প্রাথমিক ধারণাঃ
IELTS কি এবং কেন ?
ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পরীক্ষা নামই হচ্ছে IELTS। এর পূর্ণ রূপ International English Language Testing System. পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লেখাপড়া বা কাজ করতে যেতে চান, তাদের ইংরেজি ভাষার উপর দক্ষতা প্রমাণের জন্য IELTS পরীক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। যে কোন বয়সের এবং যে কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। তবে শিক্ষাগত যোগ্যতার উপর এর প্রকারভেদ লক্ষনীয়।
পরীক্ষার ধরণ এবং প্রকারভেদঃ
IELTS পরীক্ষা দেওয়া যায় Academic ও General Training মডিউলে। স্নাতক, স্নাতকোত্তর অথবা পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা Academic মডিউলে পরীক্ষা দিতে পারবেন। কোনো শিক্ষার্থী যদি কারিগরি বিষয় বা প্রশিক্ষণে ভর্তি হতে ইচ্ছা পোষণ করেন, তবে তাঁকে General Training মডিউলে পরীক্ষা দিতে হয়। ইমিগ্রেশনের জন্য যারা আগ্রহী তাদেরও একই মডিউলে পরীক্ষা দিতে হবে। দুই ধরনের মডিউলেই Listening, Reading, Writing & Speaking—এই মোট চারটি অংশ থাকে।
Listening
শুনে বোঝার ক্ষমতা যাচাই করা হয় এই অংশে। রেকর্ড করা নির্দিষ্ট বক্তব্য শুনে বা কথোপকথন শুনে এ অংশে প্রশ্নের উত্তর করতে হবে পরীক্ষার্থীদের। এই অংশে মোট চারটি বিভাগে ৪০টির মতো প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। পরীক্ষার সময় যেকোনো বিষয়ে বক্তৃতা, কথোপকথন বা অন্য কোনো বিষয়ে অডিও শোনানো হয়। সেখান থেকে শুনেই পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর নির্ধারিত উত্তরপত্রে লিখতে হবে। ৩০ মিনিটের মতো পরীক্ষা হয় এবং শেষে অতিরিক্ত ১০ মিনিট সময় দেওয়া হয় সব উত্তর প্রশ্নপত্র থেকে উত্তরপত্রে লেখার জন্য। একটি বিষয় কেবল একবারই বাজিয়ে শোনানো হয়। কোন অবস্থাতেই কোন অডিও দ্বিতীয়বার প্লে করা হয় না। প্লে করা অডিওর উপর মাল্টিপল চয়েজ, সংক্ষিপ্ত উত্তর, বাক্যপূরণ ইত্যাদি নানা ধরনের প্রশ্ন থাকতে পারে।
Reading
বুঝতেই পারছেন এই অংশে পড়ার উপর দক্ষতা যাচাই বাছাই করা হয়। এক ঘণ্টায় তিনটি বিভাগে ৪০টির মতো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে পরীক্ষার্থীদের। এই অংশে বিভিন্ন জার্নাল, বই, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন থেকে কিছু অংশ তুলে দেওয়া হয়ে থাকে। এখান থেকে পড়েই উত্তর করতে হয়। এই অংশেও বাক্যপূরণ, সংক্ষিপ্ত উত্তর, সঠিক উত্তর খুঁজে বের করার মত ছোট ছোট টাস্ক দেয়া হয়।
Writing
ইংরেজি ভাষায় লেখার দক্ষতা যাচাইয়ের এই অংশে পরীক্ষার্থীকে ১ ঘণ্টায় দুটি প্রশ্নের উত্তর লিখতে বলা হয়ে থাকে। ২য় প্রশ্নটিতে ১ম প্রশ্নের চেয়ে বেশি নম্বর নির্ধারণ করা থাকে। সময় এবং মার্কের উপর ভিত্তি করে আপনি আগে থেকেই আপনার উত্তর কতটুকু লিখবেন এবং কত সময় ধরে লিখবেন তা ঠিক করে রাখতে পারেন। প্রথম প্রশ্নটিতে মোটামুটি ২০ মিনিট সময় দিতে পারেন এবং অন্তত ১৫০ শব্দের উত্তর লিখতে পারেন। আর দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তর দিতে আপনি ৪০ মিনিট সময় ব্যয় করতে পারেন এবং অন্তত ২৫০টি শব্দ লিখতে পারেন। ২৫০ শব্দের কমে উত্তর করলে খারাপ মার্কস পাবার সম্ভাবনা রয়ে যায়। প্রথম প্রশ্নে সাধারণত কোনো চার্ট, ডায়াগ্রাম ইত্যাদি থাকে। এর উপর ভিত্তি করে আপনাকে নিজের ভাষায় বিশ্লেষণধর্মী উত্তর লিখতে হবে। আর দ্বিতীয় প্রশ্নটিতে সাধারণত কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের পক্ষে বা বিপক্ষে মত বা যুক্তি উপস্থাপন করতে বলা হতে পারে।
