সেন্ট মার্টিনের পথে ভ্রমন বাংলাদেশ-১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
রাত ২ টা ১০ মিনিট দামপাড়া বাস কাউন্টারের সামনে দাড়িয়ে আছি রাত ২ টায় যে বাস ছাড়ার কথা সে বাস এখনও এসে পৌছায়নি। অবশেষে সে বাস এলো রাত ২ টা ৩০ মিনিট এ।
আমার গন্তব্য সীমান্ত শহর টেকনাফ, উদ্দেশ্য সেখান থেকে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন যাওয়া। একটু আগে মোবাইলে খবর নিলাম ভ্রমন বাংলাদেশের মূল দল ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে কুমিল্লা অতিক্রম করেছে। তাদের সাথে আমার দেখা হবে টেকনাফের কেয়ারী সিন্দাবাদ এর ঘাটে সকাল বেলা । আমাদের এবারের এডভেঞ্চারের টাইটেল হলো " ভরা পূর্ণিমায় সেন্ট মার্টিনে বর্ষা উদযাপন" ।
বাসে উঠেই দিলাম ঘুম, কারন কাল সারা দিন ঢেউ এর সাথে যুদ্ধ করতে হবে। হটাৎ ঘুম ভাঙলো দেখলাম গাড়ি দাড়িয়ে আছে একটা ফিলিং স্টেশনে তেল নিচ্ছে। কিন্তু এটা কোন যায়গা ঠিক বুঝতে পারলাম না। মোবাইল স্ক্রিনে দেখলাম ভোর ৪.৩০মিনিট। মনে হয় কক্সবাজারের কাছাকাছি চলে এসেছি। বাস আবার চলতে শুরু করলো বেশ ভালো গতিতেই চলছে এতোক্ষন ঘুমিয়ে থাকার কারণে বাসের গতি বুঝতে পারিনি এখন দেখছি ড্রাইভার বিপদজনক গতিতেই বাস চালাচ্ছে। পকেট থেকে জিপিএস টা বের করে বাসের গতি দেখলাম, গতি দেখে অবাক হওয়ার পালা বাস চলছে ১১০ থেকে ১২০ কি.মি স্পীডে এই সরু রাস্তায় এই গতি ভয়ঙ্কর অপর প্রান্ত থেকে যদি কোন গাড়ী আসে তাহলে মুখোমুখি সংঘর্ষ ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। তবে কিছুটা থ্রীলও অনুভব করছি। মনে তরুন কোন চালক হবে হয়ত, ফাকা রাস্তা পেয়ে মনের সুখে গতির সাথে পাল্লা দিতে চাইছে। কিছুক্ষনের মধ্যে দেখলাম আমাদের গাড়ী লিন্ক রোড় হয়ে কক্সবাজার শহরের মধ্য দিয়ে চলছে সাথে সাথে সাগরের গন্ধ পেলাম মনটা জুড়িয়ে গেল। আমি দুর থেকে সাগর আর পাহাড়ের গন্ধ পাই। লালদীঘি-কলাতলী হয়ে আমাদের গাড়ী মেরিন ড্রাইভে পড়লো এখন জানালা দিয়েই সাগর দেখা যাচ্ছে সাগর বেশ উত্তাল দেখলাম কারণ গত দুই দিন ধরে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ আছে এবং উপকুলীয় বন্দর সমূহকে ৪ নং সর্তকতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সাগরের গর্জন বেশ চড়া শুনা যাচ্ছে এই রাস্তা থেকেই।
ছবি : উত্তাল সমুদ্র
বাস থামলো কলাতলী জামে মসজিদের সামনে ফজরের নামাজের বিরতি। এতোক্ষন অন্ধকার থাকায় খেয়াল করিনি আমাদের বাসের চালকে, চালক নামাজ পরার জন্য বাস থেকে নামলেন, কিন্তু একি ? আমি মনে করে ছিলাম কোন তরুন চালক গতির সাথে পাল্লা দিতে চাইচে, এ দেখি ষাটোর্ধ শশ্রুমন্ডিত চালক মনে মনে বললাম বুড়ার জোস আছে এখনও।
