রংপুর মিঠাপুকুর থানার জায়গীর গ্রামের এক দূরন্ত কিশোর আল-আমিন। সমবয়সী আর দশজন ছেলের মতোই সেও খুব স্বাধীনচেতা।নবম শ্রেনীতে পডুয়া কিশোর।স্কুলের বাধা-ধরা নিয়ম তার ভাল লাগেনা।
গ্রীষ্মের ছুটির অপেক্ষায় তার দিন কাটে।কতো পরিকল্পনা তার।মামার বাড়ী,খালার বাড়ী বেড়াবে।
এভাবে দেখতে দেখতে স্কুল ছুটি হয়ে গেলো।
এবার সে মায়ের কাছে বায়না ধরে “আমি খালার বাড়ী যামু”
মা বলে “তোর বাবা যাইতে দিলে যা”।
আল-আমিন যতো দূরন্তই হোক না কেনো বাবাকে সে ভয় পায়।তার ভয় হয় যে বাবা তাকে যাওয়ার অনুমতি দিবে না।
অনেক চিন্তার পর দূরন্ত কৈশোরের কাছে ভয়ের পরাজয় ঘটে।বাবাকে না বলেই চলে যায় খালার বাড়ী।
খালা এতোদিনপর ভাগ্নেকে দেখে খুব খুশি।খালার সাথে আল-আমিনের সেকি গল্প।
গল্পের মাঝে রেখা টেনে খালার শাশুরি বলে ........ মেহমান এসেছে বৌ তালের পিঠা বানাও।
খালা বলে,আল-আমিন বাপ যা দুইটা তাল পাইরা আন।
গাছে চড়ার সু্যোগ পেয়ে আল-আমিন আর দেরী করে না।শুর শুর করে উঠতে থাকে পুকুরের পাড়ে দাঁড়ানো তাল গাছে ।
অর্ধেক উঠার পর হঠাৎ পতন।প্রথমে পড়লো পুকুরের পাড়ে।সেখান থেকে সরাসরি পানিতে।পাকা সাতারু আল-আমিন অনেক চেষ্টা করেও পানি থেকে উঠতে পারে না।
পুকুর ঘাটের লোকজন যখন তাকে উঠায় তখন আল-আমিন সজ্ঞাহীন। সাথে সাথে নেয়া হয় হাসপাতালে। ডাক্তার নানা রকম পরীক্ষা করে বলে যে আল-আমিনের কোমরের নিচের অংশ পুরোটাই প্যারালাইজড হয়ে গেছে।
প্রথমে তিন মাস চিকিৎসা চলল রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসকরা বলে দিলেন এই অসুখ ভাল হবার নয়।এদিকে ২-৩লাখ টাকা চলে গেছে।সংসারের টানাটানির কথা ভেবে আল-আমিনকে নেয়া হয় বাড়ীতে।সেখানে অবস্থার অবণতি হলে একজনের পরামর্শে তাকে ২০০৯ এর ১লা জানুয়ারী আনা হয় সাভারের সি.আর.পি তে।সেখানেই আল-আমিনের দেহে হয়েছে কয়েকদফা অপারেশন।বিদেশ থেকে টীম এসে দেখে গেছে তাকে। তবু দিন দিন আল-আমিনের অবস্থা আরো খারাপের দিকে।
আজ ব্লগে খবরটা দেখে ইফতারির পর গিয়েছিলাম রক্ত দিতে।সেখানে গিয়ে ছেলেটার অবস্থা দেখে চোখটা ঝাপসা হয়ে এলো।শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় তার পেটের ওঠানামা দেখলে বোঝা যায় কি যুদ্ধ করে সে বেচে আছে।
আল-আমিনের মায়ের কাছে জানতে পারলাম প্রতিদিন ১ ব্যাগ রক্ত লাগছে এখন।ডাক্তার বলেছেন ১০০ ব্যাগ রক্ত লাগবে।এই পর্যন্ত ৪৭ ব্যাগ দেয়া হয়েছে।একদিন রক্ত না দিলেই রোগীর অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়।
গ্রামের বাড়ীতে যা ছিলো তা বিক্রি করে পরিবারটি প্রায় পথে নামার অবস্থায়।মা থাকে ছেলের সাথে আর বাবা সাভারেই দিনমজুরের কাজ করেন।
এই অবস্থায় কেও যদি এক ব্যাগ রক্ত দিয়েও সাহায্য করেন তবুও সেটা অনেক কিছু পরিবারটির জন্য।
আর আমরা যারা সুস্থ্য সবল তাদের জন্য এটা হতে পারে মানসিক প্রশান্তি।
বিশ্বাস করুন আজ আমি খুব তৃপ্ত হয়েছি।এক মূহুর্তের জন্য একটি পরিবারের একটু দুশ্চিন্তা কমাতে পারার প্রশান্তি।
রক্তের গ্রুপ ও পজেটিভ।
আল-আমিনের মা'র সাথে যোগাযোগ --- ০১৭৩৯৮৮৮৭৭৪