Speaking
এখানে তিনটি অংশে পরীক্ষার্থীদের মোটামুটি ১১ থেকে ১৪ মিনিটের পরীক্ষা দিতে হয়। প্রথম অংশে পরীক্ষার্থীকে কিছু সাধারণ প্রশ্ন করা হয়। যেমন: পরিবার, পড়াশোনা, কাজ, বন্ধু ইত্যাদি। দ্বিতীয় অংশে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে এবং দুই মিনিট কথা বলতে হয়। এর আগে প্রস্তুতির জন্য সময় দেওয়া হয় এক মিনিট। তৃতীয় অংশে রয়েছে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে পরীক্ষকের সঙ্গে চার-পাঁচ মিনিটের কথোপকথন। কথা বলার উপর দক্ষতা যাচাইয়ের এই অংশে আপনার দ্রুত কথা বলার ক্ষমতা আপনাকে অনেক এগিয়ে রাখবে এবং ভাল মার্কস পেতে সাহায্য করবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব বকবক করার চেষ্টা করুন।
স্কোরিং
১ থেকে ৯-এর স্কেলে IELTS-এর স্কোরিং করা হয়ে থাকে। চারটি অংশে আলাদাভাবে ব্যান্ড স্কোর দেওয়া হয়। চারটি অংশের গড় করে সম্পূর্ণ একটি স্কোরও দেওয়া হয়। এ পরীক্ষায় পাস বা ফেল হওয়ার কোনো বিষয় নেই। আপনার প্রয়োজনীয় স্কোর করতে পারলেই পরীক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্য সফল হবে। ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলে সাধারণত ৬.৫ থেকে ৭.৫ পেতে হয়। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যান্ড স্কোর পৃথকভাবে (Writing, Speaking, Listening, Reading) ভালো করতে হয়। সম্পূর্ণ স্কোর যত ভালোই হোক না কেন, একটি বিভাগে স্কোর কমে গেলে ভর্তির সুযোগ নাও পেতে পারেন শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা দেওয়ার আগেই জেনে নিন আপনার ন্যূনতম কত স্কোর প্রয়োজন। আর এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য চেষ্টা করুন।
প্রস্তুতি পর্ব-
কোচিং এর প্রয়োজনীয়তা-
আপনার ইংরেজিতে যদি বেসিক খুব ভালো হয়, তাহলে আপনি কোচিং ছাড়াই নিজে নিজেই প্রাক্টিস করে ৭-৭.৫ অনায়াসেই পেতে পারেন। তবে পরীক্ষার ধরন এবং আনুসাঙ্গীক বিষয় সম্পর্কে নিজেকে ঝালিয়ে নিতে আপনি ব্রিটিশ কাউন্সিলে কোচিং করতে পারেন। অথবা বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে mock test দিতে পারেন। কোচিং এর ধরন অনুযায়ী প্রতি টেস্টে আপনার খরচ পরবে ৫০০-১২০০টাকার মত। যাদের বেসিক ভাল তাদের লোয়ার ক্যাটাগোরির কোচিংয়ে ভর্তি না হওয়াই শ্রেয়। এতে তাদের লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি। মনে রাখবেন এই পরীক্ষায় ভাল করার চাবিকাঠি হচ্ছে নিজের কাছে।
আপনার ইংরেজির বেসিক যদি ভালো না হয়, তাহলে হাজারটা আইএলটিএস এর ক্লাস করেও ভালো স্কোরের নিশ্চয়তা পাবেন না। তাই আপনার বেসিক ভাল না হলে আগে আপনাকে আপনার ফাউন্ডেশন পাকাপোক্ত করতে হবে। এক্ষেতে যা যা করতে পারেন-
◘ SSC এবং HSC পর্যায়ে যে গ্রামার পড়ানো হয় তা পঙ্খানুপুঙ্খরুপে শেষ করুন। কোন টপিকস্ বাদ দিবেন না।
