বাংলাদেশের দরিদ্র পরিবারের শিশুদের জন্য ১৯৭২ সালের জানুয়ারী মাস, ১৯৭০ সালের জানুয়ারী মাস থেকে কোনভাবেই আলাদা ছিল না; ১৯৭২ সালের জানুয়ারী মাসে কেহ ঘোষণা দেয়নি যে, আমরা স্বাধীন হয়েছি, আমাদের প্রতিটি শিশু স্কুলে যাবে, স্কুল সবার জন্য বাধ্যতামুলক। ১৯৭০ সালে, লাখ শিশু প্রথমবারের জন্য স্কুলে গেছে, ১৯৭২ সালেও গেছে; যেসব দরিদ্র পরিবারের শিশুরা ১৯৭০ সালে স্কুলে যেতে পারেনি, ১৯৭২ সালেও সেই দরিদ্র শ্রেণীর শিশুরা স্কুলে যেতে পারেনি; বরং, দরিদ্র শ্রেণীর অনেক শিশু এতিম হয়েছিল ১৯৭১ সালে, কারণ যুদ্ধ দরিদ্র শ্রেণীর মানুষই বেশী প্রাণ হারায়েছেন।
অত্যন্ত দু:খের বিষয় যে, দরিদ্র ঘরের শিশুদের জন্য এত বড় স্বাধীনতা কিছুই আনেনি; একেবারেই খালি হাতে এসেছিল স্বাধীনতা এসব শিশুদের জন্য। যদি ততকালীন সরকার ঘোষনা দিতো যে, ৫ বছর থেকে শুরু করে, ১৫ বছর বয়সের সবাইকে জানুয়ারী মাস থেকে স্কুলে যেতে হবে; তা'হলে সারা জাতি নড়ে বসতো, অনুভব করতে পারতো ভয়ংকর কিছু ঘটেছে, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, আমাদের জীবন বদলে গেছে!
১৯৭২ সালের স্বাধীনতা ছিল, পাকিস্তানীরা আর নেই, কেহ উর্দুতে কিছু বলে না, বিহারীরা চুপ; পাকিস্তানের ফলে যাওয়া কল-কারখানা জাতির; পোড়া ঘরবাড়ী জাতির, ব্যাংকগুলো জাতির, পাকীদের ফেলে যাওয়া ঘরবাড়ী জাতির; কিন্তু দরিদ্র ঘরের শিশুদের জন্য কইছুই ছিলো না; তারা ব্যাংক দিয়ে কি করতে পারতো? তারা আলমাস সিনেমা হল দিয়ে কি করতো? তারা আদমজী জুলমিল দিয়ে কি করতো? তাদের দরকার ছিলো ১ টা বই ও ১টা শ্লেট, সাথে হয়তো একটা শার্ট ও একটা হাফ প্যান্ট; দরিদ্র স্বাধীনতা দরিদ্র শিশুদের জন্য কিছুই আনেনি, একেবারেই খালি হাত!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৩০