারী সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত রির্পোট থেকে জানা যায়, এবারের ঈদে অনলাইন ভিত্তিক বাজার ৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এসব অনলাইন কেনাকাটার ৬৫% ফেসবুকে সম্পন্ন হয়েছে। গত বছরের ঈদের অনলাইনে প্রায় ১১ কোটি টাকার মতো লেনদেন হয়েছিল। অনলাইনে কেনাকাটার ৭৫% হয় ঢাকায় আর বাকীটা চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, বগুড়াসহ অন্যান্য এলাকায়। এ থেকেই বোঝা যায় যে, দেশে ই-কমার্সের ভবিষ্যত খুবই উজ্জ্বল। দেশের ই-কমার্স সেক্টরকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্যে এবং সাধারণ মানুষ যাতে ই-কমার্স সম্পর্কে উৎসাহী হয়ে ওঠে সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা এ মেলার আয়োজন করেছি।’
সম্মেলনে বাসবিডি.কম (http://www.busbd.com) এবং সোয়ানসফট লি: এর মার্কেটিং অ্যাণ্ড সেলস ডিরেক্টর মো: সিদ্দিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন যে, ২০১২ সাল থেকে তারা অনলাইনে বাসের টিকিট বিক্রী করে আসছেন এবং বর্তমানে ২০ টি পরিবহন সংস্থার টিকিট তারা বিক্রী করছেন। এবারের ঈদে তারা হাজার হাজার বাস টিকেট বিক্রী করেছেন। তিনি কমপিউটার জগৎকে তাদের উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে ঢাকা ই-কমার্স মেলা ২০১৪ এর মাধ্যমে দেশের বিশাল সংখ্যক মানুষ তাদের এ সেবার কথা জানতে পারবে।
কমপিউটার জগৎ এর বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার, আতিকুর রহমান, বলেন, “ইউরোপে বিভিন্ন দেশে এখন ই-কমার্ষের জয়জয়কার সেখানে ই-কমার্সেও প্রসার এত দ্রুত হারে বাড়ছে যে প্রচলিত পদ্ধতির দোকানগুলোর অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশে ই-কমার্স সেক্টরের ভবিষ্যত খুবই উজ্জ্বল এবং বিগত ই-কমার্স মেলা গুলোতে হাজার হাজার উৎসাহী মানুষের উপস্থিতিই এ কথা প্রমাণ করে।”
ই-কমার্স ভিত্তিক ব্লগ ইকমবিডি.নেট (http://ecombd.net/) এর সম্পাদক রাজীব আহমেদ বলেন যে, “চলতি দশক হচ্ছে এশিয়ার ই-কমার্সের উত্থানের দশক। ২০১৫ সাল নাগাদ চীনের ই-কমার্সের বাজারের আকার দাঁড়াবে ৫৪০ বিলিয়ন ডলার এবং তা যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে যাবে। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ই-কমার্স দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের ই-কমার্স সেক্টরের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল বলে তিনি মন্তব্য করেন।”
এসএসল কমার্সের সিনিয়র ম্যানেজার, জুবায়ের হোসেন, বলেন যে, বাংলাদেশে ই-কমার্সের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এবং এ সম্ভাবনাকে বাস্তবে পরিণত করার জন্যে সবাইকে একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তিনি আরও বলেন যে ই-কমার্স মেলার শুরু থেকেই কমপিউটার জগৎ এর সাথে এসএসএল কমার্স ছিল এবং এবারেও থাকছে। এবারের মেলাতে বিভিন্ন বিষয়ের উপরে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে যেখানে দেশের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ মূল প্রবন্ধ পাঠ করবেন। মেলায় পার্টনার হচ্ছে দ্যা ডেইলি স্টার এবং টিম ইঞ্জিন । এছাড়াও টিভি পার্টনার হচ্ছে একাত্তর, রেডিও পার্টনার হচ্ছে ঢাকা এফএম, ওয়েব পার্টনার হচ্ছে বাংলানিউজ২৪ ডট কম, গেমিং পার্টনার হচ্ছে গিগাবাইট এবং ইন্টারনেট পার্টনার হচ্ছে ঢাকা কম লি: । আরো থাকছে বিশিষ্ট আইসিটি ব্যাক্তিবর্গ ও বর্ষসেরা ব্যক্তিত্বকে সম্মান প্রদান উপলক্ষে অ্যাওয়ার্ড নাইট প্রোগ্রাম। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের কোন প্রবেশমূল্য এবং সেমিনারে অংশগ্রহনকারীদের কোন রেজিষ্ট্রেশন চার্জ প্রযোজ্য নয়।
ফিরে দেখাঃ ঢাকা ই-কমার্স মেলা ২০১৩
