গতকাল ৩০ তম বিসিএস পরীক্ষার পর থেকে পরীক্ষার্থীদের মনে শুধু ক্ষোভ আর ক্ষোভ ।এই ক্ষোভ প্রশ্ন কঠিন হওয়ার জন্য নয় , প্রশ্ন ভুল আর সঠিক উত্তর না থাকার জন্য ।এর ফাদে পড়ে কেউ লাভবান হবে , কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হবে ।কিন্তু যাদের জন্য এ ভুল –তারা বহাল তবিয়তে থাকবে । সভ্য দেশ হলে এ অমার্জনীয় ভুল স্বীকার করে পিএসসির সবাইকে পদত্যাগ করতে হত এবং করত । বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক উপদেস্টা ব্যতিত কেউ এ সৎ সাহস দেখায়নি ।
অবাক লাগে এত বড় বিসিএস পরীক্ষার দিনে পিএসসির কর্নধারসহ সবাই ছুটিতে ছিলেন । সিন্ধান্ত দিবে রবিবার--অফিস খুলবে ,তারপর ।উচিত ছিল এই সপ্তাহে সবার ছুটি বাতিল করে কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে তাতক্ষনিক দিকনির্দেশনা দেয়া । সরকারের অন্যান্য বিভাগ তাই করে থাকে ।ইতিমধ্যে পিএসসি চেয়ারম্যান ১০০ এর স্থলে ৯৮ তে কনভার্ট করে সমাধানের একটি তত্ত্ব দিয়েছেন পত্রিকায়।এ মন্তব্য শুনে মনে হয়েছে , তার আদৌ প্রতিযোগিতামুলক পরীক্ষা নেয়ার যোগ্যতা নেই । অবশ্য তার অনিয়ম নিয়ে পত্রিকায় অনেককিছু পড়েছি-তিনি এসবে কোন পাত্তা দেন না ।
বিসিএস পরীক্ষায় একটি সঠিক উত্তরের জন্য ১ + ,ভুল উত্তরের জন্য ০.৫ কাটা , খালি রেখে দিলে ০ ।তাহলে কিভাবে এর সমাধান হয় ।
২নং সেটে যে ৫টি ইংরেজি প্রশ্নের ভুল ছিল – সে ব্যপারে পিএসসির সিন্ধান্ত যদি পরীক্ষার্থীদের পক্ষে যায় –তাহলে ১নং ও ৩নং সেট যারা পেয়েছিল তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে ।কারন সঠিক প্রশ্ন পেলে ২নং সেট প্রাপ্ত পরীক্ষার্থীদেরও ভুল হতে (-০.৫)পারত ।
আবার দেখুন-
১।রেডক্রস প্রতিষ্টা হয় কতসালে-
২।নবায়নযোগ্য জ্বালানী কোনটি-
৩।পাহাড়তলী কার গ্রামের বাড়ি
এই তিনটা প্রশ্নের কোন সঠিক উত্তর নাই ।৩নং প্রশ্ন করা হয়েছে যতটা না মেধা যাচাইয়ের জন্য তার চেয়ে বেশী প্রার্থীদের বাশ দেয়ার জন্য ।কাছাকাছি উত্তর শামসুর রাহমান । //http://en.wikipedia.org/wiki/Shamsur_Rahman//
শামসুর রাহমান জম্নগ্রহন করেন পূরান ঢাকায় । তার পিতার পৈত্রিক বাড়ি ছিল নরসিংদির পারাতলীতে ,পাহাড়তলী নয় ।
এই রকম প্রশ্ন যদি করা হয় –তাহলে ভবিষ্যতে রবীন্দ্রনাথের বাড়ি কোথায় প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশের খুলনা লিখলেও উত্তর সঠিক হওয়া উচিত । পারাতলীতে ও পাহাড়তলী বানানে বিশাল পার্থক্য ।সাহিত্যে যেখানে আ-ইকার মানে বিশাল ভুল সেখানে পুরো বানান তো আরো বিশাল ব্যাপার ।
