প্রথম কিস্তি এখানে
পার্বত্য খাগড়াছড়ির অন্যতম দর্শনীয় স্থান আলুটিলা। চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি শহরের প্রবেশ পথেই আলুটিলার অবস্থান। এখানে দাড়িয়ে পুরো খাগড়াছড়ি শহরকে দেখা যায়। এখানে রয়েছে পাহাড়ী ঝর্ণা, রহস্যময় গুহা আর একটি ছোট বিনোদন পার্ক যেখান থেকে সমস্ত খাগড়াছড়ি শহর দেখা যায় টিকেট নিয়ে ঢুকলাম আলুটিলা পার্কে, দেখলাম তখন ঝির ঝির বৃষ্টির প্রকোপ কমে গেছে আকাশে মেঘের ফাঁকে হটাৎ হটাৎ সুর্যমামা উকি দিচ্ছেন।
সরাসরি গেলাম গুহার কাছে দেখলাম পাহাড়ের একদম খাদের মধ্যে গুহা সেখানে নামার জন্য পর্যটন কর্পোরেশন সিঁড়ির ব্যবস্থা করছে। সিড়ি ধরে নামছি খাদের মধ্যে সামনে আমি আমার পেছনে কোরবান লিটন শাহীন ও রেজিস্ট্রি দিতে নোয়াখালী থেকে আসা ষাটোর্ধ চাচামিয়া। আমি চিন্তা করলাম চাচামিয়ার এবয়সে আবার গুহা দেখার শখ হল কেন ? জিজ্ঞাসা করলাম চাচা মিয়া আপনিতো অনেকদিন এই এলাকায় চিলেন কখনো এই গুহায় যাননি ? উনি না সুচক জবাব দিলেন। আমরা এগিয়ে যাছ্ছি আমাদের সামনে আরও একটি অভিযাত্রী দলের দেখা পেলাম দেখে মনে হল পার্বত্য এলাকার কোন প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য এরা। সাদা পোষাকে থাকায় বুঝতে পারিনি কোন বাহিনীর সদস্য । উনারা দেখলাম বেশ প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন সবার হাতে মশাল গুহার ভেতরে নাকি অন্ধকার আর বাদুড়ের উপদ্রব তাই মশাল দরকার কিন্তু পুর্বে না জানার দরুন আমরা খালি হাতে গুহার সামনে হাজির হলাম। বিপত্তি হল মশাল বা আলোর ব্যবস্থা ছাড়া অন্ধকার গুহায় কিভাবে ঢুকি ? এখন আবার মশাল আনতে হলে ১ কিমি পাহাড়ে আবার উঠতে হবে। অবশেষে আমাদের সহযাত্রী বন্ধুদের অনুরোধ করার পর উনারা রাজি হলেন উনাদের মশালের আলোয় আমাদেরকে গুহার মধ্যে পথ দেখাবেন।
গুহার প্রবেশ মুখে দাড়িয়ে দেখলাম ভেতর থেকে পানির ধারা বেরিয়ে আসছে আর গুহার ভেতর কিছু দেখা যায়না নিকশ কালো অন্ধকার। অন্ধকার দেখে কোরবান বলল আমি ভাই তোদের সাথে নেই আমি এই অন্ধকার গুহায় ঢুকব না। আমি ওকে অভয় দিলাম আরে কিছু হবে না ভয় পাওয়ার কিছু নেই। অবশেষে রাজি করালাম।
একে একে আমরা গুহার মধ্যে প্রবেশ করছি.. যেহেতু আমাদের কারো কাছে আলো নেই তাই আমরা আমাদের অগ্রবর্তী বন্ধুদের পেছনে প্রবেশ করলাম তাদের মশালের আলোয় । গুহাটি পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত তাই আমাদের উপরের দিকে যেতে হচ্ছে। চারপাশে নিকষ অন্ধকার মশালের আলোকে মনে হচ্ছে জোনাকির আলো , আমাদের পায়ের কাছ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে পানির ধারা । কোথাও কোথাও গুহার ব্যাস এতো সরু যে নিচু হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে যেতে হচ্ছে । হটাৎ কে যেন বললো গুহার মধ্যে সাপ থাকতে পারে, পিটের কাছ দিয়ে ভয়ের শীতল ধারা বইতে শুরু করলো এই অন্ধকার গুহায় যদি সাপের ছোবল খাই তাহলে আর চট্টগ্রাম ফিরতে হবে না। মনের মধ্যে ভয় আর রোমাঞ্চের মিশ্র অনুভুতি । গুহার মেঝে কিন্তু সমতল নয় , কোথাও এবড়ো তেবড়ো পাথর আর কোথাও ৩/৪ ফুট গভীর গর্ত মশালের স্বল্প আলো সাবধানে পা ফেলে সামনে এগুচ্ছি ।
এমনিতেই গুহার মধ্যে বদ্ধ হওয়ার দরুন অক্সিজেনের স্বল্পতার দরুন আমাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে , তার উপর মশালের ধোয়া আরো ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সামনে এগুচ্ছি তো এগুচ্ছি মনে হচ্ছে বুঝি এই অন্ধকার কবর থেকে আর বের হতে পারবনা।
এরই মাঝে মরার উপর খাড়ার ঘা এর মতো কোথা থেকে শত শত বাদুড় উড়ে এলো বাদুড় দেখে আমার আত্মারাম খাচা ছাড়া হবার জোগাড়। ড্রাকুলা ছবিতে দেখেছি এই রকম বাদুড় মানুষের রক্ত চোষে খায় আর বাচার কোন উপায় নেই। কিন্তু আমার ধারনা ভুল করে দিয়ে বাদুড় গুলো বিপরীত দিকে উড়ে গেল। মনে মনে আল্লাহকে ধন্যবাদ দিলাম।
প্রায় ২০/২৫ মিনিট সামনে এগুনোর পর কিছু দুরে একটা আলোর বিন্দু দেখতে পেলাম বুঝতে পারলাম আমরা গুহার শেষ প্রান্তে এসে গেছি, গুহার শেষ প্রান্তে একটি চমৎকার ছোট ঝরনা দেখেতে পেলাম যা সত্যিই খুবই সুন্দর।
গুহা থেকে বের হয়ে সেই ঝরনায় হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হলাম। শেষ হলো আমাদের ভয় আর রোমাঞ্ছের মিশ্র অনুভুতি সমৃদ্ধ অভিযান।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:৪৩