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে কমপিউটার জগৎ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সফলভাবে ই-কমার্স মেলার আয়োজন করে। ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা জেলা প্রশাসকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে শাহবাগের সুফিয়া কামাল জাতীয় গ্রন্থাগারে তিন দিনব্যাপী ই-বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই মেলার শ্লোগান ছিল “ঘরে বসে কেনাকাটার উৎসব।”ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এই মেলার উদ্বোধন করেন। উল্লেখ্য যে, দেশের প্রথম ই-বাণিজ্য মেলা হিসেবে ঢাকার এই মেলাটি বিশাল সাফল্য লাভ করে। মেলাতে ৮০,০০০ দর্শনার্থীর সমাগম হয়। মেলাতে সরকারী এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে সর্বমোট ৩১টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে এবং তাদের পণ্য ও সেবা দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরে। মেলাতে পণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি পাঁচটি সেমিনারের আয়োজন করে যথাক্রমে বেসিস, ক্রিয়েটিভ আইটি, ডেভসটিম, ঢাকা ডিসি অফিস এবং বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন)।
ঢাকা্ ই-বাণিজ্য মেলা ২০১৩ এর সাফল্য কমপিউটার জগৎকে আরও উৎসাহিত করে। তারা তখন দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরেও ই-বাণিজ্য মেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ঐ বছরের এপ্রিলে সিলেটে ই-বাণিজ্য মেলা আয়োজন করা হয়।সিলেট জিমনেশিয়ামে ৪ এপ্রিল থেকে ৬ এপ্রিল এ মেলার আয়োজন করা হয়।সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলে।এ মেলা সকলের জন্যে উন্মুক্ত ছিল। সিলেট ই-বাণিজ্য মেলার শ্লোগান ছিল ‘ঘরে বসে কেনাকাটার উৎসব।
সিলেট জেলা প্রশাসন এবং কমপিউটার জগৎ এ মেলার আয়োজন করে। মাননীয় অর্থমন্ত্রী, আবুল মাল আব্দুল মুহিত, সিলেট স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়ামে এ মেলার উদ্বোধন করেন। তিনদিন ব্যাপী এই মেলাতে ১২টি সরকারী প্রতিষ্ঠান, ৮টি স্থানীয় ই-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান এবং ঢাকা থেকে ২৫টি ই-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। মেলাতে ৩০,০০০ দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। কমপিউটার জগৎ ঢাকা মেলার মতো এই মেলাটির লাইভ ওয়েবকাস্ট করে এবং ২০,০০০ এর বেশি দর্শক তা উপভোগ করে। এই মেলাতে ই-বাণিজ্যের উপরে দুটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় এবং দুটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এ মেলায় অংশগ্রহণ করে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- তিন দিনের এ মেলায় অংশ নিচ্ছে এসএসএল কমার্জ, ই-সুফিয়ানা, কমজগৎ টেকনোলজিস, এখনি ডটকম, বগুড়ার দই, রূপকথার জামদানি, জেডকাইট৯, টি-জোন, ওঅনলাইনশপ, অ্যাট২ক্লিকস, বিডিহাট, আপনজোন, ওয়েবশহর (সিটিসেল), অ্যারামেক্স ঢাকা লিমিটেড, জোন ৮৩, বাংলাদেশ পোস্ট অফিস, শাম্মা’স মেহেদী আর্টসহ ঢাকা ও সিলেটের ই-বাণিজ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদাতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার পক্ষ থেকে এ মেলায় অংশগ্রহণ করে সিলেট জেলা ই-সেবা কেন্দ্র ও সিলেট সদর, দক্ষিণসু রমা, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র।
চট্টগ্রাম ই-কমার্স মেলাঃ
