আওয়ামী লীগ গঠিত হয়েছিল বৃটিশ কলোনী থেকে বের হওয়া দরিদ্র বাংগালী জাতিকে শক্তিশালী জাতি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য; ২০০ বছর কলোনীতে থাকার পর, সব বাংগালীর জন্য সমান সুযোগের সৃস্টি করার জন্য ততকালীন রাজনীতিবিদদের নিয়ে দলটি গঠিত হয়েছিল; দলে আদর্শের মুলে ছিল মওলানা ভাসানীর স্বপ্ন, সাধারণ মানুষ, কৃষক শ্রমিকের স্বপ্ন। কিন্তু দলটিকে দখল করে নেয় কলিকাতার বিতর্কিত রাজনীতিবিদ শহীদ সোহরাওয়ার্দী গ্রুপ; সোহরাওয়ার্দী মুলত আমেরিকান ক্যাপিটেলিজমে উৎসাহী ছিল। যাক, পাকিস্তান মিলিটারীতে আরো বড় আমেরিকান সন্তান ছিল, উহা আইয়ুব খান।
সোহরাওয়ার্দী'র অকাল মৃত্যুতে দলটির ভার চলে যায় ছাত্রলীগ নেতা শেখ মুজিবের হাতে; শেখ মুজিবের এক অসাধারণ গুণ ছিল, তিনি দলের সব নেতাকে সন্মান করতেন, ভালোবাসতেন ও তিনি পার্টির সব নেতাদের হয়ে কথা বলতেন, কাউকে কিছু বলার সুযোগ দিতেন না; নেতারা মোটামুটি বেকারে পরিণত হন। ঠিক এইভাবেই তিনি ৬ দফা পেশ করেন, যা দলের সবাই সাপোর্ট করতেন, কিন্তু কারো তাতে অবদান ছিলো না।
আইয়ুবের আমেরিকান ক্যাপিটেলিজমে বাংগালীদের স্হান ছিলো না; পাকিস্তানের সামান্য অর্তনীতি পুরোটাই পাকিস্তানী ২২ পরিবার দখল করে নিয়েছিল। বিহারী রিফিউজীরা পুর্ব পাকিস্তানে বাংগালীদের চেয়ে বেশী অধিকার পাচ্ছিল। মানুষ একটি দল খুঁজছিলো, দলটি হতে পারতো মাওলানা ভাসানীর দল; কিন্তু অশিক্ষিত বাংগালীদের মোল্লারা ভয় লাগিয়ে দিয়েছিল, মাওলানা কম্যুনিস্ট, মওলানা নাস্তিক; মানুষের জন্য একটা দল বাকী ছিলো আওয়ামী লীগ।
আইয়ুবের আশেপাশে ছিল সর্ব প্রকার গার্বেজ, ওরা মনে করেছিল যে, ৬ দফা পাকিস্তান ভেংগে দিবে; এই ভুল ধারণা আইয়ুবকে ভুল পথে নিয়ে যায়, সে শেখ সাহেব ও উনার দলের লোকদের বিপক্ষে দেশদ্রোহীতার মামলা এনে, শেখ সাহেবকে ফাঁসীতে ঝুলাতে যায়; সব আওয়ামীরা বাতাসে মিশে যায়, থাকে শুধু ১ জন আওয়ামী লীগার, জোহরা তাজুদ্দিন; এদিকে আইয়ুব খান মাওলানাকে খুবই পছন্দ করতো, মাওলানা চুপ করে সব দেখছিলো; উনার সামনে শেখকে ঝুলানোর ব্যবস্হা করছিলো আইয়ুব; মাওলানা রেগে নামলেন মাঠে; শেখ বেঁছে গেলো, আইয়ুব আউট।
দেশ স্বাধীন হলো, এক শক্তিশালী আওয়ামী লীগ, দেশে আর কোন দল ছিলো না; দেশে ২য় দলের উদয় হলো শেখ সাহেবের ছাত্রলীগ থেকে; এক ঘরে ২ নেতা, ২ দল; ঘরই ভেংগে পড়লো।
আওয়ামী লীগ ৪ ভাগে বিভক্ত ছিল ১৯৮১ সালে; এবার আনা হলো শেখ হাসিনাকে, যিনি পার্টির সদস্য ছিলেন না, এক লাফে হলেন 'সভাপতি'; আজ ৩৫ বছর আছেন সভাপতি; বিশ্বে কোন নজীর নেই মনে হয়।
এই আওয়ামী লীগ মাওলানার আওয়ামী লীগ নয়, শেখ সাহেবের আওয়ামী লীগ নয়, ইহা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ; শেখ হাসিনা ৩ বার প্রধানমন্ত্রী, জাতির সর্বোচ্চ পদে আছেন, কিন্তু সভাপতির পদ ছাড়েনি; অর্থাৎ জাতি থেকে আওয়ামী লীগের গুরুত্ব বড়; আর আওয়ামী লীগে কাউকে প্রশ্ন করলে, সহজেই বুঝতে পারবেন যে, আওয়ামী লীগে কেহ কেহ নন, সবকিছুই শেখ হাসিনা; জাতির চেয়ে পার্টি বড়, পার্টির চেয়ে নেত্রী বড়, এটাই আওয়ামী লীগ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৭:৪৯