ব্লগে যখন 'চোর' নিকে রেজিস্ট্রেশন করি, তখন 'চোর' নামে আসলে টার্গেট গ্রুপ ছিলো বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা। ইচ্ছে ছিলো, ওদেরকে ভালো করে পঁচাবো। রাজনীতি নিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ না থাকায় কাজটা নিরপেক্ষভাবে করা অনেক ইজি ছিলো।
ব্যক্তিজীবনে আমি মোটামুটি নির্ঝঞ্ঝাট চুপচাপ মানুষ। নিজেকে নিয়ে বিজি থাকি, কারো সাতে-পাঁচে নাই। কাউকে পঁচানোর আগে কম করে হলেও ৩ বার ভাবি, সে কতোটা আহত হবে। বুঝাই যায়, সত্য প্রকাশ করা সবসময় হয়ে ওঠে না। তথাকথিত 'ভালো ছেলে'দের সাথে দু'একটা মৌলিক পার্থক্য থাকলেও 'ভালো ছেলে'র সার্টিফিকেটই আমার বেশি।
জীবন বলতে বাংলাদেশের প্রথাগত অধিকাংশ ক্যারিয়ারিস্টের সাথে পুরো মিল। আর ক্যারিয়ারের পুরোটা জুড়ে এখন পর্যন্ত বলা যায় অ্যাকাডেমিক সাফল্যই সবকিছু। স্টুডেন্ট হিসেবে অনেক লিমিটেশন থাকার পরেও শিশুকাল থেকেই চামেচিকনে রেজালটগুলো অভাবিত রকমের ভালো হতে থাকায় কখনোই কোনো টেনশনে পড়তে হয় নি। স্বভাবতই মানুষের জীবনকে দেখেছি অনেক কম। বুয়েটে পড়ার সূত্রে বাংলাদেশের অ্যাভারেজ লাইফ স্টাইলের সাথেও তেমন পরিচয় ঘটেনি। ব্যাচেলর করার পরে প্রথম জব ইন্টারভ্যু দিতে গিয়ে আবার সিভি ফেরত নিয়ে চলে আসি, ইন্টারভ্যু নিতে ঘন্টাখানেক দেরি করায়। পরবর্তী ইন্টারভ্যুতেই জব পাই এবং মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই দেশের বাইরে চলে আসি। তারপর মাস্টার এবং এখন পিএইচডির শেষ পর্যায়ে। অবশ্য চোরের সাথে একটা ব্যাপারে মিল আছে আমার। সার্টিফিকেটগুলো কিংবা বয়স কারো সাথে মিশতে বাধা হয়ে´দাড়ায় না। "আমি কারো চেয়ে ছোট নই এবং কেউ আমার চেয়ে ছোট নয়।"
ব্লগে চোরের ওপরে অনেকে রাগ করেছেন। প্রত্যেকের পারসোনাল লিমিটেশন আছে, ব্যক্তি হিসেবে প্রত্যেকটা মানুষই স্বতন্ত্র। সর্বোপরি, সত্য কথা সরাসরি শুনতে আমরা অভ্যস্ত না। এমনো হতে পারে, চোর হয়তো সত্যটা বুঝতে ভুল করেছে। কিন্তু চোর যখন যেটা বলেছে, সেটা সত্য বিশ্বাস করেই বলেছে। তবে ব্লগের অধিকাংশ মানুষই চোরকে ভালোবেসেছেন। আমি মাঝে মাঝে ঈর্ষাতুর দৃষ্টিতে চোরের দিকে তাকিয়ে দেখেছি; ব্যাটা শুধু মিটিমিটি হেসেছে। মানুষের ভালোবাসা পাওয়ায় চোর আমাকে ছাড়িয়ে গেছে নির্ঘাত।
ব্লগের মানুষগুলো ভালো, প্রচন্ড ভালো। চোর তারপরও যাদেরকে বেশি জ্বালিয়েছে, তাদের সম্পর্কে কিছু বলা কর্তব্য মনে করছি।
