আজকের সিরিয়া হলো মাতৃভুমির উপর আস্হা হারানোর এক বিরাট উদাহরণ; সিরিয়ার কিছু মানুষ বাকীদের এমন অবস্হায় নিয়ে গিয়েছিল যে, বাকীদের কাছে নিজের দেশ, নিজের ঘর, প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবের কোন মুল্য ছিলো না; তারা প্রথম সুযোগেই নিজের দেশ ফেলে পালিয়ে গেছে; দেশের হয়ে যুদ্ধ করার মতো কোন কারণ তাদের ছিলো না।
সিরিয়া প্রাচীন সভ্যতার দেশ, মাটি ও মানুষ একাকার হয়েছিল;বুড়ো আসাদ ও উনার ছেলের ক্রমাগত ভুল ও অন্যায়ের ফলে, দেশের বিরাট অংশ হতাশ হয়ে গিয়েছিল; তারা আসাদের পক্ষে, বা বিপক্ষে অবস্হান নেয়নি; পালিয়ে বাঁচার পথ নিয়েছে। এমন কোন কারণ ছিলো না যে, বুড়ো আসাদকে প্রায় ৩০ বছর ক্ষমতায় থাকতে হলো, এমন কোন কারণ ছিলো না যে, বাশার আসাদকে ক্ষমতায় আনার দরকার ছিলো।
আসাদেরা সব দোষ ইসরেয়েলের উপর চাপায়ে দিয়ে নিজেদের অন্যায় ও অদক্ষতাকে ঢেকে রেখে চলতো; কিন্তু কতদিন? ইসরায়েল একটা ফ্যাক্টর, তবে সেটা সমাধানযোগ্য; এবং বুড়ো আসাদ সেই সমস্যায় অকারণে জড়ায়েছিল, শেষে সমাধানও করেছিল; ভুল করে গেছে ছেলেকে ক্ষমতায় যাবার পথ করে দিয়ে।
সিরিয়ায় আজ ৪ দিন যুদ্ধ-বিরতি চলছে; কিন্তু শুনলে হাসবেন যে, যুদ্ধ বিরতি হয়েছে মুলত রাশিয়ার সাথে বাশার বিরোধীদের, পরোক্ষভাবে রাশিয়া ও আমেরিকার মাঝে; সরকার ও মানুষের ভুমিকা গৌণ।
আফ্রিকার অনেক দেশে মানুষ নিজের মাতৃভুমির উপর আস্হা হারায়ে ফেলেছে; ওরা সুযোগ পেলে পালিয়ে যাচ্চে যে কোন দিকে; ওখানে এক দেশ থেকে আরক দেশে গিয়ে শান্তি খোঁজা মরীচিকার মতো।
বাংলাদেশেও ক্রমে দেশের প্রতি মমতা কমে আসছে মানুষের; মমতা কমে আসে প্রথমে ভুমিহীনদের কাছে, যারা স্বদেশে ভাড়াটিয়া; এটা ভয়ংকর খারাপ ফ্যাক্টর। বাংলাদেশের গলাকাটা অর্থনীতি দরিদ্রদের প্রতি মিনিটে ভুমিহীন করছে; বসুন্ধরা থেকে শুরু করে, গ্রামের টাউট অবধি মানুষের ভুমি জোর করে, বা নাম মাত্র দামে দখল করছে। আরেক বড় ফ্যাক্টর হলো, শেষ ভিটা বিক্রি করে বিদেশে পালিয়ে গিয়ে বড় হওয়ার দুরাশা।
আপাতত, আমাদের প্রশাসন এই ব্যবস্হাকে লাভজনক পজিশন হিসেবে নিয়েছে, সরকার বা প্রশাসন দুস্টদের পক্ষেই আছে; এবং অর্থনীতিকে এমনভাবে কন্ট্রোল করছে, তাতে কে সব হারিয়ে ভুমিহীন হচ্ছে, সরকারের মাথা ব্যথা নেই। সিরিয়নরা হাজার বছর শহরে বাস করে আসছিলো, শহরের বাহিরে মরুতে ওদের কিছু ছিলো না; যেদিন ওরা ঘরহারা হয়েছে, দেশ বলতে তাদের জন্য তেমন কিছু বাকী নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৫৮