ঢাকা এবং সিলেটের পরে জুলাই মাসে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ‘চট্টগ্রাম ঈদ ই-বাণিজ্য মেলা ও ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা-২০১৩’ এর আয়োজন করা হয়।৪জুলাই থেকে ৬ জুলাই এ মেলা চলে। এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়ামে এ মেলার আয়োজন করা হয়। মেলার উদ্বোধন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম খান। এন আই খান তাঁর বক্তৃতায় বলে “সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের আইসিটি সেক্টর ব্যাপক অগ্রগতি লাভ করেছে এবং এ খাতে আমাদের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ভারতের কাছাকাছি।কিছুদিন আগেও এশিয়ার বিভিন্ন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের আইসিটি সেক্টর অনেক পিছিয়ে ছিল কিন্তু এখন অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে।বর্তমানে আমাদের আইসিটি সেক্টর খুবই দ্রুত বর্ধনশীল একটি সেক্টর। বর্তমান সরকার আইসিটি খাতকে বেগবান করার জন্যে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এটি তারই ফসল।” তিনি সাধারণ মানুষের কাছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির আশির্বাদ পৌছে দেবার উপরে জোর দেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইব্রাহীম করিম, এবং প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইফতেখার মনির।
চট্টগ্রাম ই-বাণিজ্য মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনদিন ব্যাপী এই মেলাতে ৫২টি স্টলে ৫১টি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করে। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে মেলাতে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান সমূহ দর্শনার্থীদের জন্যে বিভিন্ন অফারের ব্যবস্থাও করে। এই মেলাতেও পণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। যেসব প্রতিষ্ঠান মেলায় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-রয়েক্স, আপনজোন.কম, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে (চুয়েট), সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, জনতা ব্যাঙ্ক লিঃ, বেচাবিক্রী.কম, ইটএনএঞ্জয়.কম.বিডি, এবং দ্রাশন আইটি।
যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ ই-কমার্স মেলাঃ
দেশের তিনটি বিভাগীয় শহরে সফল ভাবে ই-বাণিজ্য মেলা আয়োজনের পর কমপিউটার জগৎ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (তৎকালীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়)দেশের বাইরে বসবাসরত বাংলাদেশীদের মধ্যে বাংলাদেশের ই-বাণিজ্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তারই ফলশ্রুতিতে সেপ্টেম্বর মাসে লন্ডনে যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ ই-বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হয়। লন্ডনে বসবাসরত বাংলাদেশী লোকদের কাছে বাংলাদেশের ই-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান গুলোর পণ্য ও সেবা তুলে ধরাই ছিল এ মেলার মূল উদ্দেশ্য। ‘ক্লিকেই বাণিজ্য’ স্লোগানকে সামনে রেখে ৭ সেপ্টেম্বর থেকে সেন্ট্রাল লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয় তিন দিনের ‘যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ ই-বাণিজ্য মেলা। দেশের বাইরে এটিই ছিল প্রথম ই-বাণিজ্য মেলা। লন্ডনের দ্য মিলেনিয়াম গ্লুচেস্টার হোটেলে আয়োজিত এ মেলার আয়োজক ছিল বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় (তৎকালীন), লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন, এবং কমপিউটার জগৎ। মেলার স্পন্সর হিসেবে ছিল রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড ও টিম ইঞ্জিন লিমিটেড। ৭ সেপ্টেম্বর শনিবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় প্রধান অতিথি হিসেবে মেলার উদ্বোধন করেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেন, “একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি। আমাদের স্বপ্ন একুশ শতকের বাংলাদেশ হবে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক স্বপ্নময় ডিজিটাল বাংলাদেশ। আর সে স্বপ্নকে ধারণ করেই বর্তমান সরকার চায় ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে। দেশকে এগিয়ে নিতে বিশ্বের যেখানেই বাংলাদেশী রয়েছেন, সেখানেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ই-বাণিজ্য মেলার আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনাদের এ প্রচেষ্টা সফল এবং সার্থক হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের সহ-সভাপতি লর্ড শেখ, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য কেইথ ভাজ। উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মুকিম আহমেদ ও বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নূর-উর রহমান খন্দকার পাশা।