সবচেয়ে বেশি বিরক্ত ব্লগের কর্তারা। তাদের ব্যাপারে চোর হার্ডলাইনার। কোনো ত্রুটি চোখে পড়লেই আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া। চোরের সমলোচনাগুলো অধিকাংশই গঠনমূলক; কিন্তু একটা বেসিক ভুল চোর করে যাচ্ছিলো। তাহলো, যার সমালোচনা করছে, সে ব্যাপারটা কিভাবে নিচ্ছে, সেটা খেয়াল রাখা। চোরকে আমি কখনো ভুলটা ধরিয়ে দেই নি। আমি মনে করি, ব্লগের কর্তারা অনেক বেশি ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। এত মানুষের এমন একটা সমাবেশ তারা ঘটিয়েছেন, এটা অনেক অনেক কৃতিত্বের। টেকনিক্যাল সাইডে, যে ছেলেগুলো কাজ করে, তাদের বয়স অল্প। তারা এখনো স্টুডেন্ট। আর এটা তাদের ফুলটাইম পেশা নয়। তারপরেও তারা অসম্ভব রকমের ভালো একটা কাজ করেছে। সাইটের উন্নতি সম্পর্কে আমি সবসময়ই তাদের প্রচেষ্টা লক্ষ্য করেছি। তবে গ্যাঞ্জাম লাগলে কিছু কিছু অতি উত্সাহী মানুষ, এটাকে 'ফ্রি সার্ভিস', যা পাও, তাই ভালো বলে আসলে তাদের কাজকে অবমূল্যায়ন করেছে। ফ্রি সার্ভিস, যা পাও, তাই ভালো, কিছু বলতে পারবা না - এই নীতি ওপেন দুনিয়ায় খাটে না। এই বেকুবি বাক্য বলতে গিয়ে ডেভেলপারদের কৃতিত্বকে যে অসম্মান করা হচ্ছে, এই মানুষগুলোর চোখে সেটা পড়ছে না দেখে খারাপ লেগেছে।
তবে সাইট অ্যাডমিনদের যে সীমাবদ্ধতার জন্য অনেক ভালো ভালো ব্লগারকে চলে যেতে হয়েছে, সেটা আসলে ম্যানজমেন্টের ব্যর্থতা। এবং এ চিত্র সমগ্র বাংলাদেশের। বাংলাদেশের অফিসগুলোতে যেভাবে ম্যানেজমেন্ট চলে, এখানেও সেভাবে চলেছে। প্রকৃত সমস্যায় ফোকাসড না হয়ে সামনে চলে এসেছে ইগো, মুখচেনাচিনির ব্যাপারটা। কাজটা প্রফেশনাল ওয়ার্লডে চলে না। প্রফেশনাল ওয়ার্লডের লেভেল অনেক অনেক ওপরে। তাদের বিরুদ্ধে জামাতকে প্যাট্রোনাইজ করার যে অভিযোগ চোরের, আমার কাছে সেটা অতো তীব্র নয়। সম্ভবত ব্যক্তিগত বা পারিবারিকভাবে জামাত সমর্থক কিছু লোকজন আছে অ্যাডমিন প্যানেলে বা নোটিশবোর্ডের আড়ালে। এজন্যই বিশ্বকাপ ফুটবলে ব্লগ মেতে উঠলেও স্বাধীনতা দিবসে ফ্রন্টপেজ হাসেনি, বিজয় দিবসে লাল-সবুজ পতাকা ওড়ানো হয় নি। আমার মনে হয় না, এটা সামহোয়্যারইনের সমস্যা। এটাকে জাস্ট অ্যাডমিনদের কারো কারো পারসোনাল সীমাবদ্ধতা মনে হয়েছে। ব্লগের প্রসার যদি সামহোয়্যারইনের মটো হয়, তাহলে এই অ্যাডমিনরা বেসিক্যালি সামহোয়্যারইনের বেতনভূক হয়েও আলটিমেটলি সামহোয়্যারইনকেই বাঁশ দিচ্ছে।
চোরকে ধরতে পারলেই রগ কাইটা দিবে, এরকম আরেকটা চরিত্র ত্রিভুজ। চোরের কাছে সে ব্লগের সবচাইতে বড় বেকুব, ছাগুরাম। এই ব্যাপারে চোরের সাথে আমার মত মিলে না। নোয়াখালি কিংবা চাঁদপুরের কোনো মানুষই বোকা না। ত্রিভুজও না। তার অনেকগুলা গুণ আছে। অসীম ধৈর্য্যের সাথে গালি খেয়ে যেতে পারে। তার অনেকগুলো বোকামিই আমার কাছে মনে হয়েছে সাজানো নাটক। একটা বোকা বোকা ছায়ার আড়ালে সে নিজের কাজ করে গেছে সবার অলক্ষ্যে। একটা উদাহরণ দেই। ব্লগের, বিশেষ করে আগের ভার্সনের, যে হাজার হাজার বাগ ছিলো, সেগুলো সম্পর্কে কেউ কথা বলতে এলেই ত্রিভুজ বুঝাতো, আসলে কোনো বাগ নেই। আইটি মূর্খদের শান্ত করতে চেষ্টা করতো। সামহোয়্যারইনের অ্যাডমিনরা প্রফেশনাল না। তারা ভাবতো, ভালোই তো। একজন তাদেরকে ডিফেন্ড করছে। আসলে এই বাগগুলোকে ত্রিভুজ ইউজ করতো। ওভারঅল তার দায়িত্ব সে সূচারুভাবে পালন করে যাচ্ছে। এজন্য সে অবশ্যই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।
