আজ ৯ই আগস্ট। বিশ্ব আদিবাসী দিবস। প্রতিবারের মত এবারও আদিবাসী ইস্যুতে অনেক তর্ক বিতর্ক হচ্ছে, হবে। কিন্তু এটা আসলেই ভাবার বিষয় যে, যাদের নিয়ে তাঁরা এত কিছু করতে যাচ্ছেন তারা কি আদপে আদিবাসী? সর্বক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য আদিবাসী শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ভূপুত্র। অর্থাৎ, কোন দেশ বা সমাজে বসবাসরত ভূপুত্র বা প্রথম বসবাসকারীরা “আদিবাসী” হিসেবে পরিচিত হবেন। এছাড়া তাঁদের নিজস্ব সং্কৃতি, ঐতিহ্য, ভাষা ইত্যাদিও আদিবাসী পরিচয় নির্দিষ্ট করার ক্ষেত্রে ভুমিকা রাখে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে সমস্ত indicator দ্বারা আদিবাসী পরিচয় নির্ধারিত হবে তার সবগুলো কি তারা বহন করে? পার্বত্য অঞ্চলের যে সমস্ত নৃ-গোষ্ঠী আদিবাসী তকমা পাওয়ার দাবি করছে তাঁদের মধ্যে কেউই প্রকৃত ভুমিপুত্র বা son of the soil হতে পারেন না । কারন ১৫০০ শতকের আগে মঙ্গোলিয়ান বংশোদ্ভূত এসকল জাতিগোষ্ঠী এদেশে আগমন করে নি। এক্ষেত্রে বলা প্রয়োজন যে, ১৫০০ সালের কিছু পরে পার্বত্য এলাকায় এই মঙ্গোলিয়ান গোষ্ঠীর আগমন ঘটে। যাদের মূল নাড়ী পোতা আছে এদেশের বাইরে। ত্রিপুরারা যেমন ভারতের ত্রিপুরা হতে, মারমারা বর্তমান মায়ানমার হতে , চাকমারা মঙ্গোলিয়া হতে এদেশে আগমন করেছে তেমনি কুকি,সাওতাল,মনিপুরি প্রভৃতি গোষ্ঠী ভারতের বিভিন্ন অংশ হতে এদেশে আগমন করে। কিন্তু তার বহু আগে হতেই এদেশে বর্তমান বাঙালীজাতির পূর্বসূরিরা আগমন করেন। এখন প্রশ্ন তোলা যায়, son of the soil কি পার্বত্য অঞ্চলের ঐ জাতিগোষ্ঠী যারা মাত্র ৫০০-৬০০ বৎসর ধরে সেখানে বাস করছে নাকি বাঙ্গালিরা যারা কয়েক হাজার বছর ধরে এদেশে বাস করে আসছেন। এসকল জাতির পূর্বসূরিরা যেখানে প্রথম বসবাস শুরু করেছিলেন সেখানে তারা আদিবাসী হতে পারেন কিন্তু এদেশে নয়। কেননা, সেক্ষেত্রে আদিবাসী হওয়ার দৌড়ে বাঙালিজাতি অনেক এগিয়েই থাকবেন। অস্ত্রেলিয়ার বুমেরাং ম্যান, নিউজিল্যান্ড এর মাউরি, আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ান কিংবা ইনকা, অ্যাজটেক প্রভৃতি আদিবাসীর কথা চিন্তা করলে তাঁদের আদিবাসী দাবির জোর অনেকটাই কমে আসে। এছাড়া অন্যান্য indicators এর কথা বিবেচনা করলেও দেখা যাবে যে, সেখানেও বাঙ্গালি জাতি অগ্রসর।
সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য, ভাষা প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাঙ্গালি জাতি অনেক বেশি সুসংহত এবং অনেক বেশি প্রাচুর্যময়। একটু লক্ষ্য করলে দেখতে পাওয়া যাবে যে, ঐ সব জাতিগোষ্ঠী যে স্থান হতে এদেশে আগমন করেছে সে সকল দেশে তারা আদিবাসী বলে স্বীকৃত নয়। তাহলে তারা এদেশে কিভাবে আদিবাসী স্বীকৃতির দাবি করতে পারে। কাকের পক্ষে যেমন কখনই ময়ূর হওয়া সম্ভব না তেমনি উপজাতি হতে আদিবাসী হওয়ার সপ্ন দেখা বেশ হাস্যকর। এছাড়া একটি কথা না বললেই নয়, এসকল গোষ্ঠী নিজেদের আদিবাসী হিসেবে দাবী করে আসছে মাত্র কয়েক বছর ধরে। তার আগে পার্বত্য শান্তিচুক্তির সময়েও তারা নিজেদের উপজাতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। কি এমন জাদুমন্ত্রের ছোঁয়া তারা পেল যে, উপজাতি থেকে মাত্র কয়েক বছরে তাঁদের আদিবাসীতে উত্তরন ঘটল। এছাড়া চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় বিগত অনির্বাচিত সরকারের সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি থাকা অবস্থায় নিজেই বলেছেন, “ বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নেই”। কি এমন ঘটনা ঘটে গেল যে তিনি ১৮০ ডিগ্রী মোড় নিলেন। যেখানে সরকার বারবার বলছে যে দেশে আদিবাসী নেই, জাতিসংঘ বলছে এদেশে আদিবাসী নেই তারপরও কেন এই মাতামাতি। নাকি আদিবাসী স্বীকৃতি আদায় করে আন্তর্জাতিক দালালদের নিয়ে সবার নাকের উপর দিয়ে “জুম্মল্যান্ড” প্রতিষ্ঠার জন্য এই উঠে পড়ে লাগা? এই প্রশ্নের সমাধান তো আগে হওয়া জরুরি।