প্রায় আড়াই বছর পর চিরকুট লিখতে ব্লগে ফিরে এলাম। লিখতে ভালবাসি। পড়তেও। ব্লগের লেখা ভাল লাগে তাৎক্ষণিক পাঠক প্রতিক্রিয়া আর মিথস্ক্রিয়ার জন্য। তাই যখন ব্লগে আবার ফিরে আসার কথা আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাজুকে বললাম, সে কিন্তু খুব একটা সাহস দেয়নি। কারণটা কারও অজানা নয়। সবারই আশঙ্কা ব্লগের পরিবেশ নিয়ে। আমি রাজুকে বলি, ব্লগটা কিন্তু এই সমাজের অকৃত্রিম প্রতিচ্ছবি। সামাজিক ভাবে আমাদের চলন-বলন-আর আচরণের প্রত্যক্ষ আর প্রচ্ছন্ন ছাপটা ব্লগে পড়বেই। এজন্যই দরকার সুস্হ ধারার লেখাকে মূল ধারায় রুপান্তর ঘটানো। অসুস্থ আর নোংরা পরিবেশে নাকে রুমাল দিয়ে জায়গাটা পার হতে হয়। তাই বলে, আমরা কি বদ্ধ ঘরে নিজেকে বন্দী করে রাখব? সুস্হ চিন্তা আর পরিচ্ছন্ন পরিবেশ সবাইকে মিলে তৈরী করতে হয়।
কিন্তু ব্লগের পরিবেশ নয়। নিতান্তই ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে বিরতি নিতে হয়েছিল। চলমান জীবনের ব্যস্ততা সর্বত্রই। দেশে বা প্রবাসে কোনখানেই তার ব্যত্যয় নেই। তবে দেশে থাকা বন্ধু বান্ধবদের দিকে তাকিয়ে অনেক সময় ভাবি দেশের তুলনায় এখানে ব্যস্ততা অনেক কম। অন্তত ছুটির দিনগুলো নিজের মতো ছুটে বেড়ানো যায়। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলো শনি আর রবিবার বাইরে ঘুরে বেড়াবার জন্য চমৎকার সুযোগ নিয়ে আসে। অনেক সময় গাড়ী নিয়ে চলে যাই দূরে কোথাও লং ড্রাইভিং-এ। ঘুরে ফিরে আবার রোববার সন্ধ্যায় ঘরে ফিরি।
ব্লগে ফিরে আসা নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করছিলাম। গত আড়াই বছরে ব্যস্ততার মাঝে হয়তো লিখতে পারতাম। কিন্তু লেখা হয়নি। তাই, আবারও পণ করে লিখতে বসলাম। ব্যস্ততার মধ্যে যতোটা সময় পাওয়া যায় তার মাঝে কিছু কিছু ভাবনা চিরকুটের আঁকিবুকিতে লিখে যাব। তাতে ভাল লাগবে। নিজের ভাবনা, ভাল লাগা বা খারাপ লাগা অন্যদের সাথে শেয়ার করা যাবে। ভাবনার বুদবুদ মিলে মিশে থাকবে হাজারও ভাবনার ভীঁড়ে। বনেদী ব্লগারদের পাশে আমার মতো আনাড়ীর লেখা জায়গা করে নিবে। ভাবতেই আনন্দ লাগে। হোক না চিরকুটীয় লেখার ঘর, তারপরও তো একান্ত আমার।
ব্লগে লেখার ব্যাপারে লক্ষ্যণীয় হচ্ছে লেখার বিষয়বস্তু। আমি নিজে বাইরে ঘুরে বেড়াই। অবসর পেলেই বেরিয়ে পড়ি। আমার বহির্মূর্খী জীবনে ঘুরে বেড়ানোর বর্ণাঢ্য অভিজ্ঞতাগুলো আমার লেখায় প্রাধান্য পেয়েছে, ভবিষ্যতেও পাবে। আমেরিকার জীবনে বাইরে ঘুরে বেড়ানো বা আউটডোর লাইফ সবচেয়ে আকর্ষণীয়। অসংখ্য পার্ক, ঘন বন-জঙ্গল, পাহাড়, নদী ও জলের ধারা এখানকার ভূপ্রকৃতিকে এক বৈচিত্র্যময় রুপে সাজিয়েছে। সমুদ্র সৈকত থকে সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়ার যেখানেই বিচরণ করতে চান তার জন্য সব ধরণের সুযোগ সুবিধা সাজিয়ে ও গুছিয়ে রাখা হয়েছে। হয় ফোনে, অথবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সব খোঁজ পাওয়া যায়। এমনকি আগাম রিজার্ভেশন করা যায়।
তবে বছরের অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় আমেরিকায় বহির্মুখী মানুষের ভীঁড় বাড়ে গ্রীষ্মকালে। পর্যটক আর ভ্রমণকারীরা এসময় চষে বেড়ান দেশ জুড়ে। সমুদ্র সৈকত থেকে শুরু করে আকর্ষণীয় সকল পর্যটনকেন্দ্রগুলোর হোটেলগুলোতে এ সময় তিলধারণের ক্ষমতাও থাকে না। যেখানেই রয়েছে পর্যটন কেন্দ্র, সেখানেই জমে মানুষের ভীঁড়। গ্রীস্মকালীন ছুটি মূলত এখানে স্কুল কেন্দ্রিক। পুরো আমেরিকা জুড়ে জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রায় আড়াই মাসের অধিক সময় ধরে কমবেশী সকল স্কুল বন্ধ থাকে। স্কুলে বিশেষভাবে কৃতিত্ববানদের জন্য ইয়াং স্কলার প্রোগ্রাম অথবা পিছিয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের ঘাটতি পূরণে কয়েক সপ্তাহের বিশেষ স্কুল ছাড়া সাধারণত স্কুলগুলো থাকে বন্ধ। ছাত্র-শিক্ষক সবারই ছুটি। পৃথিবীর খুব কম দেশেই এরকম দীর্ঘমেয়াদী গ্রীষ্মকালীন বিরতি বা ছুটির রীতি নীতি রয়েছে। এর পরের পর্বে থাকবে আমেরিকায় কিভাবে আড়াই মাসের দীর্ঘ গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হলো। আজকের মতো এখানে বিদায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১০ রাত ৩:৫৭