আমার মনে হয়, চোরার ওপর বিরক্ত হওয়ার লিস্টে এর পরেই আসে সাদিক। চোরের কাছে সাদিক মহাভন্ড। সুবিধা বুঝে কালার চেঞ্জ করে মুহূর্তের মধ্যে। সাদিকের ওপরও একারণে মহাবিরক্ত চোর। কিন্তু আমার কাছে সাদিক মোটেই ওভাবে দেখার মত কিছু না। আসলে সাদিককে ব্যক্তি হিসেবে দেখা মনে হয় ভুল। সাদিক হলো একটা টাইপ। নিজের রেজাল্ট ভালো হওয়ার ফলে তথাকথিত 'ভালো ছেলে' এই টাইপটার সাথে আমার পরিচিতি অনেক প্রগাঢ়। আমি জানি, কোন পরিস্থিতিতে তারা কিরকম আচরণ করে। এবং সেই আচরণগুলো নিয়ে আমার অবশ্যই কোনো অভিযোগ নেই। নিজের দিকটা দেখাই জীবের বেসিক ধর্ম। প্রাপ্ত কনটেক্সটে অভিযোজিত হওয়াটা অ্যাবনরমাল না। কেউ বাড়তি সাহসী হয়ে মানুষের স্বার্থে রিস্ক না নিতে চাইলে তাকে দোষ দেয়াটা খুব বেশি উচিত না।
কালপুরুষ ভাইও চোরার ওপরে মনে হয় বিরক্ত। অবশ্য উনার প্রতি চোরার বেসিক্যালি শ্রদ্ধা অনেক। জাস্ট মজা পাওয়ার লোভেই উনাকে জ্বালানো। তারপরেও উনি এখনো চোরাকে মাইর দিতে চাইলে আমি চোরার পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইছি।
মনে হয়, পলিটিক্স নিয়ে কিছু বলা উচিত। আমি যতদূর বুঝি, জামাত ছাড়া কেউই ব্লগে পলিটিক্যাল প্রচারণার উদ্দেশ্য নিয়ে আসে নি। এ ব্যাপারে জামাতি ব্লগাররা অনেক সংঘবদ্ধ। ওপরে ওপরে যতোটা দেখা যায়, তার বাইরে তাদের যোগাযোগটা আরো বেশি বলেই ধারণা। ধানসিঁড়ি, ওয়ালি, আস্তমেয়ে, ফজলে এলাহি, ত্রিভুজ, তেলাপোকা, মাহমুদ রহমান, নুর, আশরাফ, পল্লব, বিদ্রোহী, আশার আলো, সুর বাংলা - কেউই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আস্তমেয়ে ছাড়া তাদের প্রায় সবার পোস্টই টাইপড। আস্তমেয়ের পোস্টগুলো সব তার একার না বলে যে সন্দেহ করা হয়, আমারো সেরকমই ধারণা। কাঙাবনে মুড়ি খাওয়ার গল্পগুলো সে নিজেই লিখে, তবে ধর্মের লেবাসধারী পোস্টগুলোর; কিংবা অনেক সময়ে করা জিহাদী মন্তব্যগুলোর সবই তার নিজের না বলেই মনে হয়।
জামাতিদের বাইরে সবাই সাধারণ ব্লগার। অধিকাংশই এখানে আসে আড্ডা দিতে, সময় কাটাতে। কেউ কেউ গল্প-কবিতা লিখে। দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়া লিখে। কেউ কেউ কপি পেস্ট করে ফ্লাডিং করে পোস্ট সংখ্যা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ 'সামথিং' -এর লিস্টে আসার জন্য।