নামাজের বিরতির পর বাস আবার চলেতে শুরু করলো বাস চলছে মেরিন ড্রাইভ ধরে পৃথিবীর সবচাইতে লম্বা সমুদ্র সৈকতের পাশ দিয়ে এক পাশে পাহাড় আর এক পাশে সাগর এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পৃথিবীর খুব কম দেশেই আছে ভাবতেই বুকটা ৪ ইঞ্চি উচু হয়ে যায়। ইনানী পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ ধরে যাওয়া যায় এর পর থেকে ধরতে হবে আরাকান সড়ক কারন ইনানীর পর থেকে মেরিন ড্রাইভ এর কাজ এখনো সম্পুর্ন হয়নি। এই মেরিন ড্রাইভ এর কাজ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে বিপ্লব ঘটে যাবে। গতবার আমার পায়ে হেটে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার সময় দেখেছি কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য আসলে কোন কিছুই না ইনানীর পর থেকে টেকনাফ পর্যন্ত যে সমুদ্র সৈকত আছে তার কাছে । অপূর্ব সে দৃশ্য পাহাড় আর সমুদ্র যেন একে অপরের সাথে মিতালী করেছে। সমুদ্র তার ঢেউ দিয়ে পাহাড়ের পা ধুয়ে দিচ্ছে ।
আরকান সড়কের দুই ধারের দৃশ্য অপূর্ব মাঝে মাঝে ধান ক্ষেত আর পানের বরজ সাথে রাস্তার দুই পাশে সুপারী বাগান দেখে আমার বলেতে ইচ্ছে করছিলো " বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর "। সামনে দেখলাম নাফ নদী, নদীর তীরে বিস্তৃত লবন আর ছিংড়ী চাষের মাঠ নদীর অপর অংশে মেঘের ভাজে ভাজে পাহাড়ের লুকোচুরি আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে কিন্তু সেখানে যাওয়া সম্ভব নয় সেটি মায়ানমারের(বার্মা) অংশ। বিডিআর চেক পোস্ট পার হয়ে সকাল ৭ টায় নামলাম কেয়ারী সিন্দাবাদ এর ঘাটে।
ছবি : নাফ নদীর ওপাশে মায়ানমারের পাহাড়
দেখলাম এখনো আমাদের মূল দল এসে পৌছাইনি আমিই প্রথম। নেমেই জাহাজের খবর নিতে কাউন্টারে গেলাম দেখলাম কাউন্টারের ভদ্র লোক মাত্র ঘুম থেকে উঠেছেন। জাহাজের খবর জিগ্ঞাসা করতেই বললেন কোন ঠিক নাই জাহাজ ছাড়তেও পারে আবার নাও ছাড়তে পারে কারণ সমুদ্র উত্তাল। কিছুক্ষন অপেক্ষা করতেই দেখলাম আমাদের মূল দলের বাস চলে এলো , দেখলাম বাস থেকে রাব্বি এবং টুটুল ভাই নামলেন আমার কাছে সব শুনে বললেন কি করা যায়? আমাদের দলের সবাই নাছোড় বান্ধা আজকেই তারা সেন্ট মার্টিন যেতে চায়। জাহাজ না ছাড়লে দেশী নৌকায় সাগর পাড়ি দিতেও সবাই প্রস্তুত।
ছবি : সদা হাস্যোজ্বল মঞ্জু ভাই
অবশেষে আমি সহ তাদের বাসে উঠে টেকনাফ শহরের দিকে রওয়ানা দিলাম আমাদের শেষ ভরসা দেশী নৌকায় উঠার জন্য। বাসে উঠে দেখলাম ত্রিভুজ , হাসান ভাই, মেহরুন, ভাউন্ডুলে শরীফ, শরীফ ভাই (ওয়ারিদ), মঞ্জু ভাই (যার কারনে আমাদের সব ট্রিপ আনন্দময় হয়), সায়ীদ ভাই, আরীফ ভাই, বাবু ভাই, মৃদুল ভাই, পূরবী আপু, ছোট্ট টুনটুনি আপু, রাহাত ভাই, পলাশ ভাই এন্ড ভাবী সহ আরও অনেকে যাদের নাম এই মুহুর্তে মনে পড়েছনা সবাই বসে আছেন। সবার সাথে কুশল বিনিময়ের পর মঞ্জু ভাইয়ের সাথে হালকা টাট্টা তামাশা করতে করতে টেকনাফ বাসস্টেন্ডে কখন পৌছে গেছি খেয়ালই করিনি।
চলবে............................।
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন