শহরের বাইরে বেড়াতে গেছেন। হঠাৎ মনে ধরে গেল কাউকে। ভয়ে পিছিয়ে না গিয়ে, কোনো ধরনের সিন ক্রিয়েট না করে কিভাবে তাঁকে মনের কথা বলবেন? চারপাশে তাঁর লোকের ভিড়! ছটফট করার বা অস্থির হওয়ার কিছু নেই। সত্যিকারের এক সফরসঙ্গী আছেন আপনার পাশে। আপনার কাজটি একেবারে সহজ-সরল করে দেবেন তিনি। তাঁর টিপস নিলে রোমিওর মতো জুলিয়েটের কাছে গিয়ে মনের কথা পাড়তে পারবেন! নাম রব ব্যাকস্টার। নিজেকে পরিচয় দেন 'সাদা সফরসঙ্গী'। দাবি করেন- ইউরোপে তিনিই 'সেরা মনোমোহন শিল্পী'।
লোকটা নিজেও তরুণ, মাত্র ৩৬ বছর বয়স! দেখতে দারুণ। বাস লন্ডনে। মনের কথা বলার সাহস জোগাতে স্কুল খুলেছেন। নাম দিয়েছেন 'দ্য ব্যাকস্টার লাইফস্টাইল'। কী হয় স্কুলে? 'এই স্কুলে জীবনযাপনের সবই শেখানো হয়', বললেন ব্যাকস্টার। 'আপনার ভেতরের সবচেয়ে ভালো ও সেরা আকর্ষণীয় সত্তাটাকেই বের করে নিয়ে আসা আমাদের কাজ। শিখবেন, যে পুরুষ বা নারীকে পেতে চান আপন করে, তার সামনে আপন নতুন গুণাবলির প্রকাশ কিভাবে ঘটাবেন।'
ব্যাকস্টারের শিক্ষণ পদ্ধতিটাও ভিন্ন। একে তিনি বলেন 'প্রাকৃতিক প্রলোভনের খেলা।' একজন মানুষের ভেতরে যেসব গুণ লুকিয়ে থাকে, যেগুলো দিয়ে সহজেই সে অন্যের চোখে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে, সেগুলোই বের করে আনেন বা একজন মানুষকে শিখিয়ে-পড়িয়ে দেন ব্যাকস্টার।
শিক্ষণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে ব্যাকস্টার বলেন, একজন মানুষের ভেতরের বিশ্বাস ও মানসিক গঠনের ওপর ভিত্তি করে তাকে শোভন ও ভদ্র হিসেবে তুলে ধরাটাই আমার স্কুলে শেখানো হয়। 'নিজেকে জাগাও'- এই তরিকায় বিশ্বাসী ব্যাকস্টারের স্কুলে সপ্তাহান্তের ক্লাসগুলো করতে কোর্স ফি ৯৫ হাজার টাকা। আর সপ্তাহব্যাপী আবাসিক ছাত্র হিসেবে ব্যাকস্টার লাইফস্টাইল শেখার জন্য ছয় লাখ ২৪ হাজার টাকা। টাকার অঙ্ক দেখে চোখ কপালে তুলবেন না! চেলসির সেই অফিসে পাবেন স্বয়ং রব ব্যাকস্টারের সঙ্গ, তাঁর কাছ থেকে নানা কৌশল শেখার সুযোগ!
১২ বছরের নিচে কাউকে স্কুলে ভর্তি করা হয় না। বেশির ভাগ মক্কেলই ২৯ থেকে ৫০-এর মধ্যে। মক্কেলদের তিনি শেখান পোশাক পরা থেকে শুরু করে বাহ্যিক সব কিছু; সমাজে মেলামেশার কায়দা-কানুন; ভেতরকার নানা গুণ- আচরণ থেকে শুরু করে মনোবল বাড়ানো, ডেটিংয়ের কৌশল; এমনকি নাচের আসরে কারো চোখে পড়ার জন্য নৃত্যের কলাকৌশলও। নাচ শেখাতে তাঁর সঙ্গে আছেন প্রেমিকা ব্যালেরিনা ক্যান্ডিস। বছর তিনেক ধরে তিনিই কম্পানির ফ্যাশন কোচ ও নৃত্যশিল্পী। বলা বাহুল্য, গাঁটের পয়সা খরচ করে এসব শিখতে আসা মক্কেলের ৯০ শতাংশই পুরুষ! এসব শেখানোর জন্য ব্যাকস্টার বাহিনীতে আছেন অভিজাত পরিবারের সদস্যরা। তাঁরাই শিক্ষক!
নতুন শেখা কলাকৌশলের পাঠ শেষে ছাত্ররা চলে যান আশপাশের পার্ক, শপিং মল বা নাইট ক্লাবে। এসবে কি কাজ হয়? গর্বিত ছাত্ররা বলল, এক দিনে ১৬ জনের মনোযোগ আকর্ষণেরও রেকর্ড গড়েছে তারা। আর আত্মগর্বী শিক্ষক বললেন, 'মানুষের ভেতর থেকে সেরাটা বের করে নিয়ে আসি আমি। একটি গ্রুপের মধ্যে সবার সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হবে, সেটা শেখানোর জন্য আমরা ছোট ছোট দলে ভাগ করে তাদের অনুশীলন করাই। কিভাবে কথা বললে আরো ভালোভাবে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে, সেটার পাশাপাশি গল্পের আসরটি আরো বেশি দূর টেনে নেওয়ার শিক্ষাটাও আমাদের স্কুলে দেওয়া হয়।' মজার ব্যাপার হলো, দাম্পত্যজীবনে আকর্ষণ ধরে রাখাও শেখানো হয় ব্যাকস্টার স্কুলে। স্কুল চালিয়ে আর ছাত্র চড়িয়ে ব্যাকস্টারের আত্মবিশ্বাস এতটাই বেড়ে গেছে যে বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে কোনো মেয়ে বা ছেলের সঙ্গে ডেট করাটাও শেখানো শুরু করেছেন তিনি। সে পদ্ধতিতে নাকি ১৪ দিনেই ছেলে বা মেয়ে জুটিয়ে নেওয়া সম্ভব! এত সব গল্প বলে ব্যাকস্টার জানালেন- 'টাকা, পয়সা বা খ্যাতি নয়, আমার আসল উদ্দেশ্য নোংরাভাবে নয়, ভালোভাবে নিজেকে উপস্থাপন করে কাউকে কাছে টেনে আনা।'
সুএঃ নিউজ পেজ২৪