কল্পনা!! কল্পনার শক্তি যে কতটা প্রবল তা অনেকেই কল্পনাই করতে পারেন না আবার এই কল্পনাই আপনাকে দিবে নতুন করে ভাবার, সামনে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা। কল্পনায় পারে অপরের কষ্টকে নিজের মত করে ভাবার এবং সেটি অনুধাবন করা। সেটি থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে পথ চলার।
আপনি যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশের নাগরিক। পরিবার পরিজনকে অনেক আগেই হারিয়েছেন। এখন আপনার শেষ সম্বল নিজের জীবনটুকু বাঁচানোর জন্য সামান্যতম নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য যেখানে পারছেন পালিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। চারদিকে শুধু মৃতদেহ। এমন পরিস্থিতি একজন নারীর পক্ষে কল্পনা করা আরও কষ্টের। কেননা একজন নারীর সম্ভ্রম তার জীবনের চেয়েও অনেক মূল্যবান। কিংবা কল্পনা করে দেখুন তো, আপনি একটি ভয়ঙ্কর গোষ্ঠীর কাছে হাত-পা বাধা অবস্থায় পরে আছেন। যাদের হাতের কাছে আছে ধারালো সব অস্ত্র আর সেগুলো দিয়েই আপনার প্রিয় বন্ধুকে আপনার চোখের সামনেই তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে মারা হচ্ছে, একটু পরেই যে আপনার পালা। কি?? করবেন তখন? সেটি আপনার কল্পনার মাঝেই থাক। মনে রাখবেন, বাস্তব জীবনে প্রতিনিয়ত এমন ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন বহু মানুষ। যাদের কেউ ফিরে এসেছে ভাগ্যক্রমে এবং সেই ঘটনার উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে সিনেমা। থাক এই প্রসঙ্গে পরে আসবো। এখন আর কল্পনা নয়। বাস্তব কিছু চিত্র আজ আপনাদের দেখাবো।
The Flowers of War (2011) মুভিটি হয়তো অনেকেই দেখেছেন। যারা দেখেন নাই এখনও, আশা করি দেখে নিবেন খুব শিগ্রীই। “১৩ ফ্লাওয়ার অফ নানচিন” উপন্যাস অবলম্বনে বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করেই মুভিটি তৈরি। আজ আপনাদের সেই ভয়ঙ্কর বাস্তব ঘটনার সাথে সামান্য পরিচয় করিয়ে দেবার চেষ্টা করবো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ১৯৩৭-৩৮ সালে চীনে তৎকালীন দুর্ধর্ষ জাপানীদের দ্বারা ভয়ঙ্কর গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল যেটি নানচিনের গণহত্যা (the Rape of Nanking) নামে পরিচিত। জাপানি যুদ্ধাপরাধগুলোর মধ্যে এটি ছিল অন্যতম। মার্কো পোলো সেতু ঘটনার পরপরই চীন-জাপান যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ১৯৩৭ সালের ১৩ই ডিসেম্বর, বহুদিন অবরোধের পর, প্রায় দেড় লাখ জাপানী সৈন্য চীনা শহর নানচিনের দখল নেয়। চীনাদের সেই সময়ে জাপানীদের মত অত্যাধুনিক অস্ত্র না থাকায় জাপানী সৈন্যদের সাথে পেরে উঠেনি। ফলাফল কয়েক সপ্তাহ মধ্যে শহরটিতে এক অবিশ্বাস্য মাত্রার গণহত্যা সংঘটিত হয়। জাপানি সৈন্যরা কখনও পরিকল্পিতভাবে, কখনও কেবল আনন্দের উদ্দেশ্যে চীনা লোকদেরকে হত্যা ও ধর্ষণ করা শুরু করে। সম্ভবত ৪,০০,০০০ (চার লাখ) চীনাকে হত্যা করা হয়, আর সেই সাথে ধর্ষিত হন নানচিনের হাজার হাজার নারী। গণহত্যার এই ঘটনায় জড়িত জাপানি সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব ও সম্রাট হিরোহিতো এর বিরুদ্ধে আজও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
কেমন ছিল সেই সময়কার জাপানী সৈন্যদের নির্মমতা? আসুন দেখেনি কিছু স্থিরচিত্র। ছবির কিছু অংশ দ্যা ফ্লাওয়ার অফ ওয়ার মুভিতে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছিল।
নানচিনের গণহত্যার সময় নানচিনের পশ্চিম গেটে কিনহুআই (Qinhuai) নদীর তীরে মৃতদের একাংশ এবং পাশে একজন জাপানী সৈন্য দাঁড়িয়ে আছে।
আরও কিছু ছবি
১০০ জনেরও বেশী চীনাকে কেটে ফেলার প্রতিযোগিতা (তরবারির সাহায্যে)
চীনাদের গলা কাটার মুহূর্ত
চীনাদের জীবিত কবর দেবার মুহূর্ত
আসুন এখন দেখি The Flowers of War (2011) মুভিতে কিছু মুহূর্ত তুলে ধরার বাস্তব চিত্রঃ
এইভাবেই বহু চীনা নারীকে ধর্ষণের পর জাপানীরা ফেলে রেখে যায়। চিত্রে একজন মহিলার মৃত দেহ
চিত্রে একটি ছেলের মৃত দেহ
নানচিনে অবস্থিত জন রাবের বাড়ি (John Rabe House)। নানচিনের গনহত্যার সময় তিনি এই বাড়িতে অবস্থান করেছিলেন এবং এই বাড়িতেই তিনি ৬০০ চীনা রিফিউজিকে গোপনে জাপানীদের হাত থেকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিলেন। এখানে বসেই তিনি বিখ্যাত “Diaries of John Rabe" লিখেছিলেন।
নিচের ছবিটি জাপানী সৈন্যদের নানচিনে প্রবেশের মুহূর্ত
আজ এই পর্যন্তই। ভালো থাকুন ও সুস্থ থাকুন। আসসালামু আলাইকুম
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৪