somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডের ইতিকথা: পর্ব- ৭

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুম্বাই। ভারতের প্রাণস্বরূপ এই নগরী বিশ্বের অন্যতম জনবহুল এবং বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মহানগরী। যুগের পর যুগ ধরে অজস্র মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে এই মুম্বাই, যুগিয়েছে অন্ন। আজও প্রতিদিন অসংখ্য জীবিকান্বেষী মানুষকে সাদর অভ্যর্থনা জানায় প্রায় ২.৫ কোটি অধিবাসীর শহর মুম্বাই। কিন্তু প্রায় সকল মহানগরীর মতই মুম্বাইয়েরও আছে এক অন্ধকার জগৎ, এ হল মুম্বাইয়ের সেই ভয়ংকর অপরাধ জগৎ যা কেবল তার শান্তিপ্রিয় বাসিন্দাদেরই নয় বরং ভারতসহ ভারতের বাইরেও বহু মানুষের ঘুম কেড়েছে। হাজী মাস্তান, মুদালিয়ার থেকে দাঊদ ইব্রাহীম, ছোটা শাকিল -মুম্বাইয়ের অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রকরা এই স্বপ্নের নগরীর ইতিহাসকে রক্তে রঞ্জিত করতে কখনই কুণ্ঠিত হয় নি। তাদের লিপ্সা-হিংসা ছবির মত মুম্বাইয়ে বহু রক্ত ঝরিয়েছে আর আজও ঝরিয়ে যাচ্ছে। মুম্বাইয়ের সেই লোমহর্ষক অপরাধ জগৎ নিয়েই কিছু না বলা কথা, কিছু গুঞ্জন ধারাবাহিক পর্বে তুলে ধরার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।