◘ রিডিং ভাল করার মূলমন্ত্র হচ্ছে বেশি বেশি ইংরেজি পড়া। ইংরেজি যত বেশী করে পড়তে পারেন ততই ভাল। ইংরেজি গল্পের বই পড়ুন। কঠিন লাগলে ছোট সাইজের বই নিয়ে শুরু করুন। বই পড়ার সময় ডিক্সোনারির সাহাজ্য নেবেন না, অচেনা শব্দ নিয়ে মাথাও ঘামাবেন না। পড়ে যান, পরে পুরো লাইন বা প্যারা পড়া শেষ হলে দেখবেন যে সেই শব্দের অর্থও বুঝে গেছেন। আর বই যত বেশী পড়তে পারেন, ততই ভাল।
◘ রেডিওতে ইংরেজি প্রোগ্রাম ও গান শুনুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন। টেলিভিশনে ইংরেজি সিরিয়াল, মুভি ইত্যাদি দেখুন। বুঝতে সমস্যা হলে সাবটাইটেল দিয়ে নিন। আস্তে আস্তে সাবটাইটেল ছাড়াই দেখার চেষ্টা করুন এবং কি বলছে বোঝার চেষ্টা করুন।
◘ নিজে নিজেই ইংরেজিতে বকবক করা শুরু করুন। বাসার সবার সাথে ইংরেজিতে কথা বলুন। প্রথমে সবাই হাসাহাসি করবে। পাত্তা দিবেন না। ইংরেজি ভাষাভাষি লোকদের সাথে ফেসবুকে ফ্রেন্ডশীপ করুন। তাদের সাথে যতবেশি সম্ভব চ্যাট করুন।
◘ Writing এ সমস্যা খুব বেশি হলে ভাল কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে শর্টকোর্স করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে রংবেরঙের বিজ্ঞাপনদাতা কোচিং এর ধারেন কাছেও যাবেন না। ঢাবির ইংরেজি বিভাগে কিছু কোর্স করায়। ওখানে চেষ্টা করতে পারেন।
প্রস্তুতির আগে যা যা জানা প্রয়োজন-
IELTS দেবার আগে জেনে নিন পরীক্ষার ফরম্যাট, মার্কস, কত পেলে কত ব্যান্ড হবে। সাধারনত প্রত্যেটি পরীক্ষায় (লিখিত,পঠিত,কথোপকথন,শোনা) ৪০-এ ৩৪ এর উপর পেলে ৭ ব্যন্ড আসবে।এটাও জেনে নিন আপনার আসলে কত band score দরকার। টার্গেট ঠিক করুন আর সে অনুযায়ী প্রস্তুতি শুরু করুন।
রেজিস্ট্রশন গাইডলাইন-
ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশে IELTS পরীক্ষার পরিচালনার অন্যতম প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে এদের বেশ কিছু শাখা আছে। বিস্তারিত -
পরীক্ষা দিতে চাইলে প্রথমেই রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজন হবে। রেজিস্ট্রেশন করা যায় online এ অথবা Saifurs, Mentors এর মত কোচিংগুলোতেও আজকাল রেজিস্ট্রেশন করার ব্যাপারে সাহায্য করে। তবে online এ নিজে নিজে করাই ভাল। এতে অভিজ্ঞতাও বাড়ে। বর্তমানে রেজিস্ট্রেশন ফি ১২,৮০০ টাকা। আবেদনপত্রর স্যাম্পল - Click This Link
কিভাবে রেজিস্ট্রেশন করবেন তা বিস্তারিত পাবেন এইখানে-
এইখানে থেকে স্টেপ ফলো করে রেজিস্ট্রেশন শেষ করেন। কনর্ফাম করার পর যে পেজ আসবে ঐটা প্রিন্ট দিয়ে ফেলেন। ওদের স্টেপ অনুযায়ী টাকা এবং দরকারী কাগজপত্র জমা দিন। কিছুদিনে মধ্যেই British Council আপনাকে পরীক্ষার স্থান এবং সময়সূচী ইমেইল না এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দিবে। সাথে একটা ৬ ডিজিটের আইডি দিবে। এটা মুখস্ত করে ফেলাই উত্তম হবে।
কিছু প্রয়োজনীয় বইয়ের ডাউনলোড লিংক-
নিচের দুইটি ব্লগে বেশ কিছু দরকারী বইয়ের ডাউনলোড লিংক পাবেন।
Click This Link
Click This Link
অনলাইনে বিভিন্ন টেষ্টও দিতে পারেন নিচের সাইটগুলোতে-
Click This Link
http://www.examenglish.com/IELTS/index.html
http://www.esolcourses.com/revision/ielts.html
http://www.ieltsbuddy.com/
Click This Link
Click This Link
Click This Link
(পোস্টটি IELTS এর ধারণা সম্বলিত বিভিন্ন সাইট, আর্টিকেল এবং এক্সপার্ট ব্লগারদের ব্লগকে সমন্বয় করে লেখা হয়েছে।)