বাংলাদেশের অনেকেরই মনে একটা ভ্রান্ত ধারনা আছে যে , সৌদি আরবে কোরানের আইন ও রাসুল প্রদর্শিত পথ মোতাবেক দেশ পরিচালিত হয় । এ ধারনা সম্পুর্ন ভুল । সৌদি-আরবের বিভিন্ন প্রদেশ ও জেলার প্রধান একেক জন প্রিন্স কিংবা তাদের প্রতিনিধি । আইন-আদালত , শরিয়া কাউন্সিল সবই নামকাওয়াস্তে ।দেশ চলে রাজতন্ত্রের আড়ালে স্বৈরতন্ত্রের আরআন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমেরিকার ইশারায় ।লিখিত কোন নিয়মকানুন নেই । প্রদেশ ও জেলার প্রিন্স কিংবা তাদের প্রতিনিধির মৌখিক নির্দেশই বড় আইন ।নিয়ম-কানুন গুলো বড়ই বর্বর ও মধ্যযুগীয় ।
সৌদি-বাঙ্গালী ঝগড়া লাগলে পুলিস এসে দোষ যারই থাকুক বাঙ্গালীকে ধরে নিয়ে যায় । জেলে নিয়ে শুরু করে অমানুষিক নির্যাতন ।সৌদি পিচ্চিপোলাপান আজকালপথেঘাটে বাঙ্গালি একা পেলেই মোবাইল , টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয় বাধাদিলে মারধর শুরু করে । পুলিস আসলে কিংবা পুলিসের কাছে নালিশ করলে কোন লাভ নেই ।গত কয়েক বছর ধরে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতির কারনে বাংগালিরা সাংঘাতিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ।
সৌদি আরবে এসে প্রথমেই একজন শ্রমিককে তার পাসপোর্ট কফিল কিংবা কোম্পানীর কাছে জমা রাখতে হয় ।একজন শ্রমিক চাইলেও কর্মস্থল পরিবর্তন করতে পারে না বা প্রয়োজনে দেশে যেতে পারে না ।এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কফিলরা বাংগালীদের সেই পুরনো দাসত্বের শৃংখলে বন্দি করে রাখে ।যারা গৃহকর্মের কিংবা বখরি চরানোর কাজ করে তাদের ঊপর প্রচন্ড শারিরীক নির্যাতন করা হয় ।কথা বা মতের অমিল হলেই ঘাড় ধরে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয় । আইন-নিয়ম কানুন , চুক্তিপত্র এসব যেহেতু কারো কাছে থাকে না,থাকলেও এসবের কোন মুল্যও নেই ।
ILO,মানবাধিকার সংগঠনের চিল্লাচিল্লি এখানে পৌঁছায় না ।
একটু টাকা-পয়সা হলে একটা গাড়ি কিনতে হলে তা কফিলের নামে কাগজপত্র করতে হয় । কোন বিদেশি সেদেশে জায়গা কিনতে পারে না বা নিজের নামে কোন সম্পত্তির মালিক হতে পারে না ।
বাংলাদেশের বহু জামাতপন্থী ধর্ম ব্যবসায়ী লণ্ডনে বাড়ি কিনেছে কিন্তু সৌদিতে কিনতে পারেনি ।বিলাতের “কাফের”রা সেই সুযোগ দিলেও সৌদির ভাইয়েরা সেই সুযোগ দেয়নি । বহু দুঃখের মাঝে এ ভেবে হাসিও পায় যে ,বহু যুদ্ধাপরাধি বৃটেন ও ইউরোপে পালিয়ে গিয়ে নাগরিকত্ত পেলেও সৌদিতে সেই সুবিধা আদায় করতে পারেনি ।এজন্য মাঝে মাঝে সৌদিতে লুকিয়ে থাকা যুদ্ধাপরাধীদের পার্সপোর্ট বাতিল করে দেশে পাঠানোর কথা ঊঠলেই কান্নকাটি, দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে যায় ।
