নিয়ম হচ্ছে যখন যা নেই তা নিয়ে গল্প করা...প্রচণ্ড ক্ষুধায় খাবারের গল্প করা...পকেট ফাঁকা থাকলে টাকা পয়সা নিয়ে আলাপ করা...দুঃসময়ে সুসময়ের স্মৃতি রোমন্থন করা...তেমনি বৃষ্টি নেই তাই আজ বৃষ্টি দিনের গল্প করা যাক...
বৃষ্টি আমার ভয়াবহ পছন্দের জিনিস...এর সঙ্গে কোন কিছুরই তুলনা চলে না...আমি বৃষ্টির মতো আর কোন কিছুকেই ভালবাসি না...তবে আফসোস আমার এ জীবনে বৃষ্টি নামের কোন নারীর সঙ্গে কখনো পরিচয়ই হয়নি
...এমনকি কেউ মিথ্যে করেও বলেনি তার নাম বৃষ্টি...
৯৪ সালের কথা...তখনো স্কুলেই পড়ি...কিন্তু স্কুলে পড়লেও প্রায় প্রতিদিন বিকেলে আমি আর আমার বন্ধু খেলা ফেলে নিয়ম করে বড়দের মতো হাঁটতে বেরুই...সে বয়েসের তুলনায় উচ্চমার্গীয় কথাবার্তা আলাপের বিষয়বস্তু...এভাবে হাঁটতে হাঁটতে আমরা একদিন একটা অদ্ভুত সুন্দর জায়গা আবিষ্কার করে ফেললাম...জায়গাটা তেজগাঁওয়ের পুরাতন এয়ারপোর্ট...
কী দারুণ সুন্দর জায়গাটা...চারপাশে ঘাস জঙ্গল জমে একটা বুনোভাব এসেছে...তার মাঝখানে কালো পিচ ঢাকা চকচকে রানওয়ে...আমরা ঢুকতাম চন্দ্রিমা উদ্যানের পাশটা দিয়ে...বাধা দেয়ার কেউ নেই...গেট হাট করে খোলা...ঢুকে পড়লেই হলো...
প্রথমে সাদা সিমেন্টের ব্লক বসানো হাঁটা পথ...তার ওপর পিচ ঢালাই করে গাড়ি রাস্তা বানানোর একটা অপচেষ্টা করা হয়েছে...কিন্তু তা ধোপে টিকেনি...এরপর বেশ উঁচু বাঁধের মতো একটা জায়গা যার কারণে বাহির থেকে রানওয়ে সরাসরি দেখা যায় না...বাঁধটা পেরুলেই রানওয়ে...কালো পিচে ঢাকা রানওয়ে...দুপাশে সবুজ ঘাস...শুধু শুধু সবুজ না বাড়াবাড়ি রকমের সবুজ...
করতে চাইলাম বৃষ্টির গল্প করছি রানওয়ের গল্প...সে যাক গে একদিন দুই বন্ধুতে মিলে রানওয়ের ওপর হাত পা ছড়িয়ে গল্প করছি...এমন সময় কোথা থেকে খাকি হাফপ্যান্ট পরা এক লোক সাইকেল চালিয়ে আমাদের কাছে এসে বলল, আপনারা একটু সরে বসুনতো এখন প্লেন নামবে...অামরা আবাক বিস্ময়ে দ্রুত সরে গেলাম...ছোট্ট একটা প্লেন নেমে গেলো...গায়ে লেখা এ্যারো বেঙ্গল...
জীবনের অদ্ভুততম ঘটনা চোখের সামনে দেখে দুজনে প্লেন বিষয়ে গল্প কপচাচ্ছি আরো বিস্ময় যে অপেক্ষা করছে তখনো জানবো কেমনে!!! একটু পর দেখলাম বলা নেই কওয়া নেই আকাশে কালো করে মেঘ জমেছে...সঙ্গে গরম বাতাসের কেমন যেনো শীতল ছোপ ছোপ গন্ধ...
আমার বন্ধুটি কিছুই না বলে শুধু চোখের ইশারা করলো...দুজনে আবার দৌড়ে রানওয়ের মাঝে...চুল বড় ছিলো না, তা না হলে খুব লিখতে পারতাম, ঝড়ো বাতাসে চুল উড়ছিল...প্রথমে একপাঁক ধূলিঝড়...এরপর হুড়মুড় করে বৃষ্টি...সে কি বৃষ্টি...প্রথমে দু এক ফোঁটা তপ্ত...এরপর শীতল হতে হতে হাড় কাঁপানো...বাতাস আর বৃষ্টি কণায় দাঁতে দাঁত কপাটি হওয়ার জোগাড়...সেদিন প্রথম বুঝলাম জলে নয় বৃষ্টির ফোঁটা ঝরে পড়া দেখতে বেশি ভাল লাগে সবুজ ঘাসে...
অনেকদিন বৃষ্টিতে ভিজি না...রানওয়েতেও যাওয়া হয় না...আমার সেই বন্ধুটিও নেই...শুধু স্মৃতিটুকু জ্বলজ্বলে নতুন এয়ারপোর্টের নিয়ন বাতিগুলোর মতো...