সালটা ছিলো ২০১৪...তখনই লিখেছিলাম লেখাটা...অাজ সকালটা দেখে মনে হলো এখনো কেনো বসে আছি...যাচ্ছি না কেনো...তাই পুরনো স্মৃতিটাই আবার ঝালিয়ে নিলাম...সঙ্গে যাওয়ার ইচ্ছে শক্তিটাকেও আরেকটু চাঙ্গা করলাম...
ঢাকা থেকে ভানুগাছ যাচ্ছি ট্রেনে...অদ্ভুত এক জায়গায় এসে ট্রেন ব্রেক কষলো...জায়গাটা আমার চেনা, তবে নাম জানি না...অদ্ভুত বলছি কারন আমার দেখা এটাই একমাত্র জায়গা যেখানে রেল রাস্তার সঙ্গেই ইউনিয়ন পরিষদের পীচ ঢালা সড়ক...ট্রেন লাইন আর এই পীচ ঢালা এই সড়কের মাঝে কোন নালা, খাল, কাঁটাতারের বেড়া বা মাটির উঁচু ঢিবি নেই...চাইলেই অনায়াসে যে কেউ নেমে যেতে পারে এখানে...নীললোহিত হলে অবশ্যই নামতো, আমি নীললোহিত না তবুও আমার ট্রেন ছেড়ে খুব নেমে পড়তে মন চাইছিলো...মন চাওয়া পর্যন্তই নামা হলো না...
ট্রেন যখন ভানুগাছ স্টেশনে থামলো তখন ঠিক ভরদুপুর...স্টেশনের প্ল্যাটফরমে পা রাখতেই একদল যুবক ‘শুভেচ্ছা স্বাগতম, হানিফ ভাইয়ের আগমন’ বলে ঠিক আমারই দিকে এগিয়ে আসলো...আমিও বেশ হাসিহাসি মুখ করে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকি...নতুন একটা স্টেশনে নেমে এ ধরণের অভ্যর্থনা কজনের ভাগ্যেই বা জোটে...তবে শেষ রক্ষা হয় না, যুবকেরা আমাকে পাশ কটিয়ে পেছনের বগির দরজায় গিয়ে দাঁড়ায়...আমি আর তাদের দিকে না তাকিয়ে একটু আগের সেই ভিঅাইপি ভাবের রেশ ধরেই হনহন করে হাঁটা ধরি...
ভানুগাছ স্টেশনটা এক্কেবারে ঝা চকচকে নতুন, এখনো পুরো স্টেশনের নির্মাণ কাজ শেষও হয়নি...তাই চারিদকে নতুন টাটকা গন্ধ...লোকজনও বিশেষ নেই...এমনকি টিকেট চেকারও নেই...স্টেশনের বাইরে এসে মনটা ভালো হয়ে যায়...ঘন্টাখানেক আগে দেখা ওই পীচঢালা পথে নেমে না পড়ার আফসোসটুকু মুহূর্তেই উবে যায়...কারন বাংলাদেশের আর সব মফস্বল শহরের মতো এখনো নিজেকে ঢাকার প্রতিদ্বন্ধী হওয়ার ইঁদুর দৌড়ে মেতে ওঠেনি কমলগঞ্জ...
পুরো শহরটি আশির দশকেই আটকে আছে...দুদিনে একজন তরুণকেও পেলাম না যে শহরের বুক চিরে বিকট শব্দে বিপৎজনক গতিতে মোটরসাইকেল ছোটায়...মোড়ে মোড়ে কোন আড্ডাবাজের জটলাও দেখলাম না...কোন দোকানের ঝলমলে বিলবোর্ডও চোখে পড়েনি...অনেক দোকানের কোন সাইনবোর্ডই নেই...
পুরো শহরে খুব সম্ভবত দুটি চারতলা বাড়ি...স্টেশন লাগোয়া ভাতের হোটেল একটিই...তাও আবার কেউ দেখিয়ে না দিলে খুঁজে পাওয়া দুস্কর... সব ফাঁকা ফাঁকা...শান্ত শীতল...মানুষগুলোও নীচু গলায় কথা বলে...এখানকার চায়ের দোকানিও অনায়াসে স্বল্প পরিচিতদের পাঁচ কাপ কফি খাইয়ে দাম নিতে কুন্ঠোবোধ করে, অতিথি নারায়ন ভেবে...
আমি চাই খুব চাই কমলগঞ্জ এমনই থাকুক...রাত দুটোয় শেষ ট্রেনটা আসার আগ পর্যন্ত আমরা, বুড়ো চা দোকানী আর ওই পাগলটা ছাড়া আর কেউ ভানুগাছ স্টেশনে আড্ডা না জমাক...থাকুক না আমাদের মতো করে ছোট্ট একটা শহর...কারুর তো বিশেষ ক্ষতি দেখি না তাতে....
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:২৪