মেলায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য থেকে ৩১টি ই-বাণিজ্য সেবাদাতা তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করে। মেলায় ই-সুফিয়ানা, বিবাহবিডি ডটকম, উপহার ডটকম, জাতীয় মহিলা সংস্থা, বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক, ইউর ট্রিপ মেট লিমিটেড, নিলাস হোম, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, কলসেন্টার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ভয়েচ ট্রাক কমিউনিকেশন, টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রিভ সিস্টেমন এবং বিবিধ ক্যাটাগরিতে অনন্য ট্রেডার্স, অ্যাপস লিডার লিমিটেড অ্যান্ড এমসিসি লিমিটেড, বাক্য, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ক্লিফটনস আর্টস অ্যান্ড ইভেন্টস, কমপিউটার জগৎ, ডিল লিডার, এক্সেলসিয়র সিলেট, আই হেলথ নেট, এলএলসি, জেএমজি কার্গো অ্যান্ড ট্রাভেল লিমিটেড, সোনার বাংলা ট্রাভেলস লিমিটেড, মেডিকেয়ার ইন্টারন্যাশনাল, ডিজিটাল ডক্টরস৩৬৫ ডটকম, মাইক্রোটাইমস লিমিটেড, ওয়ানস্টপ সল্যুউশনস ইউকে লিমিটেড, রিভ সিস্টেমস, গিগাবাইট, এসএসবিসিএল ফ্যাশন ওয়ার্ল্ড, টেকওয়ার্ল্ড, টেলিটক, ইউএবিডিএল ডটকম, ভিশন ট্যুরিজম, পল্লী মহিলা সংস্থা তাদের স্টলে নিজ নিজ পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করে।
বরিশাল ই-কমার্স মেলাঃ
এ বছরের ১৫ থেকে ১৭ই মে বরিশালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বরিশাল ই-বাণিজ্য মেলা। বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।কমপিউটার জগৎ এবং বরিশাল জেলা প্রশাসন যৌথ ভাবে এ মেলার আয়োজন করে।
মেলায় দেশের বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি মোট ৩০টি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য এবং সেবা সমূহ জনসাধারণের কাছে তুলে ধরে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, জাতীয় মহিলা সংস্থা, রূপালি ব্যাঙ্ক, এস এস এল কমার্জ, স্মার্ট প্রিন্টিং সলিউশন্স, টেক ওয়ার্ল্ড, লার্ণিং এন্ড আর্নিং, মৌ-চাষি কল্যাণ সমিতি, ক্রিয়েটিভ আইটি, গিগাবাইট, বাংলালিঙ্ক, ই-সুফিয়ানা, আই-মেশ, সোনালি ব্যাংক লিঃ, আপনজোন.কম, বাংলালায়ন ওয়াইম্যাক্স, অ্যারামেক্স, জবসবিডি.কম, সাত রঙ, বরিশাল জেলা, বরগুনা জেলা, ভোলা জেলা, ঝালকাঠি জেলা, পটুয়াখালী জেলা, পিরোজপুর জেলা, উপ-পরিচালকঃপ্রাথমিক শিক্ষা, বরিশাল বিভাগ, উপ-পরিচালকঃকৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, পরিচালক, বাংলাদেশ টেলি-কমিউনিকেশন লিঃ, গ্রামীণফোন এবং কমপিউটার জগৎ।
পণ্য এবং সেবা প্রদর্শনীর পাশাপাশি মেলায় ই-বাণিজ্যের উপরে বিভিন্ন সভা এবং সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে যেখানে আইসিটি সেক্টরের অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্বরা মূল প্রবন্ধ পাঠ করবেন।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বরিশাল বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ গাউস এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ নজরুল ইসলাম খান, সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগ্ম সচিব শ্যামা প্রসাদ বেপারি, বরিশাল পুলিশ কমিশনার মোঃ শামসুদ্দিন, বরিশাল জেলার ডেপুটি কমিশনার মোঃ শহিদুল আলম, এবং সরকারি বিএম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ফজলুল হক।