আমি রবার্ট, রবার্ট সি. হ্যানসন। আসল নাম টা গোপন ই থাকুক, গল্পের কারণে। আমি থাকি বাংলাদেশে। একটা সুপার ন্যচারাল ও প্যরানরমাল বিহেবিয়ার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সত্ত্বাধিকারী। শহর টা ঢাকা, ইট পাথরের ভিড়ে যে এখানে ভুত আসবে তা এক সমইয় আমিও ভাবতে পারি নি, হাতে কাজ ছিলো না তাই শুরু করেছিলুম। যদিও বুঝতে পারি নি কোম্পানি এতোটা জনপ্রিয়তা পাবে, আর মানুষের এতো ভুতুরে সমস্যা আছে। আজ সেই গল্প গুলো থেকে একটা গল্প বলবো আপনাদের।
আমরা আমাদের কোম্পানি নিয়ে গর্বিত, কারণ হুমায়ুন স্যারের মৃত্যুর পর প্রথমে মিসির আলী সাহেব কে এর পর হিমু আমাদের এখানে যোগ দেয়। স্যারের মৃত্যুর পর লোক দুটো না খেয়ে মরার দশা হয়েছিলো। শুধু উনারাই নন, সুনীল বাবুর মৃত্যুর পর রাজা রায় চৌধুরী ওরফে কাকাবাবুও আমাদের এখানে সিনিয়র এ্যদ্ভাইসার হিসেবে যোগ দিয়েছেন। বয়স্ক মানুষ তার উপর খোড়া তাই উনাকে খুব বড় কেস না হলে ঘাটাই না তেমন।
সে যাক গে এবার গল্পে আসা যাক।
সে অনেক দিন আগের কথা, আমাদের এক ক্লায়েন্ট যার ফাইল নাম্বার হলো ৬০২। উনার নাম টা গোপন করে যাচ্ছি, ধরে নেই উনার নাম, জালাল।
জালাল সাহেব ঝঞ্ঝাট হীন মানুষ, জীবনে দুটো বিয়ে করেছেন, একটা বউ মারা গেছে রোড এ্যক্সিডেন্টে, আরেকটা পালিয়েছে প্রেমিকের হাত ধরে। এক ছেলে আর এক মেয়ের দায় তার কাঁধেই বর্তেছে। ছেলেটা প্রথম পক্ষের আর মেয়েটা দ্বিতীয় পক্ষের। থাকেন মানে আমাদের ক্লায়েন্ট অবস্থায় থাকতেন মধ্য বাড্ডায়। এখন কোথায় আছেন জানি না। টাকার সম্পর্ক চুকে গেছে, আর খবর নিয়ে আমার কি কাজ।
এইবার মূল গল্পে আসা যাক, জালাল সাহেবের সামান্য ভীরু মানুষ তা উনার সাথে প্রথম দেখাতেই বুঝে গেছি। সেদিন ছিলো বৃহস্পতিবার, গ্রামের বাড়ি থেকে ফেরার পথে এয়ারপোর্ট স্টেশনে নেমেছেন, লোকাল বাসে বাড্ডা ফিরবেন বলে। বিরোধীদলের রাত্রিকালীন হরতালের জন্য বাসের সংখ্যা বেশ কম। মিনিট ৪৫ দাড়ানোর পর একটা বাস পেলেন তিনি। কিন্তু বাসে একটা সমস্যা আছে। বাসটি লাশ বহন করছে। একজন মহিলার লাশ এ্যম্বুলেন্স আসতে পারে নি হরতালের জন্য, তাই বাস ভাড়া করে চলে এসেছে স্বজনেরা। তারা জালাল সাহেব কে বাসে উঠিয়ে নিতে রাজি হলো।
বাস চলছে, কিন্তু এমন সময় জালাল সাহেব খেয়াল করলেন, বাসের মাঝে সামান্য পচা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সাইকোলজ্যিকাল ব্যপার ভেব তিনি ঘুমুনোর চেষ্টা করলেন, সামান্যই তো রাস্তা। হঠাৎ করে তিনি ঘুমিয়ে গেলেন, সে এক গভীর ঘুম।
যখন ঘুম ভাংলো তখন তিনি তার বাসায়, মাঝে ক্যালেন্ডারের ৩ টি দিন গায়েব। ছেলে মেয়েরা হোস্টেলে থাকে বলে কেউ বলতে পারলো না, এই তিন টি দিন কি ভাবেই কেটে গেলো, বা তিনি কোথাই -- ই বা ছিলেন। আর বাসার তালাই বা কে খুলে দিলো? কে ই বা তার পোষাক বদলে দিয়েছিলো।
দীর্গ এক বছর তিনি আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন, এই সমস্যা টা নিয়ে। সেদিনের পর থেকে তিনি নাকি মানুষ কে বিশ্বাস করতে পারেন না। সব খানেই তিনি মৃত মানুষের গন্ধ পান। উনার এই কেসটা নিয়েছিলেন কাকাবাবু নিজে। তিনি আর আমি নিলে দীর্ঘ সাত দিনের গবেশনার পর বের করি তার সমস্যাটা
কেসের রেজাল্ট টা হলো, জালাল সাহেব দ্বৈত স্বত্বা ধারণ করেন, যে জালাল সাহেব সেই বাসে উঠেছিলেন, সেই জালাল সাহেব বাস থেকে নামেন নি। নেমেছিলেন অন্য জালাল সাহেব। মানে তার দ্বিতীয় স্বত্বা। আর প্রথম স্বত্ত্বা টি অবচেতন মনেই সেই বাস ভ্রমন করে যাচ্ছে। জালাল সাহেবের ৩ দিন লাগে প্রথম স্বত্ত্বার কাছে ফিরে যেতে, যেখানে তিনি নিজেই নিজের কাছে অপরিচিত। আর জাগ্রত প্রথম সত্বার কাছে দ্বিতীয় সত্বা সুপ্ত বা ঘুমন্ত। এটা বুঝতে আমাদের বেশ কিছু সময় লেগেছিলো, এটা ধরা পরেছিলো যখন তিনি হিপ্নোটাইজড অবস্থায় বলতে পারছিলেন না তার নাম। তখন সব গল্প বেরিয়ে আসে। তিনি যে একজন নিরেট ভদ্রলোক নন তা ও বুঝা যায় সে সময়। সে সব থাক, কিছু কথা থাক না গোপন।
বেশ ছোট কেস, প্রথম পরিচয়ে এর চেয়ে লৌমহর্ষক কেসের দিকে গেলে ভালো দেখাবে না, আবার দেখা হবে, পরে কোন দিন। সেবার মিসির আলীর গল্প নিয়ে আসবো ক্ষন।