মুম্বাই। ভারতের প্রাণস্বরূপ এই নগরী বিশ্বের অন্যতম জনবহুল এবং বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মহানগরী। যুগের পর যুগ ধরে অজস্র মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে এই মুম্বাই, যুগিয়েছে অন্ন। আজও প্রতিদিন অসংখ্য জীবিকান্বেষী মানুষকে সাদর অভ্যর্থনা জানায় প্রায় ২.৫ কোটি অধিবাসীর শহর মুম্বাই। কিন্তু প্রায় সকল মহানগরীর মতই মুম্বাইয়েরও আছে এক অন্ধকার জগৎ, এ হল মুম্বাইয়ের সেই ভয়ংকর অপরাধ জগৎ যা কেবল তার শান্তিপ্রিয় বাসিন্দাদেরই নয় বরং ভারতসহ ভারতের বাইরেও বহু মানুষের ঘুম কেড়েছে। হাজী মাস্তান, মুদালিয়ার থেকে দাঊদ ইব্রাহীম, ছোটা শাকিল -মুম্বাইয়ের অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রকরা এই স্বপ্নের নগরীর ইতিহাসকে রক্তে রঞ্জিত করতে কখনই কুণ্ঠিত হয় নি। তাদের লিপ্সা-হিংসা ছবির মত মুম্বাইয়ে বহু রক্ত ঝরিয়েছে আর আজও ঝরিয়ে যাচ্ছে। মুম্বাইয়ের সেই লোমহর্ষক অপরাধ জগৎ নিয়েই কিছু না বলা কথা, কিছু গুঞ্জন ধারাবাহিক পর্বে তুলে ধরার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
প্রথম পর্ব
পর্ব ২: পাঠান আধিপত্য
মুম্বাইয়ের ইতিহাসে সম্ভবত প্রথম পরিকল্পিত ও ঐক্যবদ্ধ অপরাধের সূচনা করে পাঠানরাই। এর আগে যে একেবারে অপরাধ ছিল না তা নয়, তবে ছোটখাট চোরের ছিঁচকে চুরি আর মাফিয়া চক্রের অপরাধযজ্ঞে পার্থক্য রয়েছে বিস্তর। মুম্বাইয়ের চাকচিক্যে আকৃষ্ট আফগান পাঠানরা দলে দলে পাড়ি জমায় মুম্বাইয়ে। এদের অধিকাংশই ছিল পুঁজিপতি যারা মূলত সুদের কারবারে জড়িত ছিল। প্রথমদিকে চওড়া সুদে ঋণ দেওয়া আর অল্পবিস্তর মদের ব্যবসাতেই সীমাবদ্ধ ছিল তাদের কর্মকাণ্ড। কিন্তু ক্রমেই আরও বড় অপরাধের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে তারা। এর কারণ ছিল মূলত তাদের প্রবল প্রতিপত্তি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অদক্ষতা আর উপযুক্ত প্রতিযোগীর অভাব। ঐক্যবদ্ধ পাঠানদের সামনে ভারতীয় চোর-ডাকাতদের দাঁড়ানোর কোন ক্ষমতাই ছিল না। এই সুযোগে অনেকটা ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার মত মুম্বাইয়ে অপরাধের জাল বিস্তার করে পাঠান গং। মুম্বাই ততদিনে ১৩ হাজারেরও বেশি পাঠানের ঠিকানা আর এই পাঠানদের সংগঠনের নাম ছিল পাখতুন জিরগা-এ-হিন্দ। পাখতুন জিরগা-এ-হিন্দ হল মুম্বাই তথা ভারতবর্ষের প্রথম মাফিয়া গ্যাং আর এর নেতা আইয়ুব খান পাঠান ভারতবর্ষের অপরাধ জগতের প্রথম মাফিয়া ডন হিসেবে স্বীকৃত। ১৮ শতকের শেষ প্রান্তে উত্থান ঘটা আইয়ুব খান পাঠান ওরফে আইয়ুব লালা সুদীর্ঘকাল মুম্বাইয়ের একচ্ছত্র অধিপতি ছিল। তৎকালীন বোম্বের প্রায় সকল পানশালা, জুয়ার আসর ও পতিতালয় ছিল আইয়ুব গং এর নিয়ন্ত্রণাধীন। এগুলো পাঠানদের হয়ে পরিচালনা করত বহু মুসলিম ও হিন্দু। পরবর্তীতে এরাই হয়ে উঠে মুম্বাইয়ের অপরাধ জগতের নতুন কাণ্ডারি। এমনই একজন হল করিম লালা। প্রথম জীবনে করিম লালা ছিল মুম্বাই বন্দরের কুলি। ১৯৪০ সালে চোরাকারবারি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সৎ ছেলে কাশ্মিরী লালা খুন হবার পর মুম্বাইয়ের অপরাধ জগতের রাজা আইয়ুব লালা বিমর্ষ হয়ে পড়ে। পুত্রশোকে কাতর আইয়ুব লালা মুম্বাইয়ের রাজত্ব ছেড়ে পাড়ি জমায় জন্মস্থান আফগানিস্তানে। এসময় তার রাজত্বের ভার নেয় করিম লালা। ৪০ এর দশকে পেশোয়ার থেকে পাড়ি জমানো আব্দুল করিম শের খান ওরফে করিম লালা প্রথমে বন্দর শ্রমিক হিসেবে জীবন শুরু করলেও অল্পদিনেই মদের কারবারি হিসেবে নাম কুড়ায়। ১৯৪০ সালে আইয়ুব লালা মুম্বাই ত্যাগ করলে তার স্থান দখল করে করিম লালা। অনেকে তাকেই মুম্বাইয়ের প্রথম ডন হিসেবে মানে। নিজেকে ডন হিসেবে পরিচয় দেওয়া করিম লালা প্রায় ২০ বছর অপ্রতিদ্বন্দ্বী চোরাকারবার ছিল। ৭০ এর দশকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মুদালিয়ার এবং হাজী মাস্তানের উত্থান ঘটলেও করিমের দাপট তখনও যথেষ্ট ছিল। অবশেষে কাসকার পরিবারের সাথে বিরোধের জের ধরে দাঊদ ইব্রাহীমের কাছে তার পরাজয় ঘটে। ২০০২ সালে ৯০ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যায় করিম লালা।
তৃতীয় পর্ব
চতুর্থ পর্ব
পঞ্চম পর্ব
ষষ্ঠ পর্ব
সপ্তম পর্ব
শেষ পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৪১