এক কাক এক টুকরো মাংস চুরি করে এক উঁচু গাছের ডালে গিয়ে বসল। মাংসের টুকরোটা তার দু’ ঠোঁটের মাঝখানে ধরা। এই সময় এক শেয়াল তাকে দেখতে পেয়ে এক শয়তানী ফন্দী আঁটল। উদ্দেশ্য, ঐ মাংসের টুকরোটা হাতিয়ে নেওয়া।
কাককে উদ্দেশ্য করে আফসোস করার ভঙ্গি করে বলতে লাগলো- "ইস কি সুন্দর তোমার চেহারা, খাড়া ঠোট, চকচকে কালো গায়ের রং। ব্লাক ডায়মন্ড বললেও যেন ভুল হবেনা। কিন্তু আফসোস, ফেসবুকে তোমার কোন একাউন্ট নাই। থাকলে আমার মতও তুমি সেলফি তুলে আপলোড করতে পারতে। কিন্তু কি আর করবে তোমার তো আর স্মার্টফোন নেই যে সেলফি তুলে আমার মতো আপলোড করবে। এক কাজ করতে পারো। নিচে আসো। আমার ফোন দিয়ে দুইজনে মিলে একটা সেলফি তুলে আমার আইডিতে শেয়ার করে দিচ্ছি। এরপর তোমাকে একটা আইডি ওপেন করে দিয়ে প্রমোট করে দিচ্ছি। দেখবে চোখের পলকেই তোমার হাজার হাজার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট চলে আসবে। আর চাইলে তুমি মাঝে মাঝে এসে আমার সেট থেকেই নটিফিকেশন চেক করতে পারবে। স্ট্যাটাসও দিতে পারবে। আমি মাইন্ড করবো না।"
এতোক্ষণ ধরে কাক শিয়ালের কথা শুনে রাগে ফোস ফোস করতেছিল। শালার কোথাকার কোন শিয়ালের কত বড় সাহস ! আমাকে এইভাবে অপমান করে? কাক তার পকেট থেকে তার নকিয়া লুমিয়া ৭২০ সেটখানা বের করে শিয়ালকে দেখিয়ে বললে লাগলো- "ওরে বেক্কল শিয়াল, এই যুগে কি কারো কাছে স্মার্টফোন না থাকে? এই দেখ আমিও স্মার্টফোন চালাই। আর আমিও সেই ২০০৮ থাইক্কা ফেসবুক ইউজাই। আমার ফলোয়ারের সংখ্যা কত জানো চান্দু ? ৫০হাজার !!! আর তুমি আইছো আমারে ফেসবুক শিখাতে !!"
শিয়ালকে কথাগুলি শুনিয়ে কাক খুব মজা পেল। কিন্তু কখন যে তার ঠোঁট থেকে মাংসের টুকরাটা নিচে পড়ে গেছে সেটা সে খেয়ালই করেনি। শিয়াল মাংসের টুকরাটা নিজের কব্জায় নিয়ে তাচ্ছিল্য ভরে বলতে লাগলো- "ওরে বোকা কাক, তোর স্মার্টফোন থাকতে পারে, ফেসবুকে হাজারও ফলোয়ার থাকতে পারে, কিন্তু তুই নিজে একটুও স্মার্ট না। একটা হাদারাম মাত্র। হাহাহা !!!"
বলেই শিয়াল মাংসের টুকরা মুখে নিয়ে বনের ভেতরে চলে গেলো।
আধুনিক মোরালঃ স্মার্টফোন থাকলেই স্মার্ট হওয়া যায় না।
শিয়াল ও চিতাবাঘ
এক শেয়াল আর এক চিতাবাঘের মধ্যে তর্ক চলছিল কে বেশী সুন্দর তাই নিয়ে। চিতাবাঘ তার গায়ের একটার পর একটা বাহারী ছবির মত দাগ দেখিয়ে প্রমাণ করতে লাগলো সে দেখতে কত সুন্দর। শেয়ালকে সে বলতে লাগলে- "তুমি জানো আমার ফটোতে কয়টা করে লাইক পড়ে? সে সম্পর্কে তোমার কোন ধারনাই নাই।"
শিয়াল বললো- "আমিতো কোন ফটোই আপলোড করিনা। আমার লেখা রোমান্টিক গল্প আর কবিতা পড়েই শিয়ালীরা আমার প্রেমে পড়ে যায়। ওরে সুদর্শন চিতাবাঘ, শুধু সুন্দর চেহারা থাকলেই প্রেম করা যায়না। ভেতরে রোমান্স থাকতে হয়রে পাগলা। আমিতো জানি, তুই এই পর্যন্ত একটাও প্রেম করতে পারিস নাই। আর আমার পিছে শিয়ালীদের লাইন লেগে থাকে।"
শিয়ালের কথা শুনে চিতাবাঘের মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। সত্যিই তো সে এ পর্যন্ত একটা প্রেমও করতে পারলোনা। আর ওর চোখের সামনে দেখিয়ে দেখিয়ে একটার পর একটা প্রেম করে যাচ্ছে শিয়াল।
চিতাবাঘকে তার স্মার্টফোনে একটি সুন্দরী শিয়ালীর ছবি দেখিয়ে শিয়াল বলতে লাগলো- "এই দেখ এর নাম নায়লা। আজ ওর সাথে ফাস্ট ডেটিংয়ে যাচ্ছি। দোয়া রাখিস।"
বলেই শিয়াল নায়লাকে রিপ্লাই করলে- " সো, তাহলে আজ দেখা হচ্ছে?"
আধুনিক মোরালঃ ফেসবুকে সুন্দর ছবি আপলোড করলেই প্রেম করা যায়না।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৪ সকাল ১০:০৫