জামাতিদের সাথে বাকিদের ক্যাচাল লাগে দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানের জন্য। চোরও এই ব্যাপারে হার্ডলাইনার। আমি নিজে অবশ্য হার্ড লাইনার না। পলিটিক্স আলটিমেটলি পলিটিক্যালিই কন্ট্রোল করতে হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের মহানায়ক শেখ মুজিবের প্রতি শ্রদ্ধায় সমসময়ই নুয়ে আসে মাথা। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে তার পলিটিক্যাল ভুলগুলো সেজন্য মাফ হয়ে যায় না। সে ভুলের মাশুল তাকে জীবন দিয়ে দিতে হয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগও স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে বেঁচে খেতে গিয়ে নিজেদেরকে উপহাসের পাত্র করে তুলছে। আওয়ামী লীগের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য জিয়া রাজাকারদেরকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। বিএনপিকে আমার কখনোই জাতীয়তাবাদী দল বলে মনে হয় না; বরং বিএনপি সম্ভবত একটা সুবিধাবাদী দল। এন্টি-আওয়ামী লীগারই যাদের প্রধান শক্তি। তেমন কোনো মোটিভেটিং আদর্শ নেই। জলপাই পোশাক ছেড়ে দিয়েই কেউ গণতান্ত্রিক হয়ে যায় না। জিয়াও তার ভুলের মাশুল দিয়েছে।
চোরের সাথে একটা ব্যাপারে আমার দ্বিমত। চোরের মতে, স্বাধীনতার বিরোধিতা করার জন্য স্বাধীন বাংলাদেশে জামাতকে নিষিদ্ধ করা উচিত। কিন্তু, আমার কথা হলো, আওয়ামী লীগ বা বিএনপির চাইতে জামাত যদি দেশের ভালো উন্নতি করতে পারে, তাহলে জামাত কেন রাজনীতি করবে না? অবশ্যই করবে। তবে বাস্তবতা হলো, একটি দেশের মানুষের উন্নতি করতে হলে সেই দেশকে ভালোবাসতে হয়, তার মানুষকে ভালোবাসতে হয়। জামাতের সেই ভালোবাসাটা গ্রো করার কোনো যুক্তি নেই। একটি দেশের জন্মের সময় বিরোধিতা করে, একটি দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করে, হঠাত করেই আবার সেই দেশকে ভালোবাসা যায় না, সেই মানুষগুলোকে বন্ধু ভাবা যায় না, নিজেদের অপকর্মের ফিরিস্তিকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সেই দেশের জন্মকে অবান্তর হিসেবে প্রমাণ করার জন্য উঠেপড়ে লাগতে হয়। সেই দেশকে সুখী-সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার চাইতে তাকে হেয় করার কাজটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। সর্বোপরি, একবার আমাকে বোকা বানালে সেটা তোমার দোষ, দ্বিতীয়বার যদি তুমি আমাকে বোকা বানাতে পারো, সেটা আমার দোষ। কোনো সুস্থ আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন বাংলাদেশী তাই কখনোই জামাতকে সমর্থন করবে না।
ব্লগে নানাকিসিমের মানুষ। কেউ সুবিধাবাদী, কেউ বোকা, কেউ অপেক্ষাকৃত স্বল্পবুদ্ধির। দু'একজন অন্ধ আওয়ামী লীগার, দু'একজন অন্ধ বিএনপি সমর্থক। তবে সবচেয়ে ভালো যে ব্যাপারটা, তাহলো অল্প সংখ্যক ব্রেইনওয়াশড পাবলিক বাদে সবাই পলিটিক্যাল সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠে দেশের ভালোর জন্য চিন্তা করতে সক্ষম। এক্ষেত্রে দেশে যারা আছেন, তাদের চাইতে অনেক বেশি স্বচ্ছ্ব চিন্তাভাবনা দেশের বাইরের