১৯৭০ সালে মানুষ শেখ সাহেবকে ভোট দিয়েছিলেন, কেন্দ্রে বাংগালীদের একটা সরকার গঠনের জন্য; সেদিন মানুষের ধারণা ছিল না যে, তারা সময়ের সাথে, বাংগালী সরকার থেকে অনেক বড় কিছু পেয়ে যাবেন, বাংগালীদের দেশ। সরকার চেয়ে বাংগালীরা দেশ পেলেন, কিন্তু কিসের মুল্যে, তা আজ ৪৬ বছর পর, কল্পনা করাও কঠিন হচ্ছে।
শেখ সাহেব ৯ মাস বন্দী ছিলেন; উনার অবর্তমানে, সাধারণ বাংগালীরা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে দেশ মুক্ত করেছেন; এই নয় মাসে অনেক কিছু বদলে গিয়েছিল, চুপচাপ শান্ত এক জাতি থেকে ইস্পাত কঠিন এক জাতির জন্ম হয়েছিল; এই জাতির সাথে ১৯৭০ সালের জাতির খুব একটা মিল ছিল না; এই জাতি ১৯৭০ সালের ভাবনায় ছিলো না আর, নতুন দেশে নতুন আশা, নতুন ভাবনার জন্ম হয়েছিল, নতুন মানুষের জন্ম হয়েছিল।
১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারী শেখ সাহেব ফিরে এলেন, কাঁদলেন, অনেক কিছু বললেন, মানুষ শুনলো; তারপর উনি বলেই চললেন, সেই বলার শেষ ছিলো না কোনদিন, কথাগুলো ১৯৭০ সালের মাঝে আটকা পড়েছিল, ১৯৭২ এর নতুন জাতির জন্য নতুন কিছু ছিলো না ওখানে। তিনি ৯ মাসের যেই অগ্নি-ঝরা দিনগুলোকে দেখেননি, অনুভব করেননি, সেটা উনার অনুধাবনে ছিল বলে মনে হয় না; আসলে তিনি ভয়ংকর ৯ মাস পেছনে পড়ে গিয়েছিলেন। বাংলার মানুষ, আশা, ভাবনায়, প্রত্যয়ে বিশাল ৯ মাস সামনে ছিলেন।
১৯৭২ সালের পর, শেখ সাহেব অনেকবার মানুষের সামনে কথা বলেছিলেন, কিন্তু কোনদিন মানুষ থেকে শোনার চেস্টা করেননি; উনার সভাতে যদি রোকেয়া হল থেকে বেঁচে যাওয়া একটা ছাত্রীকে বেঁচে যাওয়ার গল্প বলতে দিতেন, যদি শহীদ হওয়া কোন বেংগল রেজিমেন্টের সৈনিকের মাকে বা স্ত্রীকে বলতে দিতেন, যদি তিনি মুক্তিযোদ্ধা কোন কৃষকের ছেলেকে কথা বলতে দিতেন, যদি তিনি একজন শরণার্থী-মা'কে কথা বলতে দিতেন, যদি তিনি ১১ সেক্টরের কমান্ডারদের বলতে দিতেন, তিনি এমন কিছু জানতে পারতেন, যা উনাকে এক নতুন জাতি সম্পর্কে সঠিক অনেক নতুন ধারণা দিতো।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৫৯