প্রথম পর্ব


দ্বিতীয় পর্ব


তৃতীয় পর্ব


চতুর্থ পর্ব


পঞ্চম পর্ব


ষষ্ঠ পর্ব


পর্ব ৭: ডি কোম্পানী


দাঊদ ইব্রাহীম কাসকার, শাবির ইব্রাহীম কাসকারের ছোট ভাই। মুম্বাইয়ের অন্ধকার জগতের সবচেয়ে আলোচিত, সমালোচিত, ক্ষমতাধর আর দূরদর্শী মাফিয়া ডন দাঊদ। তার ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, সম্পদ আর নেটওয়ার্কের কাছে তার পূর্বসূরী এমনকি উত্তরসূরীরাও নগণ্য। বহুল আলোচিত ডি কোম্পানীর প্রতিষ্ঠাতা দাঊদ নিজেই। তবে অনেকে মনে করেন ডি কোম্পানী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল শাবিরের জীবদ্দশায়। বড় ভাই শাবিরের চেয়ে দাঊদ ছিল অনেক বেশি হিংস্র। শাবিরের মৃত্যুর পর দাঊদের ক্রোধ সামাল দেয়ার মত কেউই ছিল না। একের পর এক হত্যা দাঊদকে এক ভয়ংকর গ্যাংস্টার বানিয়ে তোলে মুম্বাইয়ে। ভাই হত্যার প্রতিশোধ নিতে পাঠান গ্যাংকে অনেকটা নিঃশেষ করে দেয় দাঊদ। সুরভের দলেরও অধিকাংশ হয় দাঊদের হাতে খুন হয় অথবা তার মদদে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। সুরভে আর মুনীরের এনকাউন্টারের পর মুম্বাইয়ের অপরাধ জগতের একচ্ছত্র অধিপতি বনে যায় দাঊদ। দাঊদ তখন অপ্রতিরোধ্য আর অসীম শক্তিশালী। কিন্তু চতুর দাঊদ বিপদ আঁচ করতে একচুলও ভুল করে নি। মুম্বাই শহর থেকে একের পর এক প্রায় সব বড় বড় গ্যাং নিশ্চিহ্ন হবার পর পুলিশের দৃষ্টি অচিরেই দাঊদের উপর পড়বে তা বুঝতে ভুল করে নি দাঊদ। ৮০ এর দশকে জরুরী অবস্থায় হাজী মাস্তানের গ্রেফতার, ভরদরাজনের চেন্নাই পলায়ন আর সবশেষে সুরভে এনকাউন্টার দাঊদকে অনুধাবন করায় যে পরিস্থিতি যে কোন সময় তার প্রতিকূলে যেতে পারে। সুযোগ বুঝে দাঊদ পাড়ি জমায় দুবাই। দাঊদ তার কূট-কৌশলে অন্য সব ডনকেই ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। তার পূর্বসূরীদের কেউই তার মত বহুমাত্রিক অপরাধে লিপ্ত হয় নি। চোরাচালান, ডাকাতি, খুন, অপহরণ, হত্যা, ধর্ষণ, পতিতা ব্যবসা, জুয়া, বোমাবাজি, ভূমিদখল, চাঁদাবাজি, অর্থ পাচার, জাল নোট, ম্যাচ পাতানো -এক কথায় অপরাধের কোন ধরণই তার কাছ থেকে রেহাই পায় নি! সাম্প্রতিক ম্যাচ পাতানোতে তার প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডের বহুমাত্রিক অপরাধের দ্বারের উন্মোচন দাঊদের হাতেই ঘটেছে। দাউদ তার খ্যাতি কেবল মুম্বাই বা ভারত নয়, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে সফলভাবে। দুবাই থেকে মুম্বাইয়ের অপরাধের কলকাঠি বেশ ভালভাবেই নাড়তো দাঊদ। ধীরে ধীরে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে সে। ছোটা শাকিল, ছোটা রাজন, শারদ শেঠী সহ বেশ কয়েকজন সহযোগীর মাধ্যমে মুম্বাই নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। কিন্তু ২০০০ সালের পর আমেরিকার আফগান আগ্রাসন চলাকালে দাঊদের বিরুদ্ধে লাদেনের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠে। মার্কিন প্রশাসন দাঊদকে আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য হুমকি হিসেবে আখ্যা দেয়। ২০০৫ সালের দিকে আরব আমিরাতের সাথে ভারতের বন্দী বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০০৬ সালে মুম্বাই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের হাতে গ্রেফতার হয় দাঊদের বেশ কয়েকজন সহযোগী। তখন পাকিস্তান পালিয়ে যায় দাঊদ। শোনা যায়, বর্তমানে করাচীতে সঙ্গীদের কড়া পাহারায় অবস্থান করছে দাঊদ। ১৯৯৩ সালের মুম্বাই বোমা হামলার জন্য সরাসরি দাঊদকে দায়ী করা হয়। এমনকি ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে চালানো সর্বশেষ সন্ত্রাসী হামলায় দাঊদ অস্র ও অন্যান্য সহযোগীতা করেছে বলে স্বীকার করেছে হামলায় গ্রেফতার হওয়া একমাত্র আসামী আজমল কাসাভ। লাদেনের সাথে তার ঘনিষ্ঠতার নানা গুজব প্রচলিত আছে। তার ডি কোম্পানী আল-কায়েদাকে ভারত ও তার আশেপাশে নেটওয়ার্ক বিস্তারে প্রত্যক্ষ সহযোগীতা দিয়ে আসছে। কয়েক বছর আগে পাকিস্তানী ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াঁদাদের ছেলের সাথে নিজের একমাত্র মেয়ে মাহরুখ ইব্রাহীমের বিয়ে দিয়ে পাকিস্তানের নিজের অবস্থানকে আরও সুসঙ্ঘত করেছে দাঊদ। কিছুদিন আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে মৃত্যুর পর মুম্বাইয়ে সমাহিত হতে ইচ্ছুক দাঊদ তার অধীনস্থদের উপযুক্ত যায়গা খোঁজার নির্দেশ দেয়। তার অধীনস্থরাও সেই মোতাবেক কাজ করছে বলে শোনা যায়। পাকিস্তানে দাঊদের রয়েছে বিপুল বিনিয়োগ। তাই ভারত সরকার প্রচুর চেষ্টা করলেও পাকিস্তান দাঊদকে ফিরিয়ে দেয়ার ডাকে সাড়া দেয় নি কখনও।



শেষ পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৩৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×