আরেকজন লেখকের গ্রামের বাড়ী নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে ।
প্রশ্নটি ছিল – কাঠালপাড়ায় কার গ্রামের বাড়ী –উঃ বংকিমচন্দ্রের ।দেখা যাচ্ছে প্রশ্নকর্তার কবি-সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম নিয়ে যত না ভাবনা তার চেয়ে বেশী ভাবনা তাদের গ্রামের বাড়ী নিয়ে ।
সমালোচনা যখন করতে বসেছি – তখন আরেকটি প্রশ্ন দেখুন ।
কোন কবি নিজেকে বাঙ্গালি বলে পরিচয় দিয়েছেন –
ক।গোবিন্দদাস
খ।কায়কোবাদ
গ।কাহ্নপা
ঘ।ভুসুকু পা
এর মাঝে উত্তর ভুসুকু পা- কারন তিনি চর্যাপদে এরকম কিছু লিখেছেন ।
কিন্তু গোবিন্দদাস ও কায়কোবাদকে বাংগালি বলতে সমস্যা কোথায় ।তারা কি নিজেকে কখনো অবাংগালি বলেছেন ?তাদের কবিতায় বাংলার আকাশ বাতাস ,মানুষের সুখ দুঃখ নিয়ে এত কথা বলার পরও কি তারা বাঙ্গালি নয় ?নজরুল,জসীমউদ্দীন এরা তো কেউ লেখায় বাংগালী বলে পরিচয় দেয়নি , তাই বলে কি তারা বাংগালি নয় ?
প্রশ্নটা হওয়া উচিত ছিল-চর্যাপদের কোন কবি নিজেকে বাংগালি বলে পরিচয় দিয়েছেন ?
৪টা অপশনে চারজন চর্যাপদের কবির নাম দেয়া যেত ।
দেখা যাচ্ছে বাংলা প্রশ্ন কর্তার উদ্দেশ্য প্রার্থীদের মেধা যাচাই নয় – জ্ঞানের জগতটাকে বিভ্রান্ত করে দেয়া । নিশ্চিত প্রশ্নকর্তার মাথায় গোবর ছাড়া কিছু আছে বলে মনে হয় না।
এখন ইংরেজি ৫টি +
১।রেডক্রস প্রতিষ্টা হয় কতসালে-
২।নবায়নযোগ্য জ্বালানী কোনটি-
৩।পাহাড়তলী কার গ্রামের বাড়ি
এই তিনটি প্রশ্নসহ মোট আটটি প্রশ্নের ব্যাপারে পিএসসি কি সিন্ধান্ত নিবে ?
বাদ দিলে যারা ভুল উত্তর দিয়েছে তাদের পক্ষে যাবে , আর যারা সঠিক উত্তর দিয়েছে তাদের বিপক্ষে যাবে ।ইংরেজির জন্য ২নং সেটের প্রাথীদের সুবিধা দিতে গেলে অন্য সেটের প্রার্থীদের অসুবিধা হবে –কারন এটা প্রতিযোগিতামুলক পরীক্ষা ।
এই পরিস্থিতিতে আপনাদের মতে গ্রহনযোগ্য সমাধান কি ?
আমার মতে , খাতা মুল্যায়নের আগেই নুন্যতম ৫০ নম্বর পেলে সবাইকে লিখিত পরীক্ষায় বসতে দেয়া হবে –এমন ঘোষনা দেয়া হোক । এতে মনে হয় ক্ষতিগ্রস্থ ,সুবিধাভুগী সবাইকে এক কাতারে আনা যাবে ।যদি প্রার্থীসংখ্যা বেশী হয়ে যায় তাহলে লিখিত পরীক্ষায় ঝাড়ার সুযোগ তো আছেই ।
আপনারা কি বলেন ?
এ ছাড়া প্রচলিত নিয়ম ঠিক রেখে পিএসসি যে ঘোষনাই দিবে তা কারো পক্ষে কারো বিপক্ষে যাবে –সাম্য থাকবে না ।
২৯তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নে ভুলের মহোতসব দেখুন
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৩:৫৫