পাবলিকদের। শমশের, হারাধন, বকলম, দ্রোহী, গোপু, অলৌকিক হাসান, আড্ডা ভাই, অমিত, হাসান (দাড়াল হাসান না), মাহবুব সুমন, কেমিক্যাল, উত্স, হযু, মামু সুমন, ঝরু, অরূপ, গোধু, জ্বিনের বাদশা, মিমোহু, কনফু, রাসেল, বদ্দা, তীরুদা, শোহেইল ভাই, বন্ধনহীন, হাসান মোরশেদ ভাই, রেজওয়ান ভাই, ফ্রুলিংক্স, ভাসমান, হাসিব (আরো অনেকে; শুধু কিছু উটু ছাড়া) - সবাই-ই রাজনৈতিক দলের বাইরে গিয়ে দেশের উন্নতির জন্য সুস্থভাবে চিন্তা করতে সক্ষম। আমার বিবেচনায়, একজন কৌশিক বা জেবতিক আরিফের চেয়ে এদের ভাবনা অনেক বেশি নির্ভেজাল। কারণটাও কষ্টকল্পিত না। দেশের পরিবেশে বাস করে তার খারাপ দিকগুলোর অনেকটাই আমরা স্বাভাবিকভাবে মেনে নেই। যুক্তির মুক্তি প্রায়শঃই ঘটে না। সামহোয়্যারইনের অপেশাদার ম্যানেজমেন্টেরও একটা প্রধান কারণ এটাই।
যাউকগা, এই ম্যারাথন পোস্ট শেষ করার আগে কিছু স্বীকারোক্তি মনে হয় করা উচিত। চোরের মন্তব্যগুলো সাধারণত যুক্তিতে ভরপুর থাকলেও সেই যুক্তিতে ফাঁকফোকরের সংখ্যাও কম ছিলো না। সেই ফাঁকফোঁকর সাধারণত অধরাই রয়ে যেত। এটা আমি একটা অন্যায় করেছি। আমার বিজনেস লাইফের কিছু কিছু বেসিক কোয়ালিটি চোরকে দিয়েছিলাম, যেটা সে অনেক পিচ্চিপাচ্চার বিরুদ্ধেও অপব্যবহার করেছে। যারা তর্ক করতে এসেছে, সত্য বলতে গেলে তাদের লেভেলে ঘাটতির জন্যই চোরা অনেক কাঁচা যুক্তি দিয়েও বেঁচে গেছে। ধানসিঁড়ি যখন কোনো প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে গায়েব হয়ে যেত; কিংবা অতিউত্সাহী আস্তমেয়ে যখন খেই হারিয়ে চোখ বন্ধ করে তালগাছ শক্ত করে জড়িয়ে ধরতো; তখন অনেক সময়ই মায়া লাগতো আমার। এই মায়া থেকে আরেকটা নিক সৃষ্টি করেছিলাম। এন্টি-চোর হিসেবে। চোরকে টাইট দেওয়ার জন্য। সময়াভাবে এই দুইয়ের লড়াই জমাতে পারি নি। আরেকটা নিক আছে। ওটায় গল্প লিখার ইচ্ছে ছিলো। ব্লগের সার্বিক পরিস্থিতি চোরকেই প্রায়োরিটি দান করেছে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে যে স্বল্প সময় পেতাম, তার প্রায় পুরোটাই চোরকে দিতে হয়েছে। গল্প লিখাও এগোয়নি তেমন।
ব্লগের অব্যবস্থাপনায় অনেকেই চলে গেছেন ব্লগ ছেড়ে। ব্লগ কর্তৃপক্ষ রাজাকারদের সাপোর্ট করেছে - এই কারণে আপনাদের চলে যাওয়াটা আপনাদের গভীর দেশপ্রেমেরই নিদর্শন - ব্লগ কর্তৃপক্ষ রাজাকারদের সাপোর্ট করুক আর না করুক। আপনাদের এই সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমিও চোরকে আজ ব্লগ থেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। (আমার বাকি নিকগুলোও আর এখানে লিখবে না।)
চোরের পোস্টগুলো সময় পেলে ব্লগস্পট বা অন্য কোথাও সরিয়ে নেবো। আপনাদের করা মন্তব্যগুলো থাকবে। অবশ্য সেই সময় পাওয়ার আগে কেউ যদি ওগুলো ডিলিট মেরে না দেয়। ডিলিট মারলেও খুব বেশি ক্ষতি বৃদ্ধি হবে না।
ইমেইল: [email protected]