"আমার জীবনের লক্ষ" লাইফের যতো প্যাচাল সব এই শব্দটার মধ্যে লুকাইত..!!! ছোটবেলায় মুখস্ত করতাম "আমার লক্ষ আমি একজন ডাক্তার হমু"..!!
কেউ যদি জিজ্ঞেস করতো...বাবা তুমি কেন ডাক্তার হইবা..???
উত্তরে বলতাম..গরীব মানুষের সেবা করুম তাই।
আসলে এগুলো নিজের কথা না। বাবা-মার শিখিয়ে দেওয়া বুলি। তারা শিখাইত..আমার জীবনের লক্ষ আমি ডাক্তার হমু..আমরাও তাই মুখস্ত করতাম। এতে অবশ্য বাবা-মায়ের কোন দোষ নাই। কারন প্রত্যেক বাবা-মাই চায় তাদের সন্তানকে একটা উচু সীমানায় নিয়ে যেতে। কিন্তু তাদের সন্তানদের সেই ক্ষমতা আছে কিনা তা একবারও ভাবেনা..!!!
আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি মহসিন স্যার একদিন ক্লাসে এসে সবাইরে জিজ্ঞেস করল...কে কি হইবার চায়..
সবাই উত্তর দিতাছে...আমি ডাক্তার হমু,,আমি ইঞ্জিনইয়ার হমু..!!
স্যারও হাসি মুখে মাথা নাড়তাছে আর মাথা নারতাছে...হুম..হা..খুব ভালো...
ক্লাসের কোন একজনরে (নামটা মনে নাই) যখন জিজ্ঞেস করা হইল যে সে কি হবে.??
তখন হয়তো সবার চেয়ে একটু আলাদা থাকার জন্য সে বলছিল সে চাকরিজীবি হবে তখনই স্যারের মুখ কালো হইয়া গেল।
শুরু হল প্যারা....তোমারে দিয়াতো কিচ্ছু হইবনা। জানোয়ার কোথাকার....কি চাকরি করবা..??? দাড়য়ানের নাকি কেরানির..?? ইত্যাদি ইত্যাদি... (উনি চাকরি ছাড়া স্কুলে মাস্টারি করতেন কেমনে তা আমি আজও জানতে পারিনাই)
আমার এক বন্ধু আছে...নাম #বাবু..
খুব ভালো গান করে। ইচ্ছে ছিল গায়েক হওয়ার বাট বাবা-মার ইচ্ছা ছেলে বড় হইয়া বিশাল এক চাকরি করব। মোটা অংকের টাকা ইনকাম করব। সুন্দরী একটা মাইয়া বিয়া করব তারপর সুখে শান্তিতে বসবাস করব। soo বাবা-মার কথা রাখতে গিয়া নিজের ইচ্ছাটারে কবরে পাঠাইতে হইছে। এখন যদি জিজ্ঞেস করি...কিরে বাবু তোর গানের প্রেক্টিস কেমন চলে..??
উত্তর :-আরে থুত বাদ দে। এইসব আমারে দিয়া হইব না। ছাইরা দিছি..!!!
অথচ আমি শিওর এই ছেলেটা যদি গায়ক হইত তাইলে একদিন হয়তো কিশোর , নচিকেতা এইসব প্রক্ষাত শিল্পিদের সমপরিমান না যাইতে পারলেও কাছাকাছি যেতো।
আরেক জন বন্ধু আছে। ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল সেনাবাহিনীর বড় কোন অফিসার হওয়ার। বাট সমস্যা হইল সে মেয়ে..!! তার মা তারে সরাসরি বলল...যদি এইটা হছ তাইলে তোরে ফেমেলি থেকে তেজ্য করে দেয়া হবে। হের কাক্কু কইল...যদি নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে চাও তাইলে ফেমেলির সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দাও। বাপ অবশ্য কিছু কয়নাই। cz উনি সম্ভবত স্বপ্নের মর্যাদা দিতে জানেন।
Sooo মেয়ে তো আর ফেমেলির কথার বাইরে কিছু করতে পােবনা। তাই ফেমেলিমেম্বারের অতি আদরের ডাক্তার হইতে গিয়া এবার রেজাল্ট চরম ভাবে খারাপ করছে..!!!
এই হইল আমাদের দেশের সামাজিক অবস্থা। সবাই চায় তাদের আপনজন ডাক্তার , ইঞ্জিন-ইয়ার হউক...মুঠো মুঠো টাকা ইনকাম করুক বাট কেউ কখনোই চায়না তাদের আপন মানুষ একজন ভালো মানুষ হউক।
তুমি গ্রামের একজন প্রাইমারি স্কুলের সাধারন টিচার..??
তোমার কানা কড়িও দাম নাই। কিন্তু তুমি একজন অসৎ ডাক্তার বা ইঞ্জিন-ইয়ার দেখবা তোমার মর্জাদা স্কুল মাস্টারের চাইতে অনেক বেশি। সবাই আসতে যাইতে তোমার পায়ে মাথা ঠুকব। তেল ওয়ালা গোফে আরো বেশি করে তেল দিব।
তাই হয়তো আমাদের বাবা-মারা চায় তাদের সন্তান যেন ডাক্তার হয়। ইঞ্জিনিয়ার হয়।
তাই আমাদের স্বপ্নটার কোন দাম নাই। আর বাংলাদেশ কখনো উন্নত করতে পারবেনা ঠিক এই কারনেই। কারন আমরা কখনো কারো স্বপ্নের উপযুক্ত দাম দিতে জানিনা।
তাই হয়তো প্রতি বছর আমাদের দেশ থেকে যেই পরিমান ডাক্তার বের হয় তাদের বড় একটা অংশ এলাকায় একটা ঔষধের দোকান দিয়া দোকানদারি করে আর ইঞ্জিনিয়াররা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বিদেশে যায় রাজমিস্তুরির কাম করতে..!!
আর যেই অল্প সংখ্যক পাবলিক কাজে লাগে তাদের সত্যিকারের স্বপ্নই ছিল তারা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবে...মা-বাবার শিখিয়ে দেওয়া বুলি না।
আরে ভাই যে পথটা আমার জন্য না সে পথে আমি কেন যাব..???
তাই আমাদের উচিত প্রত্যেকের স্বপ্নগুলো কে দাম দেওয়া। সেটা যতই ছোট হউক।