বন্ধুত্ব মানে কিছুটা কম্প্রোমাইজ। বন্ধুত্ব মানে কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করা। বন্ধুত্ব মানে বিপদের দিনে হাতটা বাড়িয়ে দেয়া। একটা তেলেগু মুভিতে দেখেছিলাম এক পিতা তার শিশু পুত্রকে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা শিখাচ্ছিলেন। পিতা তার ছেলে তাতে কিছুটা পানি দিয়ে পানিটুকু হাতের তালুতে আটকে রাখার চেষ্টা করতে বলেন। ছেলেটা পিতার কথা মত পানিটুকু আটকে রাখার জন্য অনেক চেষ্ট করতে থাকে। এরপর পিতা ছেলেটির হাতের আঙুলের একটা একটা করে গুটিয়ে আনতে বলেন। ছেলেটি একটা একটা আঙুল গুটিয়ে আনতে থাকে। যখন সবগুলো আঙুল গুটিয়ে হাতটি মুঠোবন্দি হয়ে যায়, ছেলেটির হাত থেকে সবটুকু পানি মাটিতে পড়ে যায়। এরপর পিতা বলেন- "পানিটুকু হচ্ছে তোমার সকল বন্ধুরা। তুমি যত ত্যাগ স্বীকার করবে, কম্প্রোমাইজ করবে, তোমার জীবনে সব বন্ধুরা টিকে থাকবে। তোমার সাথি হবে। আর তোমার আঙুলগুলো হচ্ছে তোমার নিজের সুযোগ সুবিধার চাহিদা। তুমি নিজের চাহিদা যত মিটাতে চাইবে তোমার জীবন হতে বন্ধুরা এক এক করে হারিয়ে যাবে। একসময় তুমি বন্ধুহীন হয়ে যাবে।"
আমাদের দেশের রাজনৈতিক এবং সামজিক ক্ষেত্রে এই কম্প্রোপাইজের অভাবটা আমরা সকলেই বোধ করছি। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে আমাদের আরো ত্যাগ স্বীকার করা জরুরী। কিন্তু আমরা কেউ এখন আর নিজের সুবিধাটুকু ছাড়তে নারাজ। সবাই নিজের উদরপুর্তিতেই ব্যস্ত। সমাজ, দেশ, জাতির কথা না ভেবে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য আমরা উঠেপড়ে লেগেছি। কিন্তু এতে একজন মানুষের প্রকৃত মূল্যবোধটুকু আমরা দিন দিন হারিয়ে ফেলছি। আমরা একটা সভ্য সমাজের অংশিদার হয়েও আমরা সমাজে ঘটিয়ে চলছি নানান অসভ্য কর্মকান্ড।
বিশেষ করে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে বর্তমান দলসমূহের মধ্যে একটা বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন অত্যন্ত জরূরী। দলসমূহের মধ্যে দুরত্ব এবং বিরোধ বাড়তে থাকার কারণে তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে দেশের উন্নয়ন এবং অপার জনসাধারণের উপর। হুমকির মুখে পড়ছে দেশের অর্থনীতি, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের সম্পদ।
সার্বিক দিক বিবেচনা করে বলা যায়, দেশ এবং জাতির স্বার্থে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইস্যুতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটা সেতু বন্ধন রচনা করা জরূরী। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কোন দলেরই উচিত নয় এককভাবে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা। গুরুত্বপূর্ণ এবং বিবেধপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোতে প্রতিটি দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সকলের ঐক্যের মাধ্যমে সেই ইস্যুর সমাধান করা জরূরী। আলোচনার মাধ্যমে যদি পৃথিবীর বিরাট বিরাট ইস্যুর সমাধান করা যায়, তাহলে আমাদের দেশের মত ক্ষুদ্র একটি দেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমস্যাগুলো কেন সমাধান করা যাবেনা ???
প্রতি বছর আগস্টের প্রথম রবিবার বন্ধুত্ব দিবস আমাদের মাঝে এসে হাজির হয়। এই দিনটি দেশের তরুণ সমাজের মধ্যে কিছুটা হলেও আনন্দের বারতা নিয়ে আসে। কেননা এই বয়সেই আমরা বন্ধুত্বের মর্যাদা শিখে থাকি। শিখে থাকি কম্প্রোমাইজ এবং ত্যাগ স্বীকার। তাই শুধু তরুণ সমাজকেই নয়, আমাদের রাজনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে বন্ধুত্ব দিবস আশীর্বাদ বয়ে আনুক। দেশের সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে গড়ে উঠুক বন্ধুত্বের সেতু বন্ধন। বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে এগিয়ে যাক মাথা উচু করে।।।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১২ সকাল ১০:১৫