কোর্টের ভাষা আরবি । কোন অভিযোগ দাখিল করতে হলে আরবিতে লিখে কোর্টে জমা দিতে হয় । কোর্ট কোন জায়গায়তাও অনেকেই জানে না । বিচারে রায় হয় কোন আইনের ধারা মোতাবেক নয় ,হুকুমতের মর্জি মত ।তাই ন্যায় বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীন । বেশীর ভাগ রায় সৌদি কফিল বা কম্পানীর পক্ষে যায় ।এসব অনিয়মের বেড়াজালে কেউ কেউ খাপ খাইয়ে টিকে থাকতে পারে । বেশীরভাগই পারে না ।তাদের কপালে জুটে শারীরিক নির্যাতন ,জেল ,গলা ধাক্কায় দেশে ফেরত ।
আইন সবার জন্য সমান নয় । একজন সৌদি চাইলেই ভিনদেশি কারো স্ত্রী-কন্যাকে ধর্ষন করতে পারে ।বিচার পাওয়া তো দুরের কথা , ঊল্টো বিচার প্রার্থীরই সে দেশে থাকা সমস্যা হয়ে যায় ।আর ভিনদেশি কেউ অভিযুক্ত হলে তার শিরোচ্ছেদ ।প্রকৃত আইনের-শাসন থাকলে ভিনদেশি-সৌদি উভয়েরই শিরচ্ছেদ হওয়ার কথা ।
বহু সৌদি বহু বিবাহের কারনে কিংবা শেষ বয়সে এসে অল্প বয়সী মেয়ে বিয়ে করার কারনে বহু যুবতী তরুনীকে বিধবা কিংবা নিসংগ জীবনযাপন করতে হয় ।এসুযোগে বহু বাঙ্গালী গৃহকর্মী বা ড্রাইভারের সাথে তাদের একটা প্রনয়ের সম্পর্ক গড়ে ঊঠে । সম্মতিসুচক শারিরীক সম্পর্কের কারনে কিংবা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে কোন সৌদি অভিযোগ জানালে অসহায় বাঙ্গালীর জান শেষ । তার পক্ষে দাড়ানোর কেঊ থাকে না ।খুব দ্রুত রায় হয়ে দ্রুত শিরোচ্ছেদ কার্যকর হয় ।
একজন সৌদি চাইলে ভিনদেশি কোন মেয়েকে বিয়ে করতে পারে । কিন্তু কোন ভিনদেশি চাইলে সৌদিমেয়েকে বিয়ে করতে পারে না ।
এরকম বহু বিপরীতধর্মী নিয়ম কানুন আছে –বলে শেষ করা যাবে না ।
বহুদিন আগে ILO মধ্যপ্রাচ্যে কাজের পরিবেশ ও নিয়মকানুন শ্রমিক বান্ধব করার উদ্যোগ নেয় ।দুবাই থেকে কাজ শুরুও করে । কিন্তু এরপর কি হয়েছে আর জানা যায়নি ।
Uncle Tom’s Cabin এর মত কিছু কিছু দয়ালু কফিল যে নাই তা নয় ।ঐ ধরনের কফিল পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার । দেশে কিছু কিছু প্রবাসীকে আদম ব্যবসা,দু-নম্বরি ছাড়াওবিশাল অর্থবিত্তের মালিক হতে দেখা যায় ।এর একমাত্র কারন , কপালগুনে সে একজন ভালো কফিল পেয়েছে ।এদের দয়া দাক্ষিন্যের কথা বলে শেষ করা যাবে না । ছুটিতে ফিরতে দেরী হলে স্বয়ং কফিলের বাংলাদেশে চলে আসা থেকে শুরু করে এমন কিছু নেই যা সে বাংগালীটির মংগলের জন্য করে না ।
কিং বর্তমান কট্টরপন্থী মোতোয়াল্লী প্রধানকে বহিস্কার করে মধ্যপন্থী একজনকে বসিয়েছেন । দেখা যাক, শ্রমিক বান্ধব কোন কিছু আমরা পাই কি-না ।
(ক্রমশঃ)
(৫ম পর্ব ) (৭ম পর্ব )
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১০ রাত ১০:৫৩