বনানী উড়ালসেতুতে ভীষণ ট্রাফিক জ্যাম...বিরক্তমুখে বসে আছি...জ্যাম দেখলেই আমার সিগারেটের তৃষ্ণা বেড়ে যায়...ফুসফুস আকুপাঁকু করে একটু নির্ভেজাল নিকোটিনের আশায়...গাড়ির কাঁচ নামিয়ে বিড়িতে আগুন দিতেই কানে এলো শব্দগুলো...কেউ অশ্রাব্য ভাষায় চিৎকার করে গালিগালাজ করছে...
আমি গালিগালাজের উৎস খুঁজতে থাকি এদিক ওদিক চেয়ে...অামার পাশে একটা ছোট পিকআপ ভ্যান...খোলা পিকআপ ভ্যানে চার-পাঁচজন পুলিশ সদস্য বসা...গরমে গা ঘেমে বেচারাদের ইউনিফর্মের রঙই বদলে গেছে...বলা বাহুল্য খুব মায়া হলো মানুষগুলোর জন্য...তার সামনে একটা আসামি পরিবহনের বাস...ওই যে নীল রঙের...একবারে উঁচুতে খুপরির মতো জানালায় লোহার শক্ত জাল দেয়া... অনেকটা কুকুর বহণকারী গাড়িগুলোর মতো...উঁহু ভুল বললাম, কুকুর নেয়ার গাড়িগুলো এরচেয়ে অনেক ভালো...
সামনের ঝা চকচকে সামনের সাদা গাড়িটা একটু সরে যেতেই আমি ফাঁক গলে আমার গাড়িটা ঢুকিয়ে দিলাম...ঠিক তখনই খুঁজে পেলাম অশ্রাব্য বুলি আওড়ানোর উৎস...এক আসামি ওই ফাঁকা খুপরিতে নাক ঠেকিয়ে গালিগালাজ ঝেড়েই যাচ্ছে...নির্দিষ্ট কারো উদ্দেশ্যে নয়...শুনে মনো হলো নিজের অদৃষ্টকেই দুষছে...তার গালিগালাজে পৃথিবীর তাবত মা বোন একবার বিছানায় উঠছেন একবার নামছেন...
লোকটা অপরাধী হবে হয়তো...বেশ জাঁহাবাজ অপরাধীই হবার কথা তা না হলে এভাবে সামনে পেছনে দু গাড়ি পুলিশ থাকার কথা না...তবুও লোকটার জন্য আমার খারাপ লাগতে লাগলো...হয়তো এর কোন মানে নেই...অপরাধ করেছে তার শাস্তিতো পেতেই হবে...তবুও খুব খারাপ লাগতে লাগলো...
আর এই খারাপ লাগার মাঝেই অন্য একটা ভাবনা উঁকি দিলো...এই মানুষটার সঙ্গে আমি বা আমাদের বিশেষ কোন পার্থক্য নেই...ও এখন লোহার খাঁচায় বন্দী...আর আমি সংসারের মায়াজালে...ওর কোন পালাবার পথ নেই...আমারও নেই...
মন না চাইলেও সব করে যাও...নিজের ইচ্ছায় কিচ্ছুটি হবে না...ওই যে সমাজসংসার যা বলে, তার বাইরে যাবার কোন উপায় নেই...এটাই নিয়ম এটাই নিয়তি...এটাই শেষকথা...পৃথিবীর সবখানেই এক...
পালাতে চাইছ...পালাবে কোথায়...জগত সংসারের মায়াজাল ছেড়ে বেরুবে কেমনে তুমি...ও প্রলাপ বকছে প্রকাশ্যে আর আমি মনে মনে...এটুকুই ফারাক...
গোল্লায় যাও পৃথিবী...