ভোরে ঘুম থেকে উঠলো রিবা চৌধুরী, আজ তার জন্মদিন, আজ তার বয়েস হলো ৪১ বছর। ঘুম থেকে উঠে নিজেকে কিশোরী ভাবতে শুরু করলো রিবা, সেই ছোট্ট বেলার নতুন জামা, নতুন ফ্রক। কিন্তু সে বুঝতে পারে সব কিছু বদলে গেছে।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে রিবা বসে আছে। টেবিলে ছড়ানো বিভিন্ন শেডেদের পিপস্টিক, আজ অনেক লোক আসবে, আসবে তার স্বমীও, যে তার ব্যবসা নিয়ে ব্যাস্ত ঐ দূরের শহরে, এই মফস্বলে আসার সময় তার কই? কোন শেড টাই তার পছন্দ হচ্ছে না। কিন্তু সে হলো রিবা চৌধুরী। দ্যা ওয়ান এ্যান্ড ওয়ানলি রিবা চৌধুরী। শহরের নারী সিংহ। ব্যাবসায়ী নেতারা পর্যন্ত তাকে ভয় পায়। কারণ সে রিবা চৌধুরী।
কিন্তু বাস্তবে রিবা চৌধুরী বেশ অসহায়। তার কঠিন শরীরের বাইরে মেকাপের পর্দা ছিড়ে তার নরম মন টা কে কেউ ছুয়ে দেখতে পারে নি। বড় ছেলে পড়ছে হ্যাম্পশায়ারে, মেয়ে নর্থসাউথে। এ শহরে সে শুধু সে একা সাথে তার কুকুর লিজা আর গোটা কয়েক কাজের লোক। এখনো সে শহরের শোড়ষী সুন্দরীদের সাথে পাল্লা দিতে পারে। তার নাকের তিল দিখে হায়দার সাহেবের বড় ছেলে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলো। ছেলেটা রিবা চৌধুরীর মেয়ের ৬ মাসের ছোট। রিবা চৌধুরী মিষ্টি করে এরিয়ে গেছেন ব্যপার টা। ব্যপার গুলো এখন ও বেশ উপভোগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই দিন গুলো মনে পড়ে যায় তার। অনেক, জাহিদ, শামীমের মতো ব্রিলিয়ান্ট ছেলেরা হুম্রি খেয়ে পড়তো তার উপর, সে পাত্তাও দিতো না।
কিন্তু আজকের রিবা চৌধুরী অনেক পরিনত। চৌধুরী এ্যান্ড সন্সের বর্তমান বস কে তো শক্ত হতেই হবে। কালো সানগ্লাসের আড়ালে ঢেকে যায় তার চোখ, সিগেরেটের ধোয়ায় ঠোঁট, আর মাঝে মাঝে বিয়ারে চুর চুর হয়ে যান নিজেও। রিবা চৌধুরীর মাঝে কোন দুক্ষ নেই। এক ই সাথে দুটো জীবন চলছে রিবা চৌধুরীর। একজন কঠিন বস, আরেক জন কিশোরী মেয়ে, তিনি স্প্লিট পার্সোনালিটিতে ভোগেন না আবার ভোগেন ও।
যাই হোক আজ রিবা চৌধুরীর জন্মদিন। হাতাকাটা লো কাটের ব্লাউজ পড়ে শাড়ী নাভীর নিচে গুজে দিয়ে তিনি আজ সকলের নজর কারবেন। কেউ বলবে না তার বয়স ২৫ এর বেশি। যাবার আগে দু পেগ হুইস্কি মারতেই হবে, নয়তো ব্যালেন্স হারাবেন...
পার্টি হচ্ছে, উদ্দাম নৃত্য হচ্ছে। রিবা চৌধুরী ব্যালকোনিতে একা বসে আছে, হাতে জ্বলন্ত সিগেরেট, কোলে লিজা। কেক কাটার ফরমালিটি হয়ে গেছে অনেক আগেই, সব কিছুর পরেও দ্যা রিবা চৌধুরী আজ একা, নিঃসঙ্গ। দূরে তিনি দেখছেন কিশোরী রিবা দাঁড়িয়ে আছে একটা বট গাছের নিছে। আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি পড়ছে, সবাই মিলে ভিজছে। আচ্ছা বড় হলে মানুষের জীবন এতো কমপ্লেক্স হয়ে যায় কেন?চোখ দিয়ে শ্রাবণের ঝর্ণা ধারা নেমে এলো রিবা চৌধুরীর । তিনি কাঁদছেন। ১৭ বছর পর কান্না। সুখের কান্না।
১৭ বছর আগে কি হয়েছিলো সেটা অতি গোপনেই লুকানো